Beginning
ঈশ্বর ইস্রায়েলকে আশ্বাস দিলেন
46 ইস্রায়েল মিশর দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। প্রথমে তিনি বের্-শেবাতে গেলেন। সেখানে ইস্রায়েল তাঁর পিতা ইস্হাকের ঈশ্বরের উপাসনা করলেন এবং বলি দিলেন। 2 রাত্রে ঈশ্বর স্বপ্নে যাকোবের সঙ্গে কথা বললেন। ঈশ্বর বললেন, “যাকোব, যাকোব।”
ইস্রায়েল উত্তর দিলেন, “এই যে আমি।”
3 তখন ঈশ্বর বললেন, “আমি ঈশ্বর, তোমার পিতার ঈশ্বর! মিশরে যেতে ভয় করো না। মিশরে আমি তোমাকে এক মহাজাতিতে পরিণত করব। 4 আমি তোমার সঙ্গে মিশরে যাব আর তোমাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনব। তুমি মিশরে মারা যাবে কিন্তু যোষেফ তোমার সঙ্গে থাকবে। তুমি মারা গেলে যোষেফই তার নিজের হাত দিয়ে তোমার চোখ বুজিয়ে দেবে।”
ইস্রায়েল মিশরে গেলেন
5 তারপর যাকোব বের্-শেবা ছেড়ে মিশরের দিকে যাত্রা করলেন। ইস্রায়েলের পুত্ররা নিজেদের পিতা যাকোবকে এবং প্রত্যেকে নিজের পুত্র কন্যা ও স্ত্রীদের নিয়ে মিশরে চললেন। ফরৌণ যে মালবাহী গাড়ীগুলো পাঠিয়েছিলেন সেইগুলো করেই তাঁরা গেলেন। 6 তাঁরা তাঁদের পশুপাল এবং কনান দেশে তাঁদের যা যা ছিল সব নিয়ে চললেন। সুতরাং ইস্রায়েল মিশরে তাঁর সমস্ত সন্তান এবং তাদের পরিবার নিয়েই গেলেন। 7 তাঁর সঙ্গে ছিল তাঁর পুত্ররা এবং নাতিরা, তাঁর কন্যারা এবং নাতনিরা। সুতরাং তাঁর সমস্ত পরিবার তাঁর সাথে মিশরে গেলেন।
যাকোবের পরিবার
8 ইস্রায়েলের পুত্ররা এবং তাঁর বংশধররা যাঁরা তাঁর সঙ্গে মিশরে গিয়েছিলেন তাঁদের নামগুলি এই:
রূবেণ ছিলেন জ্যেষ্ঠ পুত্র। 9 রূবেণের পুত্ররা ছিলেন হনোক, পল্লু, হিষ্রোণ ও কর্মি।
10 শিমিয়োনের পুত্ররা ছিলেন যিমূয়েল, যামীন, ওহদ, যাখীন, সোহর আর এছাড়া শৌল। (শৌলের মা ছিলেন একজন কনানীয় স্ত্রীলোক।)
11 লেবীর পুত্ররা ছিলেন গের্শোন, কহাৎ ও মরারি।
12 যিহূদার পুত্ররা হলেন এর, ওনন, শেলা, পেরস ও সেরহ। (এর ও ওনন কনান দেশেই মারা গিয়েছিল।) পেরসের পুত্ররা হলেন হিষ্রোণ ও হামূল।
13 ইষাখরের পুত্ররা হলেন তোলয়, পুয, যোব ও শিম্রোণ। 14 সবূলূনের পুত্ররা হলেন সেরদ, এলোন ও যহলোল।
15 রূবেণ, শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর ও সবূলূন ছিলেন যাকোব ও লেয়ার সন্তানগণ। পদ্দম্-অরামে লেয়ার এই সন্তানরা জন্মেছিল। তার দীনা নামে একটি কন্যাও ছিল। তার পরিবারে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল 33 জন।
16 গাদের পুত্ররা ছিলেন সিফিয়োন, হগি, শূনী, ইষ্বোন, এরি, অরোদী ও অরেলী।
17 আশেরের পুত্ররা ছিলেন যিন্না, যিশ্বা, যিশবি, বরিয় এবং তাদের বোন সেরহ। বরিয়ের পুত্ররা অর্থাৎ হেবর ও মল্কীয়েলও ছিলেন।
18 যাকোবের এই পুত্ররা ছিলেন তাঁর স্ত্রী দাসী সিল্পার। (সিল্পাই সেই দাসী যাকে লাবন তাঁর কন্যা লেয়ার সাথে দিয়েছিলেন।) তাঁর পরিবারের মোট সদস্য ছিলেন 16 জন।
19 বিন্যামীনও যাকোবের সঙ্গে ছিলেন। বিন্যামীন ছিলেন যাকোব ও রাহেলের পুত্র। (যোষেফও রাহেলের পুত্র। কিন্তু যোষেফ ইতিমধ্যে মিশরে ছিলেন।)
