Beginning
অশূররাজ হিষ্কিয়কে বিপদে ফেললেন
32 রাজা হিষ্কিয় এই সমস্ত কর্তব্য সুষ্ঠভাবে পালন ও সমাধা করার পর অশূররাজ সন্হেরীব যিহূদা আক্রমণ করতে আসেন। সন্হেরীব তাঁর সেনাবাহিনী সহ দুর্গ দ্বারা সুরক্ষিত যিহূদা শহরের বাইরে তাঁবুসমূহ গেড়েছিলেন কারণ তিনি সেগুলি নিজের জন্য দখল করতে চেয়েছিলেন। 2 যখন হিষ্কিয় জানতে পারলেন যে সন্হেরীব জেরুশালেম আক্রমণ করতে এসেছেন, 3 হিষ্কিয় তাঁর উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও সৈন্যাধ্যক্ষদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করলেন দুর্গের বাইরের ঝর্ণার জলধারা বন্ধ করে দেবেন। 4 তখন সকলে মিলে দূর্গের বাইরে সমস্ত ঝর্ণা আর যিহূদার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীর জল বন্ধ করার ব্যবস্থা করলেন। তাঁরা বললেন, “অশূররাজ এখানে আসুন এবং দেখুন কত জলকষ্ট আছে।” 5 হিষ্কিয় জেরুশালেমের প্রাচীরের ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করে প্রাচীরের ওপর নজরদারি স্তম্ভ বসিয়ে জেরুশালেমের সুরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করলেন। উপরন্তু, তিনি প্রথম প্রাচীরের চতুর্দিকে আরেকটা দেওয়াল তুলে পূর্ব দিকের পাঁচিল শক্ত করে গাঁথলেন। অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও ঢালও বানালেন। 6-7 যুদ্ধের সৈন্যাধ্যক্ষদের ওপর তিনি সাধারণ লোকদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। তিনি শহরের প্রবেশ পথে এই সমস্ত সৈন্যাধ্যক্ষদের সঙ্গে দেখা করে তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, “শক্তিশালী এবং সাহসী হও। অশূররাজের বিশাল সেনাবাহিনীর কথা ভেবে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। অশূররাজের থেকেও বড় শক্তি আমাদের সঙ্গে আছে। 8 অশূররাজের শুধু সৈন্যই আছে কিন্তু আমাদের সঙ্গে আমাদের প্রভু ঈশ্বর আছেন। তিনি আমাদের সাহায্য করবেন এবং আমাদের জন্য যুদ্ধ করবেন।” এইভাবে যিহূদারাজ হিষ্কিয় সকলকে অনুপ্রাণিত করে তাদের মনের জোর বাড়িয়ে দিলেন।
9 ইতিমধ্যে, অশূররাজ সন্হেরীব আর তাঁর সেনারা লাখীশ শহরের কাছে শহরটা দখল করার জন্য তাঁবু ফেলেছিলেন। তখন সন্হেরীব রাজা হিষ্কিয় ও যিহূদার লোকদের কাছে একটি খবর পাঠালেন যাতে বলা হল,
10 “কোন্ বিশ্বাস এবং অবলম্বনের ওপর তোমরা ভরসা করছ যে তোমরা অবরুদ্ধ জেরুশালেমে রয়েছ? 11 হিষ্কিয় তোমাদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। চালাকি করে সে তোমাদের জেরুশালেমে আটকে রেখেছে, যাতে তোমরা খাবার ও জলের অভাবে বেঘোরে মারা পড়। হিষ্কিয় তোমাদের বলছে, ‘আমাদের প্রভু ঈশ্বর অশূররাজের হাত থেকে তোমাদের রক্ষা করবেন।’ 12 আর এদিকে ও নিজে প্রভুর সমস্ত উচ্চস্থান ও বেদী ভেঙ্গে দিয়ে যিহূদা আর জেরুশালেমের লোকদের একটিমাত্র বেদীতে উপাসনা করতে ও ধুপধূনো দিতে বলছে। 13 তোমরা সকলে নিশ্চয়ই জানো আমি ও আমার পূর্বপুরুষরা অন্যান্য রাজ্যের লোকদের কি অবস্থা করেছি। এমন কি ঐ সব দেশের দেবতারাও সেসব লোককে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। 