Beginning
4 এই বার্তা প্রভুর কাছ থেকে এলো।
“ইস্রায়েল, যদি তুমি ফিরতে চাও
তাহলে আমার কাছে ফিরে এসো।
ভ্রান্ত দেবতাদের মূর্ত্তিগুলো ছুঁড়ে ফেলে দাও।
আমার কাছ থেকে চ্যুত হয়ে বিপথগামী হয়ো না।
2 যদি কেবলমাত্র এগুলি কর
তাহলেই কোন প্রতিজ্ঞা করবার সময় তোমরা আমার নাম ব্যবহার করতে পারবে।
প্রতিশ্রুতি গ্রহণের সময় বলতে পারবে,
‘প্রভুর নিশ্চিত অস্তিত্বের দিব্য।’
এই কথাগুলো তোমরা সত্য, উচিৎ
এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবে।
তাহলে জাতিসমূহ তাঁর আশীর্বাদ পাবে।
তারপর তারা তাঁকে প্রশংসা করতে পারবে।
তোমার দেশবাসী প্রভুর কার্যকলাপ ঘিরে
গর্ব অনুভব করবে।”
3 যিহূদা এবং জেরুশালেমের মানুষকে এই কথাগুলি প্রভু বলেছিলেন:
“তোমাদের জমিগুলি চষা হয়নি।
জমিতে লাঙল দাও, নিজেদের পতিত জমি চাষ করো।
বীজ বোনো সেই জমিতে, কাঁটাবনে বীজ বপন করো না।
4 প্রভুর লোক হয়ে যাও!
তোমাদের হৃদয়গুলোকে পরিবর্তন করো, আত্মাকে শুদ্ধ করো।
হে যিহূদা ও জেরুশালেমের মানুষ, তোমরা যদি নিজেদের না শোধরাও
তাহলে আমি ক্রুদ্ধ হয়ে যাবো।
আমার ক্রোধ আগুনের মতো দ্রুত গতিতে
তোমাদের সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে।
সেই আগুন নেভানোর ক্ষমতা কারো হবে না।
তোমাদের অসৎ কার্যকলাপের জন্যই এইগুলো হবে।”
উত্তর দিক থেকে বিপর্যয়
5 “যিহূদার লোকদের এই খবর বল:
জেরুশালেম শহরের প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে বল,
‘দেশের সর্বত্র শিঙা বাজাও।’
জোরে চিৎকার কর:
‘এস, আমরা একত্র হই
এবং প্রতিরক্ষার জন্য দূর্গবিশিষ্ট শহরগুলিতে যাই।’
6 সিয়োনের দিকে নিশান পতাকা ওড়াও।
বাঁচতে চাও তো তাড়াতাড়ি করো, অপেক্ষা কোরো না।
যা বলছি তাই কর কারণ আমি উত্তর দিক থেকে বিপর্যয় বয়ে আনছি।
আমি এক ভয়ঙ্কর ধ্বংস ঘটাবো।”
7 এক “সিংহ” তার গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছে।
দেশসমূহের এক বিনাশকর্তা তার যাত্রা শুরু করেছে।
তোমাদের দেশকে ধ্বংস করতে সে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে।
ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে এই দেশের ওপর,
কোন মানুষ জীবিত থাকবে না, সব কটি শহর ধ্বংসস্তূপ হয়ে যাবে।
8 সুতরাং শোকের পোশাক পরে তোমরা চিৎকার করে কাঁদো!
