Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
মথি 13-14

যীশু বীজ বোনার দৃষ্টান্ত মূলক কাহিনী শোনালেন

(মার্ক 4:1-9; লূক 8:4-8)

13 সেই দিনই যীশু ঘর থেকে বার হয়ে হ্রদের ধারে এসে বসলেন। তাঁর চারপাশে বহু লোক এসে জড় হল, তাই তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন, আর সেই সমবেত জনতা তীরে দাঁড়িয়ে রইল। তখন তিনি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন।

তিনি বললেন, “একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। সে যখন বীজ বুনছিল, তখন কতকগুলি বীজ পথের ধারে পড়ল, আর পাখিরা এসে সেগুলি খেয়ে ফেলল। আবার কতকগুলি বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল, সেখানে মাটি বেশী ছিল না। মাটি বেশী না থাকাতে তাড়াতাড়ি অঙ্কুর বার হল। কিন্তু সূর্য উঠলে পর অঙ্কুরগুলি ঝলসে গেল, আর শেকড় মাটির গভীরে যায়নি বলে তা শুকিয়ে গেল। আবার কিছু বীজ কাঁটাঝোপের মধ্যে পড়ল। কাঁটাঝোপ বেড়ে উঠে চারাগুলোকে চেপে দিল। কিছু বীজ ভাল জমিতে পড়ল, তাতে ফসল হতে লাগল। সে যা বুনেছিল, কোথাও তার ত্রিশগুণ, কোথাও ষাটগুণ, কোথাও শতগুণ ফসল হল। যার শোনার মতো কান আছে সে শুনুক!”

শিক্ষার সময় যীশু কেন দৃষ্টান্ত দিতেন

(মার্ক 4:10-12; লূক 8:9-10)

10 যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “কেন আপনি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে লোকদের সঙ্গে কথা বললেন?”

11 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে ঈশ্বরের গুপ্ত সত্য বোঝার ক্ষমতা কেবল মাত্র তোমাদেরই দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সকলকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয় নি। 12 কারণ যার কিছু আছে, তাকে আরও দেওয়া হবে, তাতে তার প্রচুর হবে; কিন্তু যার নেই, তার যা আছে তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। 13 আমি তাদের সঙ্গে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কথা বলি, কারণ তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না আর তারা বোঝেও না। 14 এদের এই অবস্থার মধ্য দিয়েই ভাববাদী যিশাইয়র ভাববাণী পূর্ণ হয়েছে:

‘তোমরা শুনবে আর শুনবে,
    কিন্তু বুঝবে না।
তোমরা তাকিয়ে থাকবে,
    কিন্তু কিছুই দেখবে না।
15 এইসব লোকদের অন্তর অসাড়,
    এরা কানে শোনে না,
চোখ থাকতেও সত্য দেখতে অস্বীকার করে।
এরকমটাই ঘটেছে যেন এরা চোখে দেখে,
    কানে শুনে
    আর অন্তরে বুঝে
ভাল হবার জন্য আমার কাছে ফিরে না আসে।’(A)

16 কিন্তু ধন্য তোমাদের চোখ, কারণ তা দেখতে পায়; আর ধন্য তোমাদের কান, কারণ তা শুনতে পায়। 17 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যা দেখছ অনেক ভাববাদী ও ধার্মিক লোকেরা দেখতে চেয়েও তা দেখতে পায় নি। আর তোমরা যা যা শুনছ, তা তারা শুনতে চেয়েও শুনতে পায় নি।

বীজ বোনার দৃষ্টান্ত

(মার্ক 4:13-20; লূক 8:11-15)

18 “এখন তবে সেই চাষী ও তার বীজ বোনার মর্মার্থ শোন।

19 “কেউ যখন স্বর্গরাজ্যের শিক্ষার বিষয় শুনেও তা বোঝে না, তখন দুষ্ট আত্মা এসে তার অন্তরে যা বোনা হয়েছিল তা সরিয়ে নেয়। এটা হল সেই পথের ধারে পড়া বীজের কথা।

20 “আর পাথুরে জমিতে যে বীজ পড়েছিল, তা সেই সব লোকদের কথাই বলে যারা স্বর্গরাজ্যের শিক্ষা শুনে সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের সাথে তা গ্রহণ করে; 21 কিন্তু তাদের মধ্যে সেই শিক্ষার শেকড় ভাল করে গভীরে যেতে দেয় না বলে তারা অল্প সময়ের জন্য স্থির থাকে। যখন সেই শিক্ষার জন্য সমস্যা, দুঃখ কষ্ট ও তাড়না আসে, তখনই তারা পিছিয়ে যায়।