14 আমার পূর্বপুরুষরা একের পর এক রাজ্য ধ্বংস করেছেন। এমন কোনো দেবতা নেই যিনি আমাকে তাঁর ভক্তদের হত্যা করার থেকে থামাতে পারেন। তোমরা ভাবছো তোমাদের দেবতা তোমাদের আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে? 15 হিষ্কিয়র চালাকির ফাঁদে পড়ো না। কারণ কোনো দেশের কোনো দেবতাই তাঁর ভক্তদের আমার বা আমার পূর্বপুরুষের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। ভুলেও ভেবো না যে তোমাদের প্রভু তোমাদের মৃত্যু আটকাতে পারবে।”
16 অশূররাজের পদস্থ কর্মচারীরা সকলে প্রভু ঈশ্বর ও তাঁর দাস হিষ্কিয়র বিরুদ্ধে আরো নানা ধরণের বিরূপ মন্তব্য করেছিল। 17 অশূররাজ তাঁর চিঠিতেও প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর সম্পর্কে বিভিন্ন অপমানজনক মন্তব্য করেছিলেন। তিনি চিঠিতে লিখেছিলেন: “অন্য দেশের দেবতারা যেমন তাদের ভক্তদের আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি, সে রকমই হিষ্কিয়র দেবতাও আমার হাত থেকে ওর ভক্তদের একটাকেও বাঁচাতে পারবে না।” 18 এরপর সন্হেরীবের আধিকারিকরা দুর্গপ্রাকারের ওপর যে সমস্ত জেরুশালেমের লোক দাঁড়িয়েছিলেন তাদের ভয় দেখানোর জন্য হিব্রু ভাষায় চেঁচিয়ে উঠলেন যাতে তিনি নগরীটি দখল করতে পারেন। 19 তারা জেরুশালেমের ঈশ্বর সম্পর্কেও এমনভাবে কথা বলল যেন তিনি অন্যান্য জাতির সেই সমস্ত দেবতাদের একজন যাদের মানুষ হাতে করে তৈরী করেছে।
20 রাজা হিষ্কিয় আর আমোসের পুত্র ভাববাদী যিশাইয় তখন এই সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা পেতে উচ্চস্বরে স্বর্গের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করলেন। 21 এবং প্রভু অশূররাজের শিবিরে একজন দূত পাঠালেন। সেই দূত তখন অশূরীয়দের সমস্ত সৈন্য, নেতা ও আধিকারিকদের হত্যা করলেন। অবশেষে, চরম লজ্জা নিয়ে অশূররাজ তাঁর রাজ্যে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন। এরপর, যখন তিনি তাঁর দেবতার মন্দিরে গেলেন, তাঁর নিজেরই কয়েকজন পুত্র তরবারির সাহায্যে তাঁকে হত্যা করলো। 22 প্রভু এইভাবে হিষ্কিয় ও তাঁর লোকদের অশূররাজ সন্হেরীব ও অন্যান্যদের হাত থেকে রক্ষা করেন। প্রভু তাদের সব দিকেই শান্তি দিয়েছিলেন। 23 বহু ব্যক্তি জেরুশালেমে প্রভুর জন্য এবং যিহূদার রাজা হিষ্কিয়র জন্য মূল্যবান উপহার এনেছিলেন যাতে অন্য সমস্ত দেশ হিষ্কিয়কে সম্মান প্রদর্শন করে।
24 সেই সময়ে, হিষ্কিয় খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং প্রায় মৃত্যুমুখে পতিত হলেন। তিনি তখন প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলে প্রভু তাঁকে দর্শন দিয়ে একটি দৈব সংকেতের প্রতি লক্ষ্য রাখতে বলেন। 25 কিন্তু হিষ্কিয় এতো গর্বিত ছিলেন যে তিনি তখন ঈশ্বরের এই করুণার জন্য তাঁর প্রতি ধন্যবাদ পর্যন্ত জ্ঞাপন করেন নি। এতে ঈশ্বর হিষ্কিয় এবং যিহূদা ও জেরুশালেমের ওপর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। 26 এই কারণে হিষ্কিয় ও এই সমস্ত লোকরা তাঁদের মনোভাব ও জীবনযাপনের ধারা পরিবর্তন করেছিলেন এবং গর্বিত হবার পরিবর্তে নম্রভাবে থাকতে শুরু করলেন। এর ফলে, হিষ্কিয়র জীবদ্দশায় প্রভুর ক্রোধাগ্নি তাদেরঁ স্পর্শ করেনি।
