Beginning
মানুষের তৈরী নিয়ম ও ঈশ্বরের বিধি-ব্যবস্থা
(মার্ক 7:1-23)
15 জেরুশালেম থেকে কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তাঁরা যীশুকে বললেন, 2 “আমাদের পিতৃপুরুষরা যে নিয়ম আমাদের দিয়েছেন, আপনার অনুগামীরা কেন তা মেনে চলে না? খাওয়ার আগে তারা ঠিকমতো হাত ধোয় না!”
3 এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের পরম্পরাগত আচার পালনের জন্য তোমরাই বা কেন ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করো? 4 কারণ ঈশ্বর বলেছেন, ‘তোমরা বাবা-মাকে সম্মান করো।’(A) আর ‘যে কেউ তার বাবা-মার নিন্দা করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে।’(B) 5 কিন্তু তোমরা বলে থাকো, কেউ যদি তার বাবা কিংবা মাকে বলে, ‘আমি তোমাদের কিছুই সাহায্য করতে পারব না, কারণ তোমাদের দেবার মত যা কিছু সব আমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দানস্বরূপ উৎসর্গ করেছি,’ 6 তবে বাবা মায়ের প্রতি তার কর্তব্য কিছু থাকে না। তাই তোমাদের পরম্পরাগত রীতির দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের আদেশ মূল্যহীন করেছ। 7 তোমরা হলে ভণ্ড! ভাববাদী যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে ঠিকই ভাববাণী করেছেন:
8 ‘এই লোকগুলো মুখেই আমায় সম্মান করে,
কিন্তু তাদের অন্তর আমার থেকে অনেক দূরে থাকে।
9 এরা আমার যে উপাসনা করে তা মিথ্যা,
কারণ এরা যে শিক্ষা দেয় তা মানুষের তৈরী কতকগুলি নিয়ম মাত্র।’”(C)
10 এরপর যীশু লোকদের তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “আমি যা বলি তা শোন ও তা বুঝে দেখ। 11 মানুষ যা খায় তা মানুষকে অশুচি করে না। কিন্তু মুখের ভেতর থেকে যা বেরিয়ে আসে, তাই মানুষকে অশুচি করে।”
12 তখন যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “আপনি কি জানেন ফরীশীরা আপনার এই কথা শুনে অপমান বোধ করছেন?”
13 এর উত্তরে যীশু বললেন, “যে চারাগুলি আমার স্বর্গের পিতা লাগাননি, সেগুলি উপড়ে ফেলা হবে। 14 তাই ওদের কথা বাদ দাও। ওরা নিজেরা অন্ধ, ওরা আবার অন্য অন্ধদের পথ দেখাচ্ছে। দেখ, অন্ধ যদি অন্ধকে পথ দেখাতে যায়, তবে দুজনেই গর্তে পড়বে।”
15 তখন পিতর যীশুকে বললেন, “আপনি যা বললেন, তার অর্থ আমাদের বুঝিয়ে দিন।”
16 যীশু বললেন, “তোমরাও কি এখনও বুঝতে পারছ না? 17 তোমরা কি বোঝ না যে, যা কিছু মুখের মধ্যে যায় তা উদরে গিয়ে পৌঁছায়় ও পরে তা বেরিয়ে পায়খানায় পড়ে? 18 কিন্তু মুখের মধ্য থেকে যা বার হয় তা মানুষের অন্তর থেকেই বার হয় আর তাই মানুষকে অশুচি করে তোলে। 19 আমি একথা বলছি কারণ মানুষের অন্তর থেকেই সমস্ত মন্দচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, যৌনপাপ, চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ও নিন্দা বার হয়। 20 এসবই মানুষকে অশুচি করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খেলে মানুষ অশুচি হয় না।”
যীশু ও একজন অ-ইহুদী স্ত্রীলোক
(মার্ক 7:24-30)
21 এরপর যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন। 22 একজন কনান দেশীয় স্ত্রীলোক সেই অঞ্চল থেকে এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে প্রভু, দায়ূদের পুত্র, আমাকে দয়া করুন। একটা ভূত আমার মেয়ের ওপর ভর করেছে, তাতে সে ভয়ানক যন্ত্রণা পাচ্ছে।”
23 যীশু তাকে একটা কথাও বললেন না, তখন তাঁর শিষ্যরা এসে যীশুকে অনুরোধ করে বললেন, “ওকে চলে যেতে বলুন, কারণ ও চিৎকার করতে করতে আমাদের পিছন পিছন আসছে।”
24 এর উত্তরে যীশু বললেন, “সকলের কাছে নয়, কেবল ইস্রায়েলের হারানো মেষদের কাছে আমাকে পাঠানো হয়েছে।”
25 তখন সেই স্ত্রীলোকটি যীশুর কাছে এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “প্রভু, দয়া করে আমায় সাহায্য করুন!”
