Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
2 শমূয়েল 8-12

দায়ূদ বহু যুদ্ধে জয়ী হলেন

পরে, দায়ূদ যুদ্ধে পলেষ্টীয়দের পরাজিত করলেন। পলেষ্টীয়দের রাজধানী শহরের অধীনে বহু জমি জায়গা ছিল। দায়ূদ সেইসব জমিজায়গা নিজের অধীনে আনলেন। দায়ূদ মোয়াবীয় লোকদেরও পরাজিত করলেন। সেই সময় তিনি তাদের মাটিতে শুয়ে পড়তে বাধ্য করেন। তারপর তিনি দড়ির সাহায্যে তাদের সারিবদ্ধভাবে আলাদা করেন। দুটি সারির লোকদের হত্যা করা হয়। কিন্তু তৃতীয় সারির লোকদের বাঁচতে দেওয়া হয়। এইভাবে মোয়াবীয়রা দায়ূদের দাসে পরিণত হল। তারা তাঁকে নৈবেদ্য দিল।

সোবার রাজা রহোবের পুত্রের নাম ছিল হদদেষর। যখন দায়ূদ ফরাৎ নদীর নিকটবর্তী অঞ্চল দখল করতে গেলেন তখন তিনি হদদেষরকে পরাজিত করলেন। দায়ূদ হদদেষরের কাছ থেকে 1700 অশ্বারোহী সৈন্য এবং 20,000 পদাতিক সৈন্য ছিনিয়ে নিলেন। দায়ূদ 100টি রথ ছাড়া, বাকী সমস্ত রথগুলি নষ্ট করে দিলেন।

সোবার রাজা হদদেষরকে সাহায্য করার জন্য দম্মেশকের অরামীয়রা এল। কিন্তু দায়ূদ 22,000 অরামীয়কে পরাজিত করলেন। তারপর দায়ূদ দম্মেশকের অরামে কিছু সৈন্যকে রেখে দিলেন। অরামীয়রা দায়ূদের দাসে পরিণত হল এবং তার জন্য উপঢৌকন নিয়ে এল। দায়ূদ যে দিকে গেলেন, প্রভু সে দিকেই তাঁকে জয়ী করলেন।

হদদেষরের দাসদের কাছে যে সব সোনার ঢাল ছিল, দায়ূদ সেগুলি নিয়ে নিলেন। সেই ঢালগুলি নিয়ে দায়ূদ জেরুশালেমে এলেন। এছাড়াও দায়ূদ, বেটহ ও বেরোথা শহর থেকে বহু তামার জিনিসপত্র এনেছিলেন। (বেটহ এবং বেরোথা ছিল হদদেষরের অধীনস্থ দুটি নগরী।)

হমাতের রাজা তয়ি খবর পেলেন যে দায়ূদ হদদেষরের সৈন্যদলকে পরাজিত করেছেন। 10 তখন তয়ি নিজের পুত্র যোরামকে দায়ূদের কাছে পাঠালেন। হদদেষরের বিরুদ্ধে দায়ূদ যুদ্ধ করেছেন এবং তাদের পরাজিত করেছেন বলে যোরাম দায়ূদকে অভিনন্দন জানালেন এবং আশীর্বাদ করলেন। এর আগে হদদেষর তয়ির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। যোরাম রূপো, সোনা এবং তামার তৈরী জিনিসপত্র সঙ্গে করে এনেছিলেন। 11 দায়ূদ সেই সব জিনিসপত্র গ্রহণ করলেন এবং সেগুলি প্রভুর উদ্দেশ্যে নিবেদন করলেন। প্রভুকে উৎসর্গ করা অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে তিনি সেই জিনিসগুলি রেখে দিলেন। তিনি যে সব জাতিকে পরাজিত করেছিলেন, সেই সব জাতির কাছ থেকে তিনি ঐ সব জিনিসপত্র এনেছিলেন। 12 অরাম, মোয়াব, অম্মোন, পলেষ্টীয় এবং অমালেক এইসব জাতিকে দায়ূদ পরাজিত করেছিলেন। এছাড়াও তিনি সোবার রাজা, রহোবের পুত্র হদদেষরকে পরাজিত করেছিলেন। 13 দায়ূদ 18,000 অরামীয়কে লবণ উপত্যকায় পরাজিত করেন। যখন তিনি বাড়ী ফিরে এলেন তখন তিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন। 14 দায়ূদ কয়েক দল সৈন্যকে ইদোমে রাখলেন। ইদোমের সব লোকরা দায়ূদের দাস হয়ে গেল। দায়ূদ যেখানে যেখানে গেলেন, সেখানেই প্রভু তাঁকে জয়ী হতে সাহায্য করলেন।

