Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
লূক 21-22

প্রকৃত দান

(মার্ক 12:41-44)

21 যীশু তাকিয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা মন্দিরের দানের বাক্সে তাদের দান রাখছে। এরই মাঝে একজন অতি গরীব বিধবা তাতে খুব ছোট্ট ছোট্ট তামার মুদ্রা রাখল। তখন যীশু বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এই গরীব বিধবা অন্য আর সকলের থেকে অনেক বেশী দান করল। আমি একথা বলছি কারণ অন্য আর সব লোক তাদের সম্পত্তির বাড়তি অংশ ঐ বাক্সে ফেলে গেল, কিন্তু এই বিধবার অভাব থাকা সত্ত্বেও জীবন ধারণের জন্য তার যা সম্বল ছিল, তার সবটাই দিয়ে গেল।”

মন্দির ধ্বংস

(মথি 24:1-14; মার্ক 13:1-13)

শিষ্যদের মধ্যে কেউ কেউ সেই মন্দিরের বিষয়ে এই মন্তব্য করলেন যে, “সুন্দর সুন্দর পাথর দিয়ে ও ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দানের জিনিস দিয়ে এই মন্দিরকে কেমন সাজানো হয়েছে!”

যীশু তাঁদের বললেন, “এই যে সব জিনিস তোমরা দেখছ, সময় আসবে যখন এর একটা পাথর আর একটার ওপর থাকবে না, সব ভেঙে ফেলা হবে।”

শিষ্যরা তখন যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “গুরু এসব কখন ঘটবে? এবং কি চিহ্ন দেখে বোঝা যাবে এসব ঘটবার সময় এসে গেছে?”

যীশু বললেন, “সাবধান! কেউ যেন তোমাদের না ভোলায়, কারণ অনেকেই আমার নাম ধারণ করে আসবে আর বলবে, ‘আমিই তিনি’ আর তারা বলবে, ‘সময় ঘনিয়ে এসেছে।’ তাদের অনুসারী হয়ো না! তোমরা যখন যুদ্ধ ও বিদ্রোহের কথা শুনতে পাবে, তাতে ভয় পেও না, কারণ প্রথমে নিশ্চয়ই এসব হবে; কিন্তু তখনও শেষ সময় আসতে বাকী থাকবে!”

10 এরপর তিনি তাদের বললেন, “এক জাতি আর এক জাতির বিরুদ্ধে, এক রাজ্য আর এক রাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। 11 মহা ভূমিকম্প হবে, বিভিন্ন জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেবে; আর আকাশের বুকে ভয়াবহ ঘটনা ও মহৎ‌ চিহ্ন দেখতে পাবে।

12 “কিন্তু এসব ঘটনা ঘটার আগে, তারা তোমাদের গ্রেপ্তার করবে, তোমাদের প্রতি নির্যাতন করবে। তারা বিচারের জন্য তোমাদের সমাজ-গৃহে সঁপে দেবে ও তোমাদের কারাগারে ভরবে। আমারই কারণে তারা তোমাদের রাজাদের ও রাজ্যপালদের সামনে টেনে নিয়ে যাবে। 13 তাতে আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবার জন্য তোমরা সুযোগ পাবে। 14 তোমরা মনের দিক থেকে তৈরী থেকো; আত্মপক্ষ সমর্থন করতে তখন কি বলবে, কি জবাবদিহি করবে তার জন্য চিন্তা করো না। 15 কারণ সেই সময় আমি তোমাদের বুদ্ধি দেব, তোমাদের মুখে এমন কথা যোগাব যে তোমাদের বিপক্ষরা তা অস্বীকার করতে পারবে না আবার তার প্রতিবাদও করতে পারবে না। 16 কিন্তু তোমাদের আপন বাবা-মা ভাই ও আত্মীয় বন্ধুরাই তোমাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে তোমাদের ধরিয়ে দেবে; এমন কি তোমাদের কাউকে কাউকে মেরেও ফেলবে। 17 আমারই কারণে তোমরা সকলের কাছে ঘৃণার পাত্র হবে। 18 কিন্তু তোমাদের মাথায় একটা চুলও নষ্ট হবে না। 19 তোমরা যদি বিশ্বাসে স্থির থাক, তবেই তোমাদের প্রাণ রক্ষা পাবে।

