Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 35-37

যাকোব বৈথেলে

35 ঈশ্বর যাকোবকে বললেন, “বৈথেল শহরে যাও। সেখানে বাস কর আর উপাসনার জন্য একটা বেদী তৈরী কর। স্মরণ কর এলকে। তুমি যখন তোমার ভাই এষৌর কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলে তখন সেখানে এই ঈশ্বরই তোমায় দর্শন দিয়েছিলেন।” সেখানে তোমার ঈশ্বরের উপাসনার জন্য বেদী তৈরী কর।

তাই যাকোব তার পরিবার ও তার সমস্ত দাসকে বলল, “তোমাদের কাছে কাঠ ও ধাতুর যে সমস্ত পুতুল ঠাকুর রয়েছে তার সমস্তই ধ্বংস কর। নিজেদের পবিত্র কর এবং পরিষ্কার কাপড় পর। আমরা এই জায়গা ছেড়ে বৈথেলে যাব। সেখানেই আমি আমার ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে একটি বেদী তৈরী করব, এই ঈশ্বরই সঙ্কটের সময় আমায় সাহায্য করেছিলেন। আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানেই এই ঈশ্বর আমার সঙ্গে গিয়েছেন।”

সেইজন্য লোকরা বিদেশের সমস্ত ঠাকুরগুলোকে যাকোবের কাছে এনে দিল। তারা যাকোবকে তাদের কানের দুলগুলি এনে দিল। যাকোব এসব কিছু শিখিম শহরের কাছে একটা এলা গাছের তলায় পুঁতে রাখল।

যাকোব আর তার পুত্ররা সেই জায়গা পরিত্যাগ করল। সেই স্থানের লোকরা তাদের তাড়া করে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা ভীষণ ভয় পেয়ে যাকোবকে আর অনুসরণ করল না। এরপর যাকোব আর তার লোকরা লুসে গেল। লুসের বর্তমান নাম বৈথেল। এটি কনান দেশে অবস্থিত। যাকোব সেই জায়গায় একটি বেদী তৈরী করে তার নাম রাখল “এল্ বৈথেল।” যাকোব এই নাম বেছে নিল কারণ ভাইয়ের কাছ থেকে পালিয়ে যাবার সময় এইখানে ঈশ্বর তাঁর সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন।

রিবিকার দাই দবোরার সেখানেই মৃত্যু হল। তারা তাকে বৈথেলে একটা অলোন গাছের নীচে কবর দিল এবং সেই জায়গার নাম রাখল অলোন্ বাখুৎ‌‌।

যাকোবের নতুন নাম

পদ্দন্-অরাম থেকে যাকোব যখন ফিরে এল ঈশ্বর তাঁকে আবার দর্শন দিলেন এবং তাকে আশীর্বাদ করলেন। 10 ঈশ্বর যাকোবকে বললেন, “তোমার নাম যাকোব কিন্তু আমি তোমার অন্য নাম রাখব। এখন থেকে তোমাকে যাকোব বলে ডাকা হবে না, তোমার নাম হবে ইস্রায়েল।” তাই ঈশ্বর তার নাম রাখলেন ইস্রায়েল।

11 ঈশ্বর তাকে বললেন, “আমিই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর এবং আমি তোমায় এই আশীর্বাদ করছি। তোমার অনেক সন্তান-সন্ততি হোক্, এক মহাজাতি হয়ে বেড়ে ওঠো। তোমার থেকেই অন্য অনেক জাতি এবং রাজারা উৎপন্ন হবে। 12 আমি অব্রাহাম ও ইস‌্হাককে যে দেশ দিয়েছিলাম সেই দেশই এখন তোমায় দিচ্ছি। তোমার পরে তোমার বংশধরদের আমি সেই দেশ দেব।” 13 এরপর ঈশ্বর সেই জায়গা থেকে চলে গেলেন। 14-15 এই স্থানে যাকোব একটি স্মরণস্তম্ভ স্থাপন করল। সেই পাথরের উপরে দ্রাক্ষারস ও তেল ঢেলে যাকোব সেটা পবিত্র করল। এটা ছিল এক বিশেষ জায়গা কারণ এখানেই ঈশ্বর যাকোবের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এবং যাকোব এই জায়গার নাম রাখল বৈথেল।