দায়ূদের শাসনকাল

15 দায়ূদ সমগ্র ইস্রায়েলের ওপর শাসন করেছিলেন। তিনি তাঁর লোকদের জন্য ভাল এবং ন্যায্য সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। 16 সরূয়ার পুত্র যোয়াব সেনাপ্রধান হয়েছিল। অহীলূদের পুত্র যিহোশাফট ছিলেন ঐতিহাসিক। 17 অহীটুবের পুত্র সাদোক এবং অবীয়াথরের পুত্র অহীমেলক ছিলেন যাজকগণ। সরায় ছিলেন সচিব। 18 যিহোয়াদার পুত্র বনায় করেথীয় এবং পলেথীয়দের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। আর দায়ূদের দুই পুত্র ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।[a]

দায়ূদ শৌলের পরিবারের প্রতি সদয় হলেন

দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “শৌলের পরিবারের কোন লোক কি এখনও রয়ে গেছে? আমি তার প্রতি দয়া দেখাতে চাই। এটা আমি যোনাথনের জন্য করব।”

সীবঃ নামে শৌলের পরিবারের এক দাস ছিল। দায়ূদের দাস সীবঃকে দায়ূদের কাছে নিয়ে এল। রাজা দায়ূদ জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কি সীবঃ?”

সীবঃ উত্তর দিল, “হ্যাঁ, আমি আপনার দাস সীবঃ।”

রাজা বললেন, “শৌলের পরিবারের কোন লোক কি বেঁচে আছে? আমি তার প্রতি ঈশ্বরের দয়া দেখাতে চাই।”

সীবঃ রাজা দায়ূদকে বললেন, “যোনাথনের একজন পুত্র এখনও বেঁচে আছে। তার দু পা-ই পঙ্গু।”

রাজা সীবঃকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সেই ছেলেটি কোথায় আছে?”

সীবঃ উত্তর দিল, “সে লো-দবারে, অম্মীয়েলের পুত্র মাখীরের বাড়ীতে আছে।”

তখন রাজা দায়ূদ তাঁর কয়েকজন আধিকারিককে লো-দবারে অম্মীয়েলের পুত্র মাখীরের বাড়ীতে পাঠালেন, যোনাথনের পুত্রকে নিয়ে আসার জন্য। যোনাথনের পুত্র মফীবোশৎ‌ দায়ূদের কাছে এলো এবং মাটিতে মাথা নত করে প্রণাম করল।

দায়ূদ জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কি মফীবোশৎ‌?”

মফীবোশৎ‌ উত্তর দিল, “হ্যাঁ, আমি আপনার দাস মফীবোশৎ‌।”

দায়ূদ মফীবোশতকে বলল, “ভয় পেও না। আমি তোমার প্রতি সদয় হব। আমি তোমার পিতা যোনাথনের জন্যই এটা করব। আমি তোমার পিতামহ শৌলের সব জমি তোমাকে ফিরিয়ে দেব। তুমি সবসমযই আমার সঙ্গে একাসনে বসে আহার করতে পারবে।”

মফীবোশৎ‌ পুনরায় দায়ূদকে প্রণাম করল। মফীবোশৎ‌ বলল, “একটা মরা কুকুরের থেকে আমি কোন অংশে ভাল নই, কিন্তু আপনি আমার প্রতি অত্যন্ত সদয় হয়েছেন।”

তখন রাজা দায়ূদ শৌলের দাস সীবঃকে ডাকলেন। দায়ূদ সীবঃকে বললেন, “আমি তোমার মনিবের নাতি মফীবোশতকে শৌলের পরিবারের যা কিছু আমার কাছে ছিল সব ফিরিয়ে দিয়েছি। 10 মফীবোশতের জন্য তুমি সেই জমি চাষ করবে। মফীবোশতের জন্য তুমি এবং তোমার পুত্ররা এটা করবে। তোমরা ফসল ফলাবে। তাহলে তোমার মনিবের নাতি মফীবোশতের অন্নের জন্য প্রচুর খাদ্যশস্য হবে। কিন্তু তোমার মনিবের নাতি মফীবোশৎ‌ সবসময়েই আমার সঙ্গে একাসনে বসে আহার করতে পারবে।”

