Beginning
অশূরদের যিহূদা আক্রমণ
36 যিহূদার রাজা হিষ্কিয়ের 14 বছরের রাজত্বকালে অশূরের রাজা সন্হেরীব যিহূদার দুর্ভেদ্য নগরগুলিতে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন। সন্হেরীব সেই শহরগুলিকে পরাস্ত করেন। 2 সন্হেরীব বিশাল সেনাদল সহ তাঁর সেনাপতিকে জেরুশালেমের রাজা হিষ্কিয়ের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। সেনাপতি ও তার সেনাদল লাখীশ ত্যাগ করে জেরুশালেমে যায়। তারা ধোপার মাঠে যাওয়ার পথে যে উচ্চতর পুষ্করিনীটি আছে তার জলের নলের কাছে থেমেছিল।
3 জেরুশালেম থেকে সেনাপতির সঙ্গে কথা বলতে তিনজন মানুষ যায়। এরা ছিলেন হিল্কিয়ের পুত্র ইলিয়াকীম, আসফের পুত্র যোয়াহ ও শিব্ন। ইলিয়াকীম ছিলেন প্রাসাদের পরিচালক। যোয়াহ ছিলেন নথীরক্ষক এবং শিব্ন ছিলেন রাজপরিবারের সচিব।
4 সেনাপতি তাদের বলল, “অশূরের মহান রাজা যা বলেন তা হিষ্কিয়কে গিয়ে বল। কথাটা হল:
“‘তোমরা কাদের কাছ থেকে সাহায্য পাবার আশা কর? 5 আমি বলি, তোমরা যদি ক্ষমতা ও সুপরামর্শের সাহায্যে যুদ্ধ করার ওপর আস্থাশীল হও—সেটা তখন হবে অপ্রয়োজনীয়। ওসব কিছুই নয়, নিছকই বুলি মাত্র। এখন আমি জানতে চাই যে কার ওপর তোমরা এত নির্ভর করছ যে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে চাও? 6 তোমরা কি মনে কর মিশর তোমাদের সাহায্য করবে? মিশর ভাঙা লাঠির মতো। তোমরা যদি সমর্থনের জন্য সেই লাঠির ওপর ভর দাও, তবে এটা তোমাদের আঘাত করবে এবং তোমাদের হাতের মধ্যে গর্তের সৃষ্টি করবে। মিশরের রাজা ফরৌণের ওপর সাহায্যের বিষয়ে কেউই আস্থা রাখতে পারে না।
7 “‘কিন্তু তোমরা হয়তো বলতে পারো, “আমরা আমাদের প্রভু ঈশ্বরের ওপর সাহায্যের ব্যাপারে আস্থাশীল।” কিন্তু আমি জানি যেখানে লোকরা প্রভুর উপাসনা করত সেই সব বেদী এবং পবিত্র স্থানগুলিকে হিষ্কিয় ধ্বংস করেছে এবং হিষ্কিয় যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকদের বলছে, “তোমাদের শুধুমাত্র জেরুশালেমের এই বেদীটিতে উপাসনা করা উচিৎ।”
8 “‘যদি তোমরা এখনও যুদ্ধ করতে চাও তবে আমার মনিব অশূরদের সম্রাট তোমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন। আমি প্রতিশ্রুতি করছি তোমরা যদি ঘোড়ায় চড়ার জন্য যথেষ্ট মানুষ জোগাড় করতে পার তবে আমি তোমাদের যুদ্ধের জন্য 2000 ঘোড়া দেব। 9 কিন্তু তবুও তোমরা আমার মনিবের নিম্নস্তরের কোন সেনানায়ককেও পরাস্ত করতে পারবে না। তবু কেন তোমরা মিশরের রথসমূহ ও অশ্বারোহী সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর কর?
10 “‘এখন তোমরা কি মনে কর আমি প্রভুর সাহায্য ছাড়াই এই দেশ ধ্বংস করতে এসেছি? প্রভু আমাকে বলেছেন, “এই দেশটি আক্রমণ কর এবং এটাকে ধ্বংস কর।”’”
11 তখন ইলিয়াকীম, শিব্ন ও যোয়াহ সেনাপতিকে বলেন, “অনুগ্রহ করে আমাদের সঙ্গে অরামীয় ভাষায় কথা বলুন। আমরা এই ভাষা বুঝি। যিহূদার ভাষায় আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, কারণ শহরের দেওয়ালের ওপর যে লোকরা বসে আছে তারা আপনার কথা শুনতে পাবে এবং বুঝতে পারবে।”
12 কিন্তু সেনাপতি বলল, “আমার প্রভু শুধুমাত্র তোমাদের ও তোমাদের মনিবের সঙ্গে কথা বলতে পাঠান নি। আমার মনিব প্রাচীরে বসে থাকা লোকদের সঙ্গেও কথা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন। ঐসব লোকদের জন্য যথেষ্ট খাদ্য ও জল থাকবে না। তোমাদের মতো, ওদেরও নিজেদের বর্জ্য পদার্থ ও নিজেদের প্রস্রাব খেতে হবে।”
13 তখন সেনাপতি ইহুদী ভাষায় জোরে চেঁচিয়ে উঠল,
14 মহান রাজা, অশূরের রাজার বার্তা শোন: “‘হিষ্কিয়কে তোমাদের ঠকাবার সুযোগ দিও না। আমার ক্ষমতা থেকে সে তোমাদের বাঁচাতে পারবে না। 15 হিষ্কিয়ের কথা বিশ্বাস করো না। সে বলবে, “প্রভুর প্রতি আস্থাশীল হও! প্রভু আমাদের রক্ষা করবেন। প্রভু অশূরদের রাজাকে এই শহরকে পরাস্ত করতে দেবেন না। এসব কথা বিশ্বাস করবে না।”
16 “‘তোমরা হিষ্কিয়ের ওসব কথা শুনো না। অশূর রাজার কথা শোন। অশূর রাজা বলেন, “আমাদের চুক্তি করা উচিৎ। তোমরা শহরের বাইরে আমার কাছে এসো। তখন সব মানুষই ঘরে ফেরার জন্য মুক্ত হবে। প্রত্যেক মানুষ তার বাগান থেকে দ্রাক্ষা খাওয়ার বিষয়ে মুক্ত হবে। এবং প্রত্যেক মানুষই তার ডুমুর গাছ থেকে ডুমুর খেতে পারবে। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের কুয়ো থেকে জল পান করতে পারবে। 17 যতদিন পর্যন্ত আমি না আসব এবং তোমাদের প্রত্যেককে তোমাদের নিজেদের দেশের মতো একটি দেশে নিয়ে যেতে পারব, ততদিন পর্যন্ত তোমরা এটা করতে পারবে। সেই নতুন দেশে তোমরা ভাল শস্য ও নতুন দ্রাক্ষারস, রুটি ও দ্রাক্ষার বাগান পাবে।”
18 “‘হিষ্কিয়কে তোমাদের প্রতারণা করতে দিও না। সে বলে, “প্রভু আমাদের রক্ষা করবে।” কিন্তু আমি তোমাদের জিজ্ঞাসা করি, অন্য দেশ সমূহের কোন দেবতা কি অশূরদের রাজার হাত থেকে তাদের দেশসমূহ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে? না! 19 হমাতের ও অর্পদের দেবতারা কোথায়? তারা পরাস্ত! সফর্বয়িমের দেবতারা কোথায়? তারা পরাজিত হয়েছে। তারা কি শমরিয়াকে আমার ক্ষমতা থেকে রক্ষা করেছিল? না! 20 অন্য দেশসমূহের কোন দেবতা কি আমার হাত থেকে তাদের দেশ রক্ষা করেছে? না! প্রভু কি জেরুশালেমকে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন? না!’”
