Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
লূক 6-7

যীশুই বিশ্রামবারের প্রভু

(মথি 12:1-8; মার্ক 2:23-28)

কোন এক বিশ্রামবারে যীশু একটি শস্য ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা শীষ ছিঁড়ে হাতে মেড়ে মেড়ে খাচ্ছিলেন। এই দেখে কয়েকজন ফরীশী বলল, “যে কাজ করা বিশ্রামবারে বিধি-সম্মত নয় তা তোমরা করছ কেন?”

এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তাঁরা কি করেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি? তিনি তো ঈশ্বরের গৃহে ঢুকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত রুটি নিয়ে খেয়েছিলেন, আর তাঁর সঙ্গীদের তা দিয়েছিলেন, যা যাজক ছাড়া অন্য কারো খাওয়া বিধি-সম্মত ছিল না।” যীশু তাদের আরও বললেন, “মানবপুত্রই বিশ্রামবারের প্রভু।”

বিশ্রামবারে যীশু এক ব্যক্তিকে সুস্থ করলেন

(মথি 12:9-14; মার্ক 3:1-6)

আর এক বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-গৃহে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। সেখানে একজন লোক ছিল যার ডান হাতটি শুকিয়ে গিয়েছিল। তিনি তাকে বিশ্রামবারে সুস্থ করেন কি না দেখার জন্য ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা তাঁর ওপর নজর রাখছিল, যেন তারা যীশুর বিরুদ্ধে দোষ দেবার কোন সূত্র খুঁজে পায়। যীশু তাদের মনের চিন্তা জানতেন, তাই যে লোকটির হাত শুকিয়ে গিয়েছিল তাকে বললেন, “তুমি সকলের সামনে উঠে দাঁড়াও!” তখন সেই লোকটি সকলের সামনে উঠে দাঁড়াল। যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের একটা প্রশ্ন করি, বিশ্রামবারে কি করা বিধিসম্মত, ভাল করা না ক্ষতি করা? কাউকে প্রাণে বাঁচানো না ধ্বংস করা?”

10 চারপাশে তাদের সকলের দিকে তাকিয়ে তিনি লোকটিকে বললেন, “তোমার হাতখানা বাড়াও।” সে তাই করলে তার হাত সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেল। 11 কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা রাগে জ্বলতে লাগল। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল, “যীশুর প্রতি কি করা হবে?”

যীশু বারোজন প্রেরিতকে মনোনীত করলেন

(মথি 10:1-4; মার্ক 3:13-19)

12 যীশু সেই সময় একবার প্রার্থনা করার জন্য একটি পর্বতে গেলেন। সারা রাত ধরে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় কাটালেন। 13 সকাল হলে তিনি তাঁর অনুগামীদেব নিজের কাছে ডাকলেন ও তাঁদের মধ্য থেকে বারোজনকে মনোনীত করে তাঁদের “প্রেরিত” পদে নিয়োগ করলেন। তাঁরা হলেন,

14 শিমোন যার নাম রাখলেন তিনি পিতর

আর তার ভাই আন্দ্রিয়,

যাকোব

ও যোহন

আর ফিলিপ

ও বর্থলময়,

15 মথি,

থোমা,

আলফেয়ের ছেলে যাকোব,

শিমোন যে ছিল দেশ ভক্ত দলের লোক।

16 যাকোবের ছেলে যিহূদা

আর যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয়, যে পরে বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিল।

যীশু শিক্ষা দিলেন ও আরোগ্যদান করলেন

(মথি 4:23-25; 5:1-12)

17 যীশু তাঁর প্রেরিতদের[a] সঙ্গে নিয়ে পর্বত থেকে নেমে একটা সমতল জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। সেখানে তাঁর আরো অনুগামী এসে জড়ো হয়েছিল। সমস্ত যিহূদা জেরুশালেম এবং সোর সীদোনের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে বিস্তর লোক তাঁর কাছে এসে জড় হল। 18 তাঁরা তার কথা শুনতে ও তাদের রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থ হতে তাঁর কাছে এসেছিল। যাঁরা মন্দ আত্মার প্রকোপে কষ্ট পাচ্ছিল তারাও সুস্থ হল। 19 সকলেই তাঁকে স্পর্শ করার চেষ্টা করতে লাগল, কারণ তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বার হয়ে তাদের আরোগ্য দান করছিল।

20 যীশু তাঁর অনুগামীদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,

“দরিদ্ররা তোমরা ধন্য,
    কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদেরই।
21 তোমরা এখন যারা ক্ষুধিত, তারা ধন্য
    কারণ তোমরা পরিতৃপ্ত হবে।
তোমরা এখন যারা চোখের জল ফেলছ, তারা ধন্য,
    কারণ তোমরা আনন্দ করবে।