26 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরের সামনে ছুঁড়ে দেওয়া ঠিক নয়।”
27 স্ত্রীলোকটি তখন বলল, “হ্যাঁ প্রভু, কিন্তু মনিবদের টেবিল থেকে খাবারের যে সব টুকরো পড়ে কুকুরেই তা খায়।”
28 তখন যীশু তাকে বললেন, “হে নারী, তোমার বড়ই বিশ্বাস! যাও, তুমি যেমন চাইছ, তেমনই হোক্।” আর সেই মুহূর্ত্ত থেকেই তার মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেল।
যীশু বহু মানুষকে আরোগ্যদান করলেন
29 এরপর যীশু সেখান থেকে গালীল হ্রদের তীর ধরে চললেন। তিনি একটা পাহাড়ের ওপর উঠে সেখানে বসলেন।
30 আর বহু লোক সেখানে এসে জড়ো হল, তারা খোঁড়া, অন্ধ, নুলো, বোবা এবং আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে এল। তারা ঐসব রোগীদের তাঁর পায়ের কাছে রাখল আর যীশু তাদের সকলকে সুস্থ করলেন। 31 লোকেরা যখন দেখল বোবা কথা বলছে, নুলো সুস্থ সবল হচ্ছে, খোঁড়া চলাফেরা করছে, অন্ধরা দৃষ্টিশক্তি লাভ করছে, তখন তারা আশ্চর্য হয়ে গেল আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে লাগল।
যীশু চার হাজারেরও বেশী লোককে খাওয়ালেন
(মার্ক 8:1-10)
32 যীশু তখন তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এই লোকদের জন্য আমার মনে কষ্ট হচ্ছে, কারণ এরা আজ তিন দিন হল আমার সঙ্গে সঙ্গে আছে, এদের কাছে আর কোন খাবার নেই। এই ক্ষুধার্ত অবস্থায় এদের আমি চলে যেতে বলতে পারি না, তাহলে হয়তো এরা পথে মুর্ছা যাবে।”
33 তখন শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “এই নির্জন জায়গায় এত লোককে খাওয়ানোর মতো অতো খাবার আমরা কোথায় পাবো?”
34 যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কটা রুটি আছে?”
তাঁরা বললেন, “সাতখানা রুটি ও কয়েকটা ছোট মাছ আছে।”
35 যীশু সেই সব লোককে মাটিতে বসে যেতে বললেন। 36 তারপর তিনি সেই সাতটা রুটি ও মাছ ক’টা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, পরে সেই রুটি টুকরো করে শিষ্যদের হাতে দিলেন, আর শিষ্যরা তা লোকদের দিতে লাগলেন। 37 লোকেরা সবাই বেশ পেট ভরে খেল। টুকরো-টাকরা যা পড়ে রইল, তা তোলা হলে পর তা দিয়ে সাতটা টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল। 38 যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে মহিলা ও ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বাদ দিয়ে কেবল পুরুষ মানুষের সংখ্যাই ছিল চার হাজার। 39 এরপর যীশু লোকদের বিদায় দিয়ে নৌকায় উঠে মগদনের অঞ্চলে গেলেন।
ইহুদী নেতারা যীশুকে পরীক্ষা করলেন
(মার্ক 8:11-13; লূক 12:54-56)
16 ফরীশী ও সদ্দূকীরা যীশুর কাছে এসে তাঁকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তারা ঐশ্বরিক শক্তির চিহ্নস্বরূপ কোন অলৌকিক কাজ করে দেখাতে বললেন।
2 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “সন্ধ্যা হলে তোমরা বলে থাকো দিনে আবহাওয়া ভাল থাকবে, কারণ আকাশের রঙ লাল হয়েছে। 3 আবার সকাল বেলা বলে থাকো, আজকে ঝোড়ো আবহাওয়া চলবে কারণ আজ আকাশ লাল ও অন্ধকার হয়েছে। তোমরা আকাশের অবস্থা ভালই বিচার করে বোঝ, অথচ কালের চিহ্ন বুঝতে পারো না। 4 এ যুগের দুষ্ট ও ভ্রষ্টাচারী লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে, কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখানো হবে না।” এরপর যীশু তাদের ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।
ইহুদী নেতাদের বিরুদ্ধে যীশুর সতর্কবাণী
(মার্ক 8:14-21)
5 যীশু ও তাঁর শিষ্যরা হ্রদের ওপারে যাবার সময় সঙ্গে রুটি নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলেন। 6 তখন যীশু তাদের বললেন, “তোমরা সাবধান! ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামির থেকে সতর্ক থেকো।”
7 শিষ্যরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “আমরা রুটি আনিনি বলে সম্ভবতঃ উনি এই কথা বলছেন?”