রাহেল প্রসবের পর মারা গেলেন

16 যাকোব এবং তার দল বৈথেল ত্যাগ করল। তারা ইফ্রাতে পৌঁছাবার আগেই রাহেলের প্রসবের সময় এল। 17 কিন্তু এইবার প্রসবকালে রাহেলের ভীষণ কষ্ট হল, প্রসব বেদনা তীব্র হয়ে উঠল। রাহেলের ধাত্রী এই দেখে বললেন, “ভয় পেও না রাহেল! তুমি আরেকটি পুত্রের জন্ম দিতে চলেছ।”

18 রাহেল পুত্রটি প্রসব করার সময়ই মারা গেল। মারা যাবার আগে রাহেল পুত্রটির নাম রাখল বিনোনী। কিন্তু যাকোব তার নাম রাখল বিন্যামীন।

19 রাহেলকে ইফ্রাথ যাবার পথেই কবর দেওয়া হল। (ইফ্রাথই বৈৎ‌লেহম।) 20 রাহেলকে সম্মান জানাতে যাকোব তার কবরে একটি স্তম্ভ স্থাপন করল। সেই বিশেষ স্তম্ভটি আজও সেখানে রয়েছে। 21 এরপর ইস্রায়েল আবার তাঁর যাত্রা পথে চললেন। তিনি মিগ্দল এদর দক্ষিণে তাঁর তাঁবু খাটালেন।

22 ইস্রায়েল এই স্থানে অল্পকাল রইলেন। এই স্থানেই রূবেণ তার পিতার দাসী বিল্হার কাছে গেল এবং তার সাথে শয়ন করল। ইস্রায়েল এই খবর জানতে পেরে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন।

ইস্রায়েল পরিবার

যাকোবের 12টি পুত্র ছিল।

23 যাকোব এবং লেয়ার পুত্ররা হল: যাকোবের প্রথম জাত পুত্র রূবেণ, শিমিয়োন, লেবি, যিহূদা, ইষাখর ও সবূলূন।

24 যাকোব এবং রাহেলের পুত্ররা হল যোষেফ ও বিন্যামীন।

25 বিল্হা ছিলেন রাহেলের দাসী। যাকোব ও বিল্হার পুত্ররা হল দান এবং নপ্তালি।

26 সিল্পা ছিলেন লেয়ার দাসী। যাকোব এবং সিল্পার পুত্ররা হল গাদ ও আশের।

পদ্দন্-অরামে যাকোবের এই কটি পুত্রের জন্ম হয়।

27 যাকোব কিরিযথ অর্ব্বয় স্থিত মম্রি নামক স্থানে তার পিতা ইস‌্হাকের কাছে গেল। এই জায়গাতেই অব্রাহাম ও ইস‌্হাক বাস করতেন। 28 ইস‌্হাক 180 বৎস‌র বেঁচে ছিলেন। 29 এরপর ইস‌্হাক বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হয়ে মারা গেলেন। তাঁর দুই পুত্র এষৌ ও যাকোব তাঁর পিতাকে যে স্থানে কবর দেওয়া হয়েছিল সেইখানেই তাঁকে কবর দিল।

এষৌর পরিবার

36 এষৌর (ইদোম) বংশ বৃত্তান্ত এই। এষৌ কনান দেশের এক স্ত্রীলোককে বিয়ে করেন। এষৌর স্ত্রীরা ছিলেন: হিত্তীয়, এলোনের কন্যা আদা, অনার কন্যা অহলীবামা, অনা ছিলেন হিব্বীয় সিবিয়়োনের পৌত্রী। এবং ইশ্মায়েলের কন্যা বাসমৎ‌, বাসমতের বোনের নাম নবায়োত। এষৌ এবং আদার পুত্রের নাম ইলীফস। বাসমতের পুত্রের নাম ছিল রূয়েল। অহলীবামার তিনটি পুত্রের নাম যিয়ূশ, যালম ও কোরহ। এষৌর এই পুত্ররা কনান দেশে জন্মেছিলেন।