22 “ধন্য তোমরা যখন মানবপুত্রের লোক বলে অন্যরা তোমাদের ঘৃণা করে, সমাজচ্যুত করে, অপমান করে, তোমাদের নাম মুখে আনতে চায় না এবং তোমাদের কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। 23 সেই দিন তোমরা আনন্দ করবে, আনন্দে নৃত্য করবে কারণ দেখ স্বর্গে তোমাদের জন্য পুরস্কার সঞ্চিত আছে। ওদের পূর্বপুরুষরা ভাববাদীদের সঙ্গে এই রকমই ব্যবহার করেছে।

24 “কিন্তু ধনী ব্যক্তিরা, ধিক্ তোমাদের,
    কারণ তোমরা তো এখনই সুখ পাচ্ছ।
25 তোমরা যারা আজ পরিতৃপ্ত, ধিক্ তোমাদের,
    কারণ তোমরা ক্ষুধার্ত হবে।
তোমরা যারা আজ হাসছ, ধিক্ তোমাদের,
    কারণ তোমরা কাঁদবে, শোক করবে।

26 “ধিক্ তোমাদের যখন সব লোক তোমাদের প্রশংসা করে, কারণ এইসব লোকদের পূর্বপুরুষরা ভণ্ড ভাববাদীদেরও প্রশংসা করত।

শত্রুদের ভালবাসো

(মথি 5:38-48; 7:12)

27 “তোমরা যারা শুনছ, আমি কিন্তু তোমাদের বলছি, তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো। যারা তোমাদের ঘৃণা করে, তাদের মঙ্গল করো। 28 যারা তোমাদের অভিশাপ দেয়, তাদের আশীর্বাদ করো। যারা তোমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তাদের জন্য প্রার্থনা করো। 29 কেউ যদি তোমার একগালে চড় মারে, তার কাছে অপর গালটি বাড়িয়ে দাও। কেউ যদি তোমার চাদর কেড়ে নেয়, তাকে তোমার জামাটিও নিতে দাও। 30 তোমার কাছে যে চায় তাকে দাও। আর তোমার কোন জিনিস যদি কেউ নেয়, তবে তা ফেরত চেও না। 31 অন্যের কাছ থেকে তুমি যেমন ব্যবহার পেতে চাও, তাদের সঙ্গেও তুমি তেমনি ব্যবহার করো।

32 “যারা তোমাদের ভালবাসে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই ভালবাস, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? কারণ পাপীরাও তো একই রকম করে। 33 যারা তোমাদের উপকার করে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই উপকার কর, তাতে প্রশংসার কি আছে? পাপীরাও তো তাই করে। 34 যারা ধার শোধ করতে পারে এমন লোকদেরই যদি কেবল তোমরা ধার দাও, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? এমন কি পাপীরাও তা ফিরে পাবার আশায় তাদের মতো পাপীদের ধার দেয়।

35 “কিন্তু তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো, তাদের মঙ্গল করো, আর কিছুই ফিরে পাবার আশা না রেখে ধার দিও। তাহলে তোমাদের মহাপুরস্কার লাভ হবে, আর তোমরা হবে পরমেশ্বরের সন্তান, কারণ তিনি অকৃতজ্ঞ ও দুষ্টদের প্রতিও দয়া করেন। 36 তোমাদের পিতা যেমন দয়ালু তোমরাও তেমন দয়ালু হও।

নিজেদের দিকে তাকাও

(মথি 7:1-5)

37 “অপরের বিচার করো না, তাহলে তোমাদেরও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না। অপরের দোষ ধরো না, তাহলে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে না। অন্যকে ক্ষমা করো, তাহলে তোমাদেরও ক্ষমা করা হবে। 38 দান কর, প্রতিদান তুমিও পাবে। তারা তোমাদের অনেক বেশী করে, চেপে চেপে, ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে উপচে দেবে। কারণ অন্যদের জন্য যে মাপে মেপে দিচ্ছ, সেই মাপেই তোমাদের মেপে দেওয়া হবে।”

39 যীশু তাদের কাছে আর একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, “একজন অন্ধ কি অন্য একজন অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? তাহলে কি তারা উভয়েই গর্তে পড়বে না? 40 কোন ছাত্র তার শিক্ষকের উর্দ্ধে নয়; কিন্তু শিক্ষা সম্পূর্ণ হলে প্রত্যেক ছাত্র তার শিক্ষকের মতো হতে পারে।

