Beginning
শৌলের পরিবারে সমস্যা ঘনিয়ে এলো
4 শৌলের পুত্র ঈশ্ বোশত্ শুনলেন যে হিব্রোণে অব্নের মারা গেছেন। ঈশ্বোশৎ এবং তাঁর লোকরা ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। 2 দুজন লোক শৌলের পুত্র ঈশ্বোশতের সঙ্গে দেখা করতে গেল। ঐ দুজন লোক সৈন্যবাহিনীর প্রধান ছিল। তারা ছিল বেরোতীয় রিম্মোণের পুত্র রেখব এবং বানা। (এরা ছিল বিন্যামীনীয় যেহেতু বেরোত শহর বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর ছিল। 3 কিন্তু বেরোতের সব লোক গিত্তয়িমে পালিয়ে গিয়েছিল এবং এখনও পর্যন্ত তারা সেখানেই বসবাস করছে।)
4 শৌলের পুত্র যোনাথনের মফীবোশৎ নামে একটি পুত্র ছিল। শৌল এবং যোনাথন নিহত হয়েছেন এই খবর যখন যিষ্রিয়েল থেকে এল তখন মফীবোশতের বয়স পাঁচ বছর। মফীবোশৎকে যে মহিলা দেখাশোনা করতো এই সংবাদে সে অত্যন্ত ভীত হল এবং শত্রুরা আসছে এই ভেবে সে মফীবোশতকে নিয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু দৌড়ে পালাবার সময়, সে ছেলেটিকে ফেলে দিল, তাই তার দুটো পা-ই পঙ্গু।
5 রিম্মোণের পুত্ররা রেখব ও বানা বিরোত থেকে দুপুর বেলায় ঈশ্বোশতের বাড়ী গিয়েছিল। প্রচণ্ড গরম ছিল বলে ঈশ্বোশৎ বিশ্রাম করছিলেন। 6-7 রেখব ও বানা এমন ভাবে বাড়ীতে এল যেন তারা কিছু গম নিতে এসেছে। ঈশ্বোশৎ শোয়ার ঘরে তাঁর বিছানায় শুয়েছিলেন। রেখব ও বানা ছুরি বিদ্ধ করে তাঁকে হত্যা করল। তারা তাঁর মাথা কেটে সঙ্গে নিয়ে নিল। এরপর সারারাত তারা যর্দন উপত্যকার মধ্য দিয়ে হাঁটল। 8 তারা হিব্রোণে এলো এবং মাথাটি দায়ূদকে দিল।
রেখব এবং বানা রাজা দায়ূদকে বলল, “এই যে আপনার শত্রু শৌলের পুত্র ঈশ্বোশতের মাথা। সে আপনাকে হত্যার চেষ্টা করছিল। আপনার জন্য, শৌল এবং তার পরিবারকে প্রভু আজ শাস্তি দিলেন।”
9 কিন্তু দায়ূদ রেখব এবং তার ভাই বানাকে বললেন, “এ কথা জীবিত প্রভুর মতই সত্য যে তিনি সব সমস্যা থেকে আমাকে রক্ষা করেছেন। 10 এর আগে একবার এক ব্যক্তি ভেবেছিল সে আমার কাছে সুসংবাদ আনবে। সে বলেছিল, ‘দেখুন শৌল মারা গেছে।’ সে ভেবেছিল যে আমার কাছে এই খবর আনার জন্য আমি তাকে পুরস্কার দেব। কিন্তু আমি এই লোকটিকে ধরে ফেলেছিলাম এবং তাকে সিক্লগে হত্যা করি। 11 সেই মত আমি তোমাদের হত্যা করে এই দেশ থেকে সরিয়ে দেব। কেন? কারণ একজন সৎ লোককে তার বাড়ীতে, তার বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায়, তোমরা মন্দ লোকরা হত্যা করেছ।”
12 তখন দায়ূদ রেখব ও বানাকে হত্যা করার জন্য তরুণ সেনাদের আদেশ দিলেন। সেনারা রেখব ও বানার হাত পা কেটে নিল এবং হিব্রোণের একটি পুকুরের পাড়ে তাদের দেহ ঝুলিয়ে দিল। তারপর তারা ঈশ্বোশতের মাথাটি নিয়ে হিব্রোণে ঠিক সেখানেই কবর দিল যেখানে অব্নেরকে কবর দেওয়া হয়েছিল।
