Beginning
30 রাহেল দেখল যে সে যাকোবকে কোন সন্তান দিতে পারে নি। রাহেল তাই তার বোন লেয়ার প্রতি ঈর্ষান্বিত হল। তাই রাহেল যাকোবকে বলল, “আমায় সন্তান দিন নতুবা আমি মারা যাব!”
2 যাকোব রাহেলের প্রতি ক্রুদ্ধ হল। সে বলল, “আমি ঈশ্বর নই। ঈশ্বরই তোমার গর্ভ রুদ্ধ করে রেখেছেন।”
3 তারপর রাহেল বলল, “আপনি আমার দাসী বিল্হাকে নিন। তার সাথে শয়ন করুন এবং সে আমার জন্য সন্তান প্রসব করবে। তাহলে আমি তার মাধ্যমে মাতা হতে পারব।”
4 তাই রাহেল বিল্হাকে যাকোবের কাছে পাঠাল। যাকোব বিল্হার সঙ্গে যৌন সহবাস করল। 5 বিল্হা গর্ভবতী হয়ে যাকোবের জন্য এক পুত্রের জন্ম দিল।
6 রাহেল বলল, “ঈশ্বর আমার প্রার্থনা শুনেছেন। তিনি তাই আমায় এক পুত্র দিতে মনস্থ করলেন।” তাই রাহেল এই সন্তানের নাম দান রাখল।
7 বিল্হা আবার গর্ভবতী হয়ে দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম দিল। 8 রাহেল বলল, “আমি আমার বোনের সঙ্গে ভারী প্রতিদ্বন্দিতা করেছি এবং আমি জিতেছি।” তাই সে সেই পুত্রের নাম দিল নপ্তালি।
9 লেয়া দেখলেন যে তাঁর আর সন্তান হবার সম্ভাবনা নেই। তাই তিনি তাঁর দাসী সিল্পাকে যাকোবকে দিলেন। 10 এবার সিল্পার এক পুত্র হল। 11 লেয়া বললেন, “আমি খুবই সৌভাগ্যবতী।” তাই তিনি এই পুত্রের নাম গাদ রাখলেন। 12 সিল্পা আর একটি পুত্রের জন্ম দিল। 13 লেয়া বললেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত! এখন হতে স্ত্রী লোকরা আমায় ধন্যা বলবে।” তাই তিনি তার নাম আশের রাখলেন।
14 গম কাটার সময় রূবেণ ক্ষেতে গিয়ে একটি বিশেষ ধরণের ফুল[a] দেখতে পেল। রূবেণ সেই ফুলগুলি তার মা লেয়ার কাছে নিয়ে এল। কিন্তু রাহেল লেয়াকে বলল, “তোমার পুত্রের আনা ঐ ফুলের কিছু আমাকে দাও।”
15 লেয়া উত্তরে বললেন, “তুমি এর মধ্যেই আমার স্বামীকে নিয়ে নিয়েছ। এখন তুমি আমার পুত্রের ফুলগুলিও নিতে চাইছ?”
কিন্তু রাহেল বলল, “তুমি তোমার পুত্রের আনা ফুল আমায় দিলে আজ রাত্রে আমার স্বামীর সঙ্গে সহবাস করতে পাবে।”
16 ক্ষেত থেকে রাতে যাকোব বাড়ী ফিরল। লেয়া তাকে দেখে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বাইরে এলেন। তিনি বললেন, “আজ রাতে তুমি আমার সঙ্গে শোবে। আমি তোমার জন্য মূল্য হিসাবে আমার পুত্রের ফুল দিয়ে দিয়েছি।” তাই সেই রাত্রে যাকোব লেয়ার সঙ্গে শয়ন করল।
17 এরপর ঈশ্বরের দয়ায় লেয়া আবার গর্ভবতী হলেন। তিনি পঞ্চম পুত্রের জন্ম দিলেন। 18 লেয়া বললেন, “আমি আমার দাসীকে আমার স্বামীর কাছে পাঠানোর বেতন হিসাবে ঈশ্বর আমাকে এই সন্তান দিলেন।” তিনি সেই পুত্রের নাম ইষাখর রাখলেন।
19 লেয়া আবার গর্ভবতী হয়ে ষষ্ঠ পুত্রের জন্ম দিলেন। 20 লেয়া বললেন, “ঈশ্বর আমাকে অপূর্ব উপহার দিলেন। এখন নিশ্চয়ই যাকোব আমাকে গ্রহণ করবেন কারণ আমি তাঁকে দুটি পুত্র দিয়েছি।” তাই লেয়া সেই পুত্রের নাম সবূলূন রাখলেন।