6-8 এষৌ এবং যাকোবের প্রচুর সম্পত্তি এবং বহু লোকজন হয়ে যাবার জন্য তাদের পক্ষে একসঙ্গে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠল। তাদের প্রচুর পশুপাল ছিল বলে সেই জমিটি, যেখানে তারা থাকত, তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারত না। তাই এষৌ তার ভাই যাকোবের কাছ থেকে চলে গেলেন। এষৌ তার স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, সমস্ত দাস-দাসী, গরু এবং অন্যান্য পশু এবং কনান দেশে তার আর যা কিছু ছিল সব নিয়ে পর্বতময় প্রদেশ সেয়ীরে চলে গেলেন। (এষৌ ইদোম নামেও পরিচিত এবং ইদোম সেয়ীর দেশের অপর নাম।)

এষৌ হলেন ইদোমীয়দের পূর্বপুরুষ। পার্বত্য সেয়ীর (ইদোম) প্রদেশে বসবাসকারী এষৌর পরিবারগোষ্ঠীর নামগুলি:

10 এষৌ এবং আদার পুত্র ইলীফস। এষৌ এবং বাসমতের পুত্র রূয়েল।

11 ইলীফসের পাঁচটি পুত্র ছিল: তৈমন, ওমার, সফো, গয়িতম ও কনস।

12 তিম্না নামে এষৌর একজন দাসীও ছিল। তিম্না ও ইলীফসের পুত্রের নাম অমালেক।

13 রূয়েলের চার পুত্রের নাম নহৎ, সেরহ, শল্ম ও মিসা।

এরা ছিল এষৌর স্ত্রী বাসমতের নাতি।

14 এষৌর তৃতীয় স্ত্রীর নাম ছিল অহলীবামা, ইনি ছিলেন অনার কন্যা। (অনা ছিলেন সিবিয়়োনের পুত্র।) এষৌ এবং অহলীবামার সন্তানরা হল: যিয়ূশ, বালম ও কোরহ।

15 এষৌ হতে উৎপন্ন পরিবারগোষ্ঠীগুলি হল নিম্নরূপ:

এষৌর প্রথম পুত্র ইলীফস থেকে উৎপন্ন তৈমন, ওমার, সফো, কনস, 16 কোরহ, গয়িতম ও অমালেক।

এই সমস্ত পরিবারগোষ্ঠী এষৌর স্ত্রী আদা থেকে উৎপন্ন।

17 এষৌর পুত্র রূয়েল ছিলেন নহৎ, সেরহ শল্ম ও মিসার পিতা।

এই সমস্ত পরিবারের মা ছিলেন এষৌর স্ত্রী বাসমৎ‌।

18 এষৌর স্ত্রী অহলীবামা, অনার কন্যা, যিয়ূশ, যালম ও কোরহের জন্ম দিলেন। ঐ তিনজন ছিলেন তাঁদের পরিবারের পিতা।

19 এষৌ হতে উৎপন্ন ঐ পুরুষরা প্রত্যেকে ছিলেন তাঁদের নিজ পরিবারগোষ্ঠীর নেতা।

20 হোরীয়় সেয়ীরের এই পুত্ররা সেই দেশে বাস করত।

এরা হল লোটন, শোবল, শিবিয়োন, অনা, 21 দিশোন, এৎ‌সর, ও দীশন। এই পুত্ররা ছিল ইদোম দেশে সেয়ীর হতে আসা হোরীয়় পরিবারের গোষ্ঠীর নেতাসকল।

22 লোটন ছিলেন হোরি এবং হেমনের পিতা। (তিম্না ছিলেন লোটনের বোন।)

23 শোবল ছিলেন অল্বন, মানহৎ, এবল, শফো ও ওনমের পিতা।

24 সিবিয়়োনের দুই পুত্র ছিল অয়া ও অনা। (অনাই সেই জন যিনি তাঁর পিতার গাধাদের চরাবার সময় মরুভূমিতে উষ্ণ প্রস্রবণ খুঁজে পেয়েছিলেন।)