জেরুশালেমের ধ্বংসের দিন

(মথি 24:15-21; মার্ক 13:14-19)

20 “তোমরা যখন দেখবে যে সৈন্যসামন্তরা জেরুশালেমকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে, তখন বুঝবে যে তার ধ্বংসের সময় ঘনিয়ে এসেছে। 21 তখন যারা যিহূদিয়ায় থাকবে তারা যেন পালিয়ে যায়। যারা জেরুশালেমে থাকবে তারা যেন অবশ্যই নগর ছেড়ে পালায়; আর যারা গ্রামে থাকবে তারা যেন নগরে না আসে। 22 কারণ এই দিনগুলো হচ্ছে শাস্তির দিন, যা শাস্ত্রের বাণী অনুসারে পূর্ণ হবে। 23 ঐ দিনগুলোতে যাদের প্রসবকাল ঘনিয়ে এসেছে ও যাদের কোলে দুধের বাচ্চা আছে, সেই সব স্ত্রীলোকদের ভয়ঙ্কর দুর্দশা হবে। আমি একথা বলছি কারণ দেশে মহাসংকট আসছে ও এই লোকদের ওপর ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে আসছে। 24 তরবারির আঘাতে তারা মারা পড়বে, আর তাদের বন্দী করে সকল জাতির কাছে নিয়ে যাওযা হবে। যতদিন না অইহুদীদের নিরুপিত সময় পূর্ণ হচ্ছে, জেরুশালেম অইহুদীদের দ্বারা অবজ্ঞা ভরে পদদলিত হবে।

ভয় করো না

(মথি 24:29-31; মার্ক 13:24-27)

25 “তখন চাঁদ, সূর্য্য ও তারাগুলিতে অনেক বিস্ময়কর জিনিস দেখা যাবে। পৃথিবীতে সমস্ত জাতি হতাশায় ভুগবে। তারা সমুদ্র গর্জন শুনে ও প্রচণ্ড ঢেউ দেখে ভয়ে বিহ্বল হয়ে পড়বে। 26 পৃথিবীতে যে ভয়ঙ্কর অবস্থা আসছে তার কথা ভেবে ভয়েতে লোকে অজ্ঞান হয়ে যাবে, কারণ আকাশের সব শক্তিগুলি ওলোট-পালট হয়ে যাবে। 27 এর পরই তারা মহাপরাক্রমে ও মহিমামণ্ডিত হয়ে মানবপুত্রকে মেঘের মধ্যে আসতে দেখবে। 28 এসব ঘটনা ঘটতে দেখলে মাথা তুলে উঠে দাঁড়িও, কারণ জেনো যে তখন তোমাদের মুক্তি আসছে!”

আমার বাক্য চিরজীবি

(মথি 24:32-35; মার্ক 13:28-31)

29 এরপর যীশু তাদের একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, “ডুমুর গাছ ও অন্যান্য গাছের দিকে দেখ। 30 যে মুহূর্তে তাদের নতুন পাতা গজায়, তা দেখে তোমরা বুঝতে পার যে গ্রীষ্মকাল এসে পড়ল বলে। 31 ঠিক সেই রকম এইসব ঘটতে দেখলে তোমরা বুঝবে যে ঈশ্বরের রাজ্য এসে পড়েছে।

32 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যতক্ষণ না এসব ঘটছে, এই বংশ লোপ পাবে না। 33 আকাশ ও পৃথিবী লোপ পাবে, কিন্তু আমার বাক্য কখনও লোপ পাবে না।

