Beginning
পুকুরপাড়ে এক পঙ্গুকে যীশু আরোগ্যদান করলেন
5 এরপর ইহুদীদের এক বিশেষ পর্বের সময় এলে যীশু জেরুশালেমে গেলেন। 2 জেরুশালেমে মেষ ফটকের কাছে একটা পুকুর ছিল। ইব্রীয়তে সেই পুকুরটিকে “বৈথেসদা” বলা হত। এই পুকুরটির পাঁচটি চাঁদনী ঘাট ছিল; 3 ঘাটের সেইসব চাতালে অনেক অসুস্থ লোক শুয়ে থাকত; তাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্ধ, কেউ কেউ খোঁড়া এমনকি পঙ্গু রোগীও থাকত।[a] 4 [b] 5 সেখানে একজন লোক ছিল যে আটত্রিশ বছর ধরে রোগে ভুগছিল। 6 যীশু তাকে সেখানে পড়ে থাকতে দেখলেন। তিনি জানতেন যে সে দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছে, তাই তাকে বললেন, “তুমি কি সুস্থ হতে চাও?”
7 সেই অসুস্থ লোকটি বলল, “মহাশয় আমার এমন কোন লোক নেই, জল কেঁপে ওঠার সময় যে আমাকে পুকুরে নামিয়ে দেবে। আমি ওখানে পৌঁছানোর আগেই কেউ না কেউ আমার আগে পুকুরে নেমে পড়ে।”
8 যীশু তাকে বললেন, “ওঠ! তোমার বিছানা গুটিয়ে নাও, হেঁটে বেড়াও।” 9 লোকটি সঙ্গে সঙ্গে ভাল হয়ে গেল, আর তার বিছানা তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকল।
এ ঘটনা বিশ্রামবারে ঘটল, 10 তাই যে লোকটি আরোগ্য লাভ করেছিল তাকে ইহুদীরা বলল, “আজ বিশ্রামবার, এভাবে তোমার বিছানা বয়ে বেড়ানো বিধি-ব্যবস্থা বিরুদ্ধ কাজ হচ্ছে।”
11 সে তখন তাদের বলল, “যিনি আমাকে সারিয়ে তুলেছেন তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার বিছানা তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও।’”
12 তারা সেই লোকটিকে জিজ্ঞেস করল, “কে তোমাকে বলেছে যে তোমার বিছানা গুটিয়ে নিয়ে হেঁটে বেড়াও?”
13 কিন্তু যে লোকটি আরোগ্যলাভ করেছিল সে জানত না, তিনি কে। কারণ সেই জায়গায় অনেক লোক ভীড় করেছিল এবং যীশু সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন।
14 পরে যীশু মন্দিরের মধ্যে সেই লোকটিকে দেখতে পেয়ে তাকে বললেন, “দেখ, তুমি এখন সুস্থ হয়ে গেছ; আর পাপ কোরো না, যাতে তোমার আরও খারাপ কিছু না হয়!”