8 তাঁরা কি বলাবলি করছেন, তা জানতে পেরে যীশু বললেন, “হে অল্প-বিশ্বাসী মানুষ, তোমরা নিজেদের মধ্যে কেন বলাবলি করছ যে তোমাদের রুটি নেই? 9 তোমরা কি বোঝ না অথবা তোমাদের কি মনে নেই সেই পাঁচ হাজার লোকের জন্য পাঁচ খানা রুটির কথা আর তারপরে কত টুকরি তোমরা ভর্ত্তি করেছিলে? 10 আবার সেই চার হাজার লোকের জন্য সাতখানা রুটির কথা, আর কত টুকরি তোমরা তুলে নিয়েছিলে? 11 তোমরা কেন বুঝতে পার না যে আমি তোমাদের রুটির বিষয় বলিনি? আমি তোমাদের ফরীশী ও সদ্দূকীদের খামির থেকে সতর্ক থাকতে বলেছি।”
12 তখন তাঁরা বুঝতে পারলেন যে রুটির খামির থেকে তিনি তাঁদের সতর্ক হতে বলেন নি, কিন্তু বলেছিলেন তাঁরা যেন ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষা থেকে সাবধান হন।
পিতর বললেন যীশুই খ্রীষ্ট
(মার্ক 8:27-30; লূক 9:18-21)
13 এরপর যীশু কৈসরিয়া, ফিলিপী অঞ্চলে এলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞেস করলেন, “মানবপুত্র[a] কে? এ বিষয়ে লোকে কি বলে?”
14 তাঁরা বললেন, “কেউ কেউ বলে আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহন, কেউ বলে এলিয়,[b] আবার কেউ বলে আপনি যিরমিয়[c] বা ভাববাদীদের মধ্যে কেউ একজন হবেন।”
15 তিনি তাঁদের বললেন, “কিন্তু তোমরা কি বল, আমি কে?”
16 এর উত্তরে শিমোন পিতর বললেন, “আপনি সেই মশীহ (খ্রীষ্ট), জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র।”
17 এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “যোনার ছেলে শিমোন, তুমি ধন্য, কোনো মানুষের কাছ থেকে একথা তুমি জাননি, কিন্তু আমার স্বর্গের পিতা একথা তোমায় জানিয়েছেন। 18 আর আমিও তোমাকে বলছি, তুমি পিতর[d] আর এই পাথরের ওপরেই আমি আমার মণ্ডলী গেঁথে তুলব। মৃত্যুর কোন শক্তি[e] তার ওপর জয়লাভ করতে পারবে না। 19 আমি তোমাকে স্বর্গরাজ্যের চাবিগুলি দেব, তাতে তুমি এই পৃথিবীতে যা বাঁধবে তা স্বর্গেও বেঁধে রাখা হবে। আর পৃথিবীতে যা হতে দেবে তা স্বর্গেও হতে দেওয়া হবে।”
20 এরপর যীশু তাঁর শিষ্যদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলেন, যেন তারা কাউকে না বলে তিনিই খ্রীষ্ট।
যীশুর নিজের মৃত্যুর বিষয়ে ভবিষ্যদ্বানী
(মার্ক 8:31–9:1; লূক 9:22-27)
21 সেই সময় থেকে যীশু তাঁর শিষ্যদের জানাতে লাগলেন যে তাঁকে অবশ্যই জেরুশালেমে যেতে হবে। আর সেখানে কিভাবে তাঁকে ইহুদী নেতা, প্রধান যাজক ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হবে। তাঁকে মেরে ফেলা হবে ও তিন দিনের মাথায় তিনি মৃত্যুলোক থেকে বেঁচে উঠবেন।
22 তখন পিতর তাঁকে একপাশে ডেকে নিয়ে ভর্ৎসনার সুরে বললেন, “প্রভু, এসবের হাত থেকে ঈশ্বর আপনাকে রক্ষা করুন। এর কোন কিছুই আপনার প্রতি ঘটবে না।”
23 যীশু পিতরের দিকে ফিরে বললেন, “আমার কাছ থেকে দূর হও শয়তান! তুমি আমার বাধা স্বরূপ! তুমি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে এ বিষয় চিন্তা করছ, ঈশ্বরের যা তা তুমি ভাবছ না।”