সর্বদাই প্রস্তুত থেকো

34 “তোমরা সতর্ক থেকো। উচ্ছৃঙ্খল আমোদ-প্রমোদে, মত্ততায়, জাগতিক ভাবনা চিন্তায় তোমাদের মন যেন আচ্ছন্ন না হয়ে পড়ে, আর সেই দিন হঠাৎ‌ ফাঁদের মতো তোমাদের ওপর এসে না পড়ে। 35 বাস্তবিক, পৃথিবীর সব লোকের জন্যই সেই দিন আসবে। 36 তাই সব সময় সজাগ থেকো, আর প্রার্থনা করো যেন যাই ঘটুক না কেন তা কাটিয়ে উঠবার ও মানবপুত্রের সামনে দাঁড়াবার শক্তি তোমাদের থাকে।”

37 তিনি মন্দিরের মধ্যে প্রতিদিন শিক্ষা দিতেন কিন্তু সন্ধ্যা হলে রাতে থাকার জন্য জৈতুন পর্বতে চলে যেতেন। 38 প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে লোকেরা তাঁর কথা শোনার জন্য মন্দিরে যেত।

ইহুদী নেতারা যীশুকে হত্যা করতে চাইল

(মথি 26:1-5, 14-16; মার্ক 14:1-2, 10-11; যোহন 11:45-53)

22 সেই সময় খামিরবিহীন রুটির পর্ব এগিয়ে এলো, এই পর্বকে নিস্তারপর্ব বলা হত। এদিকে প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুকে হত্যা করার উপায় খুঁজতে লাগল, কারণ তারা লোকদের ভয় করত।

যীশুর বিরুদ্ধে যিহূদার ষড়যন্ত্র

(মথি 26:14-16; মার্ক 14:10-11)

এই সময় যিহূদা, যে ছিল বারো জন প্রেরিতের মধ্যে একজন, যাকে যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয় বলা হত, তার অন্তরে শয়তান ঢুকল। যিহূদা কেমন করে যীশুকে ধরিয়ে দেবে সে বিষয়ে পরামর্শ করতে প্রধান যাজকদের ও মন্দিরের রক্ষীবাহিনীর পদস্থ কর্মচারীদের কাছে গেল। তারা যিহূদার কথা শুনে খুবই খুশী হয়ে তাকে এর জন্য টাকা দিতে রাজী হল। যিহূদাও সম্মত হয়ে যখন লোকের ভীড় থাকবে না সেই সময় যীশুকে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।

নিস্তারপর্বের ভোজের আয়োজন

(মথি 26:17-25; মার্ক 14:12-21; যোহন 13:21-30)

এরপর খামিরবিহীন রুটির দিন এল, যে দিনে নিস্তারপর্বের মেষ বলি দিতে হত। তাই যীশু পিতর ও যোহনকে বললেন, “যাও, আমাদের জন্য নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত কর, যেন আমরা তা গিয়ে খেতে পারি।”

তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কোথায় চান, আমরা কোথায় তা প্রস্তুত করব?”

10 যীশু তাঁদের বললেন, “শোন! তোমরা শহরে ঢোকার মুখেই দেখতে পাবে একজন লোক এক কলসী জল নিয়ে যাচ্ছে। তার পেছনে পেছনে গিয়ে সে যে বাড়িতে ঢুকবে, 11 সেই বাড়ির মালিককে বলবে, ‘গুরু বলেছেন, আপনার সেই অতিথিঘর কোনটা, যেখানে আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে পারি।’ 12 তখন সেই লোকটি তোমাদের ওপর তলার একটি বড় সাজানো ঘর দেখিয়ে দেবে। তোমরা সেখানেই আয়োজন করো।”

13 যীশু যেমন বলেছিলেন, তাঁরা গিয়ে সেরকমই দেখতে পেলেন আর নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।

প্রভুর ভোজ

(মথি 26:26-30; মার্ক 14:22-26; 1 করিন্থীয় 11:23-25)