21 পরে লেয়া একটি কন্যার জন্ম দিলেন। তিনি তার নাম রাখলেন দীণা।
22 এবার ঈশ্বর রাহেলের প্রার্থনা শুনলেন। ঈশ্বর রাহেলের গর্ভ মুক্ত করলেন। 23-24 রাহেল গর্ভবতী হয়ে এক পুত্রের জন্ম দিল। রাহেল বলল, “ঈশ্বর আমার লজ্জা দূর করেছেন” এবং এক পুত্র দিয়েছেন। তাই রাহেল ঈশ্বর আমাকে আর একটি পুত্র দিন, একথা বলে তার নাম রাখল যোষেফ।
লাবনের সঙ্গে যাকোবের চালাকি
25 যোষেফের জন্মের পর যাকোব লাবনকে বলল, “এবার আমাকে আমার বাড়ী ফিরতে দিন। 26 আমাকে আমার স্ত্রী ও পুত্রদের নিয়ে যেতে দিন। আমি 14 বছর পরিশ্রম করে তাদের আপনার কাছ থেকে লাভ করেছি। আপনি জানেন আমি ভালভাবেই আপনার সেবা করেছি।”
27 লাবন তাকে বললেন, “এখন আমায় কিছু বলতে দাও! আমি জানি তোমার জন্যই প্রভু আমায় মনোনীত করেছেন। 28 আমায় বল তোমার পারিশ্রমিক হিসাবে কি দিতে হবে আর আমি তোমায় তা দেব।”
29 যাকোব উত্তরে বলল, “আপনি জানেন যে আমি আপনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার তত্ত্বাবধানে আপনার পশুবল ভালই রয়েছে এবং বৃদ্ধি পেয়েছে। 30 যখন আমি এসেছিলাম তখন আপনার অল্পই ছিল। কিন্তু এখন আপনার প্রচুর হয়েছে। প্রতিবার আমি আপনার জন্য কিছু কাজ করলে প্রভু আপনাকে আশীর্বাদ করেছেন। এখন সময় এসেছে আমার নিজের জন্য কাজ করার। সময় এসেছে আমার নিজের গৃহ তৈরীর।”
31 লাবন জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে আমি তোমায় কি দেব?”
যাকোব উত্তরে বলল, “আমি আপনার কাছ থেকে কিছু চাই না। কেবল চাই আপনি আমার শ্রমের বেতন দিন। কেবল এই একটি কাজ করুন; আমি ফিরে গিয়ে আপনার মেষপালের যত্ন নেব। 32 কিন্তু আজকে আমাকে আপনার সমস্ত পশুপালের মধ্যে দিয়ে যেতে দিন এবং যে সমস্ত মেষের গায়ে গোল গোল দাগ এবং ডোরা কাটা দাগ রয়েছে তাদের প্রত্যেককে নিতে দিন। আর সমস্ত কালো ছাগ শিশুও আমাকে নিতে দিন। এবং গোল গোল দাগ ও ডোরা কাটা দাগ রয়েছে এমন সমস্ত স্ত্রী ছাগ শিশুও আমার হোক্। সেই হবে আমার বেতন। 33 তাহলে আমি আপনার প্রতি বিশ্বস্ত কিনা তা সহজেই বুঝতে পারবেন। আপনি এসে আমার পশুপাল দেখতে পারেন। যদি কোন ছাগ চিত্র বিচিত্র না হয় এবং মেষ কালো রঙের না হয় তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে আমি চুরি করেছি।”
34 লাবন বললেন, “এতে আমার সম্মতি রয়েছে। তুমি যা চাইলে আমরা সেই মত করব।” 35 কিন্তু সেই দিন লাবন সমস্ত চিত্র বিচিত্র পুং ছাগল এবং চিতল স্ত্রী ছাগলগুলিকে লুকিয়ে ফেললেন এবং কালো মেষগুলিকে লুকিয়ে ফেললেন। লাবন তাঁর পুত্রদের সেই সমস্ত পাহারা দিতে বললেন। 36 তাই তাঁর পুত্ররা চিত্র-বিচিত্র সেই সকল পশু নিয়ে তাদের অন্য এক জায়গায় চরিয়ে নিয়ে তিন দিন পথের দূরত্ব বজায় রাখলেন। বাকী পশু যা পড়ে রইল যাকোব তার যত্ন নিল। কিন্তু সেই পালে চিত্র বিচিত্র অথবা রঙীন কোন পশুই ছিল না।