21 কিন্তু জেরুশালেমের লোকরা নীরব হয়ে থাকল যেহেতু রাজা হিষ্কিয় নির্দেশ দিয়েছেন সেহেতু তারা সেনাপতিকে কিছুই বলল না। কারণ রাজার আদেশ ছিল, “তাকে কিছু বোলো না।”
22 তারপর প্রাসাদের পরিচালক ইলিয়াকীম (হিল্কিয়ের পুত্র), রাজপরিবারের সচিব শিব্ন এবং নথীরক্ষক যোয়াহ (আসফের পুত্র) হিষ্কিয়ের কাছে গেলেন। তাঁরা নিজেদের দুঃখ প্রকাশ করবার জন্য তাঁদের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেললেন। তাঁরা হিষ্কিয়কে অশূরের যাবতীয় বক্তব্য শোনালেন।
হিষ্কিয় ঈশ্বরের কাছে সাহায্যপ্রার্থী
37 রাজা হিষ্কিয় ঐসব ঘটনার কথা শুনেছিলেন। তারপর তিনি তাঁর দুঃখ দেখানোর জন্য নিজের পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন। তারপর হিষ্কিয় দুঃখের বিশেষ পোশাক পরলেন এবং প্রভুর মন্দিরে গেলেন।
2 হিষ্কিয় প্রাসাদের পরিচালক ইলিয়াকীম, রাজপরিবারের সচিব শিব্ন ও যাজকদের মধ্যে প্রবীণদের আমোসের পুত্র ভাববাদী যিশাইয়র কাছে পাঠালেন। তাঁরা দুঃখ প্রদর্শনের জন্য বিশেষ পোশাক পরেছিলেন। 3 এঁরা যিশাইয়কে বললেন, “রাজা হিষ্কিয় তাদের আদেশ দিয়েছেন যে আজ দুঃখ ও কষ্ট ভোগের বিশেষ দিন। আজকের দিনটি হবে খুব দুঃখের। আজকের দিনটা হবে সেই দিনটার মতো যখন কোন শিশুর জন্মানোর সময় হয়ে যাবে অথচ মায়ের শরীর থেকে বেরিয়ে আসার মতো বলশালী না হওয়ায় সে বেরোতে পারবে না। 4 সেনাপতির মনিব, অশূরদের রাজা তাকে জীবন্ত ঈশ্বরকে বিদ্রূপ করতে পাঠিয়েছে। তোমাদের প্রভু ঈশ্বর হয়তো ঐসব বিষয়গুলি শুনতেও পারেন। প্রভু হয়তো প্রমাণও করবেন যে শত্রুরা ভুল করছে। সুতরাং যে সব লোকরা বেঁচে আছে তাদের জন্য প্রার্থনা কর।”
5 রাজা হিষ্কিয়ের আধিকারিকরা যিশাইয়র কাছে উপস্থিত হন। 6 যিশাইয় তাদের বললেন, “তোমরা তোমাদের মনিব হিষ্কিয়কে জানাও: প্রভু বলেন, ‘সেনাপতির কথা শুনে ভীত হতে হবে না! অশূর রাজের “নাবালকরা” আমার নামে যেসব কুৎসা করেছে সেগুলি বিশ্বাস করবে না। 7 দেখো আমি অশূরের বিরুদ্ধে একটি আত্মা পাঠাব। অশূরের রাজা তার দেশের বিপদ সম্পর্কিত একটি সতর্কবার্তা পাবে। সুতরাং সে তার দেশে ফিরে যাবে। সেই সময় আমি তাকে তার দেশেই তরবারির আঘাতে হত্যা করব।’”
অশূর সেনার জেরুশালেম ত্যাগ
8 রাজা অশূর একটি খবর পেল। 9 সেই খবরে বলা ছিল, “কূশদেশের রাজা তির্হকঃ তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসছে।” সুতরাং অশূররাজ লাখীশ ত্যাগ করে লিব্না চলে গেলেন। সেনাপতি এই বার্তা পেয়ে লিব্নাতে যুদ্ধরত অশূররাজের কাছে চলে গেলেন।
সে হিষ্কিয়ের কাছে দূত পাঠাল। দূতকে বলল, 10 “তুমি যিহূদা রাজ হিষ্কিয়কে এই কথাগুলি বল:
‘তোমরা যে ঈশ্বরের ওপর আস্থাশীল তার দ্বারা বোকা হয়ো না। একথা বলো না যে, “ঈশ্বর জেরুশালেমকে অশূররাজের কাছে পরাজিত হতে দেবে না।” 11 তোমরা শুনেছ অশূরের রাজা অন্যান্য দেশের কি অবস্থা করেছে। সে তাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে। তাহলে তোমরা কি রেহাই পাবে? না! 12 তাদের সেই দেবতারা কি তাদের রক্ষা করেছিল? না! আমার পূর্বপুরুষরাই তাদের সকলকে ধ্বংস করেছে। তারা গোষণ, হারণ, রেত্সফ এবং তলঃসর নিবাসী এদনের লোকদের ধ্বংস করেছে। 13 হমাতের রাজা কোথায়? অর্পদের রাজা কোথায়? সফর্বয়িম নগরের রাজা কোথায়? কোথায় হেনা ও ইব্বার রাজা? তারা সকলেই বিনাশপ্রাপ্ত! তারা সকলেই ধ্বংস হয়েছে।’”