কারণ প্রভু আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
9 প্রভু বললেন, “যখন এগুলি ঘটবে,
তখন রাজা এবং তাঁর পারিষদরা তাদের সাহস হারিয়ে ফেলবে,
যাজকরা দারুণ ভয় পেয়ে যাবেন
এবং ভাববাদীরা যৎপরোনাস্তি বিহ্বল হবেন।”
10 তখন আমি, যিরমিয় বললাম, “হে প্রভু আমার মনিব, আপনি অবশ্যই যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকদের এই বলে প্রতারণা করেছেন: ‘তোমরা শান্তি পাবে।’ কিন্তু এখন তরবারিটি তাদের গলার দিকে লক্ষ্য করে রয়েছে।”
11 একই সঙ্গে সেই সময় যিহূদা এবং জেরুশালেমবাসীদের জন্য
এই বার্তা প্রেরিত হবে:
“হে আমার লোক, অনাবৃত পর্বতশৃঙ্গ থেকে তপ্ত বাতাস বয়ে আসবে।
এই ঝড় ছুটে আসবে মরুভূমি থেকে।
এ ঝড় কোন মৃদু বাতাস নয়
যার দ্বারা কৃষকরা তাদের শস্যকণা ভূমি থেকে ঝেড়ে আলাদা করে নেয়।
12 এই ঝড় অনেক বেশী শক্তিশালী
এবং এটা আমার কাছ থেকেই আসে।
এখন আমি আমার বিচারের রায় ঘোষণা করব যিহূদাবাসীদের বিরুদ্ধে।”
13 দেখো। মেঘের মতো শত্রু নড়ে উঠছে।
তার রথসমূহকে দেখাচ্ছে যেন ভয়াবহ ঝড়।
তার ঘোড়াগুলো ঈগলদের চাইতেও দ্রুতগামী।
এটি আমাদের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।
আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো।
14 হে জেরুশালেমবাসী, কু-মতলব ত্যাগ করো।
হৃদয় থেকে সমস্ত শয়তানি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দাও।
আত্মাকে শুদ্ধ করলে তবেই তোমরা রক্ষা পাবে।
15 ডান দেশের[a] সম্প্রদায়ের বার্তাবাহকের কথা শোন।
ইফ্রয়িমের পর্বতমালা থেকে কেউ দুর্ঘটনার খবর নিয়ে আসছে।
16 “সারা জেরুশালেমবাসীকে
সেই খবর জানিয়ে দাও।
বহুদূরের দেশ থেকে শত্রুরা যিহূদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসছে।
ঐ শত্রুরা চিৎকার করে যিহূদার শহরগুলির বিরুদ্ধে
যুদ্ধের ধ্বনি দিচ্ছে।
17 জেরুশালেমকে তারা সম্পূর্ণরূপে ঘিরে ফেলেছে।
যেমন একটি মাঠে লোকরা লক্ষ্য রাখে।
যিহূদা তুমি আমার বিরুদ্ধে গিয়েছিলে
তাই শত্রু পক্ষ তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
18 “তোমার জীবনযাত্রা এবং কার্যকলাপই
এই সমস্যা সৃষ্টি করেছে।
তোমার শয়তানি তোমার জীবনকে খুব কঠোর করেছে।
এই মূহুর্তে তোমার শয়তানিই তোমার যন্ত্রণার কারণ।
যেটা তোমার হৃদয়ের গভীরে আঘাত করছে।”
যিরমিয়ের কান্না
19 হায়! দুঃখ, যন্ত্রণা এবং চিন্তায়
আমি কুঁকড়ে যাচ্ছি, হায়! কি দুশ্চিন্তা!
কি ভয়। আমি অন্তরে ব্যথিত।
আমার হৃদয় ধুক্ ধুক্ করছে।
না, আমি আর চুপ করে থাকতে পারছি না কারণ আমি শত্রু পক্ষের শিঙা শুনেছি।
ঐ শিঙা ধ্বনি যুদ্ধের আহবান জানাচ্ছে।
20 বিপর্যয় বিপর্যয়কে অনুসরণ করে।
এই পুরো দেশটাই ধ্বংস হয়ে গেছে।
হঠাৎই আমার তাঁবু ধ্বংস হয়ে গেল।
আমার পর্দাগুলো ছিঁড়ে গেছে।
21 প্রভু, আর কতদিন এই যুদ্ধের পতাকা আমাকে দেখতে হবে?
কতদিন আমি আর এই যুদ্ধের দামামা শুনব?