14 তারপর সময় হলে যীশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে গিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে এলেন। 15 তিনি তাঁদের বললেন, “আমার কষ্টভোগের আগে তোমাদের সঙ্গে এই নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে আমি খুবই ইচ্ছা করেছি। 16 কারণ আমি তোমাদের বলছি, যতদিন না ঈশ্বরের রাজ্যে এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় ততদিন পর্যন্ত আমি এই ভোজ আর খাবো না।”

17 এরপর তিনি দ্রাক্ষারসের পেয়ালা হাতে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, “এই নাও, নিজেদের মধ্যে এটা ভাগ করে নাও। 18 কারণ আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্য না আসা পর্যন্ত আমি আর দ্রাক্ষারস পান করব না।”

19 এরপর তিনি রুটি নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে তা খণ্ড খণ্ড করলেন, আর তা প্রেরিতদের দিয়ে বললেন, “এ আমার শরীর, যা তোমাদের জন্য দেওয়া হল। আমার স্মরনার্থে তোমরা এটা করো।” 20 খাবার পর সেইভাবে দ্রাক্ষারসের পেয়ালা নিয়ে বললেন, “আমার রক্তের মাধ্যমে মানুষের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া যে নতুন নিয়ম শুরু হল। এই পানপাত্রটি তারই চিহ্ন। এই রক্ত তোমাদের সকলের জন্য পাতিত হল।”

কে যীশুর বিরুদ্ধে যাবে?

21 “কিন্তু দেখ! যে আমাকে ধরিয়ে দেবে তার হাত আমার সঙ্গে এই টেবিলের ওপরেই আছে। 22 কারণ যেমন নির্ধারিত হয়েছে সেই অনুসারেই মানবপুত্রকে মরতে হবে, কিন্তু ধিক্ সেই লোককে যে তাঁকে ধরিয়ে দেবে।”

23 তাঁরা নিজেদের মধ্যে তখন একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, “আমাদের মধ্যে কে এমন লোক হতে পারে, যে এই কাজ করবে?”

দাসের মতো হও

24 সেই সময় তাঁদের মধ্যে কাকে সব থেকে বড় বলা হবে, এই নিয়ে তর্ক শুরু হল। 25 কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “অইহুদীদের মধ্যেই রাজারা তাদের প্রজাদের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করে, আর যারা তাদের শাসন করে থাকে তাদেরই আবার ‘উপকারক’ বলা হয়। 26 কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমনটি হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে সব থেকে বড় সে হোক্ সবার চেয়ে ছোটর মতো আর যে নেতা সে হোক্ দাসের মতো। 27 কে প্রধান, যে খেতে আসে, না যে পরিবেশন করে? যে খেতে আসে, সেই নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে দাসের মতো আছি।

28 “আমার পরীক্ষার সময় তোমরাই তো আমার পাশে দাঁড়িয়েছ। 29 তাই আমার পিতা যেমন আমার রাজত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছেন, তেমনি আমিও তোমাদের সেই ক্ষমতা দান করছি। 30 যেন আমার রাজ্যে তোমরা আমার সঙ্গে পান আহার করতে পার, আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারো বংশের বিচার করবে।

বিশ্বাস হারিও না

(মথি 26:31-35; মার্ক 14:27-31; যোহন 13:36-38)

31 “শিমোন, শিমোন, শয়তান গমের মতো চেলে বার করবার জন্য তোমাদের সকলকে চেয়েছে। 32 কিন্তু শিমোন, আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করছি, যেন তোমার বিশ্বাসে ভাঙ্গন না ধরে; আর তুমি যখন আবার পথে ফিরে আসবে তখন তোমার ভাইদের বিশ্বাসে শক্তিশালী করে তুলো।”

33 কিন্তু পিতর বললেন, “প্রভু, আমি আপনার সঙ্গে কারাগারে যেতে, এমনকি মরতেও প্রস্তুত।”

34 যীশু বললেন, “পিতর আমি তোমায় বলছি, আজ রাতে মোরগ ডাকার আগেই তুমি তিনবার অস্বীকার করে বলবে যে তুমি আমায় চেন না।”

কষ্টের জন্য প্রস্তুত হও

35 এরপর যীশু তাঁর প্রেরিতদের বললেন, “আমি যখন টাকার থলি, ঝুলি ও জুতো ছাড়াই তোমাদের প্রচারে পাঠিয়েছিলাম তখন কি তোমাদের কোন কিছুর অভাব হয়েছিল?”

