Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যাত্রা 10-12

পঙ্গপাল

10 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “ফরৌণের কাছে যাও, আমি তাকে ও তার কর্মচারীদের জেদী করে তুলেছি যাতে আমি আমার অলৌকিক শক্তি তাদের দেখাতে পারি। আমি এটা এই কারণেও করেছি যাতে তোমরা, তোমাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের আমি মিশরীয়দের বিরুদ্ধে কি কি করেছিলাম এবং মিশরে কেমন করে চিহ্ন-কার্যগুলি করেছিলাম তার সম্বন্ধে বলতে পারো। তাহলে তোমরা সবাই জানতে পারবে যে আমিই প্রভু।”

তাই মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গেল এবং বলল, “প্রভু, ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর বলেছেন, ‘তুমি আর কতদিন প্রভুকে অমান্য করবে? আমার লোকদের আমার উপাসনা করতে যেতে দাও। তুমি যদি আমার আদেশ অমান্য কর তবে আগামীকাল আমি তোমাদের এই দেশে পঙ্গপাল নিয়ে আসব। পঙ্গপালরা সারা দেশ ঢেকে ফেলবে, চারিদিকে এত পঙ্গপাল আসবে যে তোমরা মাটি দেখতে পাবে না। শিলাবৃষ্টির হাত থেকে যা কিছু বেঁচে গিয়েছে সেসব পঙ্গপালরা খেয়ে ফেলবে, মাঠের প্রত্যেকটি গাছের সমস্ত পাতা এই পঙ্গপালরা খেয়ে ফেলবে। তোমার সমস্ত ঘর, তোমার কর্মচারীদের ঘর এবং মিশরের সব ঘর পঙ্গপালে ভরে যাবে। এত পঙ্গপাল হবে যা তোমার পিতামাতা অথবা তোমার পিতামহরা কখনও দেখে নি। মিশরে জনবসতি গড়ে ওঠার সময় থেকে আজ পর্যন্ত এত পঙ্গপাল আর কখনও কেউ দেখে নি।’” তারপর মোশি পিছন ফিরে ফরৌণকে ছেড়ে চলে গেল।

এরপর ফরৌণের কর্মচারীরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “আর কতদিন আমরা এই লোকদের ফাঁদে পড়ে থাকব? এদের ঈশ্বর, প্রভুর উপাসনা করতে যেতে দিন, আপনি যদি তা না করেন তবে আপনার বোঝার আগেই মিশর ছারখার হয়ে যাবে।”

তখন ফরৌণ তাঁর কর্মচারীদের বললেন মোশি ও হারোণকে ফিরিয়ে আনতে। তারা এলে ফরৌণ তাদের বললেন, “যাও, তোমরা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের উপাসনা কর। কিন্তু আমাকে বলে যাও ঠিক কারা কারা যাচ্ছে?”

মোশি উত্তর দিল, “আমাদের সমস্ত লোক, যুবক ও বৃদ্ধ সকলেই যাবে। আমরা আমাদের পুত্রদের, কন্যাদের, মেষ, গবাদি পশু এবং প্রত্যেকটি জিনিস আমাদের সঙ্গে নিয়ে যাব। কারণ প্রভু আমাদের সকলকেই উৎসবে আমন্ত্রণ করেছেন।”

10 ফরৌণ তাদের বললেন, “আমি তোমাদের ও তোমাদের সন্তানদের মিশরে ছেড়ে যেতে দেওয়ার আগে প্রভুকে সত্যিই তোমাদের সঙ্গে থাকতে হবে! দেখ তোমাদের নিশ্চয়ই কোন কু-মতলব আছে। 11 শুধুমাত্র পুরুষরাই প্রভুর উপাসনা করতে পারবে কারণ প্রথমে তোমরা একথাই বলেছিলে। কিন্তু তোমাদের সব লোক যেতে পারবে না।” এরপর ফরৌণ মোশি ও হারোণকে বিদায় দিলেন।

12 প্রভু এবার মোশিকে বললেন, “তুমি মিশরের ওপর তোমার হাত মেলে দাও। তাতে পঙ্গপালরা আসবে। সারা মিশর পঙ্গপালে ভরে যাবে। শিলাবৃষ্টিতে যে সব গাছ নষ্ট হয় নি সেগুলি পঙ্গপাল খেয়ে ফেলবে।”

