Beginning
যিহূদার রাজা অবিয়াম
15 নবাটের পুত্র ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়ামের রাজত্বের 18 বছরের মাথায় অবিয়াম যিহূদার নতুন রাজা হলেন। 2 অবিয়াম জেরুশালেমে তিন বছর রাজত্ব করেন। তাঁর মা মাখা ছিলেন অবীশালোমের কন্যা।
3 অবিয়ামও তাঁর পিতার মতো যাবতীয় পাপ করেছিলেন। তিনি মোটেই তাঁর পিতামহ দায়ূদের মতো প্রভুর একনিষ্ট ভক্ত ছিলেন না। 4 প্রভু দায়ূদকে ভালবাসতেন বলে অবিয়ামকে জেরুশালেমে রাজত্ব করতে দিয়েছিলেন। প্রভু দায়ূদকে পুত্রলাভ করতে দিয়েছিলেন এবং তিনি দায়ূদের জন্য জেরুশালেমকে নিরাপদে রেখেছিলেন। 5 একমাত্র হিত্তীয় ঊরিয়র ঘটনা ছাড়া দায়ূদ জীবনের সব ক্ষেত্রেই কায়মনোবাক্যে প্রভুকে অনুসরণ করেছিলেন।
6 রহবিয়াম ও যারবিয়াম দুজনেই সব সময় পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গিয়েছেন। 7 অবিয়াম আর যা কিছু করেছিলেন সে সবই যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।
অবিয়ামের রাজত্বের গোটা সময়টুকু কেটেছিল যারবিয়ামের সঙ্গে যুদ্ধ বিগ্রহ করে। 8 অবিয়ামের মৃত্যুর পর তাঁকে দায়ূদ নগরীতে সমাধিস্থ করা হল এবং তাঁর পুত্র আসা নতুন রাজা হলেন।
যিহূদার রাজা আসা
9 ইস্রায়েলে যারবিয়ামের রাজত্বের 20 বছরের মাথায় আসা যিহূদার রাজা হলেন। 10 আসা জেরুশালেমে 41 বছর রাজত্ব করেছিলেন। অবীশালোমের কন্যা মাখা ছিলেন আসার ঠাকুরমা।
11 আসা তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতো প্রভু নির্দেশিত সৎ পথে জীবনযাপন করেন। 12 তাঁর রাজত্বের সময় যে সমস্ত ব্যক্তি অন্য মূর্ত্তির সেবার জন্য রতিক্রিয়ার্থে নিজেদের দেহ বিক্রয় করেছিল তাদের তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। তিনি সেই দেশ থেকে তাদের পূর্বপুরুষদের তৈরী সমস্ত মূর্ত্তিও সরিয়ে ফেলেছিলেন। 13 আসা তার ঠাকুরমা মাখাকেও রাণীর পদ থেকে অপসারণ করেন। কারণ মাখা বিধর্মী দেবী আশেরার ঐ বীভৎস মূর্ত্তিসমূহ নির্মাণ করিয়ে ছিলেন। এই মূর্ত্তিটিকে ভেঙে আসা কিদ্রোণ নদীর ধারে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। 14 উচ্চ বেদীগুলিকে ধ্বংস না করলেও আসা আজীবন প্রভুর প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। 15 সমস্ত সোনা, রূপো এবং প্রভুর জন্য দেওয়া অন্যান্য উপহারসামগ্রী যেগুলি তাঁর পিতা দায়ূদের দ্বারা সংরক্ষিত ছিল এবং যেগুলি লোকে দান করেছিল, আসা সেগুলি প্রভুর মন্দিরে রেখে দিয়েছিলেন।
16 যিহূদায় রাজত্ব কালে গোটা সময়টাই আসার কেটেছিল ইস্রায়েলের রাজা বাশার সঙ্গে যুদ্ধ করে। 17 বাশা যিহূদার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন কারণ কোনো লোককে আসার রাজত্ব থেকে বাইরে যেতে দিতে বা সেখানে যেতে দেওয়া বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। একারণে তিনি রামা শহরটিকে খুব সুরক্ষিত ভাবে বানিয়ে ছিলেন। 