27 হিষ্কিয় বহু ধনসম্পদ ও সম্মানের অধিকারী হয়েছিলেন। তিনি সোনা, রূপো, গয়নাগাঁটি, মশলাপাতি অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার জন্য নতুন নতুন জায়গা বানিয়েছিলেন। 28 লোকরা তাঁকে যে সমস্ত খাদ্যশস্য, দ্রাক্ষারস, তেল ইত্যাদি পাঠাতো সেসব রাখার জন্যও ভাঁড়ার ঘর ছিল। গবাদি পশু, ঘোড়া এদের থাকার জন্য বানানো হয়েছিল গোয়াল ও আস্তাবল। 29 এছাড়াও হিষ্কিয় অনেক নতুন শহরের পত্তন করেছিলেন এবং মেষপাল ও অন্যান্য গবাদি পশুর অধিকারী হয়েছিলেন। ঈশ্বর হিষ্কিয়কে ধনবান করেছিলেন। 30 হিষ্কিয়ই জেরুশালেমের গীহোন ঝর্ণার উৎস মুখের স্রোত আটকে তার গতিপথ দায়ূদ নগরীর পশ্চিম প্রান্তে পরিবর্তিত করেছিলেন। তাঁর সমস্ত কাজেই হিষ্কিয় সফলতা লাভ করেন।
31 হিষ্কিয়র এই একটানা সফলতার কারণে বাবিলের নেতাদের তাঁর সাফল্যের গোপন কথা শিখতে পাঠানো হয়েছিল। হিষ্কিয়কে পরীক্ষা করার জন্য ঈশ্বর তাকে একা রেখে দিলেন, যাতে তিনি জানতে পারেন হিষ্কিয় সত্যি কতটা বিশ্বস্ত ছিল।
32 হিষ্কিয় আর যা কিছু করেছিলেন, তিনি কিভাবে প্রভুকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছিলেন সে সবই আমোসের পুত্র যিশাইয়র দর্শন পুস্তক এবং যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 33 হিষ্কিয়র মৃত্যুতে, লোকরা তাঁকে পাহাড়ের ওপর দায়ূদের পূর্বপুরুষের মধ্যে সমাধিস্থ করল এবং তাঁর মৃত্যুর পর যিহূদার ও জেরুশালেমের সমস্ত লোকরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানায়। হিষ্কিয়র মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মনঃশি নতুন রাজা হলেন।
যিহূদার রাজা মনঃশি
33 মাত্র বারো বছর বয়সে যিহূদার রাজা হয়ে রাজা মনঃশি 55 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। 2 মনঃশি প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন। যে সমস্ত জাতির লোকদের প্রভু ইস্রায়েলীয়রা আসার আগে পাপ আচরণের জন্য তাদের ভূখণ্ড থেকে উৎখাত করেছিলেন, মনঃশি তাদের অনুসৃত ভয়ানক ও জঘন্য পথে জীবনযাপন করেন। 3 মনঃশি আবার নতুন করে তাঁর পিতার ভেঙ্গে দেওয়া উচ্চস্থান বানানো ছাড়াও বাল দেবতার বেদী ও দেবী আশেরার খুঁটি বসিয়েছিলেন। আকাশের নক্ষত্ররাজির সামনেও তিনি মাথা নত করেন ও তাদের পূজো করেন। 4 প্রভুর মন্দিরে, জেরুশালেমে যে মন্দিরে প্রভু আজীবন তাঁর উপস্থিতির চিহ্ন প্রকাশের বাসনা করেছিলেন, সেই মন্দিরে মনঃশি মূর্ত্তিদের বেদী স্থাপন করেছিলেন। 5 প্রভুর মন্দিরের দুটো উঠোনে মনঃশি আকাশের তারকারাজির জন্য বেদী স্থাপন করেছিলেন। 