22 ঈশ্বর বললেন, “আমার লোকরা হল মূর্খ।
তারা আমাকে জানে না।
তারা হল নির্বোধ বালক।
তারা বুঝতে পারছে না।
তাদের বিবেচনা শক্তি নেই।
তারা শয়তানিতে পটু কিন্তু তারা জানে না কি করে ভাল কিছু করতে হয়।”
প্রলয় আসছে
23 আমি পৃথিবীর দিকে তাকালাম।
কিন্তু দেখলাম পৃথিবী শূন্য।
পৃথিবীতে কিছুই ছিল না।
আমি আকাশের দিকে তাকালাম।
দেখলাম সমস্ত আলো নিভে গিয়েছে।
24 আমি পর্বতের দিকে তাকালাম।
দেখলাম পর্বত কাঁপছে।
সমস্ত পাহাড়গুলি ভয়ে কাঁপছে।
25 আমি দেখলাম কিন্তু কোন মানুষ খুঁজে পেলাম না।
আকাশের সমস্ত পাখি মূহুর্তে উধাও হয়ে গিয়েছে।
26 আমি ভালো দেশের দিকে তাকালাম এবং দেখলাম তা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
ঐ দেশে সমস্ত শহরগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। প্রভুর ভয়ঙ্কর ক্রোধেই এই দশা।
27 প্রভু এইগুলি বললেন:
“এই পুরো দেশটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।
কিন্তু আমি সম্পূর্ণভাবে তা ধ্বংস করব না।
28 জীবিত লোকরা আর্তনাদ করে মৃত লোকেদের জন্য কাঁদবে।
আকাশ এমশঃ কালো হয়ে উঠবে।
আমি যা বলব তার নড়চড় হবে না।
আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাবো না।”
29 যিহূদার লোকরা শুনতে পাবে
অশ্বারোহী ও তীরন্দাজ সৈন্যবাহিনীর হুঙ্কার
এবং ভয়ে তারা দৌড়ে পালাবে।
কেউ লুকোবে গুহার ভেতরে,
কেউ ঝোপঝাড়ে,
কেউ বা পাথরের আড়ালে।
যিহূদার সমস্ত শহরগুলি জনমানবহীন হয়ে যাবে।
সেখানে কেউ বাঁচবে না।
30 যিহূদা তুমি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছ।
তাহলে, এখন তুমি কি করছ?
ঐ সমস্ত প্রেমিকদের জন্য তুমি তোমার সব চেয়ে ভালো পোশাক পরেছো,
নিজেকে অলঙ্কারে সাজিয়েছো,
চোখে দিয়েছ কাজল,
সুন্দর দেখাবার জন্য নিজেকে সাজিয়েছো।
কিন্তু তাতে কোন লাভ নেই
কারণ তোমার প্রেমিকরা এখন তোমাকে ঘৃণা করে।
তারাই তোমাকে মারতে চেষ্টা করছে।
31 একজন মহিলা প্রসব বেদনায় যেমন করে
তেমনি একটি কান্না আমি শুনতে পাচ্ছি।
এই কান্না একজন মহিলার তার প্রথম সন্তান প্রসব করবার কান্নার মত।
এই মহিলা হল সিয়োন কন্যা।
সে হাত জড়ো করে প্রার্থনার ভঙ্গিতে বলছে,
“ওঃ, আমি অজ্ঞান হয়ে যাব!
ঘাতকরা আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে!”
যিহূদাবাসীদের শয়তানি
5 প্রভু বললেন, “জেরুশালেমের রাস্তায় হাঁটো। শহরের সার্বজনীন প্রাঙ্গণগুলিতে খুঁজে দেখো। যদি একজনও সৎ ও ভাল মানুষের সন্ধান পাও যে অন্তত সত্যের খোঁজ করছে, যদি এরকম একজনও মানুষ থাকে তাহলে জেরুশালেমকে আমি ক্ষমা করে দেব। 2 লোকে শুধু এই বলে প্রতিশ্রুতি নেয়: ‘প্রভুর অস্তিত্ব যেমন নিশ্চিত তার দিব্য,’ কিন্তু তারা আসলে তা বলে না।”
3 প্রভু, আমি জানি আপনি চান
মানুষ আপনার অনুগত থাকুক।
আপনি যিহূদাবাসীকে আঘাত করলেন।
কিন্তু তারা কোন বেদনা অনুভব করে নি।
আপনি তাদের ধ্বংস করলেন।
কিন্তু তা থেকে তারা কোন শিক্ষা নেয়নি।
তারা ভীষণ একগুঁয়ে, জেদী।
খারাপ কাজ করেছিল বলে তারা কোন রকম দুঃখপ্রকাশ পর্যন্ত করে নি।