সীবঃ এর 15 জন ছেলে এবং 20 জন দাস ছিল। 11 সীবঃ উত্তর দিল, “আমি আপনার দাস। আমার মনিব যা যা আদেশ করেন আমি তাই তাই করব।”

মফীবোশৎ‌ দায়ূদের সঙ্গে একাসনে বসে, রাজার একজন ছেলের মতই আহার করল। 12 মীখা নামে মফীবোশতের একটা কিশোর ছেলে ছিল। সীবঃর পরিবারের প্রত্যেকে মফীবোশতের দাস হয়ে গেল। 13 মফীবোশতের দু পা-ই পঙ্গু ছিল। মফীবোশৎ‌ জেরুশালেমে থাকত। প্রত্যেকদিন মফীবোশৎ‌ রাজার সঙ্গে একাসনে আহার করত।

হানূন দায়ূদের লোকদের অপমান করল

10 পরে অম্মোনীয়দের রাজা নাহশ মারা গেলেন। তাঁর পুত্র হানূন, তারপরে নতুন রাজা হলেন। দায়ূদ বললেন, “নাহশ আমার প্রতি সদয় ছিলেন। আমিও তার পুত্র হানূনের প্রতি সদয় হব।” অতএব দায়ূদ হানূনের পিতার মৃত্যু সম্পর্কে সান্ত্বনা জানিয়ে তাঁর আধিকারিকদের পাঠালেন।

তাই দায়ূদের আধিকারিকরা অম্মোনীয়দের রাজ্যে চলে গেল। কিন্তু অম্মোনীয়দের নেতারা তাদের মনিব হানূনকে বলল, “আপনি কি মনে করেন কয়েকজন লোক পাঠিয়ে দায়ূদ আপনার পিতার প্রতি সম্মান দেখাতে ও আপনাকে সান্ত্বনা দিতে চান? না! দায়ূদ এই লোকগুলোকে পাঠিয়েছেন আপনার শহর সম্পর্কে গোপনে জেনে যেতে ও খোঁজ খবর নিতে। তারা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফন্দি আঁটছে।”

তখন হানূন দায়ূদের লোকদের ধরে তাদের অর্ধেক দাড়ি কামিয়ে দিল এবং তাদের জামাকাপড় পাছা পর্যন্ত কেটে দিল। তারপর তাদের পাঠিয়ে দিল।

লোকরা যারা দায়ূদকে এই খবর দিল, তিনি সেই আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বার্তাবাহক পাঠালেন। তিনি এটা করেছিলেন কারণ সেই লোকগুলি খুবই লজ্জিত হয়েছিল। রাজা দায়ূদ বললেন, “যতদিন না তোমাদের দাড়ি গজায়, ততদিন যিরীহোতে অপেক্ষা কর, তারপর জেরুশালেমে ফিরে এসো।”

অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ

অম্মোনীয়রা দেখল তারা দায়ূদের শত্রুতে পরিণত হয়েছে। তখন অম্মোনীয়রা বৈৎ‌-রহোব এবং সোবা থেকে অরামীয়দের ভাড়া করে নিয়ে এল। তাদের মধ্যে মোট 20,000 পদাতিক সৈন্য ছিল। এছাড়া অম্মোনীয়রা 1000 লোক সহ মাখার রাজা এবং টৌব থেকে 12,000 লোককে ভাড়া করেছিল।

দায়ূদ এই সবই শুনলেন। তাই তিনি যোয়াব এবং শক্তিশালী লোকজন সহ গোটা সৈন্যবাহিনীকে পাঠালেন। অম্মোনীয়রা বেরিয়ে এল এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। তারা শহরের প্রবেশদ্বারের কাছে দাঁড়িয়েছিল। সোব ও রহোবের অরামীয় সৈন্যরা এবং টোব ও মাখার সৈন্যরা শহরের বাইরের মাঠে সমবেত হল।

যোয়াব দেখলেন তাঁর সামনে পিছনে শত্রু। তখন যোয়াব শ্রেষ্ঠ ইস্রায়েলীয়দের বেছে নিয়ে, তাদের অরামীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন। 10 অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর আর এক ভাই অবীশয়ের উপর দায়িত্ব দিলেন। 11 যোয়াব অবীশয়কে বললেন, “যদি অরামীয়রা আমাদের থেকে বেশী শক্তিশালী বলে মনে হয়, তুমি আমাকে সাহায্য করবে। যদি অরামীয়রা তোমার কাছে বেশী শক্তিশালী হয়ে ওঠে—আমি এসে তোমাকে সাহায্য করব। 12 এসো, আমরা শক্তিশালী হই এবং সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের লোকদের জন্য এবং আমাদের ঈশ্বরের শহরগুলির জন্য লড়াই করি। প্রভু যা সঠিক বিবেচনা করেন, তাই করবেন।”