ঈশ্বরের কাছে হিষ্কিয়ের মিনতি
14 হিষ্কিয় বার্তাবাহকের হাত থেকে চিঠিগুলো নিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি প্রভুর মন্দিরে গেলেন। তারপর তিনি চিঠিগুলো খুলে প্রভুর সামনে রাখলেন। 15 হিষ্কিয় প্রভুর কাছে প্রার্থনা শুরু করলেন। বললেন: 16 “সর্বশক্তিমান প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, আপনি করূব দূতদের ওপরে রাজার মত বসে রয়েছেন। আপনি, একমাত্র আপনিই পৃথিবীর সব রাজ্যের শাসক। আপনিই পৃথিবী ও স্বর্গের সৃষ্টিকর্তা। 17 প্রভু অনুগ্রহ করে আমার কথা শুনুন। প্রভু, চোখ মেলে বার্তাটির দিকে তাকান। জীবন্ত ঈশ্বর, আপনাকে অপমান করবার জন্য সন্হেরীব যেসব কথা লিখেছেন সেগুলি দয়া করে শুনুন। 18 এটাই সত্য, প্রভু। অশূরের রাজা সেই সব দেশগুলিকে বিনাশ করেছে। 19 সেই সব দেশের মূর্ত্তিদেরও অশূররাজ পুড়িয়েছে। কিন্তু তারা সত্যিকারের দেবতা ছিল না। তারা ছিল কেবল মানুষের তৈরি কাঠ ও পাথরের মূর্ত্তি। সেই কারণেই অশূররাজ তাদের ধ্বংস করতে পেরেছিল। 20 কিন্তু আপনিই প্রভু, আমাদের ঈশ্বর! সুতরাং অশূররাজের কবল থেকে আমাদের রক্ষা করুন। তাহলে অন্যান্য সমস্ত দেশগুলিও জানতে পারবে যে আপনিই প্রভু, আপনিই একমাত্র ঈশ্বর।”
হিষ্কিয়কে ঈশ্বরের উত্তর
21 তখন আমোসের পুত্র যিশাইয় হিষ্কিয়ের এই বার্তা পাঠালেন। বার্তাটিতে তিনি বললেন, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘তোমরা অশূরের রাজা সন্হেরীবের বার্তার বিষয়ে আমার কাছে যে প্রার্থনা করেছিলে আমি তা শুনেছি।’
22 “এটা হল সন্হেরীবের বিষয়ে প্রভুর বার্তা:
‘অশূরের রাজা, সিয়োনের কুমারী কন্যা (জেরুশালেম) তোমাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে না।
তোমার জন্য সে হাসে।
জেরুশালেম কন্যা, তোমাকে নিয়ে সে মজা করে।
23 কিন্তু তুমি কাকে অপমান ও বিদ্রূপ করেছ?
কার বিরুদ্ধে তুমি কথা বলেছ?
তুমি ইস্রায়েলের পবিত্রতমরই বিরোধী ছিলে।
তুমি এমন হাবভাব করলে যেন তুমি ঈশ্বরের চেয়ে অনেক ভালো।
24 তুমি তোমার আধিকারিকদের প্রভু, আমার ঈশ্বরকে বিদ্রূপ করতে পাঠিয়েছিলে।
তুমি বলেছিলে, “আমি খুব ক্ষমতাসম্পন্ন।
আমার বহু যুদ্ধযান আছে।
আমার শক্তি দিয়েই আমি লিবানোনকে পরাস্ত করেছিলাম।
আমি লিবানোনের সর্ব্বোচ্চ পর্বতে আরোহণ করেছিলাম।
আমি লিবানোনের মহান গাছগুলিকে কেটে ফেলে দিয়েছিলাম।
আমি উচ্চতম পর্বতগুলিতে এবং অরণ্যের গভীরতম অংশে এসেছিলাম।
25 আমি কূপসমূহ খনন করেছিলাম এবং নতুন জায়গা থেকে জলপান করেছিলাম।
আমি আমার হাতের তালু দিয়ে মিশরের নদীকে শূন্য করে দিয়েছিলাম
এবং ঐ দেশের ওপর হেঁটে গিয়েছিলাম।”
26 ‘আমি যা বলেছিলাম তুমি কি তা শোননি?