4 কিন্তু আমি (যিরমিয়) আমাকে মনে মনে বললাম,
“তারা এত দরিদ্র এবং নির্বোধ যে
তারা প্রভুর জীবনযাত্রা শেখে নি।
ঈশ্বরের শিক্ষা বিষয়েও তারা কিছু জানে না।
5 সুতরাং আমি যিহূদার নেতৃবৃন্দের কাছে যাব
এবং তাদের সঙ্গে কথা বলব।
নেতারা নিশ্চয়ই প্রভুর আচার বিধি জানবে।
আমি নিশ্চিত যে তারা তাদের ঈশ্বরের বিধিসমূহ জানে।”
কিন্তু নেতারা সব একত্র হল
এবং প্রভুর সেবার কাজ থেকে দূরে সরে গেল।
6 তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে।
তাই বন থেকে এক সিংহ এসে তাদের আক্রমণ করবে।
মরুভূমি থেকে এক নেকড়ে বাঘ এসে সবাইকে মেরে ফেলবে।
তাদের শহরের কাছে এক চিতা লুকিয়ে আছে।
শহরের বাইরে কেউ বেরলেই তাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে খাবে।
যিহূদার লোকরা বার বার পাপ করার ফলেই এগুলি ঘটবে।
প্রভু বার বার সতর্ক করে কোন ফল পান নি।
প্রভুর কাছ থেকে তারা বার বারই দূরে থেকেছে।
7 ঈশ্বর বললেন, “হে যিহূদা, আমাকে একটি সঠিক কারণ দেখাও
যার জন্য আমি তোমাদের ক্ষমা করব।
তোমার ছেলেমেয়েরা আমাকে ত্যাগ করে মূর্ত্তির কাছে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে।
অথচ তোমার সন্তানদের আমি চাহিদা মতো সব কিছুই দিয়েছিলাম।
তবু ওরা আমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি।
ওরা ব্যভিচারিনীদের সঙ্গে অনেক বেশী সময় নষ্ট করেছে।
8 তারা ভালোভাবে খাওয়া-দাওয়া করা ঘোড়ার মতো, যারা কামাবেশের জন্য তৈরী।
ওরা সেই সমস্ত ঘোড়ার মতো যারা প্রতিবেশীদের স্ত্রীকে ঘরে ডেকে আনে।
9 তাহলে আমি কি ঐ সব কাজের জন্য যিহূদার লোকদের শাস্তি দেব না?”
এই হল প্রভুর বার্তা।
“হ্যাঁ, তুমি জানো যে দেশ এইভাবে বেঁচে থাকে তাকে আমার শাস্তি দিতে হবে।
আমি তাদের যোগ্য শাস্তিই দেব।
10 “যাও যিহূদার সমস্ত দ্রাক্ষা গাছ কেটে দাও।
(কিন্তু তাদের কখনও পুরোপুরি ধ্বংস করো না।)
কেটে দাও দ্রাক্ষা গাছগুলির শাখাপ্রশাখা, কারণ এই শাখাপ্রশাখা প্রভুর নয়।
11 যিহূদা এবং ইস্রায়েলের পরিবারগুলি
আমার সঙ্গে সবরকমভাবেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
12 “ঐ দেশবাসীরা প্রভুর বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচার করেছে।
তারা বলেছে, ‘প্রভু আমাদের কিছুই করতে পারবে না।
আমাদের আক্রমণ করতে আসছে
এমন কোন সৈন্য আমরা কখনও দেখব না।
কোনদিন অনাহারে মারাও যাব না।’
13 ভ্রান্ত ভাববাদীরা হল একটি ফাঁকা বাতাস।
ঈশ্বরের বাক্য তাদের মধ্যে নেই।
তাদেরও কপালে দুর্ভোগ ঘটবে।”
14 প্রভু ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এই কথাগুলি বলেছেন:
“ওই লোকরা বলেছিল যে আমি তাদের শাস্তি দেব না।
সুতরাং যিরমিয়, আমি তোমাকে যে শাস্তি দেব তা আগুনের মতো হবে।
ঐ লোকগুলি হবে কাঠের মতো।
সেই আগুন ওদের পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে।”
15 ইস্রায়েলের পরিবার, এই বার্তা হল প্রভুর,
“আমি শীঘ্রই তোমাদের আক্রমণ করবার জন্য
বহু দূর থেকে একটি প্রাচীন দেশকে নিয়ে আসব।