15 এরপর সেই লোকটি ইহুদীদের কাছে গিয়ে বলল যে, যীশুই তাকে আরোগ্য দান করেছেন।
16 আর এই কারণেই ইহুদীরা যীশুকে নির্যাতন করতে শুরু করল; কারণ তিনি বিশ্রামবারে এইসব কাজ করছিলেন। 17 তখন যীশু তাদের বললেন, “আমার পিতা সব সময় কাজ করে চলেছেন, তাই আমিও কাজ করি।”
18 তখন ইহুদীরা যীশুকে হত্যা করার জন্য আরো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠল। তারা বলল, “তিনি যে কেবল বিশ্রামবারে বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধ কাজ করছিলেন তাই নয়, তিনি ঈশ্বরকে তাঁর পিতা বলে সম্বোধন করেছিলেন। আর এইভাবে তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সমান জাহির করছিলেন।”
ঈশ্বরের ক্ষমতা যীশুর আছে
19 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি পুত্র নিজে থেকে কিছু করতে পারেন না। পিতাকে যা করতে দেখেন কেবল তাই করতে পারেন। পিতা যা কিছু করেন পুত্রও তাই করেন। 20 পিতা পুত্রকে ভালবাসেন, আর পিতা যা কিছু করেন তা পুত্রকে দেখান আর এর থেকে আরো মহান মহান কাজ পুত্রকে তিনি দেখাবেন, তখন তোমরা আশ্চর্য হয়ে যাবে। 21 পিতা মৃতদের জীবন দান করেন, তেমনি পুত্রও যাকে ইচ্ছা করেন তাকে জীবন দেন।
22 “পিতা কারও বিচার করেন না, কিন্তু সমস্ত বিচারের ভার তিনি পুত্রকে দিয়েছেন, 23 যাতে পিতাকে যেমন সমস্ত লোক সম্মান করে তেমনি পুত্রকেও সম্মান করে। যে পুত্রকে সম্মান করে না, সে পিতাকেও সম্মান করে না, কারণ পিতাই সেইজন যিনি পুত্রকে পাঠিয়েছেন।
24 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে কেউ আমার কথা শোনে, আর যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তাঁর ওপর বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন লাভ করে এবং সে অপরাধী বলে বিবেচিত হবে না। সে মৃত্যু থেকে জীবনে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। 25 আমি তোমাদের সত্যি বলছি সময় আসছে; বলতে কি এসে গেছে, যখন মৃতেরা ঈশ্বরের পুত্রের রব শুনবে, আর যারা শুনবে তারা বাঁচবে। 26 পিতার নিজের যেমন জীবন দান করার ক্ষমতা রয়েছে ঠিক তেমনই তিনি তাঁর পুত্রকেও জীবন দান করার ক্ষমতা দিয়েছেন। 27 এবং পিতা সেই পুত্রের হাতেই সমস্ত বিচারের অধিকার দিয়েছেন, কারণ এই পুত্রই মানবপুত্র।
28 “এই কথা শুনে তোমরা অবাক হয়ো না, কারণ সময় আসছে, যারা কবরের মধ্যে আছে তারা সবাই মানবপুত্রের রব শুনবে। 29 তারপর তারা তাদের কবর থেকে বাইরে আসবে। যারা সৎ কর্ম করেছে তারা উত্থিত হবে ও অনন্ত জীবন লাভ করবে। আর যারা মন্দ কাজ করেছিল তারা পুনরুত্থিত হবে এবং দোষী বলে বিবেচিত হবে।
30 “আমি নিজের থেকে কিছুই করতে পারি না। আমি (ঈশ্বরের কাছ থেকে) যেমন শুনি তেমনি বিচার করি; আর আমি যা বিচার করি তা ন্যায়, কারণ আমি আমার ইচ্ছামতো কাজ করি না, বরং যিনি (ঈশ্বর) আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁরই ইচ্ছাপূরণ করার চেষ্টা করি।
যীশু ইহুদীদের সাথে কথা বলতে থাকলেন
31 “আমি যদি আমার নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দিই তবে আমার সেই সাক্ষ্য সত্য বলে গৃহীত হবে না। 32 অন্য একজন আছেন যিনি আমার পক্ষে সাক্ষ্য দেন এবং আমি জানি, যে সাক্ষ্যই তিনি দেন না কেন তা সত্য।
