Beginning
রাজ্যপাল পীলাত যীশুকে প্রশ্ন করলেন
(মথি 27:1-2, 11-14; মার্ক 15:1-5; যোহন 18:28-38)
23 এরপর তারা সকলে উঠে প্রভু যীশুকে নিয়ে পীলাতের কাছে গেল। 2 আর তারা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, “আমরা দেখেছি, লোকটা আমাদের জাতিকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এ কৈসরকে কর দিতে বারণ করে আর বলে, সে নিজেই খ্রীষ্ট, একজন রাজা।”
3 তখন পীলাত যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”
যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি নিজেই সে কথা বললে।”
4 এরপর পীলাত প্রধান যাজক ও লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এই লোকের বিরুদ্ধে কোন দোষই আমি খুঁজে পাচ্ছি না।”
5 কিন্তু তারা জেদ ধরে বলতে লাগল, “এই লোকটি যিহূদার সমস্ত জায়গায় শিক্ষা দিয়ে লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলছে। গালীল থেকে শুরু করে এখন সে এখানে এসেছে।”
পীলাত যীশুকে হেরোদের কাছে পাঠালেন
6 এই কথা শুনে পীলাত জানতে চাইলেন যীশু গালীলের লোক কিনা। 7 তিনি যখন জানতে পারলেন যে হেরোদের শাসনাধীনে যে অঞ্চল আছে যীশু সেখানকার লোক, তখন তিনি যীশুকে হেরোদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কারণ হেরোদ তখন জেরুশালেমেই ছিলেন।
8 রাজা হেরোদ যীশুকে দেখে খুবই খুশী হলেন, কারণ তিনি অনেকদিন থেকেই তাঁকে দেখতে চাইছিলেন। তাঁর বিষয়ে হেরোদ অনেক কথাই শুনেছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে যীশু কোন অলৌকিক কাজ করে তাঁকে দেখাবেন। 9 তিনি যীশুকে অনেক প্রশ্ন করলেন; কিন্তু যীশু তাকে কোন উত্তরই দিলেন না। 10 প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সেখানে দাঁড়িয়ে প্রবলভাবে যীশুর বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে লাগল। 11 হেরোদ তার সৈন্যদের নিয়ে যীশুকে নানাভাবে অপমান ও উপহাস করলেন। পরে একটা সুন্দর আলখাল্লা পরিয়ে তাঁকে আবার পীলাতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। 12 এর আগে পীলাত ও হেরোদ পরস্পর শত্রু ছিলেন; কিন্তু ঐ দিন তাঁরা পরস্পর আবার বন্ধু হয়ে গেলেন।
যীশুর মৃত্যু অবধারিত
(মথি 27:15-26; মার্ক 15:6-15; যোহন 18:39–19:16)
13 পীলাত প্রধান যাজকদের ও ইহুদী নেতাদের ডেকে বললেন, 14 “তোমরা আমার কাছে এই লোকটিকে নিয়ে এসে বলছ যে এ লোকদের বিপথে চালিত করছে। তোমাদের সামনেই আমি ভালভাবে একে জেরা করে দেখলাম; আর তোমরা এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছ তার কোন প্রমাণই পেলাম না, সে নির্দোষ। 15 এমন কি রাজা হেরোদও পান নি, তাই তিনি একে আবার আমাদের কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন। আর দেখ, মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য কোন কাজই এ করে নি। 16 তাই একে আমি আচ্ছা করে চাবুক মেরে ছেড়ে দেব।” 17 [a]