ইস্রায়েলীয়রা দায়ূদকে রাজা মনোনীত করল
5 তারপর ইস্রায়েলের সব কটি পরিবারগোষ্ঠী হিব্রোণে দায়ূদের কাছে এল এবং তারা তাঁকে বলল, “দেখুন, আমরা একই পরিবারভুক্ত।[a] 2 এমন কি শৌল যখন আমাদের রাজা ছিলেন, তখনও যুদ্ধে আপনি আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আপনিই ইস্রায়েলকে যুদ্ধ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। এমনকি প্রভু স্বয়ং আপনাকে বলেছেন ‘তুমিই আমার প্রজা সকলের মেষপালক হবে। তুমিই ইস্রায়েলের শাসনকর্তা হবে।’”
3 তাই ইস্রায়েলের নেতারা রাজা দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে হিব্রোণে এলেন। রাজা দায়ূদ প্রভুর সামনে, সেই নেতাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করলেন। তারপর ঐ নেতারা দায়ূদকে ইস্রায়েলের রাজারূপে অভিষিক্ত করলেন।
4 দায়ূদের যখন 30 বছর বয়স তখন তিনি শাসনকার্য শুরু করেন এবং 40 বছর ধরে তিনি রাজা হিসেবে বহাল ছিলেন। 5 হিব্রোণে তিনি 7 বছর 6 মাস ধরে যিহূদা শাসন করেন এবং জেরুশালেমে থাকার সময় ইস্রায়েল ও যিহূদাকে 33 বছর শাসন করেন।
দায়ূদ জেরুশালেম শহর জয় করলেন
6 রাজা দায়ূদ এবং তাঁর অনুচররা, জেরুশালেমে বসবাসকারী যিবূষীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলেন। যিবূষীয়রা দায়ূদকে বলল, “তুমি এই শহরে ঢুকতেই পারবে না।[b] আমাদের অন্ধ ও পঙ্গু লোকরাই তোমাকে আটকে দেবে।” (তারা এই কথা বলেছিল কারণ তারা ভেবেছিল দায়ূদ তাদের শহরে ঢুকতে পারবেন না। 7 কিন্তু দায়ূদ সিয়োন দুর্গ দখল করলেন। এই দুর্গটি দায়ূদের শহর হল।)
8 সেইদিন দায়ূদ তাঁর সঙ্গীদের বললেন, “যদি তোমরা যিবুষীয়দের হারাতে চাও তবে জলের সুড়ঙ্গ[c] পথ দিয়ে সেই সব ‘পঙ্গু ও অন্ধ’ শত্রুদের কাছে পৌঁছে যাও।” এই জন্য লোকে বলে, “অন্ধ ও পঙ্গুরা মন্দিরে ঢুকতে পারে না।”
9 দায়ূদ সেই দুর্গে বাস করতে লাগলেন এবং সেই শহরকে “দায়ূদের শহর” বললেন। দায়ূদ মিল্লো নামে একটি অঞ্চল নির্মাণ করলেন। তিনি শহরের মধ্যে আরও অনেক বাড়ী তৈরী করলেন। 10 দায়ূদ ক্রমশঃই শক্তিশালী হয়ে উঠলেন কারণ সর্বশক্তিমান প্রভু তার সঙ্গে ছিলেন।
11 সোরের রাজা হীরম দায়ূদের কাছে বার্তাবাহক পাঠালেন। হীরম এরস গাছসমূহ, ছুতোর মিস্ত্রীগণ এবং পাথর দিয়ে বাড়ী তৈরীর মিস্ত্রীও পাঠালেন। তারা দায়ূদের জন্য একটা বাড়ী তৈরী করল। 12 তখন দায়ূদ বুঝতে পারলেন, যে প্রভু সত্যিসত্যিই তাঁকে ইস্রায়েলের রাজা করেছেন এবং তাঁর রাজ্যকে (দায়ূদের রাজ্যকে), তাঁর লোকদের, ইস্রায়েলীয়দের জন্য উন্নীত করেছেন।