6 বিন্হিন্নোমের উপত্যকায়, তিনি তাঁর নিজের সন্তানদের আগুনে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা, মোহক, যৌগিক ও মায়াক্রিয়ার মাধ্যমেও দুষ্ট আত্মা, প্রেতাত্মা ও যাদুকরদের সহায়তায় তাঁর মনঃস্কামনা পূর্ণ করতে চেয়েছিলেন। এইরকম নানাভাবে প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করে তিনি প্রভুকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছিলেন। 7 তিনি মন্দিরে এক মূর্ত্তি স্থাপন করেছিলেন যেখানে প্রভু দায়ূদ ও তাঁর পুত্র শলোমনের কাছে ঘোষণা করেছিলেন, “আমি এই মন্দিরে এবং ইস্রায়েলের সমস্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে থেকে যাকে মনোনীত করেছি সেই জেরুশালেমে আমার নাম চিরকাল রাখব। সেই মন্দিরে তিনি একটি মূর্ত্তি স্থাপন করলেন। 8 আমি মোশিকে যে বিধি ও নির্দেশগুলি দিয়েছিলাম শুধু যদি ইস্রায়েলীয়রা সেগুলি পালন করে তাহলে আমি তোমাদের পূর্বপুরুষকে যে জমি দিয়েছিলাম তা কখনো আবার ফিরিয়ে নেব না।”
9 কিন্তু যিহোশূয়র সময় প্রভু যে জাতিগুলিকে ধ্বংস করেছিলেন মনঃশি যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকদের, তার থেকেও বেশী পাপ আচরণে প্রবৃত্ত করেছিলেন।
10 প্রভু মনঃশি ও তাঁর প্রজাদের সতর্ক করলেও তাঁরা তাঁর কথায় কর্ণপাত করলেন না। 11 তখন প্রভু অশূররাজের সৈন্যাধ্যক্ষদের দিয়ে মনঃশির রাজত্ব আক্রমণ করালেন। এই সৈন্যাধ্যক্ষরা মনঃশিকে বন্দী করে তাঁর হাতে পায়ে বেড়ি পরিয়ে, শেকলে বেঁধে তাঁকে বাবিলে নিয়ে গেলেন।
12 তারপর, যখন তিনি মহা সঙ্কটে পড়লেন, তখন মনঃশি প্রভু তাঁর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং গভীরভাবে তাঁর পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের কাছে নিজেকে অবনত করলেন। 13 তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং সাহায্য চাইলেন। ঈশ্বর তাঁর প্রার্থনা শুনলেন এবং তাঁর অনুরোধ রাখলেন এবং তিনি তাঁকে জেরুশালেমে, তাঁর রাজত্বে ফিরে গিয়ে তাঁর সিংহাসনে বসতে দিলেন। মনঃশি বুঝতে পারলেন যে প্রভুই প্রকৃত ঈশ্বর।
14 এ ঘটনার পর মনঃশি নগরীর বাইরে আরেকটি পাঁচিল তুললেন। এই দেওয়ালটি গীহোন ঝর্ণার পশ্চিম প্রান্তের কিদ্রোণ উপত্যকা থেকে ওফেল পর্বতের মৎসদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত হল। এবারের পাঁচিলগুলো খুব উঁচু করে বানানো হয়। এরপর মনঃশি যিহূদার সমস্ত দুর্গবেষ্টিত শহরে সেনাপতিসমূহ নিয়োগ করেন। 15 তিনি সমস্ত মূর্ত্তি ও প্রতিকৃতিগুলি প্রভুর মন্দির থেকে সরিয়ে ফেলেন এবং মন্দিরের পর্বতের ওপর এবং জেরুশালেমে তাঁর বানানো বেদীগুলিও ভেঙে শহরের বাইরে ফেলে দিলেন। 16 তারপর তিনি প্রভুর জন্য বেদীটি উদ্ধার করলেন এবং মঙ্গল নৈবেদ্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন-সূচক নৈবেদ্য অর্পণ করলেন এবং যিহূদার সমস্ত লোকদের প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সেবায় নিয়োজিত হতে আদেশ দিলেন। 17 লোকরা উচ্চস্থলীতে বলি দিলেও তারা তা একমাত্র তাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যেই দিতেন।