18 কিন্তু তারা সকলে এক সঙ্গে চিৎকার করে বলে উঠল, “এই লোকটাকে দূর কর! আমাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দাও!” 19 শহরের মধ্যে গণ্ডগোল বাধানো ও হত্যার অপরাধে বারাব্বাকে কারাবন্দী করা হয়েছিল।
20 পীলাত যীশুকে ছেড়ে দিতে চাইলেন, তাই তিনি আবার লোকদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। 21 কিন্তু তারা চিৎকার করেই চলল, “ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দাও।”
22 পীলাত তৃতীয় বার তাদের বললেন, “কেন? এই লোক কি অপরাধ করেছে? মৃত্যুদণ্ড দেবার মতো কোন দোষই তো এর আমি দেখছি না, তাই একে আমি চাবুক মেরে ছেড়ে দেব।”
23 কিন্তু তারা প্রচণ্ড চিৎকার করেই চলল, তাঁকে যেন ক্রুশে দেওয়া হয়, এই দাবিতে তারা অনড় থাকল। আর শেষ পর্যন্ত তাদের চিৎকারেরই জয় হল। 24 পীলাত তাদের অনুরোধ রক্ষা করবেন বলে ঠিক করলেন। 25 যাকে বিদ্রোহ ও খুনের অপরাধে কারাগারে রাখা হয়েছিল তাকেই তিনি মুক্তি দিলেন, আর যীশুকে তাদের হাতে তুলে দিলেন যেন তাকে নিয়ে তারা যা চায় তা করতে পারে।
যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হল
(মথি 27:32-44; মার্ক 15:21-32; যোহন 19:17-27)
26 তারা যখন যীশুকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন কুরীশীর শহরের শিমোন নামে একজন লোককে সৈন্যরা ধরল, সে তখন মাঠ থেকে আসছিল। তারা সেই ক্রুশটা তার ঘাড়ে চাপিয়ে যীশুর পেছনে পেছনে সেটা বয়ে নিয়ে যেতে তাকে বাধ্য করল।
27 এক বিরাট জনতা তার পেছনে পেছনে যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে কিছু স্ত্রীলোকও ছিল যাঁরা যীশুর জন্য কান্নাকাটি ও হা-হুতাশ করতে করতে যাচ্ছিল। 28 যীশু তাদের দিকে ফিরে বললেন, “হে জেরুশালেমের মেয়েরা, তোমরা আমার জন্য কেঁদো না, বরং নিজেদের জন্য ও তোমাদের সন্তানদের জন্য কাঁদ। 29 কারণ এমন দিন আসছে যখন লোকে বলবে, ‘বন্ধ্যা স্ত্রীলোকেরাই ধন্য! আর ধন্য সেই সব গর্ভ যা কখনও সন্তান প্রসব করে নি, ধন্য সেই সব স্তন যা কখনও শিশুদের পান করায় নি।’ 30 সেই সময় লোকে পর্বতকে বলবে, ‘আমাদের ওপরে পড়!’(A) তারা ছোট ছোট পাহাড়কে বলবে, ‘আমাদের চাপা দাও!’ 31 কারণ গাছ সবুজ থাকতেই যদি লোকে এরকম করে, তবে গাছ যখন শুকিয়ে যাবে তখন কি করবে?”
32 দুজন অপরাধীকে তাঁর সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওযা হচ্ছিল। 33 তারা “মাথার খুলি” নামে একটা জায়গায় এসে পৌঁছাল, সেখানে ঐ দুজন অপরাধীর সঙ্গে তারা যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করল। তারা একজনকে তাঁর বাঁদিকে, আর অন্যজনকে তাঁর ডানদিকে ক্রুশে টাঙিয়ে দিল।
34 তখন যীশু বললেন, “পিতা, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা যে কি করছে তা জানে না।”
তারা পাশার ঘুঁটি চেলে গুলিবাঁট করে নিজেদের মধ্যে তাঁর পোশাকগুলি ভাগ করে নিল। 35 লোকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছিল, ইহুদী নেতারা ব্যঙ্গ করে তাঁকে বলতে লাগল, “ওতো অন্যদের বাঁচাতো। ও যদি ঈশ্বরের মনোনীত সেই খ্রীষ্ট হয় তবে এখন নিজেকে বাঁচাক দেখি!”