আমি (ঈশ্বর) অনেকদিন আগে পরিকল্পনা করেছিলাম।
আমি প্রাচীনকালেই পরিকল্পনা করেছিলাম।
এবং এখন আমি তা ঘটাব।
আমি তোমাদের শক্তিশালী শহরগুলিকে ভেঙে ফেলতে
এবং সেগুলিকে পাথরের স্তূপে পরিণত করতে দিয়েছিলাম।
27 এই শহরগুলির লোকগুলোর কোন ক্ষমতা ছিল না।
তারা ছিল ভীত ও বিভ্রান্ত।
তাদের অবস্থা এমন হয়েছিল যেন
এখুনি ওদের প্রায় ঘাসের মত কেটে ফেলা হবে।
বাড়ির ফাটলে গজিয়ে ওঠা ঘাস যেমন বড় হবার আগে মরে যায়,
তেমনিই শহরবাসীদের অবস্থা ছিল।
28 আমি তোমাদের যুদ্ধের বিষয় সব জানি।
আমি তোমাদের বিশ্রামের বিষয়েও জানি।
যখন তোমরা যুদ্ধে যাও তাও আমি জানি।
আমি জানি কখন তোমরা যুদ্ধ থেকে ফিরে আস।
কখন তোমরা আমার ওপর রেগে গিয়েছিলে তাও আমি জানি।
29 হ্যাঁ, তোমরা আমার ওপর রেগে ছিলে।
আমি তোমাদের গর্বিত বিদ্রূপ শুনেছি।
তাই আমি তোমাদের নাকে লাগাম দেব।
এবং মুখে লাগাব ধাতব লাগাম।
তারপর তোমরা যে পথ দিয়ে এসেছ
সেই পথ দিয়েই তোমাদের ফেরাব।’”
হিষ্কিয়দের প্রতি প্রভুর বার্তা
30 তখন প্রভু হিষ্কিয়কে বললেন, “আমি তোমাকে একটি চিহ্ন দেখাব। সেই চিহ্ন প্রমাণ করবে যে এই কথাগুলি সত্যি। তোমরা বীজ বপন করতে সক্ষম ছিলে না, অতএব এই বছর তোমরা গত বছরের শস্য থেকে আপনিই জমানো শস্য খাবে। কিন্তু তিন বছরেই তুমি তোমার নিজের কোন বীজ থেকেই খাবার মতো ফসল পাবে। তুমিই সেই বীজগুলি লাগাবে এবং যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্যশস্য পাবে। তুমি দ্রাক্ষাগাছ রোপণ করবে এবং তার ফল খাবে।
31 “যিহূদা পরিবারের সদস্যরা যারা পালিয়ে গিয়েছিল এবং যারা জীবিত রয়েছে তারা আবার বাড়তে থাকবে। তারা হবে সেই সব গাছেদের মত যাদের শিকড় মাটির অনেক গভীরে থাকে আর ফল থাকে মাটির ওপরে। 32 কারণ এখনও কেউ কেউ বেঁচে থাকবে। তারা জেরুশালেমের বাইরে চলে যাবে। সিয়োন পর্বত থেকে জীবিতরা আসতে থাকবে।” সর্বশক্তিমান প্রভুর গভীর ভালোবাসা এইসব ঘটাবে।
33 তাই প্রভু অশূরের রাজার বিষয়ে একথা বলেন:
“সে এই শহরে আসবে না।
সে এই শহরের দিকে তীর ছুঁড়বে না।
সে এই শহরে তার বর্ম আনবে না।
এই শহরকে আক্রমণ করতে সে ঢিবি বানাবে না।
34 সে তার আসার পথে ফিরে যাবে।
সে এই শহরে ফিরে আসবে না।
প্রভু এইসব বলেন!
35 আমি এই শহরটিকে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেব।
আমি আমার নিজের জন্য এবং সেবক দায়ূদের জন্য এসব করব।”
36 সেই রাতে প্রভুর দূত অশূরের শিবিরে গিয়ে 185,000 লোককে হত্যা করলেন। সকালে উঠে লোকেরা দেখল যে চারিদিকে শবদেহ ছড়ানো। 37 তাই অশূররাজ সন্হেরীব নীনবীতে ফিরে গিয়ে সেখানেই বসবাস করা শুরু করল।
38 একদিন সন্হেরীব তার দেবতা নিষ্রোকের মন্দিরে গিয়ে তার উপাসনা করছিল। সেই সময় তার দুই পুত্র অদ্রম্মেলক ও শরেৎসর তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা করল। তারপর তারা অরারট দেশে পালাল। আর সন্হেরীব পুত্র এসর-হদ্দোন অশূরের নতুন রাজা হল।
হিষ্কিয়ের অসুস্থতা
38 সেই সময় হিষ্কিয় অসুস্থ হয়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিলেন। আমোসের ভাববাদী যিশাইয় তাঁকে দেখতে যান। যিশাইয় রাজাকে বললেন, “প্রভু আমাকে এই কথাগুলি আপনাকে বলতে বলেছেন: ‘তুমি শীঘ্র মারা যাবে। সুতরাং তুমি তোমার পরিবার পরিজনকে জানিয়ে যাও তোমার মৃত্যু হলে তাদের কি করা উচিৎ। তুমি আর সুস্থ হয়ে উঠবে না।’”
2 হিষ্কিয় উপাসনা গৃহের দিকে মুখ করে প্রার্থনা শুরু করলেন। তিনি বললেন, 3 “প্রভু স্মরণ করে দেখুন আমি সর্বান্তঃকরণে আপনার প্রকৃত সেবা করেছি। আপনি যেসব জিনিসকে ভাল বলেছেন আমি কেবল সে সবই করেছি।” তারপর হিষ্কিয় কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
4 যিশাইয় প্রভুর কাছ থেকে এই বার্তা পেলেন: 5 “হিষ্কিয়ের কাছে গিয়ে তাকে বল যে প্রভু, তোমার পূর্বপুরুষ দায়ূদদের ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি। আমি তোমার চোখের জল দেখেছি, তাই আমি তোমার আয়ু আরো 15 বছর বাড়িয়ে দেব। 6 আমি তোমাকে এবং এই শহরকে অশূর রাজের হাত থেকে রক্ষা করব।’”
7 প্রভু যা যা করবেন বলেছিলেন তার জন্য এই সেই প্রভুর সঙ্কেত চিহ্ন: 8 “তোমার সময় নির্ণায়ক সৌরঘড়ি আহসের সিঁড়ির দিকে তাকাও। দশ পা পিছিয়ে আসার জন্য আমি সিঁড়িতে ছায়া তৈরী করছি। সূর্যের ছায়া দশ ধাপ ফিরে যাবে যেখানে আগে সেটি ছিল।” সেই সময় যিশাইয় হিষ্কিয়কে বললেন, “তুমি ডুমুর ফল থেঁতো করে তোমার ক্ষত ঘায়ের ওপর রাখ। তারপর তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।”
9 হিষ্কিয় সুস্থ হওয়ার পর চিঠি লেখেন। চিঠিটি হল:
10 আমি মনে মনে বলেছিলাম বৃদ্ধ হবার জন্য বাঁচব।
তবে সেই সময়টা ছিল আমার মৃত্যুপথযাত্রী লোকদের মতো পাতালের ফটকে যাওয়ার সময়।
এখন আমার সমস্ত সময় আমি সেখানেই অতিবাহিত করব।
11 সুতরাং আমি বলেছিলাম: “জীবিতদের দেশে আমি আর কখনও প্রভু ইয়াকে দেখতে পাবো না।
আমি আর কখনও পৃথিবীতে লোকদের জীবিত দেখতে পাব না।
12 আমার জীবনকে তছনছ করে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তাঁতী যেমন তাঁত থেকে কাপড়ের টুকরো কেটে নেয় তেমন করে আমি আমার জীবনকে কেটে ছোট করেছি।
এক দিনেই আপনি আমায় শেষ করে দিয়েছেন।
13 সারা রাত ধরে আমি সিংহের মত চিৎকার করে কেঁদেছিলাম।
কিন্তু সিংহের হাড় খাবার মত আমার সব আশা-আকাঙ্খা ভেঙে চূরমার হয়ে গিয়েছিল।
মাত্র এক দিনে আপনি আমার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছিলেন।
14 আমি একটি ঘুঘুর মতো কেঁদেছিলাম,
আমার চোখগুলি ক্লান্ত হয়েছিল,
কিন্তু তবুও আমি স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
আমার প্রভু, মাত্র একদিনের মধ্যে আপনি আমার জীবনের পরিসমাপ্তি এনেছেন।
আমি খুবই সংকটের মধ্যে রয়েছি।
আমাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিন।”
15 আমি কি বলতে পারি?