বহু প্রাচীন সেই দেশ।
সেই দেশের মানুষের ভাষা
তোমরা বুঝতে পারবে না।
16 তাদের তীরের থলিগুলি খোলা কবরের মতো।
তারা সবাই বলবান সৈন্য।
17 ঐ সব সৈন্যরা তোমাদের মজুত করা
সমস্ত খাদ্য খেয়ে ফেলবে।
ধ্বংস করবে তোমাদের সন্তানদের।
তোমাদের মেষ ও রাখাল বালকদের তারা খেয়ে ফেলবে।
দ্রাক্ষা আর ডুমুর ফল খাবে।
তারা তোমাদের সমস্ত বিশ্বস্ত
দুর্ভেদ্য শহরগুলিকে ধ্বংস করবে।”
18 এই হল প্রভুর বার্তা,
“কিন্তু যিহূদা, যখন এই ভয়ঙ্কর দিনগুলো তোমাদের জীবনে আসবে
তখন কিন্তু আমি পুরোপুরি তোমাকে ধ্বংস করব না।
19 যিরমিয়, তোমাকে যিহূদার লোকরা জিজ্ঞাসা করবে,
‘কেন প্রভু তোমার ঈশ্বর আমাদের প্রতি এমন খারাপ ব্যবহার করলেন?’
তখন তুমি (যিরমিয়) তাদের উত্তর দেবে:
‘তোমরা প্রভুর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ,
তোমাদের দেশে বিদেশী মূর্ত্তিসমূহ বানিয়েছ এবং তাদের সেবা করেছ।
সুতরাং তোমরা এখন বিদেশে বিদেশীদের সেবা করবে।’”
20 প্রভু বলেছেন, “এই বার্তা জানিয়ে দাও
যিহূদা এবং যাকোবের পরিবারগোষ্ঠীকে:
21 এই হল বার্তা:
হে নির্বোধ মানুষ তোমাদের কোন বুদ্ধি নেই।
তোমাদের চোখ আছে অথচ দেখতে পাও না!
কান আছে কিন্তু শুনতে পাও না।
22 নিশ্চয়ই তোমরা আমাকে ভয় পাও।”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
“আমার সামনে তোমাদের ভয়ে শিউরে উঠতে হবে।
আমিই সেই একজন যে তটভূমি দিয়ে সমুদ্রকে সীমায়িত করেছে, যাতে জল তার বাইরে না বইতে পারে।
জলের ঢেউ হয়তো বালুতটে আছড়ে পড়বে কিন্তু কোন কিছুকে ধ্বংস করতে পারবে না।
ঢেউ গর্জন করে বালুতটে আছড়ে পড়তে পারে কিন্তু কখনও বালুতটের সীমানা পেরোতে পারবে না।
23 কিন্তু যিহূদার লোকরা ভীষণ একগুঁয়ে এবং জেদী।
তারা সর্বদা আমার বিরুদ্ধে যাবার ছক কষে গিয়েছিল
এবং অবশেষে আমাকে ছেড়েও গিয়েছিল।
24 যিহূদার লোকরা কখনও বলেনি,
‘প্রভু আমাদের ঈশ্বরকে ভয় পাওয়া এবং সম্মান জানানো উচিৎ।
তিনিই আমাদের শরৎ এবং বসন্তকালে সঠিক সময় বৃষ্টি এনে দিয়েছেন।
তিনিই আমাদের ফসল তোলার সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।’
25 যিহূদার লোকরা, তোমরা অনেক ভুল কাজ করেছ।
তাই সময় মতো বৃষ্টির দেখা পাচ্ছো না।
তোমরা যথেষ্ট ফসল ফলাওনি।
তোমাদের পাপসমূহ প্রভুর কাছ থেকে ভালো জিনিষ পাওয়া থেকে তোমাদের বিরত করেছে।
26 আমার দেশবাসীর মধ্যে কিছু শয়তান লুকিয়ে আছে।
যারা পাখী ধরবার জন্য খাঁচা তৈরী করে, তারা তাদের মত।
পাখী ধরবার পরিবর্তে
তারা মানুষ ধরবার ফাঁদ পাতে।
27 এইসব দুষ্ট লোকদের, যারা মিথ্যায় ভরা,
তাদের বাড়ীগুলো হল পাখীতে ভরা খাঁচাসমূহের মতো।
তাদের মিথ্যাগুলি তাদের ধনী ও শক্তিশালী করেছে।
28 তারা তাদের অসৎ কর্ম দিয়ে মোটা এবং স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছে।
অশুভ উপায়ে তারা হয়ে উঠেছে স্বাস্থ্যবান।
তাদের শয়তানির কোন শেষ নেই।
তারা অনাথ শিশুদের ব্যাপারে কোন মিনতি করে নি।
তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি।
তারা গরীব লোকদের প্রতি কখনও সুবিচার করেনি।