24 এরপর যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “কেউ যদি আমায় অনুসরণ করতে চায় তবে সে নিজেকে অস্বীকার করুক আর নিজের ক্রুশ তুলে নিয়ে আমার অনুসারী হোক্। 25 যে কেউ নিজের জীবন রক্ষা করতে চায়, সে তা হারাবে। কিন্তু যে আমার জন্য তার নিজের প্রাণ হারাতে চাইবে সে তা রক্ষা করবে। 26 কেউ যদি সমস্ত জগত লাভ করে তার প্রাণ হারায় তবে তার কি লাভ? প্রাণ ফিরে পাবার জন্য তার দেবার মতো কি-ই বা থাকতে পারে? 27 মানবপুত্র যখন তাঁর স্বর্গদূতদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর পিতার মহিমায় আসবেন, তখন তিনি প্রত্যেক লোককে তার কাজ অনুসারে প্রতিদান দেবেন। 28 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছে যারা কোনও মতে মৃত্যু দেখবে না, যে পর্যন্ত মানবপুত্রকে তাঁর রাজ্যে আসতে না দেখে।”
মোশি ও এলিয়ের সঙ্গে যীশুকে দেখা গেল
(মার্ক 9:2-13; লূক 9:28-36)
17 ছ’দিন পর যীশু পিতর, যাকোব ও তার ভাই যোহনকে সঙ্গে নিয়ে নির্জন এক পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে উঠলেন। 2 সেখানে তাঁদের সামনে যীশুর রূপান্তর হল। তাঁর মুখমণ্ডল সূর্যের মতো উজ্জ্বল ও তাঁর পোশাক আলোর মত সাদা হয়ে গেল। 3 তারপর হঠাৎ মোশি ও এলিয় তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে যীশুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন।
4 এই দেখে পিতর যীশুকে বললেন, “প্রভু, ভালই হয়েছে যে আমরা এখানে আছি। যদি আপনার ইচ্ছে হয় তবে আমি এখানে তিনটে তাঁবু খাটাতে পারি, একটা হবে আপনার, একটা মোশির জন্য আর একটা এলিয়র জন্য।”
5 পিতর যখন কথা বলছিলেন, সেই সময় একটা উজ্জ্বল মেঘ তাঁদের ঢেকে দিল। সেই মেঘ থেকে একটি রব শোনা গেল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, এর প্রতি আমি খুবই প্রীত। তোমরা এঁর কথা শোন।”
6 যীশুর শিষ্যরা একথা শুনে খুব ভয় পেয়ে মাটিতে উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন। 7 তখন যীশু এসে তাদের স্পর্শ করে বললেন, “ওঠো, ভয় করো না।” 8 তাঁরা মুখ তুলে তাকালে যীশু ছাড়া আর কাউকে সেখানে দেখতে পেলেন না।
9 তাঁরা যখন সেই পাহাড় থেকে নেমে আসছিলেন, সেই সময় যীশু তাদের বললেন, “তোমরা যা দেখলে তা মানবপুত্র মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে না ওঠা পর্যন্ত কাউকে বলো না।”
10 তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে ব্যবস্থার শিক্ষকরা কেন বলে থাকেন যে, প্রথমে এলিয়র আসা আবশ্যক?”[f]
11 এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “এলিয় আসবেন, আর তিনি সব কিছু পুনঃস্থাপন করবেন। 12 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, এলিয় এসে গেছেন, আর লোকে তাকে চেনেনি। লোকেরা তাঁর প্রতি যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেছে। মানবপুত্রকেও তাদের হাতে সেই একই রকম নির্যাতন ভোগ করতে হবে।” 13 তখন তাঁর শিষ্যরা বুঝতে পারলেন যে, তিনি তাঁদের বাপ্তিস্মদাতা যোহনের কথা বলছেন।