18 মনঃশি আর যা কিছু করেছিলেন, ঈশ্বরের প্রতি তাঁর প্রার্থনা বা প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নামে যে সমস্ত ভাববাদী তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলেছিলেন সে সবই ইস্রায়েলের রাজাদের সরকারী নথিপত্র তে লিপিবদ্ধ আছে। 19 মনঃশির প্রার্থনা এবং ঈশ্বরের তাতে সাড়া দেওয়া, তাঁর পাপ এবং বিশ্বাসহীনতা, যেখানে যেখানে তিনি উচ্চস্থান স্থাপন করেছিলেন সেই সব জায়গার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা, আশেরার খুঁটি সমূহ ও মূর্ত্তিসমূহ, নিজেকে নম্র করবার পূর্বে, এগুলি পরিপূর্ণভাবে ভাববাদীদের ইতিহাস গ্রন্থে লেখা আছে। 20 মনঃশির মৃত্যুর পর লোকরা তাকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করার পর তাঁর পুত্র আমোন নতুন রাজা হলেন।
যিহূদার রাজা আমোন
21 আমোন 22 বছর বয়সে রাজা হয়ে মাত্র দু বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। 22 আমোন প্রভুর প্রতি বহু পাপ আচরণ করেন। তাঁর পিতার বানানো খোদাই করা মূর্ত্তির সামনে বলিদান করা ছাড়াও আমোন এই সমস্ত মূর্ত্তি পূজো করতেন। 23 তিনি তাঁর পিতা মনঃশির মতো দীনভাবে প্রভুর কাছে আত্মসমর্পণও করেন নি। বরঞ্চ তিনি উত্তরোত্তর আরো অপরাধ করতে থাকেন। 24 আমোনের ভৃত্যরা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাঁকে রাজপ্রাসাদেই হত্যা করলো। 25 কিন্তু যিহূদার লোকরা এই সমস্ত চক্রান্তকারী ভৃত্যদের হত্যা করে আমোনের পুত্র যোশিয়কে সিংহাসনে বসালো।
যিহূদার রাজা যোশিয়
34 যোশিয় মাত্র আট বছর বয়সে রাজা হয়ে 31 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। 2 যোশিয় প্রভু বর্ণিত সৎ পথে জীবনযাপন করেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতোই তিনি বহু সৎকাজ করেন এবং এই পথ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। 3 তাঁর রাজত্বের আট বছরে, যোশিয়, যখন তিনি তখনও একজন বালক মাত্র ছিলেন, ঈশ্বরকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদ দ্বারা পূজিত। বারো বছর রাজত্ব করার পর, তিনি যিহূদা ও জেরুশালেম থেকে উঁচু স্থানগুলির উৎপাটন, আশেরার খুঁটিগুলি, মূর্ত্তিসমূহ ও প্রতিকৃতি নির্মূল করার অভিযান শুরু করেন। 4 লোকরা তাঁর আদেশে বালদেবের বেদী ও ধুপধূনো দেবার উঁচু বেদীগুলি ভেঙে ফেলেন। মূর্ত্তি ও প্রতিকৃতিগুলো ভেঙে গুঁড়ো করার পর তিনি সেই ধূলো বালদেবের মৃত উপাসকদের কবরে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। 5 এবং যোশিয় বালের সেই সব যাজকদের হাড়গুলি এবং তাদের বেদীগুলি পুড়িয়ে ছাই করেন। 6 মনঃশি থেকে ইফ্রয়িম, শিমিয়োন থেকে নপ্তালি—সমগ্র যিহূদা ও জেরুশালেম থেকে 7 যোশিয় এভাবে মূর্ত্তিপূজোর অবসান ঘটিয়েছিলেন। এই সবকটি শহরে ও শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইস্রায়েলের সর্বত্র তিনি উচ্চস্থান ও আশেরার খুঁটি, দেবতাদের মূর্ত্তিসমূহ ভেঙে ধূলায় মিশিয়ে দিয়ে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।