18 আসা তাই প্রভুর মন্দিরের কোষাগার থেকে এবং রাজপ্রাসাদ থেকে সমস্ত সোনা ও রূপো বার করে ভৃত্যদের হাত দিয়ে সে সব হিষিয়োণের পৌত্র টব্রিম্মোণের পুত্র অরামের রাজা বিন্হদদকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। দম্মেশক ছিল বিন্হদদের রাজ্যের রাজধানী। 19 আসা বিন্হদদকে বলে পাঠান, “আমার পিতা ও আপনার পিতার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এখন আমি আপনার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে চাই। তাই আমি আপনাকে এই সমস্ত সোনা-রূপো উপহারস্বরূপ পাঠালাম। অনুগ্রহ করে আপনি ইস্রায়েলের রাজা বাশার সঙ্গে আপনার সন্ধি ভঙ্গ করুন, যাতে সে আপনাদের নিজেদের মতো থাকতে দিয়ে তার নিজের দেশে ফিরে যায়।”
20 বিন্হদদ আসার সঙ্গে চুক্তি করে তার সেনাবাহিনীকে ইয়োন, দান, আবেল-বৈৎ-মাখা, নপ্তালি ও গালীলী হ্রদের আশেপাশের ইস্রায়েলীয় শহরগুলোতে যুদ্ধ করতে পাঠালেন। 21 এ খবর পেয়ে বাশা রামা শহর সুদৃঢ় করার কাজ বন্ধ করে তির্সাতে ফিরে এলেন। 22 তখন রাজা আসা যিহূদার সমস্ত লোকদের সাহায্য প্রার্থনা করে নির্দেশ দিলে সকলে মিলে রামাতে গেল। তারপর সেখান থেকে রামা শহরটাকে শক্ত করে বানানোর জন্য বাশা যে সব পাথর ও কাঠ এনেছিল সেই সব বিন্যামীনের দেশ গেবা ও মিস্পাতে বয়ে আনা হলো। এরপর আসা এই দুটো শহরকে সুদৃঢ় করে তুললেন।
23 আসা সম্পর্কিত অন্যান্য যাবতীয় তথ্য উনি যে সমস্ত কাজ করেছিলেন বা যে সব শহর বানিয়ে ছিলেন সে সবই যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। যেহেতু আসা বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর পায়ে একটা রোগ হয়। 24 আসার মৃত্যুর পর তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে দায়ূদ নগরীতে কবর দেওয়া হল। এরপর আসার পুত্র যিহোশাফট নতুন রাজা হলেন।
ইস্রায়েলের রাজা নাদব
25 যিহূদায় আসার রাজত্বের দ্বিতীয় বছরের সময় যারবিয়ামের পুত্র নাদব ইস্রায়েলের রাজা হন। তিনি দু বছর রাজত্ব করেছিলেন। 26 নাদব তাঁর পিতা যারবিয়ামের মতোই যাবতীয় পাপ কর্মে লিপ্ত হলেন। যারবিয়াম রাজা থাকাকালীন তিনি ইস্রায়েলের লোকদের পাপ আচরণের কারণ হয়েছিলেন।
27 ইষাখর পরিবারগোষ্ঠীর অহিয়ের পুত্র বাশা, রাজা নাদবকে হত্যার একটি চক্রান্ত করেছিলেন। এসময় নাদব ও ইস্রায়েলের সবাই গিব্বথোন শহরের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। গিব্বথোন শহরটি পলেষ্টীয় অধিকৃত ছিল। 28 এই শহরেই বাশা নাদবকে হত্যা করেছিলেন। আসার যিহূদার রাজত্বের তৃতীয় বছরে এ ঘটনা ঘটে। এরপর বাশা ইস্রায়েলের নতুন রাজা হলেন।
ইস্রায়েলের রাজা বাশা
29 ইস্রায়েলের রাজা হবার পর বাশা যারবিয়ামের পরিবারের সবাইকে একে একে হত্যা করলেন। প্রভু যে ভাবে সেই শীলোনীয় অহিয়ের মাধ্যমে ভাববাণী করেছিলেন, ঠিক সে ভাবেই এই সমস্ত ঘটনা ঘটলো। 30 যারবিয়ামের পাপের ফলেই তার বংশের সবাইকে মরতে হলো। ইস্রায়েলের লোকদের পাপ আচরণের কারণ হয়ে যারবিয়াম প্রভুকে খুবই ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল।