41 “তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে তুমি সেটা দেখছ, কিন্তু তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে সেটা দেখছ না, কেন? 42 তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে তা যখন লক্ষ্য করছ না, তখন কেমন করে তোমার ভাইকে বলতে পার, ‘ভাই তোমার চোখে যে কুটোটা আছে, এস তা বার করে দিই।’ কেন তুমি একথা বল? ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে তক্তা বার করে ফেল, আর তবেই তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে, তা বার করার জন্য স্পষ্ট করে দেখতে পাবে।

দু’প্রকার ফল

(মথি 7:17-20; 12:34-35)

43 “এমন কোন ভাল গাছ নেই যাতে খারাপ ফল ধরে, আবার এমন কোন খারাপ গাছ নেই যাতে ভাল ফল ধরে। 44 প্রত্যেক গাছকে তার ফল দিয়েই চেনা যায়। লোকে কাঁটা-ঝোপ থেকে ডুমুর ফল তোলে না, বা বুনো ঝোপ থেকে দ্রাক্ষা সংগ্রহ করে না। 45 সৎ‌ লোকের অন্তরের ভাল ভাণ্ডার থেকে ভাল জিনিসই বার হয়। আর দুষ্ট লোকের মন্দ অন্তর থেকে মন্দ বিষয়ই বার হয়। মানুষের অন্তরে যা থাকে তার মুখ সে কথাই বলে।

দু’প্রকার লোক

(মথি 7:24-27)

46 “তোমরা কেন আমাকে ‘প্রভু, প্রভু’ বলে ডাক, অথচ আমি যা বলি তা কর না? 47 যে কেউ আমার কাছে আসে ও আমার কথা শুনে সেসব পালন করে, সে কার মতো? 48 সে এমন একজন লোকের মতো, যে বাড়ি তৈরী করতে গভীর ভাবে খুঁড়ে পাথরের ওপর ভিত গাঁথল। তাই যখন বন্যা এল, তখন নদীর জলের ঢেউ এসে সেই বাড়িটিতে আঘাত করল, কিন্তু তা নড়াতে পারল না, কারণ তার ভিত ছিল মজবুত।

49 “যে আমার কথা শোনে অথচ সেই মতো কাজ না করে, সে এমন একজন লোকের মতো, যে মাটির উপর ভিত ছাড়াই বাড়ি তৈরী করেছিল। পরে নদীর স্রোত এসে তাতে আঘাত করলে তখনই বাড়িটা ভেঙে পড়ল এবং একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল।”

একজন দাসকে যীশু সুস্থ করলেন

(মথি 8:5-13; যোহন 4:43-54)

যীশু লোকদের যা বলতে চেয়েছিলেন তা বলা শেষ করে কফরনাহূম শহরে গেলেন। সেখানে একজন রোমীয় শতপতির এক ক্রীতদাস গুরুতর অসুখে মরনাপন্ন হয়েছিল। এই ক্রীতদাসটি শতপতির অতি প্রিয় ছিল। শতপতি যখন যীশুর কথা শুনতে পেলেন তখন ইহুদীদের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে যীশুর কাছে বলে পাঠালেন, যেন যীশু এসে তাঁর দাসের জীবন রক্ষা করেন। তাঁরা যীশুর কাছে এসে তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বললেন, “যাঁর জন্য আপনাকে এই কাজ করতে বলছি, তিনি একজন যোগ্য লোক। কারণ তিনি আমাদের লোকদের ভালবাসেন, আর তিনি আমাদের জন্য একটা সমাজ-গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন।”

তখন যীশু তাদের সঙ্গে গেলেন। তিনি যখন সেই বাড়ির কাছাকাছি এসেছেন তখন সেই শতপতি তাঁর বন্ধুদের দিয়ে বলে পাঠালেন, “প্রভু আপনি আর কষ্ট করবেন না, কারণ আপনি যে আমার বাড়িতে আসেন তার যোগ্য আমি নই। এই কারণেই আমি নিজেকে আপনার কাছে যাবার উপযুক্ত মনে করি না। আপনি কেবল মুখে বলুন তাতেই আমার ঐ দাস ভাল হয়ে যাবে। কারণ আমিও একজনের অধীনে কাজ করি, আর আমার অধীনেও সৈনিকরা কাজ করে। আমি যদি কাউকে বলি ‘যাও’ তখন সে যায়, আবার কাউকে যদি বলি ‘এস’ তবে সে আসে। আর আমি যখন একজনকে বলি, ‘এটা কর,’ তখন সে তা করে।”