37 তাই যাকোব ঝাউ ও বাদাম গাছের কচি ডালপালা কাটল এবং ডালের ছাল কিছুটা করে ছাড়াল যাতে ডোরা কাটা দেখায়। 38 যাকোব সেই ডালগুলি পশুদের জল খাওয়ার জায়গার সামনে রাখল। পশুরা সেইস্থানে জল পান করতে এলে 39 সঙ্গমও করল। এরপর সেই ডালের সামনে সঙ্গম করা পশুদের চিত্র বিচিত্র, ডোরাকাটা অথবা কালো শাবক জন্মাল।
40 পশুপালের জন্য সমস্ত পশুর মধ্যে থেকে যাকোব চিত্র বিচিত্র ও কালো পশুদের পৃথক করল। যাকোব তার পশুদের লাবনের পশুদের থেকে আলাদা করে রাখল। 41 যে কোন সময় বলবান পশুরা সঙ্গম করলে যাকোব সেই ডালগুলি তাদের সামনে রাখত। বলবান পশুরা সেই ডালপালার সামনে সঙ্গম করত। 42 কিন্তু দুর্বল পশুরা সঙ্গম করলে যাকোব সেখানে ডালগুলি রাখত না। তাই দুর্বল পশুদের শাবকগুলি লাবনের হল। আর বলবান পশুদের শাবকগুলি হল যাকোবের। 43 এইভাবে যাকোব বেশ ধনী হয়ে উঠল। তার অনেক পশু, ভৃত্য, উট এবং গাধা হল।
প্রস্থানের সময় যাকোবের পলায়ন
31 একদিন যাকোব শুনল যে লাবনের পুত্ররা কথাবার্তা বলছে। তারা বলল, “আমাদের পিতার সবকিছুই যাকোব নিয়ে নিয়েছে। যাকোব খুবই ধনী হয়েছে। ওর এই ধনের সবটাই সে আমাদের পিতার কাছ থেকে নিয়েছে।” 2 যাকোব লক্ষ্য করল যে লাবন অতীতের মত আর বন্ধুমনোভাবাপন্ন নয়। 3 প্রভু যাকোবকে বললেন, “তোমার পূর্বপুরুষেরা যে দেশে বাস করতেন, তোমার সেই নিজের দেশে ফিরে যাও। আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকব।”
4 তাই যাকোব রাহেল ও লেয়াকে সেই মাঠে দেখা করতে বলল যেখানে সে তার মেষপাল ও ছাগপাল রেখেছিল। 5 যাকোব রাহেল ও লেয়াকে বলল, “আমি দেখছি যে তোমাদের পিতা আমার ওপর রেগে গেছেন। অতীতে সব সময় তিনি আমার সঙ্গে বন্ধুত্বের মনোভাব পোষণ করতেন কিন্তু তিনি আর সেরকম নন। কিন্তু আমার পিতা ঈশ্বর আমার সঙ্গে রয়েছেন। 6 তোমরা উভয়েই জান আমি তোমাদের পিতার জন্য আমার সাধ্যমত কঠোর পরিশ্রম করেছি। 7 কিন্তু তোমাদের পিতা আমাকে ঠকিয়েছেন। এই নিয়ে দশবার তিনি আমার বেতন বদলেছেন। কিন্তু এই সকল সময় ঈশ্বর লাবনের সমস্ত চালাকি হতে আমাকে রক্ষা করেছেন।
8 “একবার লাবন বললেন, ‘বিন্দু চিহ্নিত সমস্ত ছাগল তুমি রাখতে পার। তাই হবে তোমার বেতন।’ তিনি এই কথা বলার পর সমস্ত পশুর বিন্দু চিহ্নিত শাবক জন্মাল। তাই সেসব আমারই হল। কিন্তু তখন লাবন বললেন, ‘সব বিন্দু চিহ্নিত ছাগল আমার। তুমি ডোরা কাটা ছাগগুলি রাখতে পার। সেই হবে তোমার বেতন।’ তিনি একথা বলার পর সমস্ত পশু ডোরাকাটা শাবকের জন্ম দিল। 9 সুতরাং ঈশ্বরই পশুগুলিকে তোমার পিতার কাছ থেকে নিয়ে আমায় দিয়েছেন।
10 “একটি স্বপ্নে আমি দেখলাম, দলের সঙ্গে সঙ্গম করছে যে পুরুষ ছাগলরা, তাদেরই গায়ে ডোরাকাটা এবং ছোপমারা। 11 ঈশ্বরের দূত সেই স্বপ্নে আমার সঙ্গে কথা বললেন, ‘যাকোব!’