33 “তোমরা সকলেই যোহনের কাছে লোক পাঠিয়েছ আর তিনি সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। 34 কিন্তু আমি কোন মানুষের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করি না। তবু আমি এসব কথা বলছি, যাতে তোমরা উদ্ধার পেতে পার। 35 যোহন ছিলেন সেই প্রদীপের মতো যা জ্বলে এবং আলো দেয়; আর তোমরা কিছু সময়ের জন্য তার সেই আলো উপভোগ করে আনন্দিত হয়েছিলে।
36 “কিন্তু যোহনের সাক্ষ্য থেকে আরো বড় সাক্ষ্য আমার আছে; কারণ পিতা যে সব কাজ আমায় করতে দিয়েছেন, সে সব কাজ আমিই করছি, আর সেই সব কাজই প্রমাণ করছে যে পিতা আমায় পাঠিয়েছেন। 37 পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন, এমনকি আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন, তোমরা কেউই কখনও তাঁর রব শোননি, তাঁর আকারও দেখনি। 38 আর তাঁর শিক্ষাও তোমাদের অন্তরে নেই, কারণ ঈশ্বর যাঁকে পাঠিয়েছেন, তোমরা তাঁকে বিশ্বাস করো না। 39 তোমরা সকলেই খুব মনোযোগ সহকারে শাস্ত্রগুলি পড়, কারণ তোমরা মনে করো সেগুলির মধ্য দিয়েই তোমরা অনন্ত জীবন লাভ করবে আর সেই শাস্ত্রগুলিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে। 40 তবু তোমরা সেই জীবন লাভ করতে আমার কাছে আসতে চাও না।
41 “মানুষের প্রশংসা আমি গ্রহণ করি না। 42 আমি তোমাদের সকলকেই জানি আর এও জানি যে তোমরা ঈশ্বরকে ভালোবাসো না। 43 আমি আমার পিতার নামে এসেছি, তবু তোমরা আমায় গ্রহণ করো না; কিন্তু অন্য কেউ যদি তার নিজের নামে আসে তাকে তোমরা গ্রহণ করবে। 44 তোমরা কিভাবে বিশ্বাস করতে পারো? তোমরা তো একজন অন্য জনের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে চাও। আর যে প্রশংসা একমাত্র ঈশ্বরের কাছে থেকে আসে আর খোঁজ তোমরা করো না। 45 মনে করো না যে আমিই সেই ব্যক্তি যে পিতার কাছে তোমাদের ওপর দোষারোপ করব। তোমাদের সাহায্য করবেন বলে যে মোশির ওপর তোমরা আশা রাখো তিনিই তোমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন। 46 তোমরা যদি মোশিকে বিশ্বাস করতে তবে আমাকেও বিশ্বাস করতে, কারণ মোশি তা আমার বিষয়েই লিখেছেন। 47 তোমরা যখন মোশির লেখায় বিশ্বাস করো না, তখন আমি যা বলি তা কেমন করে বিশ্বাস করবে?”
যীশু পাঁচ হাজারের বেশী লোককে খাওয়ালেন
(মথি 14:13-21; মার্ক 6:30-44; লূক 9:10-17)
6 এরপর যীশু গালীল হ্রদের অপর পারে গেলেন, এই হ্রদকে তিবিরিয়াও বলে। 2 বহু লোক তাঁর পেছনে পেছনে চলতে লাগল, কারণ রোগীদের সুস্থ করতে তিনি যে সব অলৌকিক চিহ্ন করতেন তা তারা দেখেছিল। 3 যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা পাহাড়ের উপরে গিয়ে সেখানে বসলেন। 4 সেই সময় ইহুদীদের নিস্তারপর্ব এগিয়ে আসছিল।
5 যীশু যখন দেখলেন বহু লোক তাঁর কাছে আসছে তখন তিনি ফিলিপকে বললেন, “এই লোকদের খেতে দেবার জন্য আমরা কোথায় রুটি কিনতে পাব?” 6 যীশু তাঁকে পরীক্ষা করবার জন্যই একথা বললেন, কারণ যীশু কি করবেন তা তিনি আগেই জানতেন।
7 ফিলিপ যীশুকে বললেন, “প্রত্যেকের হাতে এক টুকরো করে রুটি দিতে গেলে সারা মাসের রোজগারে রুটি কিনলেও তা যথেষ্ট হবে না।”
8 যীশুর শিষ্যদের মধ্যে আর একজন, যার নাম আন্দ্রিয়, ইনি শিমোন পিতরের ভাই, তিনি যীশুকে বললেন, 9 “এখানে একটা ছোট ছেলে আছে, যার কাছে যবের পাঁচটা রুটি আর ছোট দুটো মাছ আছে, কিন্তু এত লোকের জন্য নিশ্চয়ই সেগুলি যথেষ্ট হবে না।”