13 তারপর যোয়াব এবং তাঁর লোকরা অরামীয়দের আক্রমণ করলেন। অরামীয়রা যোয়াব এবং তাঁর লোকদের কাছ থেকে পালিয়ে গেল। 14 অম্মোনীয়রা দেখল অরামীয়রা দৌড়ে পালাচ্ছে, তখন তারাও অবীশয়ের থেকে দৌড়ে পালালো এবং তাদের শহরে ফিরে গেল।

তাই যোয়াব, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অম্মোনীয়দের সঙ্গে ফিরে এলেন এবং জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।

অরামীয়রা আবার যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল

15 অরামীয়রা দেখলো ইস্রায়েলীয়রা তাদের পরাজিত করেছে। তখন তারা একসঙ্গে জমায়েত হয়ে একটা সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলল। 16 ফরাৎ নদীর অপর পারে যে সব অরামীয় বাস করত, তাদের আনবার জন্য হদদেষর তার বার্তাবাহকদের পাঠাল। সেই অরামীয়রা হেলমে এলো। তাদের নেতা ছিল শোবক, হদদেষরের সৈন্যবাহিনীর সেনাপতি।

17 দায়ূদ সব শুনলেন। তিনি সব ইস্রায়েলীয়দের জড় করলেন। তারা যর্দন নদী পেরিয়ে হেলমে গিয়ে হাজির হল।

তখন অরামীয়রা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং আক্রমণ করল। 18 কিন্তু যুদ্ধে অরামীয়রা পরাজিত হল এবং অরামীয়রা ইস্রায়েলীয়দের থেকে দূরে পালিয়ে গেল। দায়ূদ 700 রথচালক, 40,000 অশ্বারোহী সৈন্যকে হত্যা করলেন। দায়ূদ অরামীয় সেনাপতি শোবককেও হত্যা করলেন।

19 হদদেষরের অধীনস্থ রাজারা যখন দেখল, ইস্রায়েলীয়রা তাদের পরাজিত করেছে তখন তারা ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করল এবং তাদের দাসে পরিণত হল। অরামীয়রা অম্মোনীয়দের আবার সাহায্য করতে ভয় পেল।

দায়ূদ বৎ‌শেবার সঙ্গে মিলিত হলেন

11 বসন্তের সময়, যখন রাজারা যুদ্ধে যান, তখন দায়ূদ যোয়াব, তাঁর আধিকারিকদের এবং সমস্ত ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের অম্মোনীয়দের ধ্বংস করতে পাঠালেন। যোয়াবের সৈন্যরা অম্মোনদের রাজধানী শহর রব্বাও আক্রমণ করল।

কিন্তু দায়ূদ জেরুশালেমেই রইলেন। সন্ধ্যায়, তিনি বিছানা ছেড়ে উঠলেন এবং রাজবাড়ীর ছাদে পায়চারি করতে লাগলেন। দায়ূদ যখন ছাদে পায়চারি করছিলেন, তখন তিনি এক মহিলাকে স্নান করতে দেখলেন। সেই মহিলা ছিল পরমা সুন্দরী। দায়ূদ তাঁর আধিকারিককে ঐ মহিলাটির সম্বন্ধে খোঁজ নিতে পাঠালেন। এক আধিকারিক উত্তর দিল, “মেয়েটি ইলিয়ামের কন্যা বৎ‌শেবা। সে হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রী।”

দায়ূদ লোক পাঠিয়ে বৎ‌শেবাকে তাঁর কাছে আনলেন। যখন বৎ‌শেবা দায়ূদের কাছে এল, দায়ূদ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলেন। বৎ‌শেবা স্নান করে বাড়ী ফিরে গেল। বৎ‌শেবা গর্ভবতী হল। সে দায়ূদকে জানালো, “আমি গর্ভবতী।”

দায়ূদ তাঁর পাপ লুকোতে চাইলেন

দায়ূদ যোয়াবের কাছে খবর পাঠালেন, “হিত্তীয় ঊরিয়কে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।”