13 দায়ূদ হিব্রোণ থেকে জেরুশালেমে এলেন। জেরুশালেমে এসে দায়ূদ আরও স্ত্রী এবং দাসী পেলেন। জেরুশালেমে দায়ূদের আরও সন্তানাদি হল। 14 জেরুশালেমে দায়ূদের যে সব পুত্র জন্মেছিল তাদের নাম: সম্মূয়, শোবব, নাথন, শলোমন, 15 যিভর ইলীশূয়, নেফগ, যাফিয়, 16 ইলিয়াদা, ইলীশামা এবং ইলীফেলট।
দায়ূদ পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেন
17 পলেষ্টীয়রা শুনল যে ইস্রায়েলীয়রা দায়ূদকে তাদের রাজারূপে অভিষিক্ত করেছে। সেইজন্য পলেষ্টীয়রা দায়ূদকে হত্যা করবার জন্য খুঁজে বেড়াতে লাগল। দায়ূদ তা জানতে পেরে জেরুশালেমের দুর্গের মধ্যে চলে গেলেন। 18 পলেষ্টীয়রা এসে রফায়ীম উপত্যকায় তাঁবু গাড়লো।
19 দায়ূদ প্রভুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাব? পলেষ্টীয়দের হারাতে আপনি কি আমায় সাহায্য করবেন?”
প্রভু দায়ূদকে উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, পলেষ্টীয়দের হারাতে আমি নিশ্চয়ই তোমাকে সাহায্য করব।”
20 তখন দায়ূদ বাল পরাসীমে গিয়ে সেই জায়গায় পলেষ্টীয়দের পরাজিত করলেন। দায়ূদ বললেন, “প্রভু আমার শত্রুদের ঠিক তেমনভাবেই ভেদ করলেন যেমন ভাবে বন্যার জল একটি বাঁধের মধ্যে দিয়ে সবলে পথ করে বেরিয়ে যায়।” এই কারণে দায়ূদ এই জায়গার নাম “বাল পরাসীম” রাখলেন। 21 পলেষ্টীয়রা বাল্-পরাসীমে তাদের দেবতাদের মূর্ত্তি ফেলে গিয়েছিল। দায়ূদ এবং তাঁর লোকরা সেইসব মূর্ত্তি নিয়ে গেলেন।
22 পলেষ্টীয়রা আবার এসে রফায়ীম উপত্যকায় তাঁবু গেড়ে বসল।
23 দায়ূদ প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন। এবারে প্রভু দায়ূদকে বললেন, “ওখানে যেও না। তুমি ওদের সৈন্যবাহিনীর পিছন দিকে যাও। তুমি বালসাম গাছের উল্টো দিক থেকে ওদের আক্রমণ কর। 24 বালসাম গাছগুলোর ওপর থেকে তোমরা পলেষ্টীয়দের যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাবার কুচকাওয়াজের শব্দ শুনতে পাবে। সেই সময় তোমরা তাড়াতাড়ি করবে, কারণ সেই সময় তোমাদের জন্য পলেষ্টীয়দের পরাজিত করতে প্রভু তোমাদের সামনে সামনে যাবেন।”
25 প্রভু যা যা করার আদেশ দিলেন, দায়ূদ সেইমত করলেন এবং তিনি পলেষ্টীয়দের হারিয়ে দিলেন। তিনি গেবা থেকে গেষর পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের তাড়া করতে করতে এবং হত্যা করতে করতে গেলেন।
ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক জেরুশালেমে নিয়ে যাওয়া হল
6 দায়ূদ তার মনোনীত সৈন্যদের আবার ইস্রায়েলে জড় করলেন। তাদের সংখ্যা ছিল 30,000। 2 তারপর দায়ূদ এবং তাঁর সৈন্যরা যিহূদার বালাতে গেলেন। এরপর তারা ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুককে যিহূদার বালা থেকে জেরুশালেমে নিয়ে এলেন। লোকরা প্রভুর উপাসনার জন্য পবিত্র সিন্দুকের কাছে যেত। পবিত্র সিন্দুকটি প্রভুর সিংহাসনস্বরূপ। এর মাথায় করূবদূতদের মূর্ত্তিগুলি আছে। প্রভু এই দূতদের মাঝখানে রাজার মত বসেন। 3 দায়ূদের লোকরা পবিত্র সিন্দুকটিকে পাহাড়ের উপরিস্থিত অবীনাদবের বাড়ী থেকে বার করে নিয়ে এল। ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুকটিকে তারা একটি নতুন শকটে রাখল। অবীনাদবের দুই পুত্র উষ এবং অহিয়ো সেই শকট চালিয়েছিল।