36 সৈন্যরাও তাঁর কাছে এগিয়ে এসে তাঁকে উপহাস করতে লাগল। তারা পান করার সিরকা এগিয়ে দিয়ে যীশুকে বলল, 37 “তুই যদি ইহুদীদের রাজা, তবে নিজেকে বাঁচা দেখি!” 38 (তারা একটা ফলকে “এ ইহুদীদের রাজা” লিখে যীশুর ক্রুশের ওপর তা লটকে দিল।)
39 তাঁর দুপাশে যাঁরা ক্রুশের ওপর ঝুলছিল, তাদের মধ্যে একজন তাঁকে বিদ্রূপ করে বলল, “তুমি না খ্রীষ্ট? আমাদের ও নিজেকে বাঁচাও দেখি!”
40 কিন্তু অন্য জন তাকে ধমক দিয়ে বলল, “তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না? তুমি তো একই রকম শাস্তি পাচ্ছ। 41 আমরা যে শাস্তি পাচ্ছি তা ন্যায়, কারণ আমরা যা করেছি তার যোগ্য শাস্তিই পাচ্ছি; কিন্তু ইনি তো কোন অন্যায় করেন নি।” 42 এরপর সে বলল, “যীশু আপনি যখন আপনার রাজ্যে আসবেন তখন আমার কথা মনে রাখবেন।”
43 যীশু তাকে বললেন, “আমি তোমায় সত্যি বলছি, তুমি আজকেই আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে।”
যীশুর মৃত্যুবরণ
(মথি 27:45-56; মার্ক 15:33-41; যোহন 19:28-30)
44 তখন বেলা প্রায় বারোটা; আর সেই সময় থেকে তিনটা পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। 45 সেই সময় সূর্যের আলো দেখা গেল না; আর মন্দিরের মধ্যে ভারী পর্দাটা মাঝখানে থেকে চিরে দুভাগ হয়ে গেল। 46 যীশু চিৎকার করে বললেন, “পিতা আমি তোমার হাতে আমার আত্মাকে সঁপে দিচ্ছি।”(B) এই কথা বলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন।
47 সেখানে উপস্থিত শতপতি এইসব ঘটনা দেখে ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলে উঠলেন, “ইনি সত্যিই নির্দোষ ছিলেন!”
48 যে লোকরা সেখানে জড়ো হয়েছিল, তারা এইসব ঘটনা দেখে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সেখান থেকে চলে গেল। 49 কিন্তু যাঁরা যীশুর খুবই পরিচিত ছিলেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত কি ঘটে দেখার জন্য দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। যে সব স্ত্রীলোক গালীল থেকে যীশুর সঙ্গে এসেছিলেন, তাঁরাও এদের মধ্যে ছিলেন।
আরিমাথিয়ার যোষেফ
(মথি 27:57-61; মার্ক 15:42-47; যোহন 19:38-42)
50-51 সেখানে যোষেফ নামে একজন লোক ছিলেন, তিনি ছিলেন ইহুদী মহাসভার সভ্য; ভাল ও দয়ালু ব্যক্তি। তিনি পরিষদের সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপের সঙ্গে একমত হননি। যিহূদার আরিমাথিয়ার শহর থেকে তিনি এসেছিলেন এবং ঈশ্বরের রাজ্যের আগমণের প্রতীক্ষায় ছিলেন। 52 যোষেফ পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর মৃতদেহটি চাইলেন। 53 পরে যীশুর দেহটি ক্রুশের ওপর থেকে নামিয়ে নিয়ে একটি মসলিন কাপড়ে তা জড়ালেন। এরপর পাহাড়ের গা কেটে গর্ত করা একটি সমাধিগুহার মধ্যে দেহটি শুইয়ে রাখলেন। এই সমাধি সম্পূর্ণ নতুন ছিল, এর আগে কাউকে কখনও এখনে কবর দেওয়া হয় নি। 54 সেই দিনটা ছিল বিশ্রামবারের আয়োজনের দিন, আর বিশ্রামবার প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল।