যোয়াব ঊরিয়কে দায়ূদের কাছে পাঠিয়ে দিল। ঊরিয় দায়ূদের কাছে এল। দায়ূদ ঊরিয়কে জিজ্ঞাসা করলেন, “যোয়াব কেমন আছে।” সৈনিকরা কেমন আছে এবং যুদ্ধ কেমন হল ইত্যাদি। তারপর দায়ূদ ঊরিয়কে বললেন, “বাড়ী গিয়ে বিশ্রাম কর।”

ঊরিয় রাজার বাড়ী থেকে চলে গেল। রাজা (দায়ূদ) ঊরিয়ের জন্য উপহার পাঠালেন। কিন্তু ঊরিয় বাড়ী গেল না। ঊরিয় রাজবাড়ীর দরজার সামনে ঘুমিয়ে পড়লো। রাজার ভৃত্যের মতই সে সেখানে ঘুমালো। 10 এক দাস দায়ূদকে খবর দিল, “ঊরিয় বাড়ী যায় নি।”

দায়ূদ ঊরিয়কে বললেন, “তুমি দীর্ঘ সফর থেকে ফিরে এসেছ। কেন তুমি বাড়ীতে গেলে না?”

11 ঊরিয় দায়ূদকে বলল, “পবিত্র সিন্দুকটি এবং ইস্রায়েল ও যিহূদার সৈন্যরা তাঁবুগুলিতে রয়েছে। আমার মনিব যোয়াব এবং আমার মনিবের (রাজা দায়ূদ) আধিকারিকরা শিবির গেড়ে মাঠে তাঁবু ফেলেছেন। সুতরাং আমার পক্ষে বাড়ী গিয়ে পান আহার করে স্ত্রীর সঙ্গে শয়ন করা ঠিক নয়।”

12 দায়ূদ ঊরিয়কে বললেন, “আজকের দিনটা এখানে থেকে যাও। কাল আমি তোমাকে যুদ্ধে ফেরৎ‌ পাঠাব।” সেই দিন ঊরিয় জেরুশালেমে থেকে গেল। পরদিন সকাল পর্যন্ত সে জেরুশালেমে থাকল। 13 দায়ূদ ঊরিয়কে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য ডেকে পাঠালেন। ঊরিয় দায়ূদের সঙ্গে পানাহার করল। দায়ূদ ঊরিয়কে দ্রাক্ষারস পান করালেন। তবুও ঊরিয় বাড়ী গেল না। সেই সন্ধ্যায়, ঊরিয় রাজার ফটকের বাইরে রাজার অন্য ভৃত্যদের সঙ্গে ঘুমিয়েছিল।

দায়ূদ ঊরিয়ের মৃত্যুর পরিকল্পনা করলেন

14 পরদিন সকালে দায়ূদ যোয়াবকে একখানা চিঠি লিখলেন। দায়ূদ চিঠিটাকে ঊরিয়কে দিয়ে পাঠাবার ব্যবস্থা করলেন। 15 চিঠিতে দায়ূদ লিখেছিলেন, “ঊরিয়কে প্রথম সারির ঠিক সেইখানে দাঁড় করাবে যেখানে লড়াইটা কঠিনতম। তারপর ওকে একা ফেলে পালিয়ে আসবে এবং ওকে যুদ্ধ ক্ষেত্রেই মরতে দেবে।”

16 পরদিন যোয়াব সারা শহর ঘুরে দেখলেন কোথায় সব থেকে সাহসী ও শক্তিশালী অম্মোনীয়রা রয়েছে। সেইখানে যাবার জন্য তিনি ঊরিয়কে নির্বাচন করলেন। 17 রব্বা শহরের লোকরা যোয়াবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এল। দায়ূদের কিছু লোক মারা গেল। হিত্তীয় ঊরিয় তাদেরই মধ্যে একজন।