22 “কাঁটাঝোপে যে বীজ পড়েছিল, তা এমন লোকদের বিষয় বলে যারা সেই শিক্ষা শোনে, কিন্তু সংসারের চিন্তা ভাবনা ও ধনসম্পত্তির মায়া সেই শিক্ষাকে চেপে রাখে। সেজন্য তাদের জীবনে কোন ফল হয় না।

23 “যে বীজ উৎ‌কৃষ্ট জমিতে বোনা হল, তা এমন লোকদের কথা প্রকাশ করে যারা শিক্ষা শোনে, তা বোঝে এবং ফল দেয়। কেউ একশ গুণ, কেউ ষাট গুণ আর কেউ বা তিরিশ গুণ ফল দেয়।”

গম এবং শ্যামা ঘাসের দৃষ্টান্ত

24 এবার যীশু তাদের কাছে আর একটি দৃষ্টান্ত রাখলেন। স্বর্গরাজ্য এমন একজন লোকের মতো যিনি তাঁর জমিতে ভাল বীজ বুনলেন। 25 কিন্তু লোকেরা যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিল, তখন সেই মালিকের শত্রু এসে গমের মধ্যে শ্যামা ঘাসের বীজ বুনে দিয়ে চলে গেল। 26 শেষে গমের চারা যখন বেড়ে উঠে ফল ধরল, তখন তার মধ্যে শ্যামাঘাসও দেখা গেল। 27 সেই মালিকের মজুররা এসে তাঁকে বলল, “আপনি কি জমিতে ভাল বীজ বোনেন নি? তবে শ্যামাঘাস কোথা থেকে এল?”

28 “তিনি তাদের বললেন, ‘এটা নিশ্চয়ই কোন শত্রুর কাজ।’

“তাঁর চাকরেরা তখন তাঁকে বলল, ‘আপনি কি চান, আমরা গিয়ে কি শ্যামা ঘাসগুলি উপড়ে ফেলব?’

29 “তিনি বললেন, ‘না, কারণ তোমরা যখন শ্যামা ঘাস ওপড়াতে যাবে তখন হয়তো ঐগুলোর সাথে গমের গাছগুলোও উপড়ে ফেলবে। 30 ফসল কাটার সময় না হওয়া পর্যন্ত একসঙ্গে সব বাড়তে দাও। পরে ফসল কাটার সময় আমি মজুরদের বলব তারা যেন প্রথমে শ্যামা ঘাস সংগ্রহ করে আঁটি আঁটি করে বাঁধে ও তা পুড়িয়ে দেয় এবং গম সংগ্রহ করে গোলায় তোলে।’”

যীশু আরো দৃষ্টান্ত সহযোগে শিক্ষা দিলেন

(মার্ক 4:30-34; লূক 13:18-21)

31 যীশু তাদের সামনে আর একটি দৃষ্টান্ত রাখলেন, “স্বর্গরাজ্য এমন একটা সরষে দানার মতো যা নিয়ে কোন একজন লোক তার জমিতে লাগাল। 32 সমস্ত বীজের মধ্যে ওটা সত্যিই সবচেয়ে ছোট, কিন্ত গাছ হয়ে বেড়ে উঠলে পর তা সমস্ত শাক-সব্জীর থেকে বড় হয়ে একটা বড় গাছে পরিণত হয়, যাতে পাখিরা এসে তার ডালপালায় বাসা বাঁধে।”

33 তিনি তাদের আর একটা দৃষ্টান্ত বললেন, “স্বর্গরাজ্য যেন খামিরের মতো। একজন স্ত্রীলোক তা নিয়ে একতাল ময়দার সঙ্গে মেশাল ও তার ফলে সমস্ত ময়দা ফেঁপে উঠল।”

34 জনসাধারণের কাছে উপদেশ দেবার সময় যীশু প্রায়ই এই ধরণের দৃষ্টান্ত দিতেন। তিনি দৃষ্টান্ত ছাড়া কোন শিক্ষাই দিতেন না। 35 যাতে ভাববাদীর মাধ্যমে ঈশ্বর যা বলেছিলেন, তা পূর্ণ হয়:

“আমি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কথা বলব;
    জগতের সৃষ্টি থেকে যে সমস্ত বিষয় এখনও গুপ্ত আছে সেগুলি প্রকাশ করব।”(B)