31 নাদব আর যা কিছু করেছিলেন সে সব ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 32 বাশার ইস্রায়েলে রাজত্বের গোটা সময়টাই যিহূদার রাজা আসার সঙ্গে যুদ্ধ করে কেটেছিল।
33 আসার যিহূদায় রাজত্বের তৃতীয় বছরের মাথায় অহিয়র পুত্র বাশা ইস্রায়েলের রাজা হলেন। বাশা তির্সাতে 24 বছর রাজত্ব করেছিলেন। 34 কিন্তু বাশা তাঁর পিতা যারবিয়ামের মতোই পাপ আচরণ করেছিলেন এবং ইস্রায়েলের লোকদের এমন সব পাপ আচরণের কারণ হয়েছিলেন যা প্রভুর মন: পুত ছিল না।
16 প্রভু তখন হনানির পুত্র যেহূর সঙ্গে কথা বললেন এবং রাজা বাশার বিরুদ্ধে কথা বললেন। 2 তিনি বললেন, “আমি তোমাকে ধূলো থেকে উঠিয়ে এনে ইস্রায়েলে আমার লোকদের নেতা করেছিলাম। কিন্তু তুমি যারবিয়ামের আচরণ অনুসরণ করেছ। আমার ইস্রায়েলের লোকদের পাপ আচরণের কারণ হয়েছ এবং তারা তাদের পাপ দিয়ে আমাকে ক্রুদ্ধ করেছে। 3 তাই বাশা, আমি তোমাকে এবং তোমার পরিবারকে ধ্বংস করব। নবাটের পুত্র যারবিয়ামের পরিবারের যে দশা হয়েছিল তোমাদেরও তাই হবে। 4 তোমার পরিবারের সবাই শহরের পথেঘাটে মারা পড়বে, কুকুরে তাদের মৃতদেহ ছিঁড়ে খাবে। অন্যরা মাঠেঘাটে মরে পড়ে থাকবে। চিল শকুনী তাদের মৃতদেহ ঠোকরাবে।”
5 বাশা ও তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তির সব কিছুই ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 6 বাশার মৃত্যুর পর তাঁকে তির্সাতে সমাধিস্থ করা হল। এরপর তাঁর পুত্র এলা নতুন রাজা হলেন।
7 যারবিয়ামের পরিবারের মতোই বাশাও প্রভুর বিরুদ্ধে বহু পাপ আচরণ করে, যার ফরে প্রভু তার প্রতি ক্রুদ্ধ হন এবং ভাববাদী যেহূকে বাশার পরিণতির কথা জানিয়ে দেন। বাশা যারবিয়ামের পরিবারের সবাইকে হত্যা করার জন্যও প্রভু তাঁর প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন।
ইস্রায়েলের রাজা এলা
8 আসার যিহূদায় রাজত্বের 26 বছরের মাথায় বাশার পুত্র এলা ইস্রায়েলের নতুন রাজা হলেন। এলা তির্সাতে দুবছর রাজত্ব করেছিলেন।
9 সিম্রি ছিলেন এলার অধীনস্থ একজন রাজকর্মচারী। সিম্রি এলার অর্ধেক রথ বাহিনীর সেনাপতি ছিলেন। সিম্রি এলার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিলেন। রাজা এলা তখন অর্সার বাড়িতে বসে দ্রাক্ষারস পান করছিলেন। অর্সা তির্সার প্রাসাদরক্ষক ছিল। 10 সিম্রি সে সময় ঐ বাড়িতে ঢুকে এলাকে হত্যা করেন। যিহূদাতে আসার রাজত্বের 27 বছরের মাথায় এই ঘটনা ঘটে। সিম্রি এলার পরে ইস্রায়েলের নতুন রাজা হলো।
ইস্রায়েলের রাজা সিম্রি
11-12 সিম্রি ইস্রায়েলের নতুন রাজা হবার পর তিনি একে একে বাশার পরিবারের সকলকে হত্যা করলেন, কাউকে রেহাই দিলেন না। সিম্রি বাশার বন্ধু-বান্ধবদেরও সবাইকে হত্যা করলেন। প্রভু যেভাবে ভাববাদী যেহূর কাছে বাশার মৃত্যু সম্পর্কে ভাববাণী করেছিলেন ঠিক সে ভাবেই বাশা ও তাঁর পরিবারের সকলের মৃত্যু হল। 13 বাশা ও তাঁর পুত্র এলার পাপ আচরণের জন্যই এই ঘটনা ঘটলো। তাঁরা শুধু নিজেরাই পাপ করেন নি, ইস্রায়েলের লোকদেরও পাপ আচরণে বাধ্য করেছিলেন। এই কারণে প্রভু তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। এছাড়াও তারা মূর্ত্তি পূজা করতেন বলে প্রভু ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন।