10 যীশু বললেন, “লোকদের বসিয়ে দাও।” সেই জায়গায় অনেক ঘাস ছিল। তখন সব লোকেরা বসে গেল। সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার পুরুষ ছিল। 11 এরপর যীশু সেই রুটি কখানা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন এবং যারা সেখানে বসেছিল তাদের সেগুলি ভাগ করে দিলেন। আর তিনি মাছও ভাগ করে দিলেন। যে যত চাইল তত পেল।
12 তারা পরিতৃপ্ত হলে, যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “যে সব টুকরো টাকরা পড়ে আছে তা জড়ো কর, যেন কোন কিছু নষ্ট না হয়।” 13 তখন তাঁরা সে সব জড়ো করলেন। লোকেরা খাবার পরে যবের সেই পাঁচ খানা রুটির টুকরো-টাকরা যা পড়ে ছিল শিষ্যরা তা জড়ো করলে বারো টুকরী ভর্ত্তি হয়ে গেল।
14 লোকেরা যীশুকে এই অলৌকিক চিহ্ন করতে দেখে বলতে লাগল, “জগতে যাঁর আগমনের কথা আছে ইনি নিশ্চয়ই সেই ভাববাদী।”
15 এতে যীশু বুঝলেন লোকেরা তাঁকে রাজা করবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই তিনি তাদের ছেড়ে একাই সেই পাহাড়ে উঠে গেলেন।
যীশু জলের ওপর দিয়ে হাঁটলেন
(মথি 14:22-27; মার্ক 6:45-52)
16 সন্ধ্যা হলে যীশুর শিষ্যরা হ্রদের ধারে নেমে গেলেন। 17 তাঁরা একটা নৌকায় উঠে হ্রদের অপর পারে কফরনাহূমের দিকে যেতে থাকলেন। তখন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল, আর যীশু তখনও তাদের কাছে আসেন নি। 18 আর খুব জোরে ঝোড়ো বাতাস বইছিল, ফলে হ্রদে বড় বড় ঢেউ উঠছিল। 19 এরই মধ্যে তিন চার মাইল নৌকা বেয়ে যাবার পর যীশুর শিষ্যরা দেখলেন, যীশু জলের ওপর দিয়ে হেঁটে আসছেন। তিনি যখন নৌকার কাছাকাছি এলেন, তখন শিষ্যরা খুব ভয় পেয়ে গেলেন। 20 কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, “এই যে আমি; ভয় পেও না।” 21 তখন তাঁরা খুশী হয়ে যীশুকে নৌকাতে তুলে নিলেন। আর তাঁরা যেখানে যাচ্ছিলেন নৌকা তখনই সেখানে পৌঁছে গেল।
লোকেরা যীশুকে খুঁজতে লাগল
22 হ্রদের অপর পারে যে জনতা ছিল, পরের দিন তারা বুঝতে পারল যে কেবলমাত্র একটা নৌকাই সেখানে ছিল আর যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে তাতে ওঠেন নি। তাঁর শিষ্যরা নিজেরাই চলে গিয়েছিলেন। 23 কিন্তু যেখানে প্রভুকে ধন্যবাদ দেওয়ার পর লোকেরা রুটি খেয়েছিল, সেইখানে তখন তিবিরিয়া থেকে কয়েকটা নৌকা এল। 24 কিন্তু যখন লোকেরা দেখল যে যীশু বা তাঁর শিষ্যরা কেউই সেখানে নেই, তখন তারা নৌকায় চড়ে যীশুর খোঁজে কফরনাহূমে চলে গেল।
যীশুই আমাদের জীবন রুটি
25 তারা হ্রদের অপর পারে যীশুকে দেখতে পেয়ে বলল, “গুরু, আপনি এখানে কখন এসেছেন?”
26 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা অলৌকিক চিহ্ন দেখেছ বলে যে আমার খোঁজ করছ তা নয়, কিন্তু তোমরা রুটি খেয়ে তৃপ্ত হয়েছিলে বলেই আমার খোঁজ করছ। 27 খাদ্যের মতো নশ্বর বস্তুর জন্য কাজ করো না। কিন্তু যে খাদ্য প্রকৃতই স্থায়ী ও যা অনন্ত জীবন দান করে, তার জন্য কাজ কর যা মানবপুত্র তোমাদের দেবেন। কারণ পিতা ঈশ্বর তোমাদের দেখিয়েছেন যে তিনি মানবপুত্রের সঙ্গেই আছেন।”
28 তারা তাঁকে বলল, “ঈশ্বরের কাজ করার জন্য আমাদের কি করতে হবে?”