“আমি উত্তর দিলাম, ‘আজ্ঞে!’
12 “দূত আমাকে উত্তর দিলেন, ‘দেখ, কেবল ডোরাকাটা ও বিন্দু চিহ্নিত ছাগলরাই সঙ্গম করছে। আমিই তা ঘটাচ্ছি। লাবন তোমার প্রতি যে সমস্ত অন্যায় করেছেন তার সমস্তই আমি দেখেছি। আমি এমনটা করছি যাতে সমস্ত ছাগ শাবক তোমারই হয়। 13 আমি সেই ঈশ্বর যিনি বৈথেলে তোমার কাছে এসেছিলাম। সেই স্থানে তুমি এক বেদী স্থাপন করেছিলে। তুমি সেই বেদীতে ওলিভ তেল ঢেলেছিলে এবং আমার কাছে এক প্রতিজ্ঞা করেছিলে। এখন আমি চাই যে তুমি যে দেশে জন্মেছিলে সেই দেশে ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুত হও।’”
14 রাহেল ও লেয়া যাকোবকে উত্তরে বললেন, “আমাদের পিতা তাঁর মৃত্যুর সময় আমাদের জন্য কিছু রেখে যাবেন না। 15 তিনি আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন যেন আমরা বিদেশী। তিনি আমাদের তোমার কাছে বিক্রি করেছেন এবং তারপর যে অর্থ আমাদের পাবার কথা তা তিনি খরচ করে ফেলেছেন। 16 ঈশ্বর এই সমস্ত ধন আমাদের পিতার কাছ থেকে নিয়েছেন যার মালিক এখন আমরা এবং আমাদের সন্তানরা। সেইজন্য ঈশ্বর যেমনটি বলেছেন সেই মতোই আপনার কাজ করা উচিৎ।”
17 সেইজন্য যাকোব যাত্রার জন্য প্রস্তুত হল। সে তার সব পুত্রদের ও স্ত্রীদের উটের পিঠে ওঠাল। 18 তারপর তারা কনান দেশে ফিরে গেল যেখানে যাকোবের পিতা বাস করতেন। যাকোবের সমস্ত পশুপাল তার সামনে সামনে হেঁটে চলল। পদ্দন্-অরামে থাকাকালীন সে যে সমস্ত কিছু অর্জন করেছিল তার সব কিছু নিয়ে চলল।
19 সেই সময় লাবন মেষদের লোম ছাঁটতে গেলেন। তিনি সেই কাজে যাওয়ার পরে রাহেল তার ঘরে ঢুকে তার পিতার ঠাকুরগুলোকে চুরি করল।
20 যাকোব অরামীয় লাবনের সঙ্গে চালাকি করল কারণ তার চলে যাবার বিষয়ে সে তাঁকে জানাল না। 21 যাকোব তার পরিবার ও সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ল। তারা ফরাৎ নদী পার হয়ে পর্বতময় প্রদেশ গিলিয়দের দিকে রওনা দিলেন।
22 তিন দিন পরে লাবন জানতে পারলেন যে যাকোব পালিয়ে গেছে। 23 তাই লাবন তাঁর লোকজন জড়ো করে যাকোবের পেছনে ধাওয়া করে চললেন। সাত দিন পর লাবন যাকোবকে পার্বত্য গিলিয়দ দেশের কাছে দেখতে পেলেন। 24 সেই রাতে ঈশ্বর স্বপ্নে লাবনের কাছে গেলেন। ঈশ্বর বললেন, “সাবধান! যাকোবের সঙ্গে ভেবে চিন্তে কথা বোলো!”