যীশু কঠিন গল্পের ব্যাখ্যা দিলেন

36 পরে যীশু লোকদের বিদায় দিয়ে ঘরে চলে গেলেন। তখন তাঁর শিষ্যরা এসে তাঁকে বললেন, “সেই ক্ষেতের ও শ্যামা ঘাসের দৃষ্টান্তটি আমাদের বুঝিয়ে দিন।”

37 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “যিনি ভাল বীজ বোনেন, তিনি মানবপুত্র। 38 জমি বা ক্ষেত হল এই জগত, স্বর্গরাজ্যের লোকরা হল ভাল বীজ। আর শ্যামাঘাস তাদেরই বোঝায়, যারা মন্দ লোক। 39 গমের মধ্যে যে শত্রু শ্যামা ঘাস বুনে দিয়েছিল, সে হল দিয়াবল। ফসল কাটার সময় হল জগতের শেষ সময় এবং মজুররা যারা সংগ্রহ করে, তারা ঈশ্বরের স্বর্গদূত।

40 “শ্যামা ঘাস জড় করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই পৃথিবীর শেষের সময়েও ঠিক তেমনি হবে। 41 মানবপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে দেবেন, আর যারা পাপ করে ও অপরকে মন্দের পথে ঠেলে দেয়, তাদের সবাইকে সেই স্বর্গদূতরা মানবপুত্রের রাজ্যের মধ্য থেকে একসঙ্গে জড় করবেন। 42 তাদের জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলে দেবেন। সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে। 43 তারপর যারা ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়েছে, তারা পিতার রাজ্যে সূর্যের মতো উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে। যার শোনার মতো কান আছে সে শুনুক!

গুপ্তধন ও মুক্তার দৃষ্টান্ত মূলক গল্প

44 “স্বর্গরাজ্য ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ধনের মতো। একজন লোক তা খুঁজে পেয়ে আবার সেই ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে রাখল। সে এতে এত খুশী হল যে সেখান থেকে গিয়ে তার সর্বস্ব বিক্রি করে সেই ক্ষেতটি কিনল।

45 “আবার স্বর্গরাজ্য এমন একজন সওদাগরের মতো, যে ভাল মুক্তা খুঁজছিল। 46 যখন সে একটা খুব দামী মুক্তার খোঁজ পেল, তখন গিয়ে তার যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে সেই মুক্তাটাই কিনল।

মাছ ধরা জালের দৃষ্টান্ত

47 “স্বর্গরাজ্য আবার এমন একটা বড় জালের মতো যা সমুদ্রে ফেলা হলে তাতে সব রকম মাছ ধরা পড়ল। 48 জাল পূর্ণ হলে লোকরা সেটা পাড়ে টেনে তুলল, পরে তারা বসে ভালো মাছগুলো বেছে ঝুড়িতে রাখল এবং খারাপগুলো ফেলে দিল। 49 জগতের শেষের দিনে এই রকমই হবে। স্বর্গদূতরা এসে ধার্মিক লোকদের মধ্য থেকে দুষ্ট লোকদের আলাদা করবেন। 50 স্বর্গদূতরা জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে দুষ্ট লোকদের ফেলে দেবেন। সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও দাঁতে দাঁত ঘসবে।”

51 যীশু তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি এসব কথা বুঝলে?”

তারা তাঁকে বলল, “হ্যাঁ, আমরা বুঝেছি।”

52 তখন তিনি তাদের বললেন, “প্রত্যেক ব্যবস্থার শিক্ষক, যিনি স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেছেন তিনি এমন একজন গৃহস্থের মতো, যিনি তাঁর ভাঁড়ার থেকে নতুন ও পুরানো উভয় জিনিসই বার করেন।”

যীশু নিজের শহরে যাত্রা করলেন

(মার্ক 6:1-6; লূক 4:16-30)

53 যীশু এই দৃষ্টান্তগুলি বলার পর সেখান থেকে চলে গেলেন। 54 তারপর তিনি নিজের শহরে গিয়ে সেখানে সমাজ-গৃহে তাদের মধ্যে শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর কথা শুনে লোকেরা আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা বলল, “এই জ্ঞান ও এইসব অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা এ কোথা থেকে পেল? 55 এ কি সেই ছূতোর মিস্ত্রির ছেলে নয়? এর মায়ের নাম কি মরিয়ম নয়? আর এর ভাইদের নাম কি যাকোব, যোষেফ, শিমোন ও যিহূদা নয়? 56 আর এর সব বোনেরা এখানে আমাদের মধ্যে কি থাকে না? তাহলে কোথা থেকে সে এসব পেল?” 57 এইভাবে তাঁকে মেনে নিতে তারা মহা সমস্যায় পড়ল।

কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “নিজের গ্রাম ও বাড়ি ছাড়া আর সব জায়গাতেই ভাববাদী সম্মান পান।” 58 তাঁর প্রতি লোকদের অবিশ্বাস দেখে তিনি সেখানে বেশী অলৌকিক কাজ করলেন না।

হেরোদ যীশুর সম্পর্কে শুনলেন

(মার্ক 6:14-29; লূক 9:7-9)

14 সেই সময় গালীলের শাসনকর্তা হেরোদ, যীশুর বিষয় শুনতে পেলেন। তিনি তাঁর চাকরদের বললেন, “এই লোক নিশ্চয়ই বাপ্তিস্মদাতা যোহন। সে নিশ্চয়ই মৃত লোকদের মধ্য থেকে বেঁচে উঠেছে। আর সেইজন্যই এইসব অলৌকিক কাজ করতে পারছে।”

বাপ্তিস্মদাতা যোহন নিহত হলেন

এই হেরোদই যোহনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারের মধ্যে শেকলে বেঁধে রেখেছিলেন। তাঁর ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়ার অনুরোধেই তিনি একাজ করেছিলেন। কারণ যোহন হেরোদকে বার-বার বলতেন, “হেরোদিয়াকে তোমার ঐভাবে রাখা বৈধ নয়।” হেরোদ এই জন্য যোহনকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি লোকদের ভয় করতেন, কারণ সাধারণ লোক যোহনকে ভাববাদী বলে মানত।

এরপর হেরোদের জন্মদিন এল, সেই উৎসবে হেরোদিয়ার মেয়ে, হেরোদ ও তাঁর অতিথিদের সামনে নেচে হেরোদকে খুব খুশী করল। সেজন্য হেরোদ শপথ করে বললেন যে, সে যা চাইবে তিনি তাকে তাইদেবেন। মেয়েটি তার মায়ের পরামর্শ অনুসারে বলল, “থালায়় করে বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথাটা আমায় এনে দিন।”

যদিও রাজা হেরোদ এতে খুব দুঃখিত হলেন, তবু তিনি শপথ করেছিলেন বলে এবং যাঁরা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিলেন তাঁরা সেই শপথের কথা শুনেছিলেন বলে সম্মানের কথা ভেবে তিনি তা দিতে হুকুম করলেন। 10 তিনি লোক পাঠিয়ে কারাগারের মধ্যে যোহনের শিরশ্ছেদ করালেন। 11 এরপর যোহনের মাথাটি থালায় করে নিয়ে এসে সেই মেয়েকে দেওয়া হলে, সে তা নিয়ে তার মায়ের কাছে গেল। 12 তারপর যোহনের অনুগামীরা এসে তাঁর দেহটি নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন। আর তাঁরা যীশুর কাছে গিয়ে সব কথা জানালেন।

যীশু পাঁচ হাজারের বেশী লোককে খাওয়ালেন

(মার্ক 6:30-44; লূক 9:10-17; যোহন 6:1-14)

13 যীশু সব কথা শুনে একা একটা নৌকা করে সেখান থেকে রওনা হয়ে কোন এক নির্জন জায়গায় চলে গেলেন। কিন্তু লোকেরা তা জানতে পেরে বিভিন্ন নগর থেকে বেরিয়ে হাঁটা পথ ধরে তাঁর সঙ্গ ধরল। 14 তিনি নৌকা থেকে তীরে নেমে দেখলেন বহুলোক জড় হয়েছে, তাদের প্রতি তাঁর করুণা হল। তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল, তাদের সকলকে তিনি সুস্থ করলেন।

15 সন্ধ্যা হলে শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “এ জনহীন প্রান্তর আর এখন বেলাও শেষ হয়ে এল, এই লোকদের চলে যেতে বলুন, তারা যেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে নিজেদের জন্য খাবার কিনে নিতে পারে।”

16 কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “তাদের যাবার দরকার নেই, তোমরাই তাদের কিছু খেতে দাও।”