20 মিশরে যোষেফের দুই পুত্র হয়। তাদের নাম মনঃশি ও ইফ্রয়িম। (যোষেফের স্ত্রীর নাম ছিল আসনৎ। তিনি ছিলেন ওন শহরের যাজক পোটীফরের কন্যা।)
21 বিন্যামীনের পুত্ররা হল বেলা, বেখর, অস্বেল, গেরা, নামন, এহী, রোশ, মুপ্পীম, হুপ্পীম ও অর্দ।
22 এঁরা ছিলেন যাকোব ও তার স্ত্রী রাহেলের সন্তান। পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা 14 জন।
23 দানের পুত্র ছিলেন হূশীম।
24 নপ্তালির পুত্র ছিলেন যহসিয়েল, গূনি, বেৎসর ও শিল্লেম।
25 এঁরা ছিলেন যাকোব ও বিল্হার সন্তান। (বিল্হা-ই সেই দাসী যাকে লাবন তাঁর কন্যা রাহেলের সাথে পাঠিয়েছিলেন।) এই পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল সাত।
26 সরাসরি যাকোব হতে উৎপন্ন উত্তরপুরুষদের মোট 66 জন তাঁর সঙ্গে মিশরে গিয়েছিলেন। (এই সংখ্যার মধ্যে যাকোবের পুত্রদের স্ত্রীদের গণনা করা হয় নি।) 27 আবার যোষেফেরও দুই সন্তান ছিলেন যাঁরা মিশরে জন্মেছিলেন। সুতরাং মিশরে যাকোবের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা হল 70 জন।
ইস্রায়েল মিশরে পৌঁছালেন
28 যোষেফের সঙ্গে কথা বলার জন্য যাকোব যিহূদাকে তাঁর আগে পাঠালেন। এর পরে যাকোব এবং তাঁর পুত্ররা গোশন প্রদেশে পৌঁছোলেন। যিহূদা গোশন প্রদেশে যোষেফের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। যাকোব এবং তাঁর পরিবারের লোকজন এরপর সেই প্রদেশে পৌঁছালেন। 29 যোষেফ যখন শুনলেন যে তাঁর পিতা আসছেন তখন তিনি রথ প্রস্তুত করে গোশন প্রদেশে তাঁর পিতা ইস্রায়েলের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। যোষেফ তাঁর পিতাকে দেখে গলা জড়িয়ে ধরে বহুক্ষণ কাঁদলেন।
30 তখন ইস্রায়েল যোষেফকে বললেন, “এখন আমি শান্তিতে মরতে পারব। আমি তোমার মুখ দেখলাম এবং জানলাম যে তুমি এখনও জীবিত।”
31 যোষেফ তাঁর ভাইদের এবং পিতার পরিবারের বাকীদের বললেন, “আমি ফরৌণকে বলতে যাচ্ছি যে তোমরা এখানে এসেছ। আমি ফরৌণকে বলব, ‘আমার ভাইরা এবং পিতার পরিবারের বাকী সবাই কনান দেশ ছেড়ে এখানে আমার কাছে এসেছেন। 32 পরিবারের সবাই মেষপালক। তারা সবসময়ই মেষপাল ও গো-পাল রেখে থাকে। তারা তাদের পশু ও আর যা কিছু তাদের ছিল সবই তাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।’ 33 ফরৌণ তোমাদের ডাকলে জিজ্ঞেস করবে, ‘তোমরা কি কাজ কর?’ 34 তোমরা তাকে বলবে, ‘আমরা মেষপালক। সারাজীবন ধরেই আমরা মেষ পালন করে আসছি। আমাদের আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা মেষপালক ছিলেন।’ ফরৌণ তোমাদের গোশন প্রদেশে থাকতে দেবেন। মিশরীয়রা মেষপালকদের পছন্দ করেন না, সেইজন্য তোমাদের গোশন প্রদেশে থাকাটাই ভাল হবে।”
ইস্রায়েল গোশনে বাস করতে লাগলেন
47 যোষেফ ফরৌণের কাছে গিয়ে বললেন, “আমার পিতা, আমার ভাইরা এবং তাঁদের পরিবারের সবাই এখানে এসেছেন। তাঁরা তাঁদের পশু ও সর্বস্ব নিয়ে কনান দেশ থেকে চলে এসেছেন। তাঁরা এখন গোশন প্রদেশে রয়েছেন।” 2 ফরৌণের সামনে যাবার জন্য ভাইদের মধ্যে পাঁচজনকে মনোনীত করলেন।
3 ফরৌণ ভাইদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কি কাজ কর?”