29 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “ঈশ্বর যাঁকে পাঠিয়েছেন তোমরা যেন তাঁকে বিশ্বাস কর। এই হল ঈশ্বরের কাজ।”
30 তারা তাঁকে বলল, “আপনি কি এমন অলৌকিক কাজ করছেন, যা দেখে আমরা জানতে পারব যে আপনিই সেই ব্যক্তি যাঁকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন ও আপনার ওপর বিশ্বাস করব? 31 আমাদের পিতৃপুরুষরা মরুপ্রান্তরে মান্না খেয়েছিল। যেমন শাস্ত্রে লেখা আছে: ‘তিনি তাদের খাবার জন্য স্বর্গ থেকে রুটি দিলেন।’”(A)
32 তখন যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মোশি স্বর্গ থেকে সেই রুটি তোমাদের দেন নি, কিন্তু আমার পিতাই স্বর্গ থেকে সত্যিকারের রুটি তোমাদের দেন। 33 স্বর্গ থেকে নেমে এসে যিনি জগত সংসার জীবন দান করেন তিনিই ঈশ্বরের দেওয়া রুটি।”
34 তারা তাঁকে বলল, “মহাশয়, সেই রুটি সব সময় আমাদের দিন।”
35 যীশু তাদের বললেন, “আমিই সেই রুটি যা জীবন দান করে। যে কেউ আমার কাছে আসে সে কখনও ক্ষুধার্ত হবে না, আর যে কেউ আমার ওপর বিশ্বাস রাখে কখনও তার পিপাসা পাবে না। 36 কিন্তু আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা আমায় দেখেছ অথচ আমায় বিশ্বাস কর না। 37 পিতা আমাকে যাদের দেন, তারা প্রত্যেকেই আমার কাছে আসবে। আর যারা আমার কাছে আসে, আমি তাদের কখনই ফিরিয়ে দেব না। 38 কারণ আমি আমার খুশী মত কাজ করতে স্বর্গ থেকে নেমে আসি নি, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ করতে এসেছি। 39 যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তাঁর ইচ্ছা এই যে যাদের তিনি আমায় দিয়েছেন তাদের একজনকেও যেন আমি না হারাই; বরং শেষ দিনে যেন তাদের সকলকে আমি উত্থিত করি। 40 আমার পিতা এই চান, যে কেউ তাঁর পুত্রকে দেখে ও তাঁকে বিশ্বাস করে, সে যেন অনন্ত জীবন লাভ করে; আর আমিই তাকে শেষ দিনে ওঠাব।”
41 তখন ইহুদীরা যীশুর সম্পর্কে গুঞ্জন শুরু করল, কারণ তিনি বলেছিলেন, “আমিই সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে।” 42 তারা বলল, “তিনি কি যোষেফের ছেলে নন? আমরা কি এর বাবা মাকে চিনি না? তাহলে এখন কেমন করে তিনি বলছেন, ‘আমি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছি?’”
43 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “নিজেদের মধ্যে ওসব বচসা বন্ধ কর। 44 যিনি আমায় পাঠিয়েছেন সেই পিতা না আনলে কেউই আমার কাছে আসতে পারে না; আর আমিই তাকে শেষ দিনে জীবিত করে তুলব। 45 ভাববাদীদের পুস্তকে লেখা আছে: ‘তারা সকলেই ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা লাভ করবে।’(B) যে কেউ পিতার কাছে শুনে শিক্ষা পেয়েছে সেই আমার কাছে আসে। 46 আমি বলছি না যে, কেউ পিতাকে দেখেছেন। কেবলমাত্র যিনি পিতার কাছ থেকে এসেছেন তিনিই পিতাকে দেখেছেন।
47 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে কেউ বিশ্বাস করেছে সেই অনন্ত জীবন পেয়েছে। 48 আমিই সেই রুটি যা জীবন দেয়। 49 তোমাদের পিতৃপুরুষরা মরুপ্রান্তরে মান্না খেয়েছিল, কিন্তু তবু তারা মারা গিয়েছিল। 50 এ সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে আসে, আর কেউ যদি তা খায়, তবে সে মরবে না। 51 আমিই সেই জীবন্ত রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। কেউ যদি এই রুটি খায় তবে সে চিরজীবি হবে। যে রুটি আমি দেব তা হল আমার দেহের মাংস। তা আমি দিই যাতে জগত জীবন পায়।”
52 এই কথা শুনে ইহুদীদের মধ্যে তর্ক বেধে গেল। তারা বলতে লাগল, “এই লোকটা কেমন করে তার দেহের মাংস আমাদের খেতে দিতে পারে?”