এই কথা শুনে যীশু আশ্চর্য হলেন। যে সব লোক ভীড় করে তাঁর পিছনে পিছনে আসছিল, তাদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের বলছি, এমন কি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেও এত বড় বিশ্বাস আমি কখনও দেখিনি।”

10 সেনাপতি যাদের পাঠিয়েছিলেন, তারা বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখল যে সেই চাকর ভাল হয়ে গেছে।

যীশু একজনের জীবন দান করলেন

11 এর অল্প দিন পরেই যীশু নায়িন্ নামে একটি নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা এবং আরও অনেক লোক তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 12 তিনি যখন সেই নগরের ফটকের কাছাকাছি এসেছেন, তখন একজন মৃত লোককে বয়ে নিয়ে যাওযা হচ্ছিল। সেই মৃত লোকটি ছিল তার বিধবা মায়ের একমাত্র পুত্র। সেই নগরের অনেক লোক সেই বিধবার সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 13 সেই বিধবাকে দেখে তার জন্য প্রভুর খুবইদয়া হল। তিনি তাকে বললেন, “তুমি কেঁদো না।” 14 তারপর তিনি কাছে এসে শবের খাট ছুঁলেন, তখন যারা মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়িয়ে পড়ল। এমন সময় যীশু বললেন, “যুবক, আমি তোমায় বলছি তুমি ওঠো।” 15 তখন সেই লোকটি উঠে বসল, আর কথা বলতে শুরু করল। যীশু তখন তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।

16 এই দেখে সকলের মন ভয় ও ভক্তিতে পূর্ণ হল। তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলতে লাগল, “আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদীর আবির্ভাব হয়েছে।” তারা আরও বলতে লাগল, “ঈশ্বর তাঁর লোকদের সাহায্য করতে এসেছেন।”

17 যীশুর বিষয়ে এইসব কথা যিহূদিয়া ও তার আশপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল।

যোহনের জিজ্ঞাসা

(মথি 11:2-19)

18 বাপ্তিস্মদাতা যোহনের অনুগামীরা এইসব ঘটনার কথা যোহনকে জানাল। তখন যোহন তার দুজন অনুগামীকে ডেকে 19 প্রভুর কাছে জিজ্ঞেস করে পাঠালেন যে, “যাঁর আগমণের কথা আছে আপনিই কি সেই, না আমরা অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করব?”

20 সেই লোকেরা যীশুর কাছে এসে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহন আপনার কাছে আমাদের জিজ্ঞেস করতে পাঠিয়েছেন। ‘যাঁর আসবার কথা আপনিই কি সেই ব্যক্তি, না আমরা অন্য কারো অপেক্ষায় থাকব?’”

21 সেই সময় যীশু অনেক লোককে বিভিন্ন রোগ ও ব্যাধি থেকে সুস্থ করছিলেন, অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকদের ভাল করছিলেন, আর অনেক অন্ধ লোককে দৃষ্টি শক্তি দান করছিলেন। 22 তখন তিনি তাদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, “তোমরা যা দেখলে ও শুনলে তা গিয়ে যোহনকে বল। অন্ধরা দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, কুষ্ঠ রোগীরা সুস্থ হচ্ছে, বধিররা শুনছে, মরা মানুষ বেঁচে উঠছে; আর দরিদ্ররা সুসমাচার শুনতে পাচ্ছে। 23 ধন্য সেই লোক, যে আমাকে গ্রহণ করার জন্য মনে কোন দ্বিধা বোধ করে না।”

24 যোহনের কাছ থেকে যারা এসেছিল তারা চলে গেলে পর যীশু সমবেত সেই লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে বললেন, “তোমরা প্রান্তরের মধ্যে কি দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে একটি বেত গাছ দুলছে তাই? 25 তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন লোক বেশ জমকালো পোশাক পরা? না। যারা দামী জামা কাপড় পরে এবং বিলাসে জীবন কাটায় তারা তো প্রাসাদে থাকে। 26 তবে তোমরা কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন ভাববাদীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যাকে দেখেছ তিনি একজন ভাববাদীর থেকেও মহান। 27 ইনি সেই লোক যার বিষয়ে লেখা হয়েছে:

‘দেখ, আমি তোমার আগে আগে আমার এক সহায়ককে পাঠাচ্ছি।
    সে তোমার আগে গিয়ে তোমার পথ প্রস্তুত করবে।’(A)