13 মোশি তার হাতের ছড়ি মিশরের ওপর তুলে ধরল। এবং প্রভু পূর্ব দিক থেকে এক প্রবল বাতাস পাঠালেন। সারা দিন সারা রাত ধরে সেই হাওয়া বয়ে গেল। এবং সকালবেলা সেই হাওয়ায় পঙ্গপালরা এসে মিশরে ঢুকে পড়ল। 14 পঙ্গপালরা উড়ে এসে মিশরের মাটিতে বসল। এত পঙ্গপাল ইতিপূর্বে কখনও মিশরে দেখা যায় নি আর বোধ হয় পরবর্তী কালেও কখনও দেখা যাবে না। 15 পঙ্গপালরা মাটি ঢেকে ফেলল এবং সারা দেশ অন্ধকার হয়ে গেল। শিলাবৃষ্টি যা ধ্বংস করে নি সে সমস্ত গাছ এবং গাছের ফল পঙ্গপাল খেয়ে ফেলল, মিশরের কোথাও কোনও গাছ বা লতা-পাতাও অবশিষ্ট রইল না।

16 ফরৌণ তাড়াতাড়ি মোশি ও হারোণকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, “আমি তোমাদের ও তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের কাছে পাপ করেছি। 17 এবারকার মতো আমার অপরাধ ক্ষমা করে দাও। তোমাদের প্রভুকে বল এই পঙ্গপালগুলোকে সরিয়ে নিতে।”

18 মোশি ফরৌণের কাছ থেকে চলে গেল এবং প্রভুর কাছে তার জন্য প্রার্থনা করল। 19 প্রভু হাওয়ার দিক পরিবর্তন করে পশ্চিম দিক থেকে বাতাস পাঠালেন, এই প্রবল হাওয়ায় সমস্ত পঙ্গপাল মিশর থেকে বেরিয়ে গিয়ে সূফ সাগরে পড়ল। মিশরে আর একটিও পঙ্গপাল রইল না। 20 কিন্তু প্রভু আবার ফরৌণকে জেদী করে তুললেন এবং ফরৌণ ইস্রায়েলের লোকদের যেতে দিলেন না।

অন্ধকার

21 তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার হাত উপরে আকাশের দিকে তুলে দাও যাতে সারা মিশর অন্ধকারে ঢেকে যায়। অন্ধকার এত গাঢ় হবে যে তোমরা তা অনুভব করতে পারবে।”

22 তাই মোশি আকাশের দিকে হাত তুলল, তখন কালো মেঘ এসে মিশরকে ঢেকে ফেলল। তিন দিন ধরে এই অন্ধকার রইল। 23 কেউ কাউকে দেখতে পেল না বা কেউ উঠে কোথাও যেতে পারল না। কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা যেখানে বাস করত সেখানে আলো ছিল।

24 আবার ফরৌণ মোশিকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, “যাও গিয়ে তোমাদের প্রভুর উপাসনা কর। তোমরা তোমাদের সন্তানদের নিয়ে যেতে পারবে কিন্তু গরু বা মেষের দল নিতে পারবে না, এখানে রেখে যাবে।”

25 মোশি বলল, “না, আমাদের প্রভু ঈশ্বরকে উৎসর্গ এবং হোমবলি দেওয়ার জন্য আপনাকে আমাদের পশুসমূহ দিতে হবে। 26 হ্যাঁ, এবং আমরা আমাদের পশুসমূহ প্রভুর উপাসনার জন্য নিয়ে যাব। আমরা একটা ক্ষুরও ফেলে যাব না। কারণ আমরা জানি না আমাদের প্রভু ঈশ্বরের উপাসনার জন্য ঠিক কি কি লাগবে। একথা আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে জানতে পারব। তাই আমরা এ সবকিছুই সঙ্গে নিয়ে যাব।”

27 প্রভু আবার ফরৌণকে জেদী করে তুললেন এবং ফরৌণ তাদের যেতে বাধা দিলেন। 28 ফরৌণ মোশিকে বললেন, “এখান থেকে দুর হয়ে যাও, আর কখনও যেন এখানে তোমাকে না দেখি, যদি তুমি এখানে আমার কাছে দেখা করতে আসো তবে তোমায় মরতে হবে।”