আমার প্রভু আমাকে বলেছিলেন কি কি ঘটবে
এবং তিনিই সে ব্যক্তি যিনি সে সব ঘটাবেন!
এইসব সমস্যা বরাবরই আমার আত্মায় রয়েছে।
তাই গোটা জীবন ধরেই আমি এখন নম্র থাকব।
16 প্রভু আমার এই কঠিন সময়কে আমার আত্মার পুনরুজ্জীবনের জন্য ব্যবহার করুন।
আমার আত্মাকে শক্ত ও স্বাস্থ্যবান করতে সহায়তা দান করুন।
আমাকে সুস্থ হতে সাহায্য করুন।
আমাকে পুনরায় বাঁচতে সাহায্য করুন।
17 দেখ আমার সমস্যা চলে গেছে।
এখন আমার শান্তি আছে।
আপনি আমাকে খুব ভালবাসেন।
আপনি আমাকে কবরে পচতে দেননি।
আপনি আমার সব পাপকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
দূরে ফেলে দিয়েছেন।
18 মৃত লোকরা আপনার প্রশংসার গান গায় না।
পাতালে লোকরা আপনার প্রশংসা করে না।
মৃত লোকরা সাহায্যের জন্য আপনার উপর বিশ্বাস রাখে না।
তারা মাটির ভেতরে একটা গর্তে চলে যায়।
আর, কখনও কথা বলতে পারে না।
19 লোকরা যারা আজ আমার মত বেঁচে আছে,
তারাই আপনার প্রশংসা করে।
একজন পিতার তার সন্তানদের বলা উচিৎ যে আপনার প্রতি আস্থা রাখা যায়।
20 তাই আমি বলি: “প্রভু আমাকে রক্ষা করেছেন।
তাই আমরা প্রভুর মন্দিরে জীবনভর গান গেয়ে এবং গান বাজিয়ে যাব।”
21 তারপর যিশাইয় হিষ্কিয়কে বললেন, “প্রভুর কাছ থেকে এমন কি সঙ্কেত পেয়েছেন যে তার থেকে প্রমাণিত হয় আমি আবার ভালো হয়ে উঠব?”
22 হিষ্কিয় যিশাইয়কে জিজ্ঞেস করলেন, “এমন কি সঙ্কেত যার থেকে বোঝা যাবে যে আমি আবার প্রভুর মন্দিরে যেতে সক্ষম হব?”
বাবিলের বার্তাবাহকরা
39 ঐ সময়, বলদনের পুত্র মরোদক-বলদন বাবিলের রাজা ছিলেন। তিনি হিষ্কিয়ের কাছে চিঠি ও উপহার পাঠান। কারণ তিনি শুনেছিলেন হিষ্কিয় অসুস্থ থাকার পর সুস্থ হয়ে উঠছেন। 2 এই ঘটনা হিষ্কিয়কে খুবই খুশী করে। তাই তিনি মরোদক-বলদনের দূতদের তাঁর কোষাগারের সব মূল্যবান জিনিস দেখালেন। হিষ্কিয় তাঁদের দেখালেন সোনা, রূপো, মশলা ও মূল্যবান গন্ধ দ্রব্য। তিনি তাঁর অস্ত্রাগারও তাঁদের দেখালেন। তাঁর যা কিছু ছিল সবই দেখালেন। তাঁর প্রাসাদে ও রাজ্যে যে সব জিনিষ ছিল তিনি সব তাঁদের দেখালেন।
3 তখন ভাববাদী যিশাইয় হিষ্কিয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “ঐসব লোকরা কি বলল? তারা কোথা থেকে আপনার কাছে এল?”
হিষ্কিয় বলেন, “সুদূর বাবিল থেকে ওরা আমাকে দেখতে এসেছে।”
4 তখনই যিশাইয় জানতে চাইলেন “আপনার গৃহে তারা কি কি দেখল?”
হিষ্কিয় বললেন, “তারা আমার প্রাসাদের সব কিছুই দেখেছে। আমি তাদের সব সম্পদই দেখিয়েছি।”
5 তখন যিশাইয় হিষ্কিয়কে বললেন: “সর্বশক্তিমান প্রভুর বাণী শুনুন। 6 ‘আপনার ও আপনার পূর্বপুরুষদের সব সম্পদই যা সংগৃহীত হয়েছিল এবং দীর্ঘকাল ধরে রক্ষিত ছিল তা সেই দিন বাবিলে চলে যাবে। কিছুই থাকবে না!’ সর্বশক্তিমান প্রভু এসব বলেছেন। 7 আর আপনার নিজের ছেলেদেরও বাবিলে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা বাবিলের রাজার প্রাসাদের কর্মচারী হবে। কিন্তু তারা হবে নপুংসক।”
8 তখন হিষ্কিয় যিশাইয়কে বললেন, “প্রভুর এই বার্তাটি খুব ভালো।” (হিষ্কিয় এটা বলেছিলেন কারণ তিনি ভেবেছিলেন, “আমি যতক্ষণ রাজা থাকব ততক্ষণ প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা থাকবে।”)
ইস্রায়েলের শাস্তি শেষ হবে
40 তোমাদের ঈশ্বর বলেন,
“স্বস্তি, আমার লোকরা স্বস্তিতে থাকো!
2 জেরুশালেমের প্রতি দয়ালু হয়ে কথা বল।
জেরুশালেমকে বল, ‘তোমার সেবা করার সময় শেষ।
তোমার পাপের মূল্য তুমি দিয়েছ।’
জেরুশালেম যত পাপ করেছে তার দ্বিগুণ শাস্তি প্রভু তাকে দিয়েছেন।”
3 শোন একজন মানুষ চিৎকার করছে!
“মরুর মধ্যেও প্রভুর জন্য পথ প্রস্তুত কর!
