Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
মার্ক 15-16

রাজ্যপাল পীলাত প্রশ্ন করলেন

(মথি 27:1-2, 11-14; লূক 23:1-5; যোহন 18:28-38)

15 সকাল হতেই প্রধান যাজকরা, বয়স্ক ইহুদী নেতারা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও সমস্ত মহাসভার লোকেরা শলাপরামর্শ করলেন। তাঁরা যীশুকে বেঁধে পীলাতের কাছে পাঠালেন এবং তাঁর হাতে তুলে দিলেন।

তখন পীলাত তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”

যীশু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, আপনি যেমন বললেন তেমনই।”

তখন প্রধান যাজকরা যীশুর বিরুদ্ধে নানান দোষের কথা বলতে লাগলেন। পীলাত তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? দেখ, এরা তোমার বিরুদ্ধে কত অভিযোগ করছে!”

কিন্তু তবু যীশু কোন উত্তর দিলেন না দেখে পীলাত আশ্চর্য হয়ে গেলেন।

যীশুকে মুক্ত করতে পীলাতের ব্যর্থ চেষ্টা

(মথি 27:15-31; লূক 23:13-25; যোহন 18:39–19:16)

নিস্তারপর্বের সময়ে পীলাত লোকদের ইচ্ছে মতো একজন বন্দীকে মুক্ত করে দিতেন। সেই সময় বারাব্বা নামে একটি লোক বিদ্রোহীদের সাথে কারাগারে ছিল, যারা বিদ্রোহের সময় অনেক খুন জখম করেছিল।

আর তিনি পীলাত লোকদের জন্য সচরাচর যা করতেন, সেই লোকেরা তাকে তাই করতে বলল। পীলাত তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “ইহুদীদের রাজাকে আমি তোমাদের জন্য মুক্ত করে দিই, এটাই কি তোমাদের ইচ্ছা?” 10 কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রধান যাজকরা হিংসার বশবর্তী হয়ে যীশুকে তার হাতে তুলে দিয়েছিল। 11 কিন্তু প্রধান যাজকরা জনতাকে ক্ষেপিয়ে তুলল যাতে তারা যীশুর পরিবর্তে বারাব্বার মুক্তি দাবি করে।

12 কিন্তু পীলাত আবার তাদের বললেন, “তবে তোমরা যাকে ইহুদীদের রাজা বল তাকে কি করব?”

13 তারা চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ক্রুশে দাও!”

14 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “কেন? এ কি মন্দ কাজ করেছে?”

তারা আরও চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ক্রুশে দাও!”

15 তখন পীলাত লোকদের খুশী করতে বারাব্বাকে তাদের জন্য ছেড়ে দিলেন এবং যীশুকে চাবুক মেরে ক্রুশে বিদ্ধ করবার জন্য তাদের হাতে তুলে দিলেন।

16 পরে সেনারা প্রাসাদের মধ্যে অর্থাৎ প্রধান শাসনকর্তার সদর দপ্তরের উঠোনে যীশুকে নিয়ে গিয়ে সমস্ত সেনাদের ডাকল। 17 তারা যীশুকে বেগুনী রঙের কাপড় পরিয়ে দিল এবং কাঁটার মুকুট তৈরী করে তাঁর মাথায় চাপিয়ে দিল। 18 তারা তাঁকে অভিবাদন জানিয়ে বলতে লাগল, “ইহুদীদের রাজা নমস্কার!” 19 তারা তাঁর মাথায় একটা লাঠি দিয়ে বার বার মারতে লাগল ও তাঁর গায়ে থুথু ছিটিয়ে দিল। তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে তাঁকে প্রণাম করতে থাকল। 20 তাঁকে নিয়ে এইভাবে মজা করবার পর তারা ঐ বেগুনী রঙের কাপড় খুলে নিয়ে তাঁর নিজের কাপড় পরিয়ে দিল। আর ক্রুশে দেবার জন্য তাঁকে বাইরে নিয়ে গেল।

যীশু ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন

(মথি 27:32-44; লূক 23:26-39; যোহন 19:17-19)

21 সেই সময় শিমোন নামে একটা লোক কুরীশীর গ্রামাঞ্চল থেকে সেই পথ ধরে আসছিল। সে আলেকসান্দর ও রূফের বাবা। সেনারা তাকে যীশুর ক্রুশ বয়ে নিয়ে যাবার জন্য বেগার ধরল। 22 পরে তারা যীশুকে গলগথা নামে এক জায়গায় নিয়ে এল। গলগথার অর্থ “মাথার খুলির স্থান।” 23 তারা তাঁকে গন্ধরস মেশানো দ্রাক্ষারস পান করতে দিল; কিন্তু তিনি তা পান করলেন না। 24 পরে তারা তাঁকে ক্রুশে বিদ্ধ করল। তাঁর কাপড়গুলোকে আলাদা আলাদা করে ঘুঁটি চেলে ঠিক করল কে তাঁর পোশাকের কোন্ অংশ পাবে।