55 যে স্ত্রীলোকেরা যীশুর সঙ্গে সঙ্গে গালীল থেকে এসেছিলেন, তাঁরা যোষেফের সঙ্গে গেলেন, আর সেই সমাধিটি ও তার মধ্যে কিভাবে যীশুর দেহ শায়িত রাখা হল তা দেখলেন। 56 এরপর তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে বিশেষ এক ধরণের সুগন্ধি তেল ও মশলা তৈরী করলেন।
বিশ্রামবারে তাঁরা বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে কাজকর্ম বন্ধ রাখলেন।
যীশুর পুনরুত্থানের সংবাদ
(মথি 28:1-10; মার্ক 16:1-8; যোহন 20:1-10)
24 সপ্তাহের প্রথম দিন, সেই স্ত্রীলোকরা খুব ভোরে ঐ সমাধিস্থলে এলেন। তাঁরা যে গন্ধদ্রব্য ও মশলা তৈরী করেছিলেন তা সঙ্গে আনলেন। 2 তাঁরা দেখলেন সমাধিগুহার মুখ থেকে পাথরখানা একপাশে গড়িয়ে দেওয়া আছে; 3 কিন্তু ভেতরে ঢুকে সেখানে প্রভু যীশুর দেহ দেখতে পেলেন না। 4 তাঁরা যখন অবাক বিস্ময়ে সেই কথা ভাবছেন, সেই সময় উজ্জ্বল পোশাক পরে দুজন ব্যক্তি হঠাৎ এসে তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন। 5 ভয়ে তাঁরা মুখ নীচু করে নতজানু হয়ে রইলেন। ঐ দুজন তাঁদের বললেন, “যিনি জীবিত, তোমরা তাঁকে মৃতদের মাঝে খুঁজছ কেন? 6 তিনি এখানে নেই, তিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন। তিনি যখন গালীলে ছিলেন তখন তোমাদের কি বলেছিলেন মনে করে দেখ।” 7 তিনি বলেছিলেন, “মানবপুত্রকে অবশ্যই পাপী মানুষদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হতে হবে; আর তিন দিনের দিন তিনি আবার মৃত্যুর মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন।” 8 তখন যীশুর সব কথা তাঁদের মনে পড়ে গেল।
9 তারপর তাঁরা সমাধিগুহা থেকে ফিরে এসে সেই এগারো জন প্রেরিতকে ও তাঁর অনুগামীদের এই ঘটনার কথা জানালেন। 10 এই স্ত্রীলোকরা হলেন মরিয়ম মগ্দলীনী, যোহানা আর যাকোবের মা মরিয়ম। তাঁদের সঙ্গে আরো কয়েকজন এইসব ঘটনা প্রেরিতদের জানালেন। 11 কিন্তু প্রেরিতদের কাছে সে সব প্রলাপ বলে মনে হল, তাঁরা সেই স্ত্রীলোকদের কথা বিশ্বাস করলেন না। 12 কিন্তু পিতর উঠে দৌড়ে সমাধিগুহার কাছে গেলেন। তিনি নীচু হয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখলেন, কেবল যীশুর দেহে জড়ানো কাপড়গুলো সেখানে পড়ে আছে; আর যা ঘটেছে তাতে আশ্চর্য হয়ে ঘরে ফিরে গেলেন।
ইম্মায়ুর পথে
(মার্ক 16:12-13)
13 ঐ দিনই দুজন অনুগামী জেরুশালেম থেকে সাত মাইল দূরে ইম্মায়ু নামে একটি গ্রামে যাচ্ছিলেন। 14 এই যে সব ঘটনাগুলি ঘটে গেল, যেতে যেতে তাঁরা সে বিষয়েই পরস্পর আলোচনা করছিলেন। 15 তাঁরা যখন এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন, এমন সময় যীশু নিজে এসে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগলেন। 16 (ঘটনাটি এমনভাবেই ঘটল যাতে তাঁরা যীশুকে চিনতে না পারেন।) 17 যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা যেতে যেতে পরস্পর কি নিয়ে আলোচনা করছ?”