29 ঐসব কাজের জন্য আমি কি যিহূদার লোকদের শাস্তি দেব না?”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
“তুমি জানো এই ধরণের দেশগুলোকে আমি উচিৎ শাস্তি দিয়ে থাকি।
আমাকে তাদের যোগ্য শাস্তিই দিতে হবে।”
30 প্রভু বললেন, “যিহূদা দেশে একটা সাংঘাতিক
এবং রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
31 ভাববাদীরা মিথ্যে কথা বলে
এবং যাজকদের যা করার কথা তা তারা করে না।
আমার লোকরা, ভাববাদীরা এবং যাজকরা যা করে তাই ভালোবাসে।
কিন্তু হে আমার লোকসমূহ, তোমাদের যখন শাস্তি পাবার সময় আসবে
তখন তোমরা কি করবে?
শত্রু ঘিরে ধরল জেরুশালেমকে
6 “বিন্যামীনের লোক, প্রাণে বাঁচতে চাইলে
জেরুশালেম শহর ছেড়ে চলে যাও।
তকোয় শহরে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দাও।
সতর্কতা সূচক পতাকা ওড়াও বৈৎ-হক্কেরম শহরে।
কারণ উত্তর দিক থেকে অমঙ্গল ও ধ্বংস আসছে।
ভয়ঙ্কর এক ধ্বংসলীলা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।
2 সিয়োন কুমারী,
তুমি হলে সুন্দরী এবং কোমলা।
3 মেষপালকরা তাদের মেষপাল নিয়ে জেরুশালেমে এলো।
তারা সেই তৃণভূমির চারিদিকে তাঁবু গাড়লো।
প্রত্যেক মেষপালক তার নিজের
মেষপালকে দেখাশোনা করবে।
4 “জেরুশালেমকে আক্রমণ করার জন্য তৈরী হও।
উঠে পড়ো! আজ দুপুরেই আমরা এই শহরকে আক্রমণ করবো।
কিন্তু ইতিমধ্যেই খানিকটা দেরি হয়ে গিয়েছে।
সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে।
5 সুতরাং আজ রাতেই এই শহরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে প্রস্তুত হও!
জেরুশালেমের দুর্ভেদ্য প্রাচীর ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দাও।”
6 প্রভু সর্বশক্তিমান এই কথাগুলি বললেন:
“জেরুশালেমের চারপাশের সমস্ত গাছ কেটে ফেলো।
পাথর আর মাটি দিয়ে এমন স্তূপ তৈরী করো
যার সাহায্যে এ শহরের প্রাচীর অতি সহজেই অতিক্রম করতে পারবে।
এই শহরে শোষণ ছাড়া আর কিছু নেই।
তাই এই শহরকে শাস্তি পেতে হবে।
7 একটি কুয়ো যেমনভাবে জলকে তাজা রাখে,
ঠিক তেমনভাবেই জেরুশালেম তার পাপপূর্ণ কর্মগুলিকে তাজা করে রেখেছে।
আমি এই শহরের লুঠতরাজ ও হিংসার ঘটনার কথা সব সময় শুনে এসেছি।
এদের যন্ত্রণা আর অসুস্থতা দেখেছি।
8 জেরুশালেম এবার সতর্ক হও।
যদি তোমরা এখনও সাবধান না হও তাহলে আমি তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব।
তোমাদের দেশকে মরুভূমিতে পরিণত করব।
কোন মানুষই আর ওখানে বাস করতে পারবে না।”
9 সর্বশক্তিমান প্রভু আরও বললেন:
“যে সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা এখনও তাদের দেশে পড়ে আছে
তাদের একত্রিত করো।
যেভাবে তোমরা দ্রাক্ষাক্ষেতের শেষ দ্রাক্ষাগুলিকে এক একটি করে তুলে নিয়ে একত্রিত করো
ঠিক সে ভাবে তাদের একত্রিত করো।
যেমনভাবে দ্রাক্ষা চয়ন করবার সময় একজন শ্রমিক প্রতিটি দ্রাক্ষালতা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখে
ঠিক সে ভাবে ইস্রায়েলীয়দের খুঁজে বার করো।”
10 আমি কাদের সঙ্গে কথা বলব?