29 তখন মোশি বলল, “তুমি একটা কথা ঠিকই বলেছো, আমি আর কখনও তোমার কাছে আসব না।”

প্রথম জাতকের মৃত্যু

11 প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “মিশর এবং ফরৌণের বিরুদ্ধে আমি আরেকটি বিপর্যয় বয়ে আনব। তারপর, সে তোমাদের সবাইকে পাঠিয়ে দেবে। বস্তুত সে তোমাদের চলে যেতে বাধ্য করবে।[a] তুমি ইস্রায়েলের লোকদের এই বার্তা পাঠাবে: ‘নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে তোমরা নিজের নিজের প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সোনা ও রূপোর অলঙ্কার চাইবে। প্রভু মিশরীয়দের তোমাদের প্রতি দয়ালু করে তুলবেন। মিশরের লোকরা, এমনকি ফরৌণের কর্মচারীরা মোশিকে এক মহান ব্যক্তির মর্যাদা দেবে।’”

মোশি লোকদের জানাল, “প্রভু বলেছেন, ‘আজ মধ্যরাত নাগাদ আমি মিশরের মধ্যে দিয়ে যাব। এবং তার ফলে মিশরীয়দের সমস্ত প্রথমজাত পুত্ররা মারা যাবে। রাজা ফরৌণের প্রথমজাত পুত্র থেকে শুরু করে যাঁতাকলে শস্য পেষনকারিণী দাসীর প্রথমজাত পুত্র পর্যন্ত সবাই মারা যাবে। এমনকি পশুদেরও প্রথম শাবক মারা যাবে। তারপর সমস্ত মিশরে এমন জোরে কান্নার রোল উঠবে যা অতীতে কখনও হয় নি এবং যা ভবিষ্যতেও কখনও হবে না। কিন্তু ইস্রায়েলের লোকদের কোনরকম ক্ষতি হবে না। এমন কি কোনো কুকুর পর্যন্ত ইস্রায়েলীয়দের অথবা তাদের পশুদের দিকে ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করবে না।’ এর ফলে, তোমরা বুঝতে পারবে আমি মিশরীয়দের থেকে ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে কতখানি অন্যরকম আচরণ করি। তখন তোমাদের সমস্ত (মিশরীয় কর্মচারীরা) নতজানু হবে এবং আমার উপাসনা করবে। তারা বলবে, ‘তুমি তোমার সমস্ত লোককে তোমার সঙ্গে নিয়ে চলে যাও।’ তখন মোশি ক্রোধে ফরৌণকে ছেড়ে চলে গেল।”

প্রভু এরপর মোশিকে আরও বললেন যে, “ফরৌণ তোমার কথা শোনে নি। কেন শোনে নি? শোনে নি বলেই তো আমি মিশরের ওপর আমার মহাশক্তির প্রভাব দেখাতে পেরেছিলাম।” 10 মোশি ও হারোণ ফরৌণের কাছে গিয়েছিল এবং এই সমস্ত অলৌকিক কাজগুলো করেছিল। কিন্তু প্রভু ফরৌণের হৃদয়কে উদ্ধত করেছিলেন যাতে সে ইস্রায়েলীয়দের তার দেশ থেকে যেতে না দেয়।

নিস্তারপর্ব

12 মোশি ও হারোণ মিশরে থাকার সময় প্রভু তাদের বললেন, “এই মাস হবে তোমাদের জন্য বছরের প্রথম মাস। এই আদেশ সমস্ত ইস্রায়েলবাসীর জন্য: এই মাসের দশম দিনে প্রত্যেকে তার বাড়ীর জন্য একটি করে পশু জোগাড় করবে। পশুটি একটি মেষ অথবা একটি ছাগলও হতে পারে। যদি তার বাড়ীতে একটি গোটা পশুর মাংস খাওয়ার মতো যথেষ্ট লোক না থাকে তবে সে তার কিছু প্রতিবেশীকে মাংস ভাগ করে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করবে। প্রত্যেকের খাওয়ার জন্য যথেষ্ট মাংস থাকবে। পশুটিকে হতে হবে একটি এক বছরের পুংশাবক এবং সম্পূর্ণরূপে স্বাস্থ্যবান। মাসের চতুর্দশ দিন পর্যন্ত এই পশুটির ওপর তোমাদের নজর রাখতে হবে। সেই দিন ইস্রায়েলীয় মণ্ডলীর সমস্ত লোকরা এই পশুটিকে গোধুলি বেলায় হত্যা করবে। তোমরা এই প্রাণীর রক্ত সংগ্রহ করে, যে বাড়ীতে লোকরা ভোজ খাবে সেই বাড়ীর দরজার কাঠামোর ওপরে ও পাশে এই রক্ত লাগিয়ে দেবে।