4 এইভাবে তারা পবিত্র সিন্দুক পাহাড়ের ওপরে অবীনাদবের বাড়ী থেকে বার করে নিয়ে এসেছিল। উষ পবিত্র সিন্দুকের সঙ্গে সেই শকটে ছিল এবং অহিয়ো পবিত্র সিন্দুকের সামনে সামনে হাঁটছিল। 5 দায়ূদ এবং সব ইস্রায়েলীয়, প্রভুর সামনে নাচছিল এবং নানা বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছিল। এদের মধ্যে বীণা, ঢাকঢোল, খঞ্জনী, ঝাঁঝ করতাল এবং দেবদারু কাঠের বাদ্যয়ন্ত্রাদি ছিল। 6 দায়ূদের লোকরা যখন নাখোনের শস্য মাড়াইয়ের উঠানের কাছে এল, তখন গরুগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ল এবং ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক শকট থেকে পড়ে যাবার উপক্রম হল। উষ পবিত্র সিন্দুকটি ধরে ফেলল। 7 কিন্তু প্রভু উষের প্রতি ক্রুদ্ধ হলেন এবং তাকে হত্যা করলেন।[d] উষ যখন পবিত্র সিন্দুক ছুঁয়েছিলো তখন সে পবিত্র সিন্দুকের প্রতি যথোচিত সম্মান দেখায় নি। ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুকের পাশে উষ মারা গেল। 8 প্রভু উষকে মেরে ফেলেছিলেন বলে দায়ূদ ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। দায়ূদ সেই জায়গার নাম রাখলেন “পেরস উষ।” সেই জায়গাকে আজও পেরস উষ বলা হয়।
9 দায়ূদ সেইদিন প্রভুকে ভীষণ ভয় পেয়েছিলেন। দায়ূদ বললেন, “এখন আমি কি করে ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক এখানে নিয়ে আসব?” 10 দায়ূদ পবিত্র সিন্দুকটিকে জেরুশালেমে নিয়ে গেলেন না। দায়ূদ পবিত্র সিন্দুকটিকে গাত থেকে ওবেদ ইদোমের বাড়ীতে রাখলেন। দায়ূদ পবিত্র সিন্দুককে গাতীয় ওবেদ ইদোমের বাড়ীতে নিয়ে এলেন। 11 ওবেদ ইদোমের বাড়ীতে প্রভুর পবিত্র সিন্দুক তিন মাস ছিল। প্রভু ওবেদ ইদোম এবং তার পরিবারের সকলকে আশীর্বাদ করলেন।
12 পরে লোকরা দায়ূদকে বলল, “প্রভু ওবেদ ইদোমের পরিবার এবং তার সব কিছুকেই আশীর্বাদ ধন্য করেছেন। কারণ পবিত্র সিন্দুকটি তার বাড়ীতে ছিল।” তখন দায়ূদ সেখানে গিয়ে ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক নিয়ে এলেন। সেই দিন দায়ূদ প্রচণ্ড আনন্দিত ও উত্তেজিত ছিলেন। 13 যারা প্রভুর পবিত্র সিন্দুক বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা ছ-পা এগিয়ে গিয়ে থেমে গেল, তখন দায়ূদ একটি ষাঁড় ও স্বাস্থ্যবান বাছুরকে বলি দিলেন। 14 দায়ূদ প্রভুর সামনে তাঁর সর্বশক্তি দিয়ে নাচছিলেন। তিনি একটি রেশমের এফোদ পরেছিলেন।