মরুস্তরে আমাদের ঈশ্বরের জন্য পথ তৈরি কর!
4 প্রত্যেক উপত্যকা পূর্ণ কর।
প্রত্যেক পাহাড় পর্বতকে কর সমতল।
আঁকা-বাঁকা রাস্তাকে সোজা কর।
অসমান জমিকে মসৃণ কর।
5 তখনই প্রভুর মহিমা বুঝতে পারবে।
সবাই এক সঙ্গে দেখতে পাবে প্রভুর মহিমা।
হ্যাঁ, প্রভু নিজেই বলেছেন এসব কথা!”
6 একটি কণ্ঠস্বর বলল, “কথা বল!”
তখন লোকে বলল, “আমাদের কি বলা উচিৎ?”
ঐ কণ্ঠস্বর বলল, “মানুষ চিরকাল বাঁচে না, তারা আসলে ঘাসের মতো।
তাদের ধার্মিকতা বুনো ফুলের মতো।
7 প্রভুর কাছ থেকে আসা একটি শক্তিশালী বাতাস
ঘাসের ওপর দিয়ে বয়ে যায়।
ঘাস মরে যায়, বুনো ফুল ঝরে পড়ে।
8 হ্যাঁ সমস্ত লোক ঘাসের মতো।
ঘাস মরে, বুনো ফুল ঝরে পড়ে।
কিন্তু আমাদের ঈশ্বরের বাক্য চিরকাল থেকে যায়।”
পরিত্রাণ: ঈশ্বরের সুসমাচার
9 সিয়োনের প্রতি সুসমাচারের বার্তাবাহক,
পর্বতের ওপর থেকে চিৎকার করে সুসমাচার ঘোষণা করে দাও।
জেরুশালেমের প্রতি সুসমাচারের বার্তাবাহক,
ভয় পেও না, চেঁচিয়ে কথা বল!
যিহূদায় সমস্ত শহরে এই খবর ঘোষণা করে দাও:
“দেখ, এখানে তোমাদের ঈশ্বর আছেন।”
10 প্রভু, আমার সদাপ্রভু ক্ষমতাসহ ফিরে আসছেন।
সব মানুষকেই শাসন করতে তিনি তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করবেন।
দেখ, তাঁর পুরস্কার তাঁর সঙ্গে রয়েছে
এবং তাঁর মজুরি তাঁর সামনে রয়েছে।
11 মেষপালক যেভাবে তার মেষদের নেতৃত্ব দেয় প্রভুও তেমনি তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেবেন।
নিজের বাহু দিয়ে প্রভু একত্রিত করবেন মেষদের।
তিনি মেষশাবকদের কোলে তুলে রাখবেন।
তাদের মায়েরা প্রভুর পিছন পিছন হাঁটবে।
বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর; তিনি শাসন করেন
12 নিজের হাতে কে সমুদ্র মেপেছেন?
আকাশ মাপতে কে তাঁর হাত ব্যবহার করেছেন?
পৃথিবীর ধূলিকণা মাপতে কে তাঁর পাত্র ব্যবহার করেছেন?
কে দাঁড়িপাল্লায় পাহাড় পর্বত ওজন করেছেন?
প্রভু এসব করেছেন!
13 প্রভুর আত্মার কি করা উচিৎ কেউ কখনও বলেনি।
যে সব কাজ প্রভু করেছেন তা কিভাবে করতে হবে তা কোন ব্যক্তি প্রভুকে পরামর্শ দেয়নি।
14 প্রভু কি কারও কাছে সাহায্য চেয়েছেন?
কোন ব্যক্তি কি প্রভুকে ন্যায়পরায়ণ হতে শিখিয়েছে?
কেউ কি কখনও প্রভুকে জ্ঞান দান করেছে?
কেউ কি কখনও প্রভুকে জ্ঞানী করে তুলেছে?
না! এইসব প্রভু নিজেই জানতেন।
15 দেখ, পৃথিবীর সব দেশই একটি বালতিতে ছোট এক ফোঁটা জলের মত।
প্রভু যদি তাঁর দূরবর্তী দেশগুলিকে এনে ওজন মাপার যন্ত্রে চাপান
তাদের অবস্থা হবে ধূলিকণার মত।
16 লিবানোনের সব গাছও প্রভুর জন্য জ্বালানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়।
উৎসর্গের জন্য বধ হতে লিবানোনের সব পশুও যথেষ্ট নয়।
17 ঈশ্বরের তুলনায়, পৃথিবীর সমস্ত জাতিগুলি কিছুই নয়।
ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা কর, পৃথিবীর সব দেশই মূল্যহীন।
ঈশ্বর কিসের মত তা লোকরা ধারণা করতে পারে না
18 ঈশ্বরের সঙ্গে কারো কি তুলনা করতে পার?
না। তুমি কি ঈশ্বরের ছবি আঁকতে পার? না।
19 কাঠ অথবা ধাতু দিয়ে কেউ কেউ মূর্ত্তি বানায়।
আর সেই মূর্ত্তিকেই তারা দেবতা বলে মনে করে।
একজন শ্রমিক মূর্ত্তি বানায়।
অন্য শ্রমিকরা সোনা-রূপা দিয়ে মূর্ত্তির জন্য অলঙ্কার বানায়।
20 আসল অংশের জন্য তারা বেছে নেয় বিশেষ কাঠ,
কারণ বিশেষ ধরণের কাঠের পচন ধরে না।
তারপর তারা দক্ষ কাঠমিস্ত্রীর খোঁজ করে।
তারপর ছুতোর মিস্ত্রী একটি “মূর্ত্তি” তৈরী করে যেটা পড়ে যাবে না।
21 তুমি নিশ্চয়ই আসল সত্যটা জানো, জানো না কি?
তোমাকে নিশ্চয়ই অনেক বছর আগে কেউ বলেছে!
তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ কে পৃথিবীটা তৈরি করেছে!
22 প্রভুই সত্যিকারের ঈশ্বর!