“এই দিন রাতে তোমরা মেষটিকে পুড়িয়ে তার মাংস খাবে। তোমরা তেঁতো শাক ও খামিরবিহীন রুটিও খাবে। মেষটিকে কাঁচা অথবা জলে সিদ্ধ করা অবস্থায় তোমাদের খাওয়া উচিৎ‌ হবে না, কিন্তু আগুনের তাপে সেঁকবে। মেষশাবকটির মাথা, পা এবং ভিতরের অংশ সব কিছুই অক্ষুন্ন থাকবে। 10 তোমরা সব মাংস রাতের মধ্যেই খেয়ে শেষ করবে। যদি পরদিন সকালে কিছু অবশিষ্ট থাকে তবে তা পুড়িয়ে ফেলবে।

11 “যখন তোমরা আহার করবে তখন তোমরা যাত্রার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে থাকার পোশাকে থাকবে। তোমাদের পায়ে জুতো থাকবে, হাতে ছড়ি থাকবে এবং তোমরা তাড়াহুড়ো করে খাবে। কারণ এ হল প্রভুর নিস্তারপর্ব।

12 “আমি মিশরীয়দের প্রথমজাত শিশুগুলিকে এবং তাদের সমস্ত পশুর প্রথমজাত শাবকগুলিকে হত্যা করব। এইভাবে, আমি মিশরের সমস্ত দেবতাদের ওপর রায় দেব যাতে তারা জানতে পারে যে আমিই প্রভু। 13 কিন্তু তোমাদের দরজায় লাগানো রক্ত একটি বিশেষ চিহ্নের কাজ করবে। যখন আমি ঐ রক্ত দেখব তখন আমি তোমাদের বাড়ীগুলোর ওপর দিয়ে চলে যাব। আমি শুধু মিশরের লোকদের ক্ষতি করব। এইসব মারাত্মক রোগে তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না।

14 “তাই তোমরা সবসময় মনে রাখবে যে আজ তোমাদের একটি বিশেষ ছুটির দিন। তোমাদের উত্তরপুরুষরা এই ছুটির দিনের মাধ্যমে প্রভুকে সম্মান জানাবে। 15 এই ছুটিতে তোমরা সাতদিন ধরে খামিরবিহীন রুটি খাবে, ছুটির প্রথম দিনে তোমরা তোমাদের বাড়ী থেকে সমস্ত খামির সরিয়ে ফেলবে। এই ছুটিতে পুরো সাত দিন ধরে কেউ কোন খামির খাবে না। যদি কেউ সেটা খায় তবে সেই ব্যক্তিকে ইস্রায়েলীয়দের থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে। 16 এই ছুটির প্রথম ও শেষ দিনে পবিত্র সমাগম অনুষ্ঠিত হবে। তোমরা এই দিনগুলোতে কোন কাজ করবে না। তোমরা এই দিনগুলিতে একমাত্র তোমাদের আহারের জন্য খাদ্য তৈরী করতে পারবে। 17 তোমরা খামিরবিহীন রুটির উৎসবের কথা মনে রাখবে। কেন? কারণ এই দিন আমি তোমাদের সব লোককে দলে দলে মিশর থেকে বের করে এনেছিলাম, তাই তোমাদের সব উত্তরপুরুষ এই দিনটি স্মরণ করবে, এই নিয়ম চিরকাল থাকবে। 18 তাই প্রথম মাসের চতুর্দশ দিন বিকেলে তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাওয়া শুরু করবে। তোমরা ঐ রুটিটি ঐ মাসের একবিংশ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত খাবে। 19 সাতদিন ধরে তোমাদের ঘরে কোন খামির থাকবে না, যে কোন ব্যক্তি সে ইস্রায়েলের নাগরিক হোক্ বা বিদেশী যে এই সময় খামির খাবে তাকে ইস্রায়েলের বাকি লোকদের থেকে আলাদা করে দেওয়া হবে। 20 এই ছুটিতে তোমরা অবশ্যই খামির খাবে না, তোমরা যেখানেই থাক না কেন খামিরবিহীন রুটি খাবে।”