ভাইরা ফরৌণকে বলল, “মহাশয় আমরা মেষপালক। আর আমাদের আগে আমাদের পূর্বপুরুষরাও মেষপালক ছিলেন।”
4 তারা ফরৌণকে বলল, “কনান দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছে। তাই পশুদের খাবার ঘাসের অভাব হয়েছে। তাই আমরা এই দেশে বাস করব বলে এখানে এসেছি। দয়া করে আমাদের গোশন প্রদেশে থাকতে দিন।”
5 তখন ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “তোমার পিতা ও তোমার ভাইরা তোমার কাছে এসেছেন। 6 তাদের থাকবার জন্য তুমি মিশরে যে কোন জায়গা বেছে নিতে পারো। তোমার পিতা এবং তোমার ভাইদের সব চাইতে ভাল জমিটা দিও। তাদের গোশন প্রদেশে বাস করতে দাও। আর তারা যদি দক্ষ মেষপালক হয় তবে তারা আমার পশুপালেরও যত্ন নিতে পারে।”
7 তখন যোষেফ তাঁর পিতাকে ফরৌণের সঙ্গে দেখা করবার জন্য ডেকে আনলেন। যাকোব ফরৌণকে আশীর্বাদ করলেন। 8 ফরৌণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার বয়স কত?”
9 যাকোব ফরৌণকে বললেন, “আমার আয়ুর এই অল্প বয়সে আমাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি কেবল 130 বছর বয়স্ক। আমার পিতা এবং আমার পূর্বপুরুষরা আমার চাইতেও বেশী বয়স বেঁচেছিলেন।” 10 যাকোব ফরৌণকে আশীর্বাদ করলেন এবং তাঁর সামনে থেকে বিদায় নিলেন।
11 ফরৌণের কথামত যোষেফ তাঁর পিতা ও ভাইদের মিশরে জমিজমা দিলেন। রামিষেষ শহরের কাছে স্থিত সেই জমি মিশরের সব জমির চেয়ে সেরা ছিল। 12 আর যোষেফ তাঁর পিতা, তাঁর ভাইদের এবং তাঁর সমস্ত পরিজনদের তাঁদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করলেন।
যোষেফ ফরৌণের জন্য জমি কিনলেন
13 দুর্ভিক্ষ আরও ভয়াবহ হয়ে উঠল, ফলে দেশে কোথাও কোন খাদ্য রইল না। এই দারুণ দুর্ভিক্ষের জন্যে মিশর এবং কনান দেশ দরিদ্র হয়ে পড়ল। 14 দেশের লোকরা আরও শস্য কিনতে থাকল আর যোষেফ সেই অর্থ জমিয়ে ফরৌণের কাছে নিয়ে আসতেন। 15 কিছু পরে মিশরীয় এবং কনানীয়দের সব অর্থ শেষ হয়ে গেল। কারণ তারা সমস্ত অর্থই শস্য কিনতে ব্যয করেছিল। তাই মিশরীয়রা যোষেফের কাছে গিয়ে বলল, “আমাদের খাদ্য দিন। আমাদের অর্থ শেষ হয়ে গেছে। আমরা খেতে না পেলে আপনার চোখের সামনে মারা যাব।”
16 কিন্তু যোষেফ উত্তর দিলেন, “তোমাদের গো-পাল দাও, আমি তোমাদের খাবার দেব।” 17 এইভাবে খাদ্য কেনার জন্য লোকরা তাদের গো-পাল, ঘোড়া এবং অন্যান্য পশুর ব্যবহার করলেন। সেই বছরে যোষেফ পশুর বদলে তাদের খাদ্য দিলেন। 18 কিন্তু পরের বছরে লোকদের খাবার কেনার জন্য পশু এবং অন্য কিছু ছিল না। তাই লোকরা যোষেফের কাছে গিয়ে বলল, “আপনি জানেন আমাদের কাছে আর কোন অর্থ নেই। আর আমাদের সব পশুও এখন আপনারই। সুতরাং আপনি যা দেখছেন আমাদের সেই দেহ ও আমাদের জমি ছাড়া আমাদের কাছে আর কিছুই নেই। 19 সত্যিই আমরা আপনার চোখের সামনে মারা যাব। কিন্তু আপনি আমাদের খাদ্য দিলে আমরা ফরৌণকে আমাদের জমি দেব এবং আমরা তাঁর দাস হব। আমাদের বপন করার বীজ দিন। তাহলে আমরা মরব না। আর জমিতে আবার আমাদের জন্য শস্য হবে।”