তাঁরা বললেন, “না, কিছুরই অভাব হয় নি।”

36 যীশু তাঁদের বললেন, “কিন্তু এখন বলছি, যার টাকার থলি বা ঝুলি আছে সে তা নিয়ে যাক; আর যার কাছে তলোয়ার নেই সে তার পোশাক বিক্রি করে একটা তলোয়ার কিনুক। 37 কারণ আমি তোমাদের বলছি:

‘তিনি দোষীদের একজন বলে গন্য হবেন।’(A)

শাস্ত্রের এই যে কথা তা অবশ্যই আমাতে পূর্ণ হবে: হ্যাঁ, আমার বিষয়ে এই যে কথা লেখা আছে তা পূর্ণ হতে চলেছে।”

38 তাঁরা বললেন, “প্রভু, দেখুন দুটি তলোয়ার আছে!”

তিনি তাঁদের বললেন, “থাক, এই যথেষ্ট।”

যীশু প্রেরিতদের প্রার্থনা করতে বললেন

(মথি 26:36-46; মার্ক 14:32-42)

39-40 এরপর তিনি তাঁর নিয়ম অনুসারে জৈতুন পর্বতমালায় চলে গেলেন। শিষ্যরা তাঁর পেছন পেছনে চললেন। সেই জায়গায় পৌঁছে তিনি তাঁদের বললেন, “প্রার্থনা কর যেন তোমরা প্রলোভনে না পড়।”

41 পরে তিনি শিষ্যদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন। 42 তিনি বললেন, “পিতা যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে এই পানপাত্র আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও। হ্যাঁ, তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক্!” 43 এরপর স্বর্গ থেকে একজন স্বর্গদূত এসে তাঁকে শক্তি জোগালেন। 44 নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে যীশু আরও আকুলভাবে প্রার্থনা করতে লাগলেন। সেই সময় তাঁর গা দিয়ে রক্তের বড় বড় ফোঁটার মতো ঘাম ঝরে পড়ছিল।[a] 45 প্রার্থনা থেকে উঠে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে দেখলেন, মনের দুঃখে অবসন্ন হয়ে তারা সকলে ঘুমিয়ে পড়েছেন। 46 তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠ, প্রার্থনা কর যেন প্রলোভনে না পড়।”

যীশু বন্দী হলেন

(মথি 26:47-56; মার্ক 14:43-50; যোহন 18:3-11)

47 তিনি তখনও কথা বলছেন, সেই সময় যিহূদার নেতৃত্বে একদল লোক সেখানে এসে হাজির হল। যিহূদা চুমু দিয়ে অভিবাদন করার জন্য যীশুর দিকে এগিয়ে গেল।

48 যীশু তাকে বললেন, “যিহূদা তুমি কি চুমু দিয়ে মানবপুত্রকে ধরিয়ে দেবে?” 49 যীশুর চারপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তখন বুঝতে পারলেন কি ঘটতে চলেছে। তাঁরা বললেন, “প্রভু, আমরা কি তলোয়ার নিয়ে ওদের আক্রমণ করব?” 50 তাঁদের মধ্যে একজন মহাযাজকের চাকরের ডান কান কেটে ফেললেন।

51 এই দেখে যীশু বললেন, “থামো! খুব হয়েছে।” আর তিনি সেই চাকরের কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন।