21 তাই মোশি ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত প্রবীণদের ডেকে বলল, “তোমাদের পরিবারের জন্য মেষশাবক জোগাড় কর এবং নিস্তারপর্বের জন্য মেষশাবকটিকে হত্যা কর। 22 এক আঁটি করে এসোব নিয়ে পাত্রে রাখা রক্তে ডুবিয়ে তা দিয়ে দরজার কাঠামোর ওপর ও পাশের দিক রঙ করো। সকালের আগে কেউ নিজের বাড়ী ত্যাগ করবে না। 23 এই সময়, প্রভু মিশরের ভেতর দিয়ে মিশরীয়দের হত্যা করতে যাবেন। যখন তিনি দরজার কাঠামোর পাশে ও ওপরে রক্তের প্রলেপ দেখবেন, তখন তিনি সেই দরজাগুলোর ওপর দিয়ে যাবেন। প্রভু ধ্বংসকারীকে তোমাদের বাড়ীতে এসে আঘাত করতে দেবেন না। 24 তোমরা অবশ্যই এই আদেশ মনে রাখবে, এই নিয়ম তোমাদের ও তোমাদের উত্তরপুরুষদের জন্য চিরকাল থাকবে। 25 যখন তোমরা প্রভুর প্রতিশ্রুতি মত তাঁর দেওয়া ভূখণ্ডে যাবে তখন তোমাদের এই জিনিসগুলি অবশ্যই মনে রাখতে হবে। 26 যখন তোমাদের সন্তানরা জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমরা কেন এই উৎসব করছি?’ 27 তখন তোমরা বলবে, ‘এই নিস্তারপর্ব প্রভুকে সম্মান জানাবার জন্য। কেন? কারণ যখন আমরা মিশরে ছিলাম তখন প্রভু আমাদের ইস্রায়েলবাসীদের বাড়ীগুলিকে নিস্তার দিয়েছিলেন। প্রভু মিশরীয়দের হত্যা করেছিলেন কিন্তু আমাদের লোকদের বাড়ীগুলো রক্ষা করেছিলেন।’”

সুতরাং লোকে নত হয়ে প্রভুর উপাসনা করল। 28 প্রভু মোশি ও হারোণকে এই আদেশ দিয়েছিলেন তাই ইস্রায়েলবাসী প্রভুর আদেশমতো কাজ করল।

29 মধ্যরাতে মিশরের সমস্ত প্রথম নবজাতক পুত্রদের প্রভু হত্যা করেছিলেন। ফরৌণের প্রথমজাত পুত্র থেকে জেলের বন্দীর প্রথমজাত পুত্র পর্যন্ত। সমস্ত পশুর প্রথমজাত শাবককেও হত্যা করা হল। 30 সেই রাতে মিশরের প্রত্যেক ঘরে কেউ না কেউ মারা গেল। ফরৌণ, তাঁর কর্মচারী ও মিশরের সমস্ত লোক উচ্চস্বরে কান্না শুরু করল।

ইস্রায়েলীয়দের মিশর ত্যাগ

31 তাই, সেই রাতে ফরৌণ মোশি ও হারোণকে ডেকে বললেন, “উঠে পড়, আমাদের সকলকে ছেড়ে দাও এবং চলে যাও। তুমি ও তোমার ইস্রায়েলের লোকরা যা ইচ্ছা তাই করতে পার। তোমরা যেমন বলেছিলে, গিয়ে প্রভুর উপাসনা কর। 32 তোমাদের চাহিদা মতো সমস্ত গরু ও মেষের দল তোমরা নিয়ে যেতে পারো। যাও! যখন তোমরা যাবে আমায় আশীর্বাদ করার জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করো।” 33 মিশরীয়রা তাদের তাড়াতাড়ি চলে যাবার জন্য মিনতি করল। কেন? কারণ তারা বলল, “তোমরা না চলে গেলে আমরা সকলে মারা যাব!”