25 সকাল ন’টার সময়ে তারা তাঁকে ক্রুশে দিল। 26 তারা তাঁর ক্রুশের ওপর তাঁর বিরুদ্ধে দোষপত্র লেখা একটা ফলক লাগিয়ে দিয়েছিল। তাতে লেখা ছিল, “ইহুদীদের রাজা।” 27 তারা তাঁর সাথে আর দুজন দস্যুকে ক্রুশে দিল। একজনকে তাঁর ডানদিকে এবং অপরজনকে তার বাঁদিকে। 28 [a]

29 লোকেরা সেই পথ দিয়ে যেতে যেতে যীশুর নিন্দা করতে লাগল। তারা মাথা নেড়ে বলল, “ওহে, তুমি না মন্দির ভেঙে ফেলে তিন দিনের মধ্যে তা আবার গেঁথে তোল? 30 ক্রুশ থেকে নেমে নিজেকে রক্ষা কর।”

31 ঠিক একইভাবে প্রধান যাজকরা এবং ব্যবস্থার শিক্ষকরা তাঁকে ঠাট্টা করে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, “ঐ লোকটি অন্যদের রক্ষা করত, কিন্তু নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। 32 খ্রীষ্ট, ঐ ইস্রায়েলের রাজা এখন ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলে আমরা বিশ্বাস করব।” তাঁর সঙ্গে যাঁরা ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছিল, তারাও তাঁকে ঠাট্টা করতে লাগল।

যীশু মারা গেলেন

(মথি 27:45-56; লূক 23:44-49; যোহন 19:28-30)

33 পরে বেলা বারোটা থেকে তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। 34 আর তিনটের সময় যীশু চিৎকার করে উঠলেন, “এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী?” যার অর্থ “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় ত্যাগ করেছ?”(A)

35 যাঁরা তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই কথা শুনে বলল, “দেখ, ও এলিয়কে ডাকছে।” 36 একজন লোক দৌড়ে গিয়ে একটা স্পঞ্জ এনে সিরকায় ভিজিয়ে নলে করে তাঁর মুখে তুলে ধরে বলল, “দেখা যাক, এলিয় ওকে নামাতে আসে কি না।”

37 পরে যীশু জোরে চিৎকার করে উঠে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।

38 আর মন্দিরের পর্দা উপর থেকে নীচে পর্যন্ত চিরে দুভাগ হয়ে গেল। 39 আর যে সেনাপতি তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি যীশুকে এইভাবে মৃত্যুবরণ করতে দেখে বললেন, “সত্যিই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।”

40 কয়েকজন স্ত্রীলোক দূর থেকে দেখছিলেন, তাঁদের মধ্যে মগ্দলীনী মরিয়ম, শালোমী আর ছোট যাকোব এবং যোশির মা মরিয়ম সেখানে ছিলেন। 41 যখন যীশু গালীলে ছিলেন, তখন এই মহিলারা তাঁর সঙ্গে যেতেন এবং তাঁর দেখাশোনা করতেন। আরও বহু স্ত্রীলোক তখন সেখানে ছিলেন যাঁরা যীশুর সাথে জেরুশালেমে এসেছিলেন।

যীশুর সমাধি

(মথি 27:57-61; লূক 23:50-56; যোহন 19:38-42)

42 সেই দিনটা ছিল আয়োজনের দিন (অর্থাৎ বিশ্রামের আগের দিন।) 43 সন্ধ্যাবেলায় আরিমাথিয়ার যোষেফ এলেন, তিনি ছিলেন ইহুদী মহাসভার একজন মাননীয় সভ্য, যিনি ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি সাহস করে পীলাতের কাছে গিয়ে সমাধি দেওয়ার জন্য যীশুর দেহটি চাইলেন।

44 যীশু এর মধ্যে মারা গেছেন শুনে পীলাত আশ্চর্য হলেন, তিনি তাই সেনাপতিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন তাঁর মৃত্যু হয়েছে কিনা। 45 সেনাপতির কাছে মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরে তিনি যোষেফকে যীশুর দেহটি নিয়ে যেতে দিলেন।

46 যোষেফ কিছুটা মসীনা কাপড় কিনে ক্রুশ থেকে যীশুর দেহ নামিয়ে ঐ মসীনা কাপড়ে জড়ালেন এবং পাথর কেটে তৈরী এমন একটা সমাধিগুহার মধ্যে তাঁর দেহটাকে রাখলেন। তারপর একটা পাথর গুহার মুখে গড়িয়ে সমাধির মুখটি বন্ধ করে দিলেন। 47 যীশুকে যেখানে সমাধি দেওয়া হল সেই স্থানটি মরিয়ম মগ্দলীনী ও যোশির মা মরিয়ম দেখলেন।

যীশুর পুনরুত্থানের খবর

(মথি 28:1-8; লূক 24:1-12; যোহন 20:1-10)

16 বিশ্রাম শেষ হলে মরিয়ম মগ্দলীনী, যাকোবের মা মরিয়ম সুগন্ধি মশলা কিনলেন যেন গিয়ে যীশুর দেহে মাখাতে পারেন। সপ্তাহের প্রথম দিন ভোরে, ঠিক সূর্য ওঠার পরই তাঁরা সমাধিগুহার কাছে গেলেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন, “কে আমাদের জন্য সমাধিগুহার মুখ থেকে পাথরটি সরিয়ে দেবে?”