চুরি যাওয়া ঈশ্বরের খোঁজ
25 পরের দিন সকাল বেলা লাবন যাকোবকে দেখতে পেলেন। যাকোব পর্বতের উপরে তার তাঁবু খাটিয়েছিল। তাই লাবন ও তাঁর লোকজন পর্বতময় প্রদেশ গিলিয়দে তাঁদের তাঁবু খাটালেন।
26 লাবন যাকোবকে বললেন, “তুমি কেন আমার সঙ্গে চালাকি করলে? কেন তুমি আমার কন্যাদের যুদ্ধ বন্দীদের মত ধরে নিয়ে গেলে? 27 তুমি আমাকে না জানিয়ে কেন পালালে? যদি আমায় বলতে তবে আমি একটা ভোজের আয়োজন করতাম। বাজনার সাথে নাচ গানের ব্যবস্থাও করতাম। 28 তুমি আমার নাতি নাতনিদের চুমু খেতে ও কন্যাদের বিদায় জানাবারও সুযোগ দিলে না। এইভাবে তুমি খুব অজ্ঞের মত কাজ করেছ। 29 তোমাকে আঘাত করার ক্ষমতা আমার রয়েছে। কিন্তু গত রাতে তোমার পিতার ঈশ্বর আমার স্বপ্নে আমার কাছে এলেন। তিনি আমাকে সাবধান করে দিলেন যাতে তোমার কোন ক্ষতি না করি। 30 আমি জানি তুমি তোমার বাড়ী ফিরে যেতে চাও আর সেইজন্যই তুমি চলে এসেছ। কিন্তু কেন তুমি আমার ঘর থেকে ঠাকুরগুলোকে চুরি করলে?”
31 যাকোব উত্তরে বলল, “আমি ভয় পেয়েছিলাম তাই আপনাকে না বলে চলে এসেছি! আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমার কাছ থেকে আপনার কন্যাদের ছিনিয়ে নেবেন। 32 কিন্তু আমি আপনার ঠাকুরগুলো চুরি করি নি। যদি এখানে আমার সঙ্গের কোন ব্যক্তি ঐ ঠাকুরগুলোকে নিয়ে থাকে তবে তাকে হত্যা করতে হবে। আপনার লোকরাই এই বিষয়ে আমার সাক্ষী হবে। আপনার যা কিছু তা আপনি খুঁজে দেখতে পারেন। যা আপনার তা নিয়ে নিন।” (যাকোব জানতেন না যে রাহেল লাবনের ঠাকুরগুলো চুরি করেছে।)
33 তাই লাবন গিয়ে যাকোবের তাঁবু এবং তারপর লেয়ার তাঁবু খুঁজে দেখলেন। তারপর সেই দুই দাসীর তাঁবুও খুঁজে দেখলেন। কিন্তু সেই ঠাকুরগুলোকে তাদের ঘরে খুঁজে পেলেন না। তারপর লাবন রাহেলের তাঁবুর দিকে গেলেন। 34 রাহেল ঠাকুরগুলোকে উটের গদির তলায় লুকিয়ে তার ওপরে বসে ছিলেন। লাবন সমস্ত তাঁবু তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ঠাকুরগুলোকে খুঁজে পেলেন না।
35 রাহেল তার পিতাকে বলল, “পিতা আমার উপর রাগ করবেন না। আমি আপনার সামনে উঠে দাঁড়াতে পারছি না কারণ আমার মাসিক চলছে।” তাই লাবন তাঁবুর ভিতরে দেখলেন কিন্তু তাঁর ঠাকুরগুলো খুঁজে পেলেন না।
36 তখন যাকোব খুব রেগে গিয়ে বলল, “আমি কি দোষ করেছি? কোন আইন ভেঙ্গেছি? কি অধিকারে আপনি আমাকে তাড়া করে থামাতে এসেছেন? 37 আমার যা কিছু রয়েছে তার সবকিছুই আপনি খুঁজে দেখেছেন। কিন্তু আপনার কিছুই খুঁজে পান নি আর যদি পেয়ে থাকেন তবে তা দেখান। সেটা এখানেই রাখুন যাতে আমাদের লোকরা তা দেখতে পায়। আমাদের লোকেরাই বিচার করুক আমাদের মধ্যে কারা ঠিক। 38 আমি 20 বছর আপনার জন্য কাজ করেছি। এই সময় আপনার কোন মেষশাবক বা ছাগশিশু জন্মাবার সময় মারা যায় নি। আর আমি আপনার পালের কোন মেষ মেরে খাই নি। 39 কোন সময় বন্য পশুর দ্বারা কোন মেষ মারা গেলে আমি সবসময় নিজে আপনার কাছে এসে বলি নি যে আমার দোষে এটা হয় নি। কিন্তু দিন রাত আমি ক্ষতি স্বীকার করেছি। 