20 তাই যোষেফ মিশরের সমস্ত জমি ফরৌণের জন্য কিনে নিলেন। লোকরা ক্ষুধার জন্য মিশরের সমস্ত জমি ফরৌণের কাছে বিক্রি করে দিল। 21 আর মিশরের সর্বত্র লোকরা ফরৌণের দাস হল। 22 যোষেফ কেবল যাজকদের জমি কিনলেন না। যাজকদের জমি বিক্রি করারও প্রয়োজন ছিল না। কারণ ফরৌণ তাদের কাজের জন্য পারিশ্রমিক দিতেন আর তারা সেই অর্থ দিয়ে খাদ্য কিনত। 23 যোষেফ লোকদের বললেন, “এখন আমি তোমাদের এবং তোমাদের জমি ফরৌণের জন্য কিনে নিয়েছি। তাই আমি এরপর তোমাদের জমিতে বপন করার বীজ দেব। আর তোমরা তা বপন করতে পার। 24 শস্য ছেদনের সময় তোমরা অবশ্যই উৎপন্ন শস্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফরৌণকে দেবে। বাকী পাঁচ ভাগের চার ভাগ শস্য তোমাদের হবে। তোমরা তোমাদের খাদ্যের জন্য সেই রাখা শস্যের বীজ পরের বছর বপন করার জন্য ব্যবহার করতে পারবে। আর তাতে তোমাদের পরিবার ও সন্তানদের জন্যও খাদ্য থাকবে।”
25 লোকরা বলল, “আপনি আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। আমরা ফরৌণের দাস হয়ে খুশী।”
26 তাই যোষেফ সেই সময় জমির ব্যাপারে আইন তৈরী করলেন। আর সেই আইন আজও বলবৎ রয়েছে। সেই আইন অনুযায়ী জমিতে উৎপন্ন সবকিছুর পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফরৌণের। যাজকদের জমি ছাড়া সমস্ত জমি ফরৌণের।
“মিশরে কবর নয়”
27 ইস্রায়েল মিশরের গোশন প্রদেশেই স্থায়ী হলেন। তাঁর পরিবার সংখ্যায় বৃদ্ধি পেল এবং বিশাল হয়ে উঠল। মিশর দেশে তাঁরা কিছু জমি পেলেন এবং সফল হলেন।
28 যাকোব মিশরে 17 বছর বেঁচে ছিলেন সুতরাং তাঁর বয়স হল 147 বছর। 29 সময় হল যখন ইস্রায়েল বুঝলেন যে তিনি শীঘ্রই মারা যাবেন। তাই তিনি তাঁর পুত্র যোষেফকে নিজের কাছে ডাকলেন। তিনি বললেন, “যদি তুমি আমায় ভালবাস তবে আমার উরুর নীচে হাত রাখ এবং প্রতিজ্ঞা কর যে তুমি তোমার কথায় বিশ্বস্ত হবে। আমি মারা গেলে আমায় মিশরে কবর দিও না। 30 যে জায়গায় আমার পূর্বপুরুষদের কবর দেওয়া হয়েছে সেখানেই আমায় কবর দিও। আমাকে মিশর থেকে বয়ে নিয়ে গিয়ে আমাদের পারিবারিক কবরে কবর দিও।”
যোষেফ উত্তর দিলেন, “আমি প্রতিজ্ঞা করছি আপনার কথা মতোই কাজ করব।”
31 তারপর যাকোব বললেন, “আমার কাছে দিব্য কর।” তখন ইস্রায়েল বিছানায় তাঁর মাথা নামিয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করলেন।[a]
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International