তখন তাঁরা দেখতে পেলেন যে পাথরটা সরানো রয়েছে। সেই পাথরটা মস্ত বড় ছিল। পরে তাঁরা সমাধিগুহার ভিতরে গিয়ে দেখলেন, একজন যুবক ডানদিকে সাদা পোশাক পরে বসে আছেন; তাতে তারা ভয়ে চমকে উঠলেন।

তখন তিনি তাঁদের বললেন, “ভয় পেও না। তোমরা তো নাসরতীয় যীশুর খোঁজ করছ যাকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হয়েছিল? তিনি বেঁচে উঠেছেন! তিনি এখানে নেই। দেখ, এখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল। যাও, পিতর ও তাঁর অন্যান্য শিষ্যদের বল গিয়ে, দেখ তিনি তোমাদের আগেই গালীলে যাচ্ছেন। তিনি যেমন তোমাদের বলেছিলেন, ঠিক সেখানে তাঁকে দেখতে পাবে।”

তখন তাঁরা সমাধিগুহা থেকে বেরিয়ে দৌড়ালেন, কারণ তাঁরা ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন এবং কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না। তাঁরা কাউকে কিছু বললেন না, কারণ তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন।[b]

শিষ্যদের মধ্যে কেউ কেউ যীশুর দেখা পেলেন

(মথি 28:9-10; যোহন 20:11-18; লূক 24:13-35)

তাঁর পুনরুত্থানের পর সপ্তাহের প্রথম দিনে অর্থাৎ রবিবার ভোরে, তিনি প্রথমে মগ্দলীনী মরিয়মকে দেখা দিলেন, যার থেকে তিনি সাতটা ভূতকে তাড়িয়েছিলেন। 10 মরিয়ম গিয়ে যাঁরা যীশুর সঙ্গে থাকতেন তাঁদের এই কথা বললেন। তাঁরা তখনও শোকে কাঁদছিলেন; 11 কিন্তু যখন শুনলেন যে যীশু বেঁচে আছেন এবং তাঁকে দেখা দিয়েছেন, তাঁরা ঐ কথা বিশ্বাস করলেন না।

12 পরে তাদের মধ্যে দুজন যখন গ্রামের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন এমন সময় তিনি তাঁদের দেখা দিলেন, আর তাঁকে অন্যরকম দেখাল। 13 তাঁরা গিয়ে অন্য বাকী সব শিষ্যদের এটা জানালেন, কিন্তু তাঁদের কথাতেও তাঁরা বিশ্বাস করলেন না।

প্রেরিতদের সঙ্গে যীশুর কথোপকথন

(মথি 28:16-20; লূক 24:36-49; যোহন 20:19-23; প্রেরিত 1:6-8)

14 পরে সেই এগারোজন শিষ্য যখন খেতে বসেছেন, তিনি তাঁদের কাছে দেখা দিলেন। তিনি তাঁদের অবিশ্বাস ও কঠোর মনোভাবের জন্য তিরস্কার করলেন, কারণ তিনি বেঁচে ওঠার পর যাঁরা তাঁকে দেখেছিলেন, তাঁদের কথায়ও তাঁরা বিশ্বাস করেন নি।

15 আর তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা সমস্ত পৃথিবীতে যাও, এবং সব লোকের কাছে সুসমাচার প্রচার কর। 16 যারা বিশ্বাস করে বাপ্তাইজ হবে, তারা রক্ষা পাবে, কিন্তু যারা বিশ্বাস করবে না, তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে। 17 যারা বিশ্বাস করবে এই চিহ্নগুলি তাদের অনুবর্তী হবে। আমার নামে তারা ভূত তাড়াবে; নতুন নতুন ভাষায় কথা বলবে; 18 হাতে করে সাপ তুলবে এবং মারাত্মক কিছু খেলেও তাদের কোন ক্ষতি হবে না; আর তারা অসুস্থ লোকের ওপর হাত রাখলে তারা সুস্থ হবে।”

যীশুর পুনরায় স্বর্গারোহণ

(লূক 24:50-53; প্রেরিত 1:9-11)

19 তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রভু যীশুকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হল এবং তিনি ঈশ্বরের ডানদিকে বসলেন। 20 আর তাঁরা গিয়ে সব জায়গায় সুসমাচার প্রচার করতে লাগলেন, এবং প্রভু তাঁদের সঙ্গে কাজ করলেন, আর অলৌকিক কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর সুসমাচারের সত্যতা প্রমাণ করলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International