15 দায়ূদ এবং সব ইস্রায়েলীয় সেদিন আনন্দে উত্তেজিত ছিলেন। তারা চিৎকার করতে করতে এবং শিঙা বাজাতে বাজাতে প্রভুর পবিত্র সিন্দুক শহরে এনেছিল। 16 শৌলের কন্যা মীখল জানালা দিয়ে তা দেখছিলেন। যখন প্রভুর পবিত্র সিন্দুক শহরে আনা হচ্ছিল তখন দায়ূদ প্রভুর সামনে লাফাচ্ছিলেন ও নাচছিলেন। তা দেখে মীখল দায়ূদের প্রতি বিরক্ত হলেন। তিনি ভাবলেন দায়ূদ বোকার মত আচরণ করছেন।
17 পবিত্র সিন্দুকের জন্য দায়ূদ একটা তাঁবু ফেললেন। ইস্রায়েলীয়রা প্রভুর পবিত্র সিন্দুককে তাঁবুর মধ্যে রাখল। তারপর দায়ূদ প্রভুর সামনে হোমবলি এবং মঙ্গল নৈবেদ্য নিবেদন করলেন।
18 হোমবলি এবং মঙ্গল নৈবেদ্য নিবেদন শেষ করে দায়ূদ সকলকে সর্বশক্তিমান প্রভুর নামে আশীর্বাদ করলেন। 19 তারপর তিনি ইস্রায়েলের প্রত্যেক মহিলা এবং পুরুষকে একটা গোটা রুটি, কিস্মিসের পিঠে এবং খেজুর পিঠে বিতরণ করলেন। তারপর সকলে বাড়ী ফিরে গেল।
মীখল দায়ূদকে তিরস্কার করলেন
20 এরপর দায়ূদ বাড়ীর সকলকে আশীর্বাদ করতে গেলেন। শৌলের কন্যা মীখল তাঁর সামনে বেরিয়ে এলেন। মীখল বললেন, “ইস্রায়েলের রাজা আজ নিজের প্রতি যথোচিত সম্মান দেখান নি। আপনি আপনার দাসীদের সামনেই নিজের পোশাক খুলে ফেলেছেন। আপনি সেই বোকাদের মত আচরণ করলেন যারা নির্লজ্জভাবে নিজের পোশাক খুলে ফেলে।”
21 তখন দায়ূদ মীখলকে বললেন, “প্রভু স্বয়ং আমাকে মনোনীত করেছেন, তোমার পিতাকে বা তাঁর পরিবারের কোন ব্যক্তিকে নয়। প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের জন্য আমাকে নেতারূপে মনোনীত করেছেন। তাই আমি তাঁর সামনে নাচ করব এবং উৎসব পালন করব। 22 আমি এমন কাজও করব যা আরও বিড়ম্বনাদায়ক। হতে পারে তুমি আমায় সম্মান করবে না। কিন্তু যে মেয়েদের কথা তুমি বলছ, তারা আমার সম্পর্কে গর্বিত।”
23 শৌলের কন্যা মীখলের কোন সন্তান ছিল না। তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেছেন।
দায়ূদ একটি মন্দির নির্মাণ করতে চান
7 রাজা দায়ূদ নতুন প্রাসাদে স্থানান্তরিত হবার পর, প্রভু তাঁকে তাঁর সব শত্রুর থেকে মুক্তি দিলেন। 2 রাজা দায়ূদ ভাববাদী নাথনকে বললেন, “দেখুন, আমি কাঠের একটা সুদৃশ্য ঘরে বাস করি, আর ঈশ্বরের পবিত্র সিন্দুক একটা তাঁবুর মধ্যে পড়ে রয়েছে। আমরা পবিত্র সিন্দুকটির জন্য একটা সুন্দর মন্দির নির্মাণ করব।”
3 নাথন রাজা দায়ূদকে বললেন, “আপনার যেমন মনে হয় তেমন করুন। প্রভু সর্বদা আপনার সঙ্গে থাকবেন।”
4 কিন্তু সেই রাতে, নাথন প্রভুর কাছ থেকে বার্তা পেলেন।