28 আমি তোমাদের বলছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকল মানুষের মধ্যে যোহনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই, তবু ঈশ্বরের রাজ্যে ক্ষুদ্রতম ব্যক্তিও যোহনের চেয়ে মহান।”

29 (যারা যীশুর প্রচার শুনেছিল, তাদের মধ্যে পাপীষ্ঠরা ও কর আদায়কারীরাও যোহনের বাপ্তিস্ম নিয়ে স্বীকার করল যে ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ। 30 কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নিতে অস্বীকার করে তাদের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করল।)

31 “তাহলে আমি কিসের সঙ্গে এই যুগের লোকদের তুলনা করব? এরা কেমন ধরণের লোক? 32 এরা ছোট ছেলেদের মতো, যারা হাটে বসে একে অপরকে বলে,

‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশি বাজালাম,
    কিন্তু তোমরা নাচলে না।
আমরা তোমাদের জন্য শোকগাথা গাইলাম,
    কিন্তু তোমরা কাঁদলে না।’

33 কারণ বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসেছেন, তিনি রুটি খান না আর দ্রাক্ষারসও পান করেন না, আর তোমরা বল, ‘ওকে ভূতে পেয়েছে।’ 34 মানবপুত্র এসে পানাহার করেন; আর তোমরা বল, ‘দেখ! ও পেটুক, মদ্যপায়ী, আবার পাপী ও কর আদায়কারীদের বন্ধু।’ 35 প্রজা তার কাজের দ্বারাই প্রমাণ করে যে তা নির্দোষ।”

শিমোন ফরীশী

36 একদিন একজন ফরীশী তার বাড়িতে যীশুকে নিমন্ত্রণ করল। তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে সেখানে খাবার আসন নিলেন।

37 সেই নগরে একজন দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ছিল। ফরীশীর বাড়িতে যীশু খেতে এসেছেন জানতে পেরে সে একটা শ্বেত পাথরের শিশিতে করে বহুমূল্য আতর নিয়ে এল। 38 সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে নতজানু হয়ে কেঁদে কেঁদে চোখের জলে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল, আর তাঁর পায়ে চুমু দিয়ে সেই আতর তাঁর পায়ে ঢেলে দিল।

39 যে ফরীশী যীশুকে নিমন্ত্রণ করেছিল, এই দেখে সে মনে মনে বলল, “এই লোকটা যদি ভাববাদী হয় তবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারত, যে তার পা ছুঁচ্ছে সে কে এবং কি ধরণের স্ত্রীলোক, এবং এও জানতে পারত যে স্ত্রীলোকটি পাপী।”

40 এর জবাবে যীশু তাকে বললেন, “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।”

শিমোন বলল, “বেশ তো গুরু, বলুন।”

41 যীশু বললেন, “কোন এক মহাজনের কাছে দুজন লোক টাকা ধারত। একজন পাঁচশো রূপোর মুদ্রা আর একজন পঞ্চাশ রূপোর মুদ্রা। 42 কিন্তু তারা কেউই ঋণ শোধ করতে না পারাতে তিনি দয়া করে উভয়ের ঋণই মকুব করে দিলেন। এখন এদের মধ্যে কে তাঁকে বেশী ভালবাসবে?”

43 শিমোন বলল, “আমি মনে করি যার বেশী ঋণ মকুব করা হল সে-ই।”

যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।” 44 এরপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে শিমোনকে বললেন, “তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে দেখছ? আমি তোমার বাড়িতে এলাম আর তুমি আমায় পা ধোবার জল পর্যন্ত দিলে না। কিন্তু ও চোখের জলে আমার পা ধুইয়ে দিল আর নিজের চুল দিয়ে তা মুছিয়ে দিল। 45 স্বাগত জানাবার প্রথা অনুসারে তুমি আমায় চুমু দিলে না; কিন্তু আমি আসার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিয়ে চলেছে। 46 তুমি আমার মাথায় তেল দিয়ে অভিষেক করলে না; কিন্তু সে আমার পায়ে সুগন্ধি আতর ঢেলে তা অভিষিক্ত করল। 47 এতেই বোঝা যায় যে সে বেশী ভালবাসা দেখাচ্ছে, সেইজন্যই আমি বলছি, এর পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে; কিন্তু যাকে অল্প ক্ষমা করা হয়, সে অল্প ভালবাসে।”

48 এরপর যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, “তোমার পাপের ক্ষমা হল।”

49 যারা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিল, তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “ইনি কে যে পাপ ক্ষমা করেন?”

50 কিন্তু যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, “তোমার বিশ্বাসই তোমায় মুক্ত করেছে, তোমার শান্তি হোক্।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International