25 অনা ছিলেন দিশোন ও অহলীবামার পিতা।

26 দিশোনের চার পুত্র ছিল। তাদের নাম: হিম্দন, ইশ্বন, যিত্রণ ও করাণ।

27 এৎসরের তিন পুত্র ছিল। তাদের নাম বিল্হন, সাবন ও আকন।

28 দীশনের দুই পুত্র ছিল। তাদের নাম উষ ও অরাণ।

29 হোরীয় পরিবারগুলির দলপতিদের নামগুলি এইরকম: লোটন, শোবল, সিবিয়োন, 30 অনা, দিশোন, এৎসর ও দীশোন। সেয়ীর দেশে যে পরিবারগুলি বাস করত, এই লোকরা ছিল তাদের দলপতিগণ।

31 সেই সময় ইদোমে রাজারা রাজত্ব করতেন। ইস্রায়েলে রাজ শাসন চালু হবার বহু পূর্বেই ইদোমে রাজারা রাজত্ব করতেন।

32 যিয়োরের পুত্র বেলা ইদোম দেশে রাজত্ব করেন, তার রাজধানীর নাম দিন্হাবা।

33 বেলার মৃত্যুর পর যোবব রাজা হলেন। যোবব ছিলেন বস্রা নিবাসী সেরহের পুত্র।

34 যোববের মৃত্যুর পর হূশম রাজত্ব করলেন। হূশম ছিলেন তৈমন দেশীয়।

35 হূশমের মৃত্যুর পর বেদদের পুত্র হদদ সেই নগর শাসন করলেন। (হদদই মোয়াব দেশে মিদিয়নদের পরাজিত করেছিলেন।) হদদ এসেছিলেন অবীৎ শহর থেকে।

36 হদদের মৃত্যুর পর সম্ল সেই দেশ শাসন করতে থাকেন। সম্ল এসেছিলেন মস্রেকা থেকে।

37 সম্লের মৃত্যুর পর শৌল সেই দেশ শাসন করতে থাকেন। শৌল এসেছিলেন ফরাৎ নদীর ধারে স্থির রহোবোৎ থেকে।

38 শৌলের মৃত্যুর পর বাল্হানন সেই দেশে রাজত্ব করেন। বাল্হানন ছিলেন অক্‌বোরের পুত্র।

39 বাল্হাননের মৃত্যুর পর হদর সেই দেশে রাজত্ব করেন। হদর ছিলেন পায়ু শহরের লোক। হদরের স্ত্রীর নাম মহেটবেল; ইনি ছিলেন মট্টেদের কন্যা। (মট্টেদের পিতার নাম মেষাহবের।)

40-43 এষৌ ছিলেন ইদোম পরিবারগুলির পিতা। ইদোম পরিবারগুলি হল:

তিম্ন, অল্বা, যিথেত্‌, অহলীবামা, এলা, পীনোন, কনস, তৈমন, মিব্মস, মগদীয়েল ও ঈরম। এই পরিবারগুলির নাম অনুসারেই তাদের বসতি স্থানের নাম হল।

স্বপ্নদর্শক যোষেফ

37 যাকোব কনান দেশেই বাস করতে লাগল। এই সেই দেশ যেখানে পূর্বে তার পিতা বাস করতেন। যাকোবের পরিবারের বৃত্তান্ত এইরকম।

যোষেফ তখন 17 বছর বয়স্ক যুবক। তাঁর কাজ ছিল মেষ ও ছাগলের তত্ত্বাবধান করা। যোষেফ এই কাজ করতেন তাঁর ভাইদের সঙ্গে অর্থাৎ‌ বিল্হা ও সিল্পার সন্তানদের সঙ্গে। (বিল্হা ও সিল্পা তাঁর সৎ‌ মা ছিলেন।) ভাইরা মন্দ কাজ করলে যোষেফ তা তাঁর পিতাকে এসে জানাতেন। যোষেফ ছিলেন ইস্রায়েলের বৃদ্ধাবস্থার সন্তান। এই জন্য ইস্রায়েল তাঁর অন্যান্য পুত্রদের চেয়ে যোষেফকেই বেশী ভালবাসতেন। যাকোব তাকে একটা বিশেষ জামা উপহার দিয়েছিল। জামাটি ছিল লম্বা এবং বেশ সুন্দর। যোষেফের ভাইরা দেখল যে তাদের পিতা তাদের চাইতে যোষেফকেই বেশী ভালবাসেন। এইজন্য তারা তাকে ঘৃণা করতে লাগল। তারা যোষেফের সাথে বন্ধুভাবে কথা বলতেও চাইল না।