আমি কাদের সতর্ক করব?
কারাই বা আমার কথা শুনবে?
ইস্রায়েলীয়রা আমার সতর্কবাণী শুনতে পাচ্ছে না
কারণ তাদের কান বন্ধ।
তারা প্রভুর কথা শুনতে অনিচ্ছুক।
তারা তাঁর বার্তা শুনতে পছন্দ করে না।
11 কিন্তু আমি (যিরমিয়)
প্রভুর ক্রোধ বহন করতে করতে ক্লান্ত।
“যে সমস্ত শিশুরা রাস্তায় খেলা করছে তাদের ওপর বর্ষিত হোক্ প্রভুর এই ক্রোধ।
যুবকদের সমাবেশের ওপরেও বর্ষিত হোক্ এই ক্রোধ।
একটি লোক ও তার স্ত্রী, দুজনকেই গ্রেপ্তার করা হবে।
সমস্ত প্রাচীন লোকদের গ্রেপ্তার করা হবে।
12 তাদের ঘর-বাড়ি,
জমি-জমা এমন কি তাদের স্ত্রীদের পর্যন্ত বিলিয়ে দেওয়া হোক্ অন্য লোকদের কাছে।
আমি আমার হাত তুলে নেব এবং যিহূদার লোকদের শাস্তি দেব।”
এই ছিল প্রভুর বার্তা।
13 “ইস্রায়েলের সমস্ত লোক অবৈধ উপায়ে আরো বেশী বেশী পয়সা চায়।
সব চেয়ে নিম্ন থেকে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, তারা সবাই ঐরকম লোভী।
ভাববাদী থেকে যাজক প্রত্যেকে শুধু মিথ্যাচার করে গিয়েছে।
14 আমার লোকেরা কঠিন আঘাত পেয়েছে।
ভাববাদী এবং যাজকদের উচিৎ ছিল তাদের সেই আঘাতের ক্ষতে মলম লাগিয়ে দেওয়া।
কিন্তু তারা এই ক্ষতকে কোন গুরুত্ব দেয়নি।
তারা এই ক্ষতটিকে একটি ছোট আচঁড় বলে গণ্য করেছে।
ভাববাদীরা এবং যাজকরা বলে: ‘সব কিছু ঠিক আছে।’
কিন্তু প্রকৃত পক্ষে, সব ঠিক নেই।
15 যাজক এবং ভাববাদীদের তাদের কৃতকার্যের জন্য লজ্জিত হওয়া উচিৎ।
কিন্তু তারা বিন্দুমাত্র লজ্জিত নয়।
তারা জানে না পাপের জন্য তাদের কতখানি বিব্রত হওয়া উচিৎ।
তাই তারা অন্যদের সাথে একই শাস্তি পাবে।
যখন অন্যদের শাস্তি দেব, তখন তাদেরও মাটিতে আছড়ে ফেলা হবে।”
প্রভু এই কথাগুলি বললেন।
16 পাশাপাশি প্রভু জানালেন:
“রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে তাকাও।
জিজ্ঞাসা করো কোনটা পুরানো রাস্তা আর কোনটা নতুন।
সেই রাস্তায় পা বাড়াও যে রাস্তা ভাল।
ভালো রাস্তায় হাঁটলে নিজের জন্য শান্তি খুঁজে পাবে।
কিন্তু তোমরা বলেছিলে, ‘আমরা ভালো রাস্তায় হাঁটব না।’
17 আমি তোমাদের ওপর নজরদারি করার জন্য একজনকে বেছে নিয়েছি।
আমি তাদের বলেছিলাম, ‘যুদ্ধের দামামা শোন।’
কিন্তু তারা বলেছিল, ‘আমরা শুনব না!’
