Beginning
অপরের বিচারের বিষয়ে যীশুর শিক্ষা
(লূক 6:37-38, 41-42)
7 “পরের বিচার করো না, তাহলে তোমার বিচারও কেউ করবে না। 2 কারণ যেভাবে তোমরা অন্যের বিচার কর, সেই ভাবে তোমাদেরও বিচার করা হবে; আর যেভাবে তুমি মাপবে সেই ভাবে তোমার জন্যও মাপা হবে।
3 “তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে কেবল তা-ই দেখছ; কিন্তু নিজের চোখের মধ্যে যে তক্তা আছে তা দেখতে পাও না? 4 যখন তোমার নিজের চোখেই একটা তক্তা রয়েছে তখন কিভাবে তোমার ভাইকে বলছ, ‘এস তোমার চোখ থেকে কুটোটা বার করে দিই?’ 5 ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে তক্তাটা বার করে ফেলো, তাহলে তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটোটা বার করার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে।
6 “কোন পবিত্র বস্তু কুকুরকে দিও না আর শুয়োরের সামনে তোমাদের মুক্তো ছুঁড়ো না, তাহলে সে তা পায়ের তলায় মাড়িয়ে নষ্ট করবে ও তোমার দিকে ফিরে তোমায় আক্রমণ করবে।
প্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর
(লূক 11:9-13)
7 “চাইতে থাক, তোমাদের দেওয়া হবে। খুঁজতে থাক, পাবে। দরজায় ধাক্কা দিতে থাক, তোমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হবে। 8 কারণ যে চাইতে থাকে সে পায়, যে খুঁজতে থাকে সে খুঁজে পায়, আর যে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে তার জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয়।
9 “তোমার ছেলে যদি তোমার কাছে রুটি চায়, তবে তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে তার সন্তানকে রুটির বদলে পাথরের টুকরো দেবে? 10 যদি সে একটা মাছ চায় তবে বাবা কি তার হাতে একটা সাপ তুলে দেবে? নিশ্চয় না। 11 তোমরা মন্দ হয়েও যদি তোমাদের সন্তানদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জানো, তবে তোমাদের স্বর্গের পিতা ঈশ্বরের কাছে যারা চায়, তাদের তিনি নিশ্চয়ই উৎকৃষ্ট জিনিস দেবেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিধান
12 “তাই অপরের কাছ থেকে তোমরা যে ব্যবহার প্রত্যাশা কর, তাদের প্রতিও তেমনি ব্যবহার কর। এটাই হল মোশির বিধি-ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের শিক্ষার অর্থ।
স্বর্গে এবং নরকে যাওয়ার পথ
(লূক 13:24)
13 “সংকীর্ণ দরজা দিয়ে সেই পথে প্রবেশ করো, যে পথ স্বর্গের দিকে নিয়ে যায়। যে পথ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় তার দরজা প্রশস্ত, পথও চওড়া, বহু লোক সেই পথেই চলছে। 14 কিন্তু যে পথ জীবনের দিকে গেছে তার দরজা সংকীর্ণ আর পথও দুর্গম, খুব অল্প লোকই তার সন্ধান পায়।
লোকেরা যা করে তা লক্ষ্য কর
(লূক 6:43-44; 13:25-27)
15 “ভণ্ড ভাববাদীদের থেকে সাবধান। তারা তোমাদের কাছে নিরীহ মেষের ছদ্মবেশে আসে অথচ ভেতরে তারা হিংস্র নেকড়ে বাঘ। 16 তাদের জীবনের ফল দেখেই তোমরা তাদের চিনতে পারবে। কেউ কি কাঁটাঝোপের মধ্যে থেকে দ্রাক্ষা বা শিয়ালকাঁটার ভেতর থেকে ডুমুর পেতে পারে? 17 ঠিক সেই ভাবে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফলই ধরে, কিন্তু খারাপ গাছে খারাপ ফলই ধরে। 18 ভাল গাছে খারাপ ফল এবং খারাপ গাছে ভাল ফল ধরতে পারে না। 19 যে গাছে ভাল ফল ধরে না তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হয়। 20 তাই আমি তোমাদের আবার বলছি, তারা যা করে তা দেখেই তোমরা তাদের চিনতে পারবে।