5 প্রভু বললেন, “যাও। আমার দাস দায়ূদকে বল, ‘প্রভু বলেছেন; তুমি আমার থাকার জন্য মন্দির তৈরী করবার লোক নও। 6 ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে আনার সময় আমি মন্দিরে ছিলাম না। না, আমি তাঁবুতে ঘুরেছি। তাঁবুকেই আমি গৃহ হিসাবে ব্যবহার করেছি। 7 আমি আমার থাকার জন্য, ইস্রায়েলের কোন পরিবারগোষ্ঠীকেই এরস কাঠের সুদৃশ্য ঘর তৈরী করতে বলি নি।’
8 “তুমি অবশ্যই আমার দাস দায়ূদকে বলবে: ‘সর্বশক্তিমান প্রভু বলেন: যখন তুমি চারণভূমিতে মেষদের দেখাশুনা করছিলে তখন আমি তোমায় মনোনীত করেছি। সেখান থেকে তুলে এনে, আমি তোমাকে আমার সন্তান ইস্রায়েলীয়দের রাজা করেছি। 9 যেখানে যেখানে তুমি গিয়েছিলে, আমি সবসময় তোমার সঙ্গে ছিলাম। তোমার জন্য আমি তোমার শত্রুদের পরাজিত করেছি। আমি তোমাকে পৃথিবীর বিখ্যাত লোকদের একজন তৈরী করব। 10-11 আমি আমার লোক ইস্রায়েলীয়দের জন্য একটা জায়গা বেছে নিয়েছি। আমি ইস্রায়েলীয়দের প্রতিষ্ঠিত করেছি-আমি তাদের থাকার জন্য একটি জায়গা দিয়েছি। আমি সেরকম করেছি যাতে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় তাদের ঘুরতে না হয়। অতীতে ইস্রায়েলীয়দের পথ দেখানোর জন্য আমি বিচারকদের পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু মন্দ লোকরা তাদের বেশ অসুবিধায় ফেলেছিল। এখন আর তা হবে না। আমি তোমার সব শত্রু থেকে তোমাকে শান্তি দিলাম। আমি শপথ করছি, তোমার পরিবারকে আমি রাজার পরিবারে পরিণত করব।
12 “‘তোমার আয়ু শেষ হলে যখন তুমি মারা যাবে, তখন তোমার পূর্বপুরুষদের মধ্যে তোমাকে কবর দেওয়া হবে। তোমার একটি পুত্রকে আমি রাজারূপে নিযুক্ত করব এবং তার রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করে দেব। 13 সে আমার নামে একটা মন্দির তৈরী করবে এবং আমি তার রাজ্যকে চিরদিনের জন্য শক্তিশালী করব। 14 সে আমার পুত্র এবং আমি তার পিতা হব।[e] যখন সে পাপ করবে আমি অন্য লোকের মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেব। তারা আমার চাবুক হবে। 15 কিন্তু সে আমার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হবে না। আমি তার প্রতি সর্বদা দয়াময় থাকব। শৌলের থেকে আমি আমার প্রেম ও দয়া তুলে নিয়েছি। যখন আমি তোমার দিকে ফিরলাম, তখন আমি শৌলকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি। তোমার পরিবারের প্রতি আমি তা করবো না। 16 তোমার রাজপরিবার চিরকাল থাকবে। তোমার জন্য তোমার রাজত্ব চিরস্থায়ী হবে। তোমার সিংহাসন চিরদিন অটুট থাকবে।’”
17 নাথন দায়ূদকে এই দর্শনের কথা বললেন। ঈশ্বর যা যা বলেছেন দায়ূদকে তিনি সবই বললেন।
দায়ূদ ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন
18 তখন দায়ূদ প্রভুর সামনে গিয়ে বসলেন এবং বললেন,