একদিন যোষেফ একটা স্বপ্ন দেখলেন। পরে তিনি তাঁর ভাইদের সেই স্বপ্নটা বললেন। এরপর তাঁর ভাইরা তাঁকে আরও ঘৃণা করতে থাকল।

যোষেফ বললেন, “আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম আমরা সকলে ক্ষেতে কাজ করছি। আমরা সকলে গমের আঁটি বাঁধছিলাম, এমন সময় আমার আঁটিটা উঠে দাঁড়াল। আর আমার আঁটির চারপাশে গোল করে ঘিরে থাকা তোমাদের আঁটিগুলো একে একে আমারটিকে প্রণাম জানাল।”

তাঁর ভাইরা বলল, “তুমি কি মনে কর এর অর্থ তুমি আমাদের রাজা হয়ে আমাদের উপর রাজত্ব করবে?” তাঁর ভাইরা তাদের সম্বন্ধে দেখা এই স্বপ্নের জন্য তাঁকে আরও ঘৃণা করতে লাগল।

এরপর যোষেফ আরেকটি স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্ন সম্বন্ধে তাঁর ভাইদের বললেন, “আমি আরেকটি স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম সূর্য্য, চাঁদ এবং এগারোটি তারা আমাকে প্রণাম করছে।”

10 যোষেফ তাঁর পিতাকেও এই স্বপ্নটি সম্বন্ধে বললেন। কিন্তু তাঁর পিতা এর সমালোচনা করে বললেন, “এ কি ধরণের স্বপ্ন? তুমি কি বিশ্বাস কর যে তোমার মা, তোমার ভাইরা, এমনকি আমিও তোমায় প্রণাম করব?” 11 যোষেফের ভাইরা তাঁকে ঈর্ষা করত। কিন্তু যোষেফের পিতা সেসব মনে রাখলেন আর ভেবে অবাক হলেন যে এর অর্থ কি হতে পারে।

12 একদিন যোষেফের ভাইরা শিখিমে গেল তাদের পিতার মেষ চরাতে। 13 যাকোব যোষেফকে বলল, “শিখিমে যাও। সেখানে তোমার ভাইরা আমার মেষ চরাচ্ছে।”

যোষেফ উত্তর করলেন, “আমি যাবো।”

14 যোষেফের পিতা বললেন, “যাও গিয়ে দেখ তোমার ভাইরা নিরাপদে আছে কিনা। তারপর ফিরে এসে আমাদের জানিও মেষদের অবস্থা কেমন।” এইভাবে যোষেফের পিতা তাকে হিব্রোণ উপত্যকা থেকে শিখিমে পাঠালেন। 15 শিখিমে যোষেফ পথ হারালে একজন লোক তাঁকে মাঠে ঘুরে বেড়াতে দেখল। সেই লোকটি বলল, “তুমি কি খুঁজে বেড়াচ্ছ?”

16 যোষেফ উত্তর দিলেন, “আমি আমার ভাইদের খোঁজ করছি। বলতে পারেন তারা তাদের মেষ নিয়ে কোথায় গেছে?”

17 সেই লোকটি বলল, “তারা তো চলে গেছে। আমি তাদের দোথনে যাবার কথা বলতে শুনেছিলাম।” তাই যোষেফ তাঁর ভাইদের খুঁজতে গেলেন এবং দোথনে তাদের খুঁজে পেলেন।

যোষেফ দাস হিসাবে বিক্রীত হলেন

18 যোষেফের ভাইরা তাকে দূর থেকে আসতে দেখে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করল। 19 ভাইরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, “ঐ দেখ স্বপ্নদর্শক যোষেফ আসছে। তাকে মেরে ফেলার 20 এই তো সুযোগ। তাকে আমরা যে কোন একটা খালি কূপের মধ্যে ফেলে দিয়ে পিতাকে গিয়ে বলতে পারি যে এক বুনো জন্তু তাকে মেরে ফেলেছে। এইভাবে আমরা ওকে দেখাব যে তার স্বপ্নগুলো অসার।”