53 যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি; তোমরা যদি মানবপুত্রের মাংস না খাও ও তাঁর রক্ত পান না কর, তাহলে তোমাদের মধ্যে জীবন নেই। 54 যে কেউ আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে সে অনন্ত জীবন পায়, আর শেষ দিনে আমি তাকে ওঠাবো। 55 আমার মাংসই প্রকৃত খাদ্য ও আমার রক্তই প্রকৃত পানীয়। 56 যে আমার মাংস খায় ও আমার রক্ত পান করে সে আমার মধ্যে থাকে, আর আমিও তার মধ্যে থাকি।
57 “যেমন জীবন্ত পিতা আমাকে পাঠিয়েছেন, আর পিতার জন্য আমি জীবিত আছি, ঠিক সেরকম যে আমাকে খায় সে আমার দরুন জীবিত থাকবে। 58 এ সেই রুটি যা স্বর্গ থেকে নেমে এসেছিল। এটা তেমন রুটি নয় যা তোমাদের পিতৃপুরুষরা খেয়েছিল এবং তা সত্ত্বেও পরে তারা সকলে মারা গিয়েছিল। এই রুটি যে খায় সে চিরজীবি হবে।”
59 কফরনাহূমের সমাজ-গৃহে শিক্ষা দেবার সময় যীশু এইসব কথা বললেন।
অনন্ত জীবনের বাক্যসকল
60 যীশুর শিষ্যদের মধ্যে অনেকে তাঁর এই কথা শুনে বলল, “এ বড়ই কঠিন কথা; কে এ গ্রহণ করতে পারে?”
61 যীশু অন্তরে টের পেলেন যে তাঁর শিষ্যরা এই বিষয় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছে। তাই তিনি তাদের বললেন, “এই শিক্ষায় কি তোমরা ধাক্কা পেয়েছ? 62 তবে মানবপুত্র আগে যেখানে ছিলেন উর্দ্ধে সেখানে তাঁকে ফিরে যেতে দেখলে তোমরা কি বলবে? 63 আত্মাই জীবন দান করে, রক্ত মাংসের শরীর কোন উপকারে আসে না। আমি তোমাদের সকলকে যে সব কথা বলেছি তা হল আধ্যাত্মিক আর তাই জীবন দান করে। 64 কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা বিশ্বাস করে না।” কারণ যীশু শুরু থেকেই জানতেন কে কে তাঁকে বিশ্বাস করে না, আর কেই বা তাঁকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দেবে। 65 তাই তিনি বললেন, “এজন্য আমি তোমাদের বলেছি, ‘পিতা ইচ্ছা না করলে কেউই আমার কাছে আসতে পারে না।’”
66 এই কারণেই তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অনেকে পিছিয়ে গেল, তাঁর সঙ্গে চলাফেরা বন্ধ করে দিল।
67 তখন যীশু সেই বারোজন প্রেরিতকে বললেন, “তোমরাও কি চলে যেতে চাইছ?”
68 শিমোন পিতর বললেন, “প্রভু, আমরা কার কাছে যাব? আপনার কাছে সেই বাণী আছে যা অনন্ত জীবন দান করে। 69 আমরা বিশ্বাস করি ও জানি যে আপনিই সেই পবিত্র একজন, যিনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন।”
70 এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “আমি কি তোমাদের বারোজনকে মনোনীত করি নি? তবু তোমাদের মধ্যে একজন দিয়াবল আছে।” 71 তিনি শিমোন ঈষ্করিয়োতের ছেলে যিহূদার বিষয়ে বলছিলেন, কারণ যিহূদা সেই বারো জনের মধ্যে একজন হলেও পরে যীশুকে শত্রুর হাতে তুলে দেবে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International