21 “যারা আমাকে প্রভু, প্রভু বলে তাদের প্রত্যেকেই যে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে তা নয়। আমার স্বর্গের পিতার ইচ্ছা যে পালন করবে, কেবল সেই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে। 22 সেই দিন অনেকে আমায় বলবে, ‘প্রভু, প্রভু আমরা কি আপনার নামে ভাববাণী বলিনি? আপনার নামে আমরা কি ভূতদের তাড়াই নি? আপনার নামে আমরা কি অনেক অলৌকিক কাজ করিনি?’ 23 তখন আমি তাদের স্পষ্ট বলব, ‘আমি তোমাদের কখনও আপন বলে জানিনি, দুষ্টের দল! আমার সামনে থেকে দূর হও।’
একজন জ্ঞানী লোক এবং একজন মুর্খ লোক
(লূক 6:47-49)
24 “তাই বলি, যে কেউ আমার কথা শোনে ও তা পালন করে, সে এমন এক বুদ্ধিমান লোকের মতো যে পাথরের ভিতের ওপর তার বাড়ি তৈরী করল। 25 পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা এল এবং প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস বয়ে সেই বাড়ির গায়ে লাগল; কিন্তু সেই বাড়িটা ধসে পড়ল না, কারণ তা পাথরের ওপরে তৈরী করা হয়েছিল।
26 “আবার যে কেউ আমার এইসব কথা শুনে তা পালন না করে, সে একজন মূর্খ লোকের মতো, যে বালির উপরে বাড়ি তৈরী করেছিল। 27 পরে বৃষ্টি নামল, বন্যা এল, আর ঝোড়ো বাতাস এসে তার বাড়িতে ধাক্কা মারল, তাতে বাড়িটা কি সাংঘাতিক ভাবেই না ধসে পড়ল।”
28 যীশু যখন এইসব কথা বলা শেষ করলেন, তখন জনতা তাঁর এইসব শিক্ষা শুনে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। 29 কারণ যীশু একজন ব্যবস্থার শিক্ষকের মতো শিক্ষা দিচ্ছিলেন না, বরং যার অধিকার আছে সেই রকম লোকের মতোই শিক্ষা দিচ্ছিলেন।
কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্যদান
(মার্ক 1:40-45; লূক 5:12-16)
8 যীশু সেই পাহাড় থেকে নেমে এলে অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগল। 2 সেই সময় একজন কুষ্ঠ রোগী যীশুর কাছে এসে তাঁর সামনে নতজানু হয়ে বলল, “প্রভু, আপনি ইচ্ছে করলেই আমাকে ভাল করে দিতে পারেন।”
3 তখন যীশু সেই কুষ্ঠ রোগীর দিকে হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করলেন। তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আমি তাই-ই চাই। তুমি ভাল হয়ে যাও।” সঙ্গে সঙ্গে তার কুষ্ঠ রোগ ভাল হয়ে গেল। 4 তখন যীশু তাকে বললেন, “দেখ, তুমি কাউকে একথা বোলো না, বরং যাও যাজকের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও; আর গিয়ে মোশির আদেশ অনুসারে নৈবেদ্য উৎসর্গ কর। তাতে তারা জানবে যে তুমি ভাল হয়ে গেছ।”
শতপতির দাসের আরোগ্যলাভ
(লূক 7:1-10; যোহন 4:43-54)
5 এরপর যীশু যখন কফরনাহূম শহরে গেলেন, তখন একজন শতপতি তাঁর কাছে এসে অনুনয় করে বললেন, 6 “প্রভু, আমার চাকরের পক্ষাঘাত হয়েছে, সে বিছানায় পড়ে আছে ও যন্ত্রণায় ছট্ফট্ করছে।”
7 যীশু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, আমি যাব, এবং তাকে সুস্থ করব।”
8 সেই শতপতি তখন যীশুকে বললেন, “প্রভু, আমি এমন যোগ্য নই যে আমার বাড়ীতে আপনি আসবেন। আপনি কেবল মুখে বলে দিন, তাতেই আমার চাকর ভাল হয়ে যাবে। 9 আমি নিজে অপরের কর্তৃত্বের অধীন আর আমার সৈন্যদের উপরে আমি কর্তৃত্ব করি। আমি কাউকে ‘যাও’ বললে সে যায়, আবার কাউকে ‘এস’ বললে সে আসে; আর আমার চাকরকে ‘এটা কর’ বললে সে তা করে।”
10 যীশু একথা শুনে আশ্চর্য হলেন; যাঁরা তাঁর পিছনে পিছনে যাচ্ছিল তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সমগ্র ইস্রায়েলে আমি এত বেশী বিশ্বাস কারও মধ্যে দেখতে পাইনি। 11 আমি তোমাদের আরো বলছি যে, পূর্ব ও পশ্চিম থেকে অনেকে আসবে আর অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের সঙ্গে স্বর্গরাজ্যে ভোজে বসবে। 12 কিন্তু যাঁরা রাজ্যের উত্তরাধিকারী, তাদের বাইরে অন্ধকারে ফেলে দেওয়া হবে। সেখানে লোকেরা কান্নাকাটি করবে ও যন্ত্রণায় দাঁতে দাঁত ঘষবে।”