তাঁরা থমকে দাঁড়ালেন, তাঁদের খুবই বিষন্ন দেখাচ্ছিল। 18 তাঁদের মধ্যে ক্লিয়পা নামে একজন তাঁকে বললেন, “জেরুশালেমের অধিবাসীদের মধ্যে আমাদের মনে হয় আপনিই একমাত্র লোক, যিনি জানেন না গত কদিনে সেখানে কি কাণ্ডটাই না ঘটে গেছে।”
19 যীশু তাঁদের বললেন, “কি ঘটেছে, তোমরা কিসের কথা বলছ?”
তাঁরা যীশুকে বললেন, “নাসরতীয় যীশুর বিষয়ে বলছি। তিনি ছিলেন এমন একজন মানুষ, যিনি তাঁর কথা ও কাজের শক্তিতে ঈশ্বর ও সমস্ত মানুষের চোখে নিজেকে এক মহান ভাববাদীরূপে প্রমাণ করেছেন। 20 কিন্তু আমাদের প্রধান যাজকরা ও নেতারা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য ধরিয়ে দিল, তারা তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করে মারল। 21 আমরা আশা করেছিলাম যে তিনিই সেই যিনি ইস্রায়েলকে মুক্ত করবেন।
“কেবল তাই নয়, আজ তিন দিন হল এসব ঘটে গেছে। 22 আবার আমাদের মধ্যে কয়েকজন স্ত্রীলোক আমাদের অবাক করে দিলেন। তাঁরা আজ খুব ভোরে সমাধির কাছে গিয়েছিলেন; 23 কিন্তু সেখানে তাঁরা যীশুর দেহ দেখতে পান নি। সেখান থেকে ফিরে এসে তাঁরা আমাদের বললেন যে তাঁরা স্বর্গদূতদের দর্শন পেয়েছেন, আর সেই স্বর্গদূতরা তাঁদের বলেছেন যে যীশু জীবিত। 24 এরপর আমাদের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন সেই সমাধির কাছে গিয়েছিলেন; আর তাঁরা দেখলেন স্ত্রীলোকরা যা বলেছেন তা সত্য। তাঁরা যীশুকে সেখানে দেখতে পান নি।”
25 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা সত্যি কিছু বোঝ না, তোমাদের মন বড়ই অসাড়, তাই ভাববাদীরা যা কিছু বলে গেছেন তোমরা তা বিশ্বাস করতে পার না। 26 খ্রীষ্টের মহিমায় প্রবেশ লাভের পূর্বে কি তাঁর এইসব কষ্টভোগ করার একান্ত প্রয়োজন ছিল না?” 27 আর তিনি মোশির পুস্তক থেকে শুরু করে ভাববাদীদের পুস্তকে তাঁর বিষয়ে যা যা লেখা আছে, শাস্ত্রের সে সব কথা তাঁদের বুঝিয়ে দিলেন।
28 তাঁরা যে গ্রামে যাচ্ছিলেন তার কাছাকাছি এলে পর যীশু আরো দূরে যাবার ভাব দেখালেন। 29 তখন তাঁরা যীশুকে খুব অনুরোধ করে বললেন, “দেখুন, বেলা পড়ে গেছে, এখন সন্ধ্যা হয়ে এল, আপনি আমাদের এখানে থেকে যান।” তাই তিনি তাঁদের সঙ্গে থাকবার জন্য ভেতরে গেলেন।
30 তিনি যখন তাঁদের সঙ্গে খেতে বসলেন, তখন রুটি নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। পরে সেই রুটি টুকরো টুকরো করে তাঁদের দিলেন। 31 সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের চোখ খুলে গেল, তাঁরা যীশুকে চিনতে পারলেন, আর তিনি সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। 32 তখন তাঁরা পরস্পর বলাবলি করলেন, “তিনি যখন রাস্তায় আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ও শাস্ত্র থেকে আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন আমাদের অন্তর কি আবেগে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে নি?”