17 তখন তার শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “এখানে আমাদের কাছে পাঁচখানা রুটি আর দুটো মাছ ছাড়া আর কিছুই নেই।”

18 তিনি তাঁদের বললেন, “ওগুলো আমার কাছে নিয়ে এস।” 19 এরপর তিনি সেই লোকদের ঘাসের ওপর বসে যেতে বললেন। পরে তিনি সেই পাঁচখানা রুটি ও দুটো মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে সেই খাবারের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন। তারপর সেই রুটি টুকরো টুকরো করে তাঁর শিষ্যদের হাতে পরিবেশন করার জন্য দিলেন। শিষ্যরা এক এক করে লোকদের তা দিলেন। 20 আর লোকেরা সকলে খেয়ে পরিতৃপ্ত হল। পরে শিষ্যরা পড়ে থাকা খাবারের টুকরো-টাকরা তুলে নিলে তাতে বারোটি টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল; 21 যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে স্ত্রীলোক ও ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ছাড়া পাঁচ হাজার পুরুষ মানুষ ছিল।

যীশু জলের উপর দিয়ে হাঁটেন

(মার্ক 6:45-52; যোহন 6:16-21)

22 এরপরই যীশু তাঁর শিষ্যদের নৌকায় করে হ্রদের অপর পারে তাঁর সেখানে যাবার আগে তাদের পৌঁছাতে বললেন। এরপর তিনি লোকদের বিদায় জানালেন। 23 লোকদের বিদায় দিয়ে, প্রার্থনা করবার জন্য তিনি একা পাহাড়ে উঠে গেলেন। অন্ধকার হয়ে গেলেও তিনি সেখানে একাই রইলেন। 24 নৌকাটি তীর থেকে দূরে গিয়ে পড়েছিল, উল্টো হাওয়া বইতে থাকায় ঢেউয়ের ধাক্কায় ভীষণভাবে দুলছিল।

25 সকাল তিনটে থেকে ছ’টার মধ্যে যীশুর শিষ্যরা নৌকায় ছিলেন। এমন সময় যীশু জলের উপর দিয়ে হেঁটে তাঁদের কাছে এলেন। 26 যীশুকে হ্রদের জলের ওপর দিয়ে হেঁটে আসতে দেখে শিষ্যরা ভয়ে আঁতকে উঠলেন, তারা “ভূত, ভূত” বলে ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন।

27 সঙ্গে সঙ্গে যীশু তাঁদের বললেন, “এতো আমি! সাহস কর! ভয় করো না।”

28 এর উত্তরে পিতর তাঁকে বললেন, “প্রভু, এ যদি সত্যিই আপনি হন, তবে জলের ওপর দিয়ে আমাকেও আপনার কাছে আসতে আদেশ করুন।”

29 যীশু বললেন, “এস।”

পিতর তখন নৌকা থেকে নেমে জলের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যীশুর দিকে এগোতে লাগলেন। 30 কিন্তু যখন দেখলেন প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস বইছে, তখন খুবই ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি আস্তে আস্তে ডুবতে লাগলেন আর চিৎকার করে বললেন, “প্রভু, আমাকে বাঁচান।”

31 যীশু তখনই হাত বাড়িয়ে পিতরকে ধরে ফেলে বললেন, “হে অল্প-বিশ্বাসী! তুমি কেন সন্দেহ করলে?”

32 যীশু ও পিতর নৌকায় উঠলে পর ঝোড়ো বাতাস থেমে গেল।

33 যাঁরা নৌকায় ছিলেন তাঁরা যীশুকে প্রণাম করে বললেন, “আপনি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র।”

যীশু বহু অসুস্থ মানুষকে আরোগ্যদান করলেন

(মার্ক 6:53-56)

34 তাঁরা হ্রদ পার হয়ে গিনেষরৎ অঞ্চলে এলেন। 35 সেই অঞ্চলের লোকরা তাঁকে চিনতে পেরে সেই অঞ্চলের সব জায়গায় লোকদের কাছে তাঁর আসার খবর রটিয়ে দিল। তখন লোকেরা তাদের মধ্যে যারা অসুস্থ ছিল তাদের সকলকে যীশুর কাছে নিয়ে এল। 36 তারা যীশুকে অনুরোধ করল, যেন সেই রোগীরা কেবল তাঁর পোশাকের ঝালর স্পর্শ করতে পারে। আর যাঁরা স্পর্শ করল, তারাই সুস্থ হয়ে গেল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International