8 যিহূদায় 18 বছর রাজত্ব করার পর এবং সেই ভূখণ্ডকে এবং মন্দিরকে শুদ্ধ করবার পর, যোশিয় অৎসলিয়র পুত্র শাফন, নগরপাল মাসেয় ও সচিব যোয়াহষের পুত্র যোয়াহকে প্রভুর মন্দিরটি সারানোর আদেশ দিলেন।
9 আদেশ পালন করতে এরা সকলে প্রথমে মহাযাজক হিল্কিয়র সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে লোকরা ঈশ্বরের মন্দিরের জন্য যে অর্থ দিয়েছেন তা তুলে দিলেন। লেবীয় দ্বাররক্ষীগণ এই অর্থ মনঃশি, ইফ্রয়িম, যিহূদা, বিন্যামীন, জেরুশালেম ও ইস্রায়েলে যারা থেকে গিয়েছিল, তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। তারপর তাঁরা জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। 10 এরপর লেবীয়রা সেই অর্থ প্রভুর মন্দিরের কাজের তত্ত্বাবধায়কদের দিলেন। ক্রমানুসারে তত্ত্বাবধায়করা সেই অর্থ প্রভুর মন্দিরে যেসব শ্রমিক কাজ করবে তাদের দিলেন। 11 ছুতোরকে কড়িবর্গার জন্য কাঠ কিনতে এবং পাথর কেনবার জন্য পাথর কাটুরেদের অর্থ দিলেন। তাঁরা এটা করলেন কারণ যিহূদার আগের রাজারা মন্দিরের ইমারতগুলিকে ধ্বংস হয়ে যেতে দিয়েছিলেন। 12-13 নিযুক্ত শ্রমিকরা লেবীয় মরারি পরিবারের লেবীয় যহৎ ও ওবদিয়র তত্ত্বাবধানে এবং কহাৎ পরিবারের সখরিয় ও মশুল্লমের অধীনে মন প্রাণ দিয়ে কাজ করলো। যে সমস্ত লেবীয়রা দক্ষ গাইয়ে, বাজিয়ে ছিলেন তাঁরা শ্রমিকদের এবং যারা বিভিন্ন রকমের কাজ করেছিলেন, তাদের তত্ত্বাবধান করলেন। কিছু লেবীয় করনিক, অধিকারিক ও রক্ষী হিসেবে কাজ করলেন।
বিধিপুস্তক আবিষ্কার
14 সেই সময়, যখন লেবীয়রা প্রভুর মন্দির থেকে অর্থ বার করছিলেন, যাজক হিল্কিয়, মোশির মাধ্যমে প্রভু যে বিধিপুস্তকটি দিয়েছিলেন সেটিকে খুঁজে পেলেন। 15 উত্তেজিত হিল্কিয় তখন সচিব শাফনকে ডেকে বললেন, “আমি প্রভুর গৃহ থেকে বিধি পুস্তক খুঁজে পেয়েছি।” এবং তিনি শাফনকে সেটি দেখতে দিলেন। 16 শাফন তা রাজা যোশিয়র কাছে নিয়ে এসে বললেন, “আপনার কর্মচারীরা আপনার সমস্ত নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। 17 প্রভুর মন্দিরে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল তা দিয়ে ঠিকাদার আর মিস্ত্রিদের মজুরি দেওয়া হয়েছে।” 18 তারপর শাফন রাজা যোশিয়কে বললেন, “যাজক হিল্কিয় আমায় একটা বই দিয়েছিলেন।” একথা বলে রাজার সামনে বিধি পুস্তকটি পাঠ করতে শুরু করলেন। 19 বিধি পুস্তকের কথাগুলি শুনে রাজা যোশিয় মানসিকভাবে বিপর্য্যস্ত হলেন এবং তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়তে শুরু করলেন। 20 এবং তখন যোশিয় হিল্কিয়কে, শাফনের পুত্র অহীকাম, মীখায়ের পুত্র অব্দোন, লেখক শাফন আর রাজার ভৃত্য অসায়কে নির্দেশ দিলেন, 21 “শিগ্গির গিয়ে প্রভুর কাছে খুঁজে পাওয়া বিধি পুস্তকে বর্ণিত বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করো। আমাদের পূর্বপুরুষরা প্রভুর বিধি অনুসরণ করেন নি বলে প্রভু আমাদের ওপর খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তাঁরা এই বইয়ে বর্ণিত সমস্ত বিধি ঠিকমতো পালন করেন নি।”