যীশু অসুস্থ ছেলেকে সুস্থ করলেন
(মার্ক 9:14-29; লূক 9:37-43)
14 যীশু যখন লোকদের মাঝে আবার ফিরে এলেন, তখন একজন লোক যীশুর কাছে এসে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বলল, 15 “প্রভু আমার ছেলেটিকে দয়া করুন। তার মৃগী রোগ হয়েছে, তাতে সে খুবই কষ্ট পাচ্ছে। সে প্রায়ই হয় আগুনে, নয় তো জলে পড়ে যায়। 16 আমি তাকে আপনার শিষ্যদের কাছে এনেছিলাম, কিন্তু তাঁরা তাকে সুস্থ করতে পারেন নি।”
17 এর উত্তরে যীশু বললেন, “তোমরা অবিশ্বাসী ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক। কতকাল আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব? কতকাল আমি তোমাদের বহন করব? ছেলেটিকে আমার কাছে নিয়ে এস।” 18 তখন যীশু সেই ভূতকে তিরস্কার করলে ভূতটি ছেলেটির মধ্য থেকে বার হয়ে গেল, আর সেই মুহূর্ত্ত থেকেই ছেলেটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেল।
19 পরে শিষ্যরা একান্তে যীশুর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমরা সেই ভূতকে তাড়াতে পারলাম না কেন?”
20 যীশু তাদের বললেন, “তোমাদের অল্প বিশ্বাসের কারণেই তোমরা তা পারলে না। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ছোট্ট সরষে দানার মতো এতটুকু বিশ্বাসও যদি তোমাদের থাকে, তবে তোমরা যদি এই পাহাড়কে বল, ‘এখান থেকে সরে ওখানে যাও’ তবে তা সরে যাবে। তোমাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব হবে না।” 21 [g]
যীশু নিজের মৃত্যুর বিষয়ে বললেন
(মার্ক 9:30-32; লূক 9:43-45)
22 যীশু ও তাঁর শিষ্যেরা একসঙ্গে যখন গালীলে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তখন যীশু তাঁদের বললেন, “মানবপুত্রকে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। 23 তারা তাঁকে হত্যা করবে; কিন্তু তিন দিনের দিন মানবপুত্র মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন।” এতে শিষ্যরা খুবই দুঃখিত হলেন।
কর দেওয়ার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা
24 যীশু ও তাঁর শিষ্যরা কফরনাহূমে গেলে, মন্দিরের জন্য যারা কর আদায় করত তারা পিতরের কাছে এসে বলল, “আপনাদের গুরু কি মন্দিরের কর দেন না?”
25 পিতর বললেন, “হ্যাঁ, দেন।”
আর তিনি ঘরে গিয়ে কিছু বলার আগেই যীশু প্রথমে তাঁকে বললেন, “শিমোন তোমার কি মনে হয়? এই পৃথিবীর রাজারা কাদের কাছ থেকে নানারকম কর আদায় করে? তারা কি তাদের নিজের সন্তানদের কাছ থেকে কর আদায় করে, না বাইরের লোকেদের কাছ থেকে কর আদায় করে?”
26 পিতর বললেন, “তারা অন্য লোকদের কাছ থেকেই আদায় করে।”
তখন যীশু বললেন, “তাহলে তাদের সন্তানদের জন্য ছাড় আছে। 27 কিন্তু আমরা যেন ঐ কর আদায়কারীদের কোনরকম অপমান বোধের কারণ না হই, সেই জন্য তুমি হ্রদে গিয়ে বঁড়শী ফেল আর প্রথমে যে মাছটা উঠবে তা নিয়ে এসে সেই মাছটার মুখ খুললে তুমি একটি মুদ্রা পাবে, ওটা দিয়ে আমার ও তোমার দেয় কর মিটিয়ে দিও।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International