13 এরপর যীশু সেই শতপতিকে বললেন, “যাও, তুমি যেমন বিশ্বাস করেছ, তেমনি হোক্।” আর সেই মূহুর্তেই তার চাকর সুস্থ হয়ে গেল।
যীশু অনেক লোককে সুস্থ করলেন
(মার্ক 1:29-34; লূক 4:38-41)
14 যীশু পিতরের বাড়ীতে গিয়ে দেখলেন, পিতরের শাশুড়ীর ভীষণ জ্বর হয়েছে, আর তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন। 15 যীশু তাঁর হাত স্পর্শ করা মাত্রই জ্বর ছেড়ে গেল। তখন তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে যীশুর সেবা করতে লাগলেন।
16 সন্ধ্যা হলে লোকেরা ভূতে পাওয়া অনেক লোককে যীশুর কাছে নিয়ে এল। আর তিনি তাঁর হুকুমে সেই সব ভূতদের দূর করে দিলেন। এছাড়া তিনি রোগীদের সুস্থ করলেন। 17 এর দ্বারা ভাববাদী যিশাইয়র ভাববাণী পূর্ণ হল:
“তিনি আমাদের দুর্বলতা গ্রহণ করলেন, আমাদের ব্যাধিগুলি বহন করলেন।”(A)
যীশুকে অনুসরণ
(লূক 9:57-62)
18 যীশু যখন দেখলেন যে তাঁর চারপাশে অনেক লোক জড়ো হয়েছে, তখন হ্রদের ওপারে যাওয়ার জন্য অনুগামীদের আদেশ দিলেন। 19 একজন ব্যবস্থার শিক্ষক তাঁর কাছে এসে বললেন, “গুরু, আপনি যেখানে যাবেন আমিও সেখানে যাব।”
20 তখন যীশু তাকে বললেন, “শিয়ালের গর্ত আছে এবং আকাশের পাখীদের বাসা আছে; কিন্তু মানবপুত্রের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।”
21 তাঁর অনুগামীদের মধ্যে আর একজন বললেন, “প্রভু আগে আমার বাবাকে কবর দিয়ে আসার অনুমতি দিন, তারপর আমি আপনাকে অনুসরণ করব।”
22 কিন্তু যীশু তাকে বললেন, “তুমি আমার সঙ্গে এস, যারা মৃত তারাই মৃতদের কবর দেবে।”
যীশু ঝড় থামালেন
(মার্ক 4:35-41; লূক 8:22-25)
23 এরপর যীশু একটা নৌকাতে উঠলেন আর তাঁর শিষ্যরা তাঁর সঙ্গে গেলেন। 24 সেই হ্রদের মধ্যে হঠাৎ ভীষণ ঝড় উঠল, তাতে নৌকার উপর ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল। যীশু তখন ঘুমোচ্ছিলেন। 25 তাই শিষ্যরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর ঘুম ভাঙিয়ে বললেন, “প্রভু বাঁচান! আমরা যে ডুবে মরলাম।”
26 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “হে অল্প বিশ্বাসীর দল! কেন তোমরা এত ভয় পাচ্ছ?” তারপর তিনি উঠে ঝোড়ো বাতাস ও হ্রদের ঢেউকে ধমক দিলেন, তখন সব কিছু শান্ত হল।
27 এতে শিষ্যরা আশ্চর্য হয়ে বললেন, “ইনি কিরকম লোক? এঁর কথা এমন কি বাতাস ও সাগরও শোনে!”
যীশু দুজন লোকের ভূত ছাড়ালেন
(মার্ক 5:1-20; লূক 8:26-39)
28 যীশু যখন হ্রদের অপর পারে গাদারীয়দের দেশে এলেন সেই সময় ভূতে পাওয়া দুজন লোক কবর থেকে বেরিয়ে তাঁর সামনে এল। তারা এমন ভয়ঙ্কর ছিল যে কোন মানুষ সেই পথ দিয়ে চলতে পারত না। 29 তারা চিৎকার করে বলল, “হে ঈশ্বরের পুত্র, আপনি আমাদের নিয়ে কি করতে চান? নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কি আপনি আমাদের নির্যাতন করতে এসেছেন?”
30 সেখান থেকে কিছু দূরে এক পাল শুয়োর চরছিল। 31 তখন ভূতেরা যীশুকে অনুনয় করে বলল, “আপনি যদি আমাদের তাড়িয়েই দেবেন তবে ঐ শুয়োর পালের মধ্যে ঢুকতে হুকুম দিন।”
32 যীশু তাদের বললেন, “তাই যাও!” তখন তারা সেই লোকদের মধ্যে থেকে বার হয়ে এসে সেই শুয়োরগুলির মধ্যে গিয়ে ঢুকল; তাতে সেই শুয়োরের পাল ঢালু পাড় দিয়ে জোরে দৌড়াতে দৌড়াতে হ্রদের জলে গিয়ে ডূবে মরল। 33 যারা সেই পাল চরাচ্ছিল, তারা দৌড়ে পালাল। তারা নগরের মধ্যে গিয়ে সব খবর জানাল। বিশেষ করে সেই ভূতে পাওয়া লোকদের বিষয়ে বলল। 34 তখন নগরের সব লোক যীশুকে দেখার জন্য বার হয়ে এল। তারা যীশুর দেখা পেয়ে তাঁকে অনুনয় করে বলল তিনি যেন তাদের অঞ্চল ছেড়ে চলে যান।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International