14 এলা আর যা কিছু করেছিলেন তা ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।
15 যিহূদাতে আসার রাজত্বের 27তম বছরে সিম্রি ইস্রায়েলের রাজা হলেন। সিম্রি মাত্র 7 দিনের জন্য তির্সাতে রাজত্ব করেছিলেন। পলেষ্টীয় অধিকৃত গিব্বথোনের কাছে ইস্রায়েলের সেনাবাহিনী তখন শিবির গেড়েছিল। তারা সে সময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। 16 তাদের কানে এলো সিম্রি ইস্রায়েলের রাজার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাঁকে হত্যা করেছেন। তখন ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দা সেই শিবিরেই সেনাপতি অম্রিকে ইস্রায়েলের রাজা হিসেবে ঠিক করলো। 17 তখন অম্রি ও ইস্রায়েলের সবাই গিব্বথোন থেকে এসে তির্সা আক্রমণ করলো।
18 সিম্রি যখন বুঝতে পারলেন তির্সা শত্রুপক্ষের দখলে চলে গেছে, তখন তিনি রাজপ্রাসাদে নিজেকে বন্ধ করে প্রাসাদে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করলেন। 19 সিম্রিও যারবিয়ামের মতোই প্রভুর অনভিপ্রেত পাপ আচরণ করেছিলেন ও ইস্রায়েলের লোকদের পাপ কার্য্যের কারণ হয়েছিলেন। আর এই পাপের জন্যই সিম্রির মৃত্যু হল।
20 সিম্রির গল্প, তাঁর চক্রান্ত ও অন্যান্য যা কিছু তিনি করেছিলেন তা ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। সিম্রি রাজা এলার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার পর কি হয়েছিল সেই কথাও এই গ্রন্থে লেখা আছে।
ইস্রায়েলের রাজা অম্রি
21 সে সময়ে ইস্রায়েলের বাসিন্দারা দুটি দলে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। অর্ধেক লোক চাইছিল গীনতের পুত্র তিব্নিকে রাজা করতে, বাকী অর্ধেক ছিল অম্রির অনুগামী। 22 অম্রির সমর্থকরা বেশী শক্তিশালী হওয়ায় তিব্নি নিহত হলেন এবং অম্রি নতুন রাজা হলেন।
23 আসা যিহূদায় রাজত্ব করার 31 বছরের মাথায় অম্রি ইস্রায়েলের রাজা হন। তিনি 12 বছর ইস্রায়েল শাসন করেন। তার মধ্যে 6 বছর তিনি তির্সা শহর থেকে রাজত্ব করেছিলেন। 24 অম্রি 150 পাউণ্ড রূপো দিয়ে শেমরের কাছ থেকে শমরিয়া পাহাড়টি কিনে সেখানে একটি শহর বানান। পাহাড়ের আগের মালিক শেমরের নামেই তিনি ঐ শহরটির নাম শমরিয়া দিয়েছিলেন।
25 প্রভু যা যা অনুচিত বলে ঘোষণা করেছিলেন, রাজা অম্রি ঠিক সেইগুলোই করেছিলেন। তাঁর আগে যে সব রাজারা রাজত্ব করেছিলেন তিনি তাঁদের চেয়েও খারাপ ছিলেন। 26 নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সব পাপ করেছিলেন তিনিও ঠিক সেই পাপগুলো করেছিলেন এবং তিনি ইস্রায়েলের লোকদেরও পাপের কারণ হয়েছিলেন। অতএব তাঁরা ইস্রায়েলের ঈশ্বর প্রভুকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছিলেন কারণ তাঁরা অর্থহীন, মূল্যহীন মূর্ত্তিসমূহের পূজা করেছিলেন।