তিনি পৃথিবীর বৃত্তের ওপর বসে থাকেন।
তাঁর তুলনায় মানুষ ঘাস ফড়িং-এর মতো।
বস্ত্রখণ্ডের মতো তিনি আকাশকে মেলে ধরেন।
আকাশের তলায় বসার জন্য তিনি তাকে তাঁবুর মত বিছিয়ে ধরেন।
23 তিনি শাসকদের গুরুত্বহীন করেন,
তিনি পৃথিবীর বিচারকদের করেন সম্পূর্ণ মূল্যহীন।
24 সেই সব শাসকরা চারা গাছের মতো, তাদের মাটিতে রোপন করা হয়,
কিন্তু শিকড় গাড়ার আগেই
ঈশ্বর সেই সব চারা “গাছদের” ওপর দিয়ে বয়ে যান
এবং সেই সব চারা গাছ মরে শুকনো হয়ে যায়।
বাতাস তাদের খড়কুটোর মতো উড়িয়ে নিয়ে যায়।
25 পবিত্র ঈশ্বর বলেন: “আমার সঙ্গে কারও তুলনা করতে পারবে কি?
না! কেউ আমার সমান নয়।”
26 আকাশের দিকে তাকাও।
তারাগুলি তৈরী করেছে কে?
আকাশের “সেনাদের” সৃষ্টিকর্তা কে?
কে সব তারাদের নাম জানে?
সত্যিকারের ঈশ্বর প্রচণ্ড শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান,
তাই কোন তারা হারিয়ে যায় না।
27 যাকোবের লোকরা, এসবই সত্য!
ইস্রায়েল, তোমারও এইসব বিশ্বাস করা উচিৎ!
তবু কেন তোমরা বলছ, “আমরা কেমনভাবে জীবনযাপন করছি তা প্রভু দেখতে পাবেন না
এবং আমাদের শাস্তি দিতে পারবেন না?”
28 তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছো
এবং জানো যে প্রভু ঈশ্বর অত্যন্ত জ্ঞানী।
তিনি যা জানেন মানুষ তা শিখতে পারে না।
প্রভু কখনও ক্লান্ত হন না এবং তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন নেই।
প্রভু পৃথিবীর সমস্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল সৃষ্টি করেছেন।
তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
29 প্রভু দুর্বলকে সবল হতে সাহায্য করেন।
ক্ষমতাহীনদের ক্ষমতাবান করেন।
30 যুবকরাও ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়।
তারাও মাটিতে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।
31 কিন্তু প্রভুতে বিশ্বাসী লোকরা ঈগল পাখির নতুন ডানা গজানোর মতো আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
এইসব লোকরা শত দৌড়লেও দুর্বল হয় না,
ক্লান্ত হয়ে পড়ে না।
প্রভু সনাতন সৃষ্টিকর্তা
41 প্রভু বলেন,
“দূরবর্তী দেশগুলি শান্ত হও, আমার কাছে এসো।
জাতিগুলি পুনরায় শক্তিমান হয়ে উঠুক।
আমার কাছে এসে কথা বল।
আমরা একসঙ্গে বসে ঠিক করে নেব
কে ঠিক কেই বা বেঠিক।
2 আমাকে এইসব প্রশ্নগুলির উত্তর দাও: পূর্ব থেকে আসা লোকটিকে কে জাগিয়েছিল?
তিনি যেখানেই যান, ন্যায় তাঁর সঙ্গে আছে।
তিনি তাঁর তরবারি দিয়ে জাতিগুলিকে পরাস্ত করেন।
তারা ধূলো বালিতে পরিণত হয়।
তিনি তাঁর ধনুকের সাহায্যে রাজাদের পরাজিত করেন।
তারা বাতাসে উড়ে যাওয়া খড়কুটোর মতো পালিয়ে যায়।
3 তিনি সেনাদের ধাওয়া করেন, কিন্তু কখনও আঘাত পান না।
যেখানে তিনি কখনও যাননি সে সব স্থানে যাবেন।
4 এসব ঘটনার কারণ কে?
কে এইসব করেছেন?
কে প্রথম থেকেই সব মানুষকে ডাক দিয়েছিল?
আমি প্রভু, এসব করেছিলাম।
আমি প্রভু, আমিই প্রথম, আমিই শেষ।
5 তোমরা, দূরবর্তী স্থানের লোকরা তাকাও।
ভীত হও!
তোমরা পৃথিবীর দূরবর্তী স্থানের লোকেরা
ভয়ে কাঁপো।
এখানে এসে আমার কথা শোন
এবং তারা এসেছিল।
6 “শ্রমিকরা একে অন্যকে সাহায্য করে। শক্তিশালী হতে একে অন্যকে উৎসাহ দেয়। 7 একজন কর্মী মূর্ত্তি বানানোর জন্য কাঠ কাটে। সে স্বর্ণকারদের উৎসাহিত করে। অন্য শ্রমিক হাতুড়ি দিয়ে ধাতুকে মসৃণ করে তোলে। তারপর সেই কর্মীটি অন্য কর্মীকে ভারী ধাতব খোপের মধ্যে ধাতুটি ঢেলে তাকে পিটিয়ে বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরি করার জন্য উৎসাহিত করে। ঐ শেষ শ্রমিকটি ধাতব কাজের সম্বন্ধে বলে: ‘এইটি ভালো। এটি খুলে আসবে না।’ তারপর সে মূর্ত্তিটিকে পেরেক দিয়ে কোন একটি ভিত্তির ওপর এমন ভাবে বসিয়ে দেয় যাতে সেটা নড়তে বা পড়তে না পারে!”
একমাত্র প্রভুই আমাদের রক্ষা করতে পারেন
8 প্রভু বলেন, “ইস্রায়েল, তুমি আমার দাস।
যাকোব, তোমাকে আমি বেছে নিয়েছি।
তুমি অব্রাহামের পরিবার থেকে এসেছ যে আমাকে ভালবাসত।
9 তুমি বহু দূরের দেশে ছিলে,
কিন্তু আমি তোমার কাছে পৌঁছে যাই।
আমি তোমাকে দূরস্থান থেকে ডেকেছিলাম।
আমি তোমাকে বলেছিলাম যে তুমি আমার সেবক।
আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি
এবং আমি তোমাকে বাতিল করিনি।
10 চিন্তিত হয়ো না, আমি তোমার সঙ্গে আছি।
ভীত হবে না, আমি তোমার ঈশ্বর।
আমি তোমাকে শক্তিশালী করব।
তোমাকে সাহায্য করব।
তোমাকে আমার ভাল দক্ষিণ হস্ত দিয়ে সমর্থন দেব।
11 দেখো, কিছু লোক তোমার ওপর ক্রুদ্ধ।
কিন্তু তারা লজ্জিত হবে।
যারা তোমার সঙ্গে তর্ক করে তারা হেরে যাবে এবং অদৃশ্য হবে।
12 যারা তোমার বিরুদ্ধাচরণ করে
তাদের তুমি খুঁজবে কিন্তু দেখতে পাবে না।
যে সব লোক তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল
তারা সকলেই পুরোপুরি ভাবে অদৃশ্য হয়ে যাবে।
13 আমি প্রভু তোমার ঈশ্বর,
তোমার ডান হাত ধরে আমি আছি।
এবং আমি তোমাকে বলি, ‘ভীত হবে না!