18 তারপর যোয়াব, যুদ্ধে কি হয়েছে সেই বিষয়ে দায়ূদকে সংবাদ দিলেন। 19 যুদ্ধে যা যা ঘটেছে তা দায়ূদকে বলার জন্য যোয়াব এক বার্তাবাহককে আদেশ করলেন। 20 “হয়তো বা রাজা ক্রুদ্ধ হবেন এবং জিজ্ঞাসা করবেন, ‘লড়াইয়ের জন্য যোয়াবের সেনারা শহরের অত কাছে কেন গেল? তিনি নিশ্চয়ই জানেন যে শহরের প্রাচীরের ওপরে ধনুর্ধররা আছে যারা তার লোকদের শরাঘাতে শুইয়ে দিতে পারে? 21 তাঁর নিশ্চয়ই স্মরণে আছে যে এক মহিলা যিরূব্বেশতের পুত্র অবীমেলককে হত্যা করেছিল। ঘটনাটি তেবেষে ঘটেছিল। মহিলাটি নগরীর প্রাচীরের ওপর থেকে অবীমেলকের ওপর একটা চাকীর ওপরের পাথর ফেলে দিয়েছিল। তাই কেন তারা প্রাচীরের অত কাছে গেল?’ যদি রাজা দায়ূদ ওই ধরণের কিছু বলেন তুমি অবশ্যই তাঁকে এই খবর দেবে: ‘আপনার লোক হিত্তীয় ঊরিয় মারা গেছে।’”

22 বার্তাবাহক দায়ূদের কাছে গেল এবং যোয়াব বার্তাবাহককে যা যা বলতে বলেছিলেন সে সব কিছুই দায়ূদকে বলল। 23 বার্তাবাহক দায়ূদকে বলল, “অম্মোনদের লোকরা যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের আক্রমণ করে। আমরা লড়াই করে, তাদের শহরের প্রবেশ দ্বার পর্যন্ত তাড়া করি। 24 তখন নগর প্রাচীরের ওপর থেকে বিপক্ষের লোকরা আপনার লোকদের ওপর তীর চালায়। এতে আপনার কিছু লোক মারা যায়। আপনার আধিকারিক হিত্তীয় ঊরিয় তাদের মধ্যে একজন।”

25 দায়ূদ বার্তাবাহককে বললেন, “যোয়াবকে গিয়ে বল, ‘এ নিয়ে অতিরিক্ত বিমর্ষ হয়ো না। একটা তরবারি একজনের পর আর একজনকে হত্যা করতে পারে। রাজাদের বিরুদ্ধে আরও জোরদার আক্রমণ চালাও—তোমাদের জয় হবেই।’ এই কথাগুলি বলে যোয়াবকে উৎসাহিত কর।”

দায়ূদ বৎ‌শেবাকে বিয়ে করলেন

26 বৎ‌শেবা তাঁর স্বামীর মৃত্যুর খবর পেলেন এবং তাঁর জন্য কাঁদলেন। 27 তাঁর দুঃখের দিন অতিক্রান্ত হলে, দায়ূদ তাঁকে তাঁর বাড়ীতে নিয়ে যাবার জন্য ভৃত্য পাঠালেন। তিনি দায়ূদের পত্নী হলেন এবং দায়ূদের জন্য একটা সন্তানের জন্ম দিলেন। কিন্তু দায়ূদের এই পাপ প্রভু পছন্দ করলেন না।

নাথন দায়ূদের সঙ্গে কথা বললেন

12 প্রভু নাথনকে দায়ূদের কাছে পাঠালেন। নাথন দায়ূদের কাছে গেলেন। নাথন বললনে, “এক শহরে দু’জন লোক ছিল। একজন ছিল ধনী, অন্যজন দরিদ্র। ধনী লোকটির অনেক মেষ ও গবাদি পশু ছিল। দরিদ্র লোকটির একটা স্ত্রী মেষ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। দরিদ্র লোকটি মেষটাকে খাওয়াতো। মেষটা ঐ দরিদ্র লোক ও তার সন্তান-সন্ততিদের সঙ্গেই বড় হল। মেষটা গরীব লোকটার থেকেই খাবার খেত এবং তার পেয়ালা থেকেই পান করত। মেষটা ঐ লোকটির বুকের ওপর ঘুমাতো। মেষটা লোকটির মেয়ের মতই ছিল।

“একদিন এক পথিক ধনী লোকটির সঙ্গে দেখা করতে এলো। ধনী লোকটি পথিককে কিছু খাবার দিতে চাইলো। কিন্তু পথিককে দেবার জন্য ধনী লোকটি তার মেষ বা গবাদি পশুর থেকে কিছুই নিতে চাইল না। ধনী লোকটি, দরিদ্র লোকটির মেষটা নিয়ে এলো এবং তাকে কেটে পথিকের জন্য রান্না করলো।”

দায়ূদ ধনী লোকটির ওপর ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি নাথনকে বললেন, “এ কথা জীবন্ত প্রভুর মতই সত্য যে, যে লোক এ কাজ করেছে সে অবশ্যই মারা যাবে। তাকে ঐ মেষের মূল্যের চারগুণ বেশী দিতে হবে কারণ সে এমন ভয়াবহ কাজ করেছে এবং তার কোন করুণা ছিল না।”