“প্রভু আমার মনিব, কেন আমি আপনার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? কেনই বা আমার পরিবার এত গুরুত্বপূর্ণ? কেন আপনি আমাকে এত গুরুত্বপূর্ণ করলেন? 19 আমি আপনার দাস ছাড়া কিছুই নই। আপনি আমার প্রতি সদয় ছিলেন। কিন্তু আমার ভবিষ্যৎ পরিবারের সম্পর্কেও আপনি এই দয়ার কথাগুলি বলেছেন। প্রভু আমার প্রভু, এটাতো মানুষের বিধি নয়, তাই নয় কি? 20 আমি কিভাবে আপনার সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাব? প্রভু আমার প্রভু আপনি জানেন আমি একজন দাস। 21 এইসব বিস্ময়কর জিনিস আপনি করবেন কারণ আপনি বলেছেন আপনি তা করবেন, কারণ আপনি তা করতে চান। এবং আপনি স্থির করেছেন এইসব বিষয় আপনি আমাকে জানাবেন। 22 প্রভু, আমার প্রভু এইসব কারণে আপনি এত মহান! আপনার মত আর কেউ নেই। আপনি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই। আমরা তা জানি কারণ যে সব কাজ আপনি করেছেন, তা আমরা নিজেরাই শুনেছি।
23 “পৃথিবীতে আপনার লোক, ইস্রায়েলীয়দের মত অন্য কোন জাতি নেই। তারা বিশেষ লোক। তারা ক্রীতদাস ছিল। আপনি তাদের মিশর থেকে নিয়ে এসে মুক্ত করেছেন। আপনি তাদের আপনার সন্তান করে নিয়েছেন। আপনি ইস্রায়েলীয়দের জন্য অনেক বিস্ময়কর এবং মহৎ কাজ করেছেন। আপনার ভূখণ্ডের জন্য আপনি অনেক বিস্ময়কর কাজ করেছেন। 24 ইস্রায়েলের লোকদের আপনি চিরদিনের জন্য আপনার খুব কাছের সন্তান করে নিয়েছেন। হে প্রভু আপনি তাদের ঈশ্বর হয়েছেন।
25 “প্রভু ঈশ্বর, এখন আপনি আপনার দাস, আমার জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য কিছু করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। আপনি যা প্রতিজ্ঞা করেছেন এখন তা পালন করুন। আমার পরিবারকে চিরদিনের জন্য রাজপরিবার বানিয়ে দিন। 26 তারপর আপনার নাম চিরদিনের জন্য সম্মানিত হবে। লোকরা বলবে, ‘সর্বশক্তিমান প্রভু ঈশ্বর ইস্রায়েল শাসন করেছেন। আপনার দাস দায়ূদের পরিবার আপনার সেবায় অব্যাহতভাবে শক্তিশালী থাকুক।’
27 “হে সর্বশক্তিমান প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, আপনি আমার কাছে অনেক কিছু প্রকাশ করেছেন। আপনি বলেছেন, ‘আমি তোমার পরিবারকে মহান করব।’ সেইজন্য আমি, আপনার দাস, আপনার কাছে এই প্রার্থনা জানাতে মনস্থির করেছি। 28 প্রভু, আমার সদাপ্রভু, আপনিই ঈশ্বর। আপনি যা বলেন তা আমি বিশ্বাস করি। আপনি এও বলেছেন যে এইসব ভালো জিনিসগুলি আপনার এই দাসের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে। 29 এখন আমার পরিবারকে আশীর্বাদ করুন, তাদের আপনার সামনে এসে দাঁড়াতে দিন এবং চিরদিন আপনার সেবা করার সুযোগ করে দিন। প্রভু আমার, আপনি নিজের মুখেই এসব কথা বলেছেন। আপনি আমার পরিবারকে অনন্তকালীন শুভেচ্ছা দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International