আমি তোমাকে সাহায্য করব।’
14 মূল্যবান যিহূদা ভীত হবে না!
আমার প্রিয় ইস্রায়েলের লোকরা ভয়চকিত হবে না!
আমি সত্যিই তোমাদের সাহায্য করব।”
প্রভু নিজেই ঐসব বলেন।
ইস্রায়েলের পবিত্রতম (ঈশ্বর)
যিনি রক্ষাকর্তা তিনিই এইসব বলেছেন:
15 “দেখ, আমি তোমাকে একটা নতুন শস্য মাড়া যন্ত্রের মতো বানিয়েছি।
সেই যন্ত্রের অনেকগুলো ধারালো ছুরি আছে।
কৃষকরা এইসব ব্যবহার করে খোসা ভাঙার কাজে, যাতে তারা শস্য থেকে আলাদা হতে পারে।
তুমি পর্বতগুলিকে ঐ শস্য মাড়ার মতো ভেঙে ফেলবে।
16 তুমি তাদের বাতাসে ছুঁড়ে ফেলবে।
বাতাস তাদের বয়ে নিয়ে দূরে চলে যাবে এবং বিক্ষিপ্ত করবে।
তখন তুমি খুশী হবে এবং প্রভুর মধ্যে স্থিত হয়ে আনন্দ করবে।
ইস্রায়েলের পবিত্রতম ঈশ্বরের জন্য তুমি গর্বিত হবে।”
17 “দরিদ্র ও অভাবী লোকরা জলের জন্য খোঁজ করবে।
কিন্তু তারা খুঁজে পাবে না।
তারা তৃষ্ণার্ত, তাদের জিহ্বা শুষ্ক।
আমি, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, তাদের প্রার্থনার জবাব দেব।
আমি তাদের ত্যাগ করব না, মরতে দেব না।
18 আমি শুকনো পাহাড়ের ওপর দিয়ে নদীকে প্রবাহিত করাব।
উপত্যকায় উপত্যকায় বইয়ে দেব জলভরা নদী।
মরুকে করে তুলব জলে ভরা হ্রদ।
জলপ্রবাহ বয়ে যাবে শুকনো ভূমিতে।
19 মরুভূমিতে গাছ জন্মাবে।
সেখানে থাকবে এরস, বাবলা, জলপাই, তাশূর, দেবদারু ও পাইন গাছ।
20 লোকরা এই জিনিসগুলি দেখবে
এবং তারা জানতে পারবে প্রভুই এই কর্ম করেছেন।
মানুষ এইসব দেখতে পাবে,
তারা বুঝতে শুরু করবে যে
ইস্রায়েলের পবিত্রতম (ঈশ্বর) এগুলি সৃষ্টি করেছেন।”
মূর্ত্তিকে প্রভুর প্রত্যাখান
21 যাকোবের রাজা প্রভু বলেন, “এস। আমাকে তোমার যুক্তি বল। আমাকে তোমরা প্রমাণ দেখাও এবং আমরা ঠিক করে দেব কোনটা সঠিক। 22 তোমাদের মূর্ত্তিদের এসে আমাদের বলা উচিৎ কি ঘটেছে। শুরুতে কি কি ঘটেছিল? ভবিষ্যতে কি ঘটবে? বলুক আমাদের! আমরা তাদের কাছ থেকে শুনব। তখন আমরা জানতে পারব পরে কি ঘটবে। 23 পরে কি কি ঘটবে তা তোমরা আমাদের জানাও। তারপর আমরা তোমাদের সত্যিকারের দেবতা বলে বিশ্বাস করব। কিছু কর! ভাল না হয় মন্দ কিছু একটা করে দেখাও! তখন আমরা মেনে নেব তুমি জীবন্ত এবং তোমাকেই আমরা মেনে চলব।
24 “দেখো। তোমরা মূর্ত্তিরা আসলে কিছুই নও। তোমরা কিছুই করতে পারবে না! যে কোন অকর্মণ্য লোকই তোমার পূজা করতে চাইবে।”
প্রভু প্রমাণ করবেন তিনিই একমাত্র ঈশ্বর
25 “আমি উত্তর দিকে একটি লোককে জাগালাম।
সে পূর্বদিক থেকে, যেখানে সূর্যোদয় হয়, সেখান থেকে আসছে।
সে আমার নাম জপ করে।
যে মানুষ ঘট তৈরী করে সে ভিজে মাটির ওপর দিয়ে হাঁটে।
ঠিক একই রকম ভাবে এই বিশেষ লোকটি রাজাদের পদদলিত করে।
26 “কে আমাদের এইসব ঘটার আগেই বলেছিল?
তাকেই আমাদের ঈশ্বর বলা উচিৎ।
তোমাদের মধ্যে কোন মূর্ত্তি কি এইসব বলেছিল?
না! সেই সব মূর্ত্তিদের কেউই কিছু বলতে পারে নি।
সেই সব মূর্ত্তিরা কোন কথাই বলতে পারে নি।
তারা তোমাদের কোন কথা শুনতেও পায় নি।
27 আমি প্রভু, সর্বপ্রথম সিয়োনকে এইসব ঘটনার কথা বলি।
আমি জেরুশালেমে এই বার্তা নিয়ে একজন বার্তাবাহক পাঠিয়েছিলাম:
‘দেখ তোমাদের লোকরা ফিরে আসছে।’”
28 আমি ঐসব মূর্ত্তিদের দেখেছিলাম।
তারা কেউই কোন কিছু বলার মত
যথেষ্ট জ্ঞানী নয়।
আমি তাদের প্রশ্ন করেছিলাম
কিন্তু তারা কোন উত্তর দিতে পারেনি।
29 এইসব দেবতারা আসলে কিছু নয়।
তারা কিছুই করতে পারে না।
সেই সব মূর্ত্তিগুলি আসলে একেবারে মূল্যহীন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International