নাথন দায়ূদকে তার পাপকর্মের কথা বললেন

নাথন দায়ূদকে বললেন, “তুমিই সেই ধনী ব্যক্তি। প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর এই কথাই বলেন, ‘আমি তোমাকে ইস্রায়েলের রাজারূপে মনোনীত করেছি। আমি তোমাকে শৌলের হাত থেকে রক্ষা করেছি। আমিই তোমাকে তার পরিবার এবং স্ত্রীগণকে দিয়েছি। এবং আমি তোমাকে ইস্রায়েল এবং যিহূদার রাজা করেছিলাম। তাও যেন যথেষ্ট ছিল না, আমি তোমাকে আরো আরো অনেক কিছু দিয়েছি। কিন্তু কেন তুমি প্রভুর আদেশ অমান্য করলে? কেন তুমি সেই কাজ করলে যা তিনি (ঈশ্বর) গর্হিত বলে ঘোষণা করেছেন? তুমি হিত্তীয় ঊরিয়কে অম্মোনদের দ্বারা হত্যা করালে এবং তার স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিলে। এইভাবে তুমি তরবারির দ্বারা ঊরিয়কে হত্যা করালে। 10 এই কারণে তোমার পরিবারও তরবারি থেকে রক্ষা পাবে না। তুমি ঊরিয় হিত্তীয়ের স্ত্রীকে তোমার স্ত্রী করার জন্য নিয়ে এসেছ। এইভাবে তুমি বুঝিয়ে দিয়েছ যে তুমি আমায় ঘৃণা করেছ।’

11 “প্রভু এ কথাই বলেন: ‘আমি তোমাকে সমস্যায় ফেলব। এই সমস্যা তোমার নিজের পরিবার থেকেই আসবে। আমি তোমার স্ত্রীদের তোমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবো এবং তোমারই ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজনকে দিয়ে দেব। সে তাদের সঙ্গে শয়ন করবে এবং প্রত্যেকে তা দিনের আলোর মত জানতে পারবে। 12 তুমি বৎ‌শেবার সঙ্গে গোপনে শয়ন করেছিলে। কিন্তু আমি তোমাকে এমন শাস্তি দেব যাতে সব ইস্রায়েলীয় তা জানতে পারে।’”[b]

13 তখন দায়ূদ নাথনকে বললেন, “আমি প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছি।”

নাথন দায়ূদকে বললেন, “এই পাপের জন্যও প্রভু তোমায় ক্ষমা করে দেবেন। তুমি মরবে না। 14 কিন্তু তুমি এমন কাজ করেছ যাতে প্রভুর বিরোধীরা তাঁর ওপর থেকে শ্রদ্ধা হারিয়েছে। তাই তোমার শিশু সন্তান মারা যাবে।”

দায়ূদ ও বৎ‌শেবার সন্তান মারা গেল

15 তারপর নাথন বাড়ী চলে গেলেন। দায়ূদ এবং বৎ‌শেবার যে শিশুপুত্র জন্মেছিল, প্রভু তাকে অসুস্থ করলেন। 16 শিশু সন্তানটির জন্য দায়ূদ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন। দায়ূদ খাওয়া দাওয়া ত্যাগ করলেন। তিনি ঘরের ভিতরে গিয়ে সারারাত সেখানে থাকলেন। সারারাত তিনি মেঝেতে শুয়ে কাটালেন।

17 দায়ূদের পরিবারের লোকরা এসে তাঁকে মেঝে থেকে ওঠানোর চেষ্টা করল। তিনি সেই সব নেতাদের সঙ্গে খাবার খেতে অস্বীকার করলেন। 18 সপ্তম দিনে, শিশুটি মারা গেল। শিশুটি যে মারা গেছে এ কথা দায়ূদের ভৃত্যরা দায়ূদকে বলতে ভয় পেল। তারা বলল, “দেখ, শিশুটি যখন বেঁচেছিল তখন আমরা দায়ূদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম। তিনি কিন্তু আমাদের কথা শুনতে চান নি। যদি আমরা বলি যে শিশুটি মারা গেছে, হয়তো তিনি নিজের ক্ষতি করবেন।”

19 দায়ূদ তাঁর ভৃত্যদের ফিসফিস করে কথা বলতে দেখলেন। তখন তিনি বুঝতে পারলেন শিশুটি মারা গেছে। দায়ূদ তাঁর ভৃত্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “শিশুটি কি মারা গেছে?”