34 ইস্রায়েলীয়রা তাদের রুটিতে খামির দেবার সময় পেল না। তারা ভিজে ময়দার তালের পাত্র কাপড়ে জড়িয়ে কাঁধে বয়ে নিয়ে চলল। 35 তারপর ইস্রায়েলের লোকরা মোশির কথামতো তাদের মিশরীয় প্রতিবেশীদের কাছে গিয়ে কাপড় ও সোনা রূপার তৈরী জিনিস চাইল।

36 প্রভু মিশরীয়দের ইস্রায়েলীয়দের প্রতি দয়ালু করে তুললেন যাতে মিশরীয়রা তাদের ধনসইদ ইস্রায়েলবাসীদের হাতে তুলে দেয়! এইভাবে, ইস্রায়েলীয়রা মিশরীয়দের লুন্ঠন করল।

37 ইস্রায়েলের লোকরা রামিষেষ থেকে সুক্কোতে যাত্রা করল। শিশুরা ছাড়াই সেখানে প্রায় 600,000 লোক ছিল। 38 সেখানে প্রচুর মেষ, গবাদি পশু এবং জিনিসপত্র ছিল। তাদের সঙ্গে অনেক অ-ইস্রায়েলীয় লোক গিয়েছিল। 39 যেহেতু তাদের মিশরের বাইরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল, সেই হেতু তারা মাখা ময়দায়়, যেটা তারা মিশর থেকে এনেছিল, খামির মেশাবার সময় পায়নি। এবং যাত্রার জন্য কোন বিশেষ খাবার প্রস্তুত করারও সময় হয় নি। তাই তারা খামিরবিহীন রুটিই সেঁকে নিয়েছিল।

40 ইস্রায়েলীয়বাসীরা 430 বছর ধরে মিশরে বাস করেছিল। 41 প্রভুর সৈন্যরা[b] 430 বছর পর সেই বিশেষ দিনে মিশর ত্যাগ করেছিল। 42 তাই সেটা ছিল একটি বিশেষ রাত্রি কারণ প্রভু তাদের মিশর থেকে বাইরে বার করে আনার জন্য লক্ষ্য রাখছিলেন। সেইভাবে, সমস্ত ইস্রায়েলবাসীরা প্রভুকে সম্মান জানানোর জন্য চিরকাল এই বিশেষ রাতটির প্রতি লক্ষ্য রাখবে।

43 প্রভু মোশি ও হারোণকে বললেন, “এই হল নিস্তারপর্বের বলির নিয়মাবলী: কোন বিদেশী এই নিস্তারপর্বে আহার করবে না। 44 কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি কোন দাস কেনে এবং তাকে সুন্নৎ করায় তাহলে সেই দাস নিস্তারপর্ব খেতে পারবে। 45 কিন্তু যে লোক তোমার দেশের একজন সাময়িক বাসিন্দা বা ভাড়া করা কর্মী তার নিস্তারপর্ব ভোজ খাওয়া উচিৎ‌ নয়। এই নিস্তারপর্ব শুধুমাত্র ইস্রায়েলের লোকদের জন্য।

46 “প্রত্যেক পরিবার একটি বাড়ীতেই আহার করবে। কোনও খাবার বাড়ীর বাইরে যাবে না, মেষ শাবকের কোন হাড় ভাঙ্গবে না। 47 সমস্ত ইস্রায়েল প্রজাতির মানুষ এই উৎসব পালন করবে। 48 যদি ইস্রায়েলীয় ছাড়া অন্য কোন উপজাতির লোক তোমাদের সঙ্গে থাকে এবং তোমাদের খাবারে ভাগ বসাতে চায় তবে তাকে এবং তার পরিবারের প্রত্যেক পুরুষকে সুন্নৎ করাতে হবে। তাহলে সে অন্যান্য ইস্রায়েলীয়দের সমকক্ষ হয়ে যাবে এবং তাদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেতে পারবে। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তির সুন্নৎ না করানো হয় তবে সে এই খাবার আহার করতে পারবে না। 49 এই নিয়ম সকলের জন্যই প্রযোজ্য। এই নিয়মটি ইস্রায়েলীয় অথবা অ-ইস্রায়েলীয় সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।”

50 তাই প্রভু মোশি ও হারোণকে যা আদেশ দিয়েছিলেন সমস্ত ইস্রায়েলের লোক তা পালন করল। 51 তাই সেই দিন প্রভু এইভাবে দলে দলে ইস্রায়েলবাসীদের মিশর দেশ থেকে বাইরে বার করে আনলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International