33 তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে উঠে জেরুশালেমে গেলেন। সেখানে তাঁরা সেই এগারোজন প্রেরিত ও তাঁদের সঙ্গে আরো অনেককে দেখতে পেলেন। 34 প্রেরিত ও অন্যান্য যাঁরা সেখানে ছিলেন তাঁরা বললেন, “প্রভু, সত্যি জীবিত হয়ে উঠেছেন। তিনি শিমোনকে দেখা দিয়েছেন।”
35 তখন সেই দুজন অনুগামীও রাস্তায় যা ঘটেছিল তা তাঁদের কাছে ব্যক্ত করলেন। আর যীশু যখন রুটি টুকরো টুকরো করছিলেন তখন কিভাবে তাঁরা তাঁকে চিনতে পারলেন তাও জানালেন।
অনুগামীদের সামনে যীশুর আবির্ভাব
(মথি 28:16-20; মার্ক 16:14-18; যোহন 20:19-23; প্রেরিত 1:6-8)
36 তাঁরা যখন এসব কথা তাদের বলছেন, এমন সময় যীশু তাঁদের মাঝে এসে দাঁড়ালেন আর বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক্!”
37 কিন্তু তাঁরা ভয়ে চমকে উঠলেন। তাঁরা মনে করলেন বোধ হয় কোন ভূত দেখছেন। 38 কিন্তু যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা এত অস্থির হচ্ছ কেন? আর তোমাদের মনে সন্দেহই বা জাগছে কেন? 39 আমার হাত ও পা দেখ, আমায় স্পর্শ করে দেখ, আত্মার এইরূপ হাড় মাংস থাকে না, কিন্তু তোমরা দেখতে পাচ্ছ আমার আছে।”
40 এই কথা বলে তিনি তাঁদের হাত ও পা দেখালেন। 41 তাঁদের এতই আনন্দ হয়েছিল যে তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাঁরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কিছু খাবার আছে কি?” 42 তাঁরা তাঁকে এক টুকরো ভাজা মাছ দিলেন। 43 তিনি সেটি নিয়ে তাঁদের সামনে গেলেন।
44 তিনি তাঁদের বললেন, “আমি যখন তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখনই তোমাদের এসব কথা বলেছিলাম, আমার সম্বন্ধে মোশির বিধি-ব্যবস্থায়, ভাববাদীদের পুস্তকে ও গীতসংহিতায় যা কিছু লেখা হয়েছে তা পূর্ণ হতেই হবে।”
45 এরপর তিনি তাঁদের বুদ্ধি খুলে দিলেন, যেন তাঁরা শাস্ত্রের কথা বুঝতে পারেন। 46 যীশু তাঁদের বললেন, “একথা লেখা আছে, খ্রীষ্টকে অবশ্যই কষ্ট ভোগ করতে হবে, আর তিনি মৃত্যুর তিন দিনের দিন মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন। 47-48 এবং পাপের জন্য অনুশোচনা ও পাপের ক্ষমার কথা অবশ্যই সমস্ত জাতির কাছে ঘোষণা করা হবে। জেরুশালেম থেকেই একাজ শুরু হবে আর তোমরাই এসবের সাক্ষী। 49 আমার পিতা যা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমি তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব; কিন্তু তোমরা যে পর্যন্ত না উর্দ্ধ থেকে আসা শক্তি পরিধান করছ, সেই পর্যন্ত এই শহরেই থাক।”
যীশুর স্বর্গে প্রত্যাবর্তন
(মার্ক 16:19-20; প্রেরিত 1:9-11)
50 এরপর যীশু তাঁদের বৈথনিয়া পর্যন্ত নিয়ে গেলেন এবং হাত তুলে তাদের আশীর্বাদ করলেন। 51 তিনি আশীর্বাদ করতে করতে তাঁদের ছেড়ে আকাশে উঠে যেতে লাগলেন আর স্বর্গে উন্নীত হলেন। 52 শিষ্যরা যীশুকে প্রণাম জানিয়ে মহানন্দের সঙ্গে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। 53 আর সর্বক্ষণ মন্দিরে উপস্থিত থেকে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International