ভৃত্যরা উত্তর দিল, “হ্যাঁ, সে মারা গেছে।”

20 তখন দায়ূদ মেঝে থেকে উঠে পড়লেন। তিনি স্নান করলেন। জামাকাপড় বদল করে, অন্য কাপড় পরলেন। প্রভুর উপাসনার জন্য তিনি প্রভুর ঘরে গেলেন। তারপর তিনি বাড়ী গেলেন এবং কিছু খাবার চাইলেন। তাঁর ভৃত্যরা তাঁকে কিছু খাবার এনে দিল এবং তিনি খেলেন।

21 দায়ূদের দাসরা তাঁকে বলল, “কেন আপনি এইসব কাজ করছেন? শিশুটি যখন বেঁচেছিল তখন আপনি কিছু খেলেন না। আপনি কাঁদলেন। কিন্তু শিশুটি মারা যেতে আপনি উঠলেন এবং খাবার খেলেন।”

22 দায়ূদ বলল, “শিশুটি যখন বেঁচেছিল তখন আমি আহার ত্যাগ করেছিলাম এবং কেঁদেছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম, ‘কে বলতে পারে? হয়তো প্রভু আমার প্রতি করুণা করবেন এবং শিশুটিকে বাঁচতে দেবেন।’ 23 কিন্তু এখন তো শিশুটি মৃত। তাই আমি কি আহার ত্যাগ করব? আমি কি শিশুটিকে আর ফিরে পাবো? না! একদিন আমি তার সঙ্গে মিলিত হব, কিন্তু সে আমার কাছে ফিরে আসতে পারে না।”

শলোমনের জন্ম হল

24 দায়ূদ তাঁর স্ত্রী বৎ‌শেবাকে সান্ত্বনা দিলেন। তিনি তাঁর সঙ্গে শুলেন এবং মিলিত হলেন। বৎ‌শেবা পুনর্বার গর্ভবতী হলেন। তাঁর আর একটি সন্তান হল। দায়ূদ তার নাম রাখলেন শলোমন। 25 প্রভু ভাববাদী নাথনের মারফৎ তাঁর বার্তা পাঠালেন। নাথন শলোমনের নাম রাখলেন যিদীদীয়। প্রভুর জন্যেই নাথন এই কাজ করলেন।

দায়ূদ রব্বা অধিকার করলেন

26 রব্বা অম্মোনদের রাজধানী শহর ছিল। যোয়াব রব্বার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তা দখল করেন। 27 যোয়াব দায়ূদের কাছে বার্তাবাহক পাঠালেন এবং বললেন, “আমি রব্বার জলের শহরটি যুদ্ধ করে জয় করেছি। 28 এখন অন্যান্য লোকদের পাঠিয়ে এই শহর আক্রমণ করুন। আমি অধিকার করবার আগেই আপনাকে এই শহর দখল করতে হবে। যদি আমি এই শহর দখল করি তবে এই শহর আমার নামে পরিচিত হবে।”

29 তখন দায়ূদ সব লোকদের একসঙ্গে জড়ো করলেন এবং রব্বার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তিনি রব্বার বিরুদ্ধে লড়াই করলেন এবং রব্বা শহর দখল করলেন। 30 দায়ূদ তাদের রাজার মাথা[c] থেকে মুকুট কেড়ে নিলেন। মুকুটটিতে প্রায় 75 পাউণ্ড সোনা ছিল। মুকুটটিতে অনেক মূল্যবান মনিমুক্তো ছিল। তারা সেই মুকুট দায়ূদের মাথায় পরিয়ে দিল। সেই শহর থেকে দায়ূদ অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে এসেছিলেন।

31 দায়ূদ রব্বার লোকদেরও বার করে আনেন এবং তাদের দিয়ে করাত, গাঁইতি ও কুড়ুল দিয়ে কাজ করিয়েছিলেন। তিনি তাদের ইঁট দিয়ে গাঁথুনির কাজ করতে বাধ্য করেছিলেন। অম্মোনদের শহরগুলোর সকলের সঙ্গে দায়ূদ এই একই রকম কাজ করেছিলেন। তারপর দায়ূদ এবং তাঁর সব সৈন্যসামন্ত জেরুশালেমে ফিরে গিয়েছিল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International