21 কিন্তু রূবেণ যোষেফের প্রাণ বাঁচাতে চাইল। 22 সে বলল, “আমরা তাকে হত্যা করব না। এস, আমরা তাকে হত্যা না করে বরং বিনা আঘাতে ঐ শুকনো কূপের মধ্যে ফেলে দিই।” রূবেণের পরিকল্পনা ছিল যোষেফকে এইভাবে উদ্ধার করে তার পিতার কাছে ফেরত পাঠানোর। 23 যোষেফ তার ভাইদের কাছে এলে তারা তাঁকে আক্রমণ করে তাঁর সুন্দর লম্বা জামাটা ছিঁড়ে ফেলল। 24 এরপর তারা তাঁকে ধরে ছুঁড়ে দিল এক শুকনো কূপের মধ্যে।

25 যোষেফ যখন কূপের মধ্যে, সেই সময় তাঁর ভাইরা খেতে বসল। এইসময় তারা একদল বণিককে দেখতে পেল যারা গিলিয়দ থেকে মিশরে যাত্রা করছিল। তাদের উটগুলো বহন করছিল বহু রকম মশলা ও ধন দৌলত। 26 তাই যিহূদা তার ভাইদের বলল, “আমাদের ভাইকে হত্যা করে আর তার মৃত্যুর সংবাদ গোপন করে আমাদের কি লাভ হবে? 27 এর থেকে লাভ হবে যদি আমরা তাকে এই বণিকদের কাছে বিক্রী করে দিই। এভাবে আমরা আমাদের নিজের ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দোষীও হব না।” অন্য ভাইরাও সম্মতি জানাল। 28 মিদিয়নীয় বণিকরা কাছে আসতেই ভাইরা যোষেফকে কূপ থেকে তুলে আনলো। তারা তাকে 20টি রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে বিক্রী করে দিল। বণিকরা এবার তাকে মিশরে নিয়ে চলল।

29 এই সময় রূবেণ সেখানে তার ভাইদের সঙ্গে ছিল না। সে জানতোও না যে তারা যোষেফকে বিক্রী করে দিয়েছে। রূবেণ কূপের ধারে ফিরে এসে দেখল যোষেফ সেখানে নেই। তখন সে দুঃখ প্রকাশ করার জন্য নিজের কাপড় ছিঁড়ে ফেলল। 30 ভাইদের কাছে ফিরে গিয়ে রূবেণ বলল, “ছেলেটা সেখানে নেই, এখন আমি কি করব?” 31 ভাইরা তখন একটা ছাগল মেরে তার রক্তে যোষেফের সুন্দর শালটা রাঙিয়ে দিল। 32 এরপর তারা সেই শালটা তাদের পিতাকে দেখাল। ভাইরা বলল, “আমরা এই শালটা পেয়েছি, দেখুন তো এটা যোষেফের কিনা?”

33 তাদের পিতা শালটা দেখে চিনতে পারল যে সেটা যোষেফেরই। পিতা বলল, “হ্যাঁ, এটা তো তারই! হয়তো কোনো বন্য জন্তু তাকে মেরে ফেলেছে। আমার পুত্র যোষেফকে এক হিংস্র পশু খেয়ে ফেলেছে!” 34 পুত্র শোকে যাকোব তার কাপড় ছিঁড়ে ফেলল, তারপর চট বস্ত্র পরে দীর্ঘ সময় তার পুত্রের জন্য শোক করল। 35 যাকোবের পুত্র কন্যারা তাকে সান্ত্বনা দিতে চাইল। কিন্তু যাকোবকে সান্ত্বনা দেওয়া গেল না। সে বলল, “আমার মৃত্যু-দিন পর্যন্ত আমি আমার পুত্রের জন্য দুঃখ করে যাব।”[a] তাই যাকোব যোষেফের জন্য দুঃখিত হয়ে রইল।

36 মিদিয়নীয় বণিকরা পরে যোষেফকে মিশরে নিয়ে গিয়ে ফরৌণের রক্ষক সেনাপতি পোটীফরের কাছে বিক্রি করে দিল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International