40 দিনের বেলা সূর্য্য যেন আমার শক্তি নিঙড়ে নিত এবং রাতে শীতে ঘুম আমার চোখ থেকে উধাও হয়ে যেত। 41 আমি 20 বছর ধরে আপনার কাছে দাসের মত কাজ করেছি। প্রথম 14 বছর আমি আপনার দুই কন্যা লাভ করার জন্য খেটেছি। শেষ 6 বছর আমি আপনার পশু লাভ করার জন্য খেটেছি। এবং এই সময় আপনি দশ বার আমার বেতন বদলেছেন। 42 কিন্তু আমার পূর্বপুরুষের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর এবং ইস্হাকের ভয়।[b] আমার সঙ্গে ছিলেন। ঈশ্বর আমার সঙ্গে না থাকলে আপনি আমাকে খালি হাতে বিদায় দিতেন। কিন্তু ঈশ্বর আমার কষ্ট সকল ও আমার পরিশ্রম দেখলেন। এই জন্যই গত রাতে ঈশ্বর প্রমাণ করেছেন যে আমি ঠিক।”
যাকোব ও লাবনের চুক্তি
43 লাবন যাকোবকে বললেন, “এই মহিলারা আমারই কন্যা। এই সন্তানরা ও এই পশুরাও আমারই। যা কিছু দেখছ এ সবই তো আমারই, কিন্তু আমার কন্যাদের ও নাতি নাতনিদের আমার কাছে রাখার জন্য কিছুই করতে পারি না। 44 সেইজন্য এস তোমার সঙ্গে এক চুক্তি করি। আমাদের এই চুক্তির প্রমাণ স্বরূপ আমরা এক পাথরের থাম স্থাপন করব।”
45 চুক্তির প্রমাণ হিসাবে যাকোব একটা বড় পাথর খুঁজে এনে সেটা স্থাপন করল। 46 সে তার নিজের লোকদেরও পাথর এনে রাশি করে রাখতে বলল। তারপর সেই পাথরের রাশির ধারে বসে খাওয়া দাওয়া করল। 47 লাবন সেই স্থানের নাম রাখলেন যিগর্ সাহদুথা। কিন্তু যাকোব সেই স্থানের নাম দিল গল্-এদ।
48 তখন লাবন বললেন, “পাথরের এই রাশি আমাদের চুক্তি স্মরণ করতে সাহায্য করবে।” এই কারণে যাকোব সেই স্থানের নাম গল্-এদ রাখল।
49 তারপর লাবন বললেন, “আমরা পরস্পরের থেকে দূরে চলে গেলে প্রভু যেন আমাদের পাহারা দেন।” সেইজন্যে সেই স্থানের নাম মিস্পা রাখা হল।
50 তারপর লাবন বললেন, “মনে রেখো তুমি যদি আমার কন্যাদের আঘাত কর তবে ঈশ্বর তোমাকে শাস্তি দেবেন। তুমি যদি অন্য আর কোন স্ত্রী লোককে বিয়ে কর তবে মনে রেখো ঈশ্বর লক্ষ্য রাখছেন। 51 আমাদের মধ্যে স্থাপিত স্তম্ভ ও এই রাশি করা পাথরগুলো স্মরণ করিয়ে দেবে আমাদের চুক্তির কথা। 52 আমি কখনই এই পাথরগুলো পার হয়ে তোমার সাথে লড়াই করতে যাবো না এবং তুমিও অবশ্যই পার হয়ে আমার সঙ্গে লড়াই করতে আসবে না। 53 আমরা যদি এই চুক্তি লঙ্ঘন করি তবে অব্রাহামের ঈশ্বর, নাহোরের ঈশ্বর এবং তাদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বর আমাদের বিচারে দোষী করুন।”
যাকোবের পিতা ইস্হাক ঈশ্বরকে “ভয়” বলে ডাকতেন। তাই যাকোব সেই নাম ব্যবহার করে প্রতিজ্ঞা করল। 54 তারপর যাকোব সেই পর্বতে একটা পশু বলিদান রূপে উৎসর্গ করল। আর তার আপনজনদের ভোজে নিমন্ত্রণ করল। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে তারা সেই রাতটা পাহাড়েই কাটাল। 55 পরের দিন ভোরে লাবন তাঁর নাতি নাতনিদের ও কন্যাদের চুমু খেয়ে বিদায় জানালেন। তিনি তাদের আশীর্বাদ করে ঘরে ফিরে গেলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International