22 হিল্কিয় ও রাজার সমস্ত ভৃত্যরা সকলে তখন রাজার বস্ত্রাগারের তত্ত্বাবধায়ক হস্রহের পৌত্র, তোখতের পুত্র, শল্লুমের স্ত্রী ভাববাদিনী হুল্দার কাছে জেরুশালেমে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তখন হিল্কিয় আর রাজভৃত্যরা হুল্দাকে বইটি সম্পর্কে জানাল। 23 হুল্দা তাদের বললেন: “রাজা যোশিয়কে গিয়ে বলো: প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর জানিয়েছেন, 24 ‘আমি এই অঞ্চলে ও এখানে বসবাসকারী লোকদের জীবনে দুর্যোগ ঘনিয়ে তুলবো। যিহূদার রাজার সামনে যা পাঠ করা হয়েছে, বিধি পুস্তকে যেসব ভয়ানক ঘটনার কথা বর্ণিত হয়েছে আমি সেই সবই এখানে ঘটাবো। 25 কারণ লোকরা আমাকে পরিত্যাগ করেছে এবং অন্যান্য মূর্ত্তিসমূহের সামনে ধুপধূনো জ্বালিয়েছে; তাদের যাবতীয় কুকাজ আমায় ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। তাই এই সমগ্র অঞ্চলের ওপর আমি আমার ক্রোধাগ্নি বর্ষণ করবো যা কিছুতে নির্বাপিত হবে না।’
26 “যাই হোক্, যিহূদার রাজা যোশিয়, যিনি তোমাদের প্রভুর কাছে খবর সংগ্রহের জন্য পাঠিয়েছেন, তাঁকে বলো যে প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর এ কথাও বলেন: 27 ‘যোশিয়, তুমি তোমার মন বদলেছ এবং আমার কাছে নিজেকে নম্র করেছ, তোমার পরনের পোশাক ছিঁড়েছ এবং আমার সামনে কেঁদেছ। তোমার হৃদয় কোমল, তাই আমি তোমার প্রার্থনা শুনেছি। 28 আমি তোমাকে তোমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে নিয়ে যাবো। তুমি শান্তিতেই মরতে পারবে। এই ভূখণ্ডে ও এখানকার লোকদের জীবনে আমি যে দুর্যোগ ঘনিয়ে তুলবো তা তোমায় চোখে দেখে যেতে হবে না।’” হিল্কিয় ও রাজকর্মচারীরা এসে রাজাকে এই খবর জানালেন।
29 রাজা যোশিয় তখন যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত প্রবীণ ব্যক্তিদের তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। 30 রাজা নিজে প্রভুর মন্দিরে গেলেন। যখন যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত লোক, যাজক ও লেবীয়রা, ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ সবাই যোশিয়র কাছে এলো, তিনি তাদের প্রভুর মন্দিরে খুঁজে পাওয়া চুক্তি পুস্তকে লিখিত সবকিছু পাঠ করে শোনালেন। 31 এরপর রাজা তাঁর নিজের জায়গায় উঠে দাঁড়িয়ে প্রভুর সামনে তাঁর অনুগামী হবার এবং সমস্ত অন্তঃকরণ ও সমস্ত প্রাণ দিয়ে তাঁর আজ্ঞা বিধি এবং নিয়মসকল পালন করবেন বলে শপথ করলেন। 32 এরপর তিনি জেরুশালেম ও বিন্যামীনের সকলকে দিয়েও একই প্রতিশ্রুতি করালেন। জেরুশালেমের লোকরা তাদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের সামনে করা শপথ রক্ষা করতে সম্মত হলেন। 33 ইস্রায়েলের লোকদের কাছে বিভিন্ন দেশের মূর্ত্তি ছিল। যোশিয় সেইসব ভয়ানক জঘন্য মূর্ত্তি ভেঙে ফেলে ইস্রায়েলের লোকদের প্রভুর সেবা করতে বাধ্য করলেন। যতদিন পর্যন্ত যোশিয় বেঁচে ছিলেন লোকরা তাদের পূর্বপুরুষের প্রভু ঈশ্বরের সেবা করে চলেছিলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International