18 সুতরাং সমস্ত দেশগুলি শোন,
এই দেশগুলির লোকরা তোমরা মন দিয়ে শোন।
19 কান পেতে শোন এই পৃথিবীর মানুষ,
আমি যিহূদার লোকদের জন্য ধ্বংস আনতে যাচ্ছি।
কেন? কারণ তারা শুধু খারাপ কাজের ছক কষে গিয়েছে
এবং তারা আমার বার্তাকে অগ্রাহ্য করেছে।
অস্বীকার করেছে আমার বিধিকে।”
20 প্রভু বললেন, “তোমরা আমার কাছে শিবা দেশ থেকে কেন ধুপ নিয়ে আসো?
তোমরা কেন একটি দূর দেশ থেকে আমার কাছে মিষ্ট গন্ধী বচ নিয়ে আসো?
তোমাদের হোমবলি আমাকে সুখী করে নি।
তোমাদের এই উৎসর্গ আমাকে খুশি করতে পারেনি।”
21 তাই প্রভু যা বললেন তা হল এইরকম:
“আমি যিহূদার লোকদের সামনে প্রতিবন্ধক প্রস্তর পেতে দেব।
তারা পাথর হয়ে নীচে গড়িয়ে পড়বে।
পিতা এবং তার পুত্ররা হোঁচট খেয়ে পড়বে তাদের ওপর।
বন্ধু বান্ধব এবং প্রতিবেশীরা মারা যাবে।”
22 প্রভু যা বললেন তা হল:
“উত্তর দিক থেকে সৈন্যদল আসছে।
এই বিশাল দেশ উত্তরের বহুদূর থেকে এগিয়ে আসছে।
23 সৈন্যরা বয়ে আনছে তীরধনুক এবং বর্শা।
তারা প্রচণ্ড নিষ্ঠুর।
প্রবল শক্তিশালী।
তারা ঘোড়ায় ছুটে আসছে সমুদ্রের মতো গর্জন করতে করতে।
সিয়োন কন্যা, ঐ সেনারা
তোমাকেই আক্রমণ করতে আসছে।”
24 আমরা তাদের সম্পর্কিত খবর শুনেছি।
অসহায় বোধ করছি।
একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার শিশুকে জন্ম দেবার সময়ের মত
আমরা অসহায় এবং ব্যথায় কাতর রয়েছি।
25 বাড়ির বাইরে বা রাস্তায় যেও না।
কেন না শত্রুদের হাতে উদ্ধত তরবারি
এবং সব জায়গায় বিপদ অপেক্ষা করছে।
26 আমার লোকরা, শোক পোশাকগুলি পরে নাও।
সদ্য একমাত্র সন্তান হারানো
জননীর মতো ভগ্ন হৃদয়ে চিৎকার করে কাঁদো,
কারণ আমাদের শীঘ্রই ধ্বংসকারীর মুখোমুখি হতে হবে
যে হঠাৎ আমাদের ওপর এসে পড়বে।
27 “যিরমিয়, আমি (প্রভু)
তোমাকে একজন ধাতু পরীক্ষক হিসেবে তৈরী করেছি।
তুমি আমার লোকদের পরীক্ষা করে দেখবে।
তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে লক্ষ্য রাখবে, তারা ভীষণ জেদী।
28 এবং প্রত্যেকেই আমার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে।
তারা লোকদের সম্বন্ধে বাজে কথা বলে।
তারা হল মরচে পড়া লোহার মত
এবং কলঙ্কিত পিতলের মতো।
29 তারা হল আগুনের মাধ্যমে রূপাকে খাঁটি করবার চেষ্টায় রত শ্রমিকদের মত।
হাপর খুব জোরে বাতাস সৃষ্টি করল,
তাপ বৃদ্ধি পেল, কিন্তু আগুন থেকে কেবল সিসে বেরিয়ে এলো।
সমস্ত কাজটাই হল একটা পণ্ডশ্রম।
একই রকম ভাবে, আমার লোকদের কাছ থেকে শয়তানি সরানো হল না।
30 এদের ‘বাতিল রূপো’
বলে অভিহিত করা হবে।
কারণ প্রভু এদের গ্রহণ করেন নি।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International