27 অম্রি সম্পর্কে আর সব কিছু তিনি যা যা উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 28 অম্রির মৃত্যুর পর তাঁকে শমরিয়া শহরেই সমাধিস্থ করা হল। তাঁরপর তাঁর পুত্র আহাব নতুন রাজা হলেন।
ইস্রায়েলের রাজা আহাব
29 আসার যিহূদায় রাজত্ব কালের 38 বছরের সময়ে অম্রির পুত্র আহাব ইস্রায়েলের রাজা হন। আহাব শমরিয়া শহর থেকে 22 বছর ইস্রায়েল শাসন করেছিলেন। 30 আহাব তাঁর আগের রাজাদের তুলনায় আরো খারাপ ছিলেন। প্রভু যা কিছু অন্যায় বলে ঘোষণা করেছিলেন তিনি সেগুলোই করেছিলেন। 31 নবাটের পুত্র যারবিয়ামের মতো পাপ আচরণ করেও আহাব ক্ষান্ত হন নি, উপরন্তু তিনি সীদোনীয় রাজা ইৎবালের কন্যা ঈষেবলকে বিয়ে করেছিলেন। এরপর আহাব বাল মূর্ত্তির পূজা করতে শুরু করেন এবং 32 শমরিয়া শহরে বাল পূজার জন্য একটা মন্দির করে সেখানে বেদী বানিয়ে দিয়েছিলেন। 33 আশেরার আরাধনার জন্যও তিনি একটি খুঁটি পুঁতে দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলে তাঁর আগে অন্য যে সব রাজা শাসন করেছিলেন তাঁদের তুলনায় প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে ক্রুদ্ধ করার মতো আহাব অনেক বেশী পাপকার্য করেছিলেন।
34 আহাবের শাসন কালে বৈথেলের হীয়েল যিরীহো শহরটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। এই কাজের ফলস্বরূপ হীয়েল যে সময়ে শহরটি বানানোর কাজ শুরু করেন, সে সময় তাঁর বড় ছেলে অবীরাম মারা যায়। আর শহরের তোরণ বসানোর কাজ শেষ হলে হীয়েলের ছোট ছেলে সগুবেরও মৃত্যু হল। নূনের পুত্র যিহোশূয়ের মাধ্যমে প্রভু যে ভাবে ভাববাণী করেছিলেন ঠিক সে ভাবেই এইসব ঘটেছিল।
এলিয় এবং অনাবৃষ্টির কাল
17 গিলিয়দের তিশ্বী শহরে এলিয় নামে এক ভাববাদী বাস করতেন। তিনি রাজা আহাবকে বললেন, “আমি ইস্রায়েলের ঈশ্বর, প্রভুর সেবক। আমি সেই প্রভুর নামে অভিশাপ দিলাম আগামী কয়েক বছর বৃষ্টিপাত তো দূরের কথা, এদেশে এক ফোঁটা শিশির পর্যন্ত আর পড়বে না। একমাত্র আমি নির্দেশ দিলেই আবার বৃষ্টিপাত হবে।”
2-3 প্রভু তখন এলিয়কে সে জায়গা ছেড়ে যর্দন নদীর পূর্ব দিকে করীত্ খাঁড়ির কাছে লুকিয়ে থাকতে বললেন। 4 তিনি এলিয়কে জানান যে তিনি কাক ও শকুনিদের রোজ তাঁর জন্য সেখানে খাবার এনে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তৃষ্ণা পেলে এলিয় করীতের জলধারা থেকে জলপানও করতে পারবেন। 5 প্রভুর নির্দেশ মতো এলিয় তখন যর্দনের পূর্বদিকে করীৎ খাঁড়ির কাছে বাস করতে গেলেন। 6 প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে কাক ও শকুনিরা এলিয়কে খাবার এনে দিত আর তৃষ্ণা পেলে তিনি করীতের স্রোত থেকে জল পান করতেন।
7 কিন্তু অনাবৃষ্টির দরুণ করীতের জলধারা শুকিয়ে গেল। 8 তখন প্রভু এলিয়কে 9 সীদোনের সারিফতে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেন, “সেখানে এক বিধবা রমণী বাস করে। আমি তাঁকে তোমার খাবারের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছি।”