52 এরপর যীশু, যারা তাঁকে ধরতে এসেছিল, সেই প্রধান যাজক, মন্দির রক্ষী বাহিনীর পদস্থ কর্মচারীদের ও ইহুদী সমাজপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, “ডাকাত ধরতে লোকে যেমন বার হয় তোমরাও কি সেরকম ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছ? 53 প্রত্যেক দিনই তো আমি তোমাদের মাঝে মন্দিরেই ছিলাম, তখন তো তোমরা আমায় স্পর্শ কর নি! কিন্তু এই তোমাদের সময়, অন্ধকারের রাজত্বের এই তো সময়।”

যীশুকে স্বীকার করতে পিতরের ভয়

(মথি 26:57-58, 69-75; মার্ক 14:53-54, 66-72; যোহন 18:12-18, 25-27)

54 তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে মহাযাজকের বাড়িতে নিয়ে চলল। পিতর কিন্তু দূরত্ব বজায় রেখে তাদের পেছনে পেছনে চললেন। 55 মহাযাজকের বাড়ির উঠোনের মাঝখানে লোকেরা আগুন জ্বেলে তার চারপাশে বসল, পিতরও তাদের সঙ্গে বসলেন। 56 একজন চাকরাণী দেখল যে পিতর সেই আগুনের ধারে বসেছেন। সে পিতরকে খুব ভালভাবে দেখে নিয়ে বলল, “আরে, এই লোকটাও তো ওর সঙ্গী ছিল!”

57 কিন্তু পিতর অস্বীকার করে বললেন, “এই মেয়ে, আমি ওঁকে চিনি না।” 58 এর কিছুক্ষণ পরে আর একজন পিতরকে দেখে বলল, “আরে, তুমিও তো ওদেরই দলের একজন!”

কিন্তু পিতর বললেন, “না, মশায়, আমি নই।”

59 এর প্রায় একঘন্টা পরে আর একজন বেশ জোর দিয়ে বলল, “নিঃসন্দেহে এ লোকটা ওরই সঙ্গী ছিল, কারণ এ তো একজন গালীলীয়!”

60 কিন্তু পিতর বললেন, “মশায়, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আপনি কি বলছেন।”

পিতরের কথা শেষ না হতেই একটা মোরগ ডেকে উঠল। 61 তখন প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে তাকালেন, আর প্রভুর কথা পিতরের মনে পড়ে গেল, প্রভু বলেছিলেন, “আজ রাতে মোরগ ডাকার আগে, তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।” 62 তখন তিনি বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

লোকেরা যীশুকে উপহাস করল

(মথি 26:67-68; মার্ক 14:65)

63 যারা যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, তারা এই সময় তাঁকে বিদ্রূপ করতে ও মারতে শুরু করল। 64 তারা যীশুর চোখ বেঁধে দিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, “ভাববাণী বল দেখি, কে তোকে মারল!” 65 তাঁকে অপমান করার জন্য তারা অনেক কথা বলল।

ইহুদী নেতাদের সামনে যীশু

(মথি 26:59-66; মার্ক 14:55-64; যোহন 18:19-24)

66 দিন শুরু হলে প্রবীন নেতারা, প্রধান যাজরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা সকলে মিলে সভা ডাকল আর সেই সভায় তারা যীশুকে হাজির করল। 67 তারা বলল, “তুমি যদি খ্রীষ্ট হও, তবে আমাদের বল!”

যীশু তাদের বললেন, “আমি যদি বলি, তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস করবে না: 68 আর আমি যদি তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করি, তোমরা তার জবাব দেবে না। 69 কিন্তু মানবপুত্র এখন থেকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডানদিকে বসে থাকবেন।”

70 তখন তারা সকলে বলল, “তাহলে তুমি ঈশ্বরের পুত্র?” তিনি জবাব দিলেন, “তোমরা ঠিকই বলেছ যে আমি সেই।”

71 তারা বলল, “আমাদের আর অন্য সাক্ষ্যের কি দরকার? আমরা তো ওর নিজের মুখের কথাই শুনলাম।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International