10 এলিয় তখন সারিফত নগরের দরজার কাছে গিয়ে এক বিধবা মহিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলেন। সে আগুন জ্বালানোর জন্য কাঠ জড়ো করছিল। এলিয় তাঁকে বললেন, “আমায় একটু খাবার জল এনে দিতে পারো?” 11 সেই মহিলা জল আনতে যাবার সময় এলিয় আবার তাকে অনুরোধ করলেন, “দয়া করে আমার খাবার জন্য এক টুকরো রুটি এনো।”
12 কিন্তু সেই মহিলা উত্তর দিলেন, “আমি তোমার প্রভু ঈশ্বরের সামনে দিব্যি খেয়ে বলছি, আমার ঘরে রুটি নেই। শুধু বয়ামে অল্প একটু ময়দা আর শিশিতে অল্প খানিক তেল রাখা আছে। আমি এখানে কাঠ কুড়োতে এসেছিলাম। আমি এই কাঠ বাড়ীতে বয়ে নিয়ে যাবো এবং আগুন জ্বালিয়ে রুটি সেঁকব এবং আমার পুত্র ও আমি আমাদের শেষ আহার করব এবং তারপর খিদের জ্বালায় মরে যাবো।”
13 এলিয় সেই মহিলাকে বললেন, “কোনো চিন্তা কোরো না। কথা মতো বাড়ি গিয়ে রান্না চড়াও। কিন্তু তার আগে ঐ ময়দা থেকে ছোট্ট একটা রুটি বানিয়ে আমার জন্য নিয়ে এসো। তারপর তুমি তোমার আর তোমার পুত্রের জন্য রান্না করো। 14 ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বর বললেন, ‘ঐ ময়দার কৌটো কখনও শূন্য হবে না। যত দিন না প্রভু এ দেশে বৃষ্টি পাঠাচ্ছেন তত দিন পর্যন্ত ঐ শিশির তেলও আর কমবে না।’”
15 তখন ঐ মহিলা বাড়ি ফিরে গিয়ে এলিয়র কথা মতো কাজ করল। এলিয়, ঐ মহিলাটি এবং তার পুত্র বহু দিনের জন্য যথেষ্ট খাদ্য পেয়েছিল। 16 প্রভু এলিয়কে যা ভাববাণী করেছিলেন, সেই কথা মতোই ঐ ময়দার বযাম ও তেলের শিশি কখনও শূন্য হয় নি।
17 কিছু দিন পরে মহিলার পুত্র খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। শেষে এক সময় তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে 18 মহিলা এলিয়কে এসে বলল, “আপনি ঈশ্বরের লোক, আপনি কি আমায় সাহায্য করতে পারবেন? নাকি আপনি এখানে এসে কেবল আমাকে আমার পাপের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমার পুত্রকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবেন?”
19 এলিয় তাকে বললেন, “তোমার পুত্রকে আমার কাছে এনে দাও।” তারপর এলিয় পুত্রটিকে ওপরে নিয়ে গিয়ে যে ঘরে তিনি থাকতেন তার নিজের খাটে শুইয়ে দিলেন। 20 তারপর এলিয় প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, “প্রভু, আমার ঈশ্বর, এই বিধবা রমণী আমাকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছে। আপনি কি তার প্রতি এই অনাচার করবেন? আপনি কি তার পুত্রকে মারা যেতে দেবেন?” 21 তারপর এলিয় পর পর তিন বার সেই ছেলেটার ওপর শুয়ে প্রার্থনা করে বললেন, “প্রভু, আমার ঈশ্বর, এই ছেলেটাকে পুনর্জীবিত করুন।”
22 প্রভু এলিয়র ডাকে সাড়া দিলেন। ছেলেটি বেঁচে উঠল এবং আবার স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করল। 23 এলিয় তখন ছেলেটিকে নীচের তলায় নিয়ে গিয়ে তার মায়ের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “দেখো, তোমার পুত্র বেঁচেই আছে!”
24 সেই মহিলা তখন বলল, “এবার আমার সত্যি সত্যি বিশ্বাস হল যে আপনি ঈশ্বরের লোক! প্রভু সত্যিই আপনার মুখ দিয়ে কথা বলেন!”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International