Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 27-29

ইস‌্হাকের সঙ্গে যাকোবের চালাকি

27 ইস‌্হাক ক্রমশঃ বৃদ্ধ হলেন, ক্ষীণ হল তাঁর দৃষ্টিশক্তি—আর কিছু ভাল দেখতে পান না। একদিন তিনি বড় পুত্রকে ডাকলেন, “এষৌ!”

এষৌ উত্তর দিল, “আমি এখানে।”

ইস‌্হাক বললেন, “আমি বৃদ্ধ হয়েছি। শীঘ্রই মারাও যেতে পারি। তাই তোমার তীরধনুক নিয়ে শিকারে যাও। আমার খাওয়ার জন্যে একটা কিছু শিকার করে আনো। আমি ভালবাসি এমন কোনও খাবার তৈরী কর। আমায় খাবার এনে দাও, আমি খাই। মৃত্যুর আগে তোমায় আশীর্বাদ করে যাই।” তখন এষৌ শিকার করতে বেরিয়ে গেল।

এসব কথা ইস‌্হাক যখন এষৌকে বলছিলেন তখন রিবিকা সব শুনছিলেন। রিবিকা তাঁর প্রিয় পুত্র যাকোবকে বললেন, “শোন, তোমার পিতা তোমার ভাই এষৌকে কি বলছিলেন সব শুনেছি। তোমার পিতা বললেন, ‘আমার খাওয়ার জন্যে একটা জানোয়ার শিকার করে আনো। আমায় রেঁধে দাও, আমি খাই। তাহলে আমি মৃত্যুর আগে তোমায় আশীর্বাদ করব।’ এখন শোন বাবা, আমি যা বলি তা করো। আমাদের ছাগলের খোঁয়াড়ে যাও, দুটো ছাগল ছানা নিয়ে এস। তোমার পিতা যেমন মাংস খেতে ভালবাসে তেমন করে আমি রেঁধে দেব। 10 তারপর সেই খাবার নিয়ে পিতার কাছে যাবে। মৃত্যুর আগে তিনি তোমায় আশীর্বাদ করবেন।”

11 কিন্তু যাকোব মা রিবিকাকে বলল, “আমার ভায়ের গা ভর্ত্তি লোম। কিন্তু আমার শরীরের ত্বক মসৃণ। 12 পিতা আমায় ছুঁলেই টের পাবেন যে আমি এষৌ নই। তাহলে পিতা আমায় আশীর্বাদ দেবেন না। বরং অভিশাপ দেবেন। কেন? কেননা আমি তাঁর সঙ্গে চালাকি করতে গিয়েছিলাম।”

13 সুতরাং রিবিকা তাকে বললেন, “যদি তিনি অভিশাপ দেন তবে তা আমার ওপর আসুক। আমি যেমন বলছি তেমনটি করো। যাও, আমার জন্য ছাগল নিয়ে এস।”

14 তখন যাকোব দুটো ছাগল নিয়ে এসে তার মাকে সেগুলি দিল। তার মা ঠিক যেভাবে ইস‌্হাক খেতে ভালবাসেন সেই বিশেষ ভাবে ছাগল দুটো রান্না করলেন। 15 তারপর রিবিকা বড় পুত্র এষৌর প্রিয় জামাকাপড় নিলেন। সেই জামাকাপড় পরিয়ে দিলেন ছোট পুত্র যাকোবকে। 16 আর যাকোবের হাতে ও গলায় লাগিয়ে দিলেন ছাগলের চামড়া। 17 তারপর রিবিকা সেই রান্না করা মাংস নিয়ে এসে যাকোবকে দিলেন।

18 যাকোব পিতার কাছে গিয়ে ডাকল, “পিতা।”

তার পিতা সাড়া দিলেন, “তুমি কে বাবা?”

19 যাকোব বলল, “আমি তোমার বড় পুত্র এষৌ। তুমি যেমন বলেছিলে আমি সব তেমনভাবে করে এনেছি। এখন উঠে বসো, তোমার জন্যে যা শিকার করেছি, খাও আগে। আমায় পরে আশীর্বাদ কোরো।”

20 কিন্তু ইস‌্হাক তাঁর পুত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি করে এত তাড়াতাড়ি জানোয়ার শিকার করলে?”

যাকোব উত্তর দিল, “কারণ প্রভু, তোমার ঈশ্বর আমাকে জানোয়ারগুলি তাড়াতাড়ি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন।”

21 তখন ইস‌্হাক যাকোবকে বললেন, “কাছে এস বাবা, আমি তোমায় ছুঁয়ে দেখি, তুমি সত্যিই আমার পুত্র এষৌ কিনা।”

22 সুতরাং যাকোব তার পিতা ইস‌্হাকের কাছে গেল। ইস‌্হাক তার গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন, “তোমার গলার স্বর যাকোবের মত শোনাচ্ছে, কিন্তু তোমার হাত এষৌর মত লোমশ।” 23 ইস‌্হাক বুঝতে পারলেন না যে এ আসলে যাকোব। কারণ তার হাত এষৌর হাতের মতোই লোমশ। সুতরাং ইস‌্হাক যাকোবকে আশীর্বাদ করলেন।

24 ইস‌্হাক নিঃসন্দেহ হবার জন্যে আবার জিজ্ঞেস করল, “তুমি সত্যিই আমার পুত্র এষৌ তো?”

যাকোব উত্তর দিল, “হ্যাঁ, পিতা, আমিই এষৌ।”

যাকোবকে আশীর্বাদ

25 তখন ইস‌্হাক বললেন, “আমাকে আমার পুত্রের শিকার করা পশুগুলির থেকে খাবার এনে দাও। আমি সেটা খেয়ে তোমায় আশীর্বাদ করবো।” তখন যাকোব খাবারটা দিল এবং ইস‌্হাক তা খেলেন। তারপর যাকোব কিছু দ্রাক্ষারস দিলে ইস‌্হাক তা পান করলেন।

26 তারপর ইস‌্হাক তাকে বললেন, “কাছে এস, আমায় চুমু দাও।” 27 সুতরাং যাকোব তার পিতার কাছে গিয়ে তাঁকে চুম্বন করল। তখন ইস‌্হাক যাকোবের জামা কাপড়ে এষৌর জামা কাপড়ের গন্ধ পেলেন এবং তাকে আশীর্বাদ করলেন। ইস‌্হাক বললেন,

“যে প্রান্তর প্রভুর আশীর্বাদ ধন্য, আমার সন্তান সেই প্রান্তরের গন্ধ বহে।
28 তোমাকে প্রভু প্রচুর বৃষ্টি দিন যাতে প্রচুর ফসল আর দ্রাক্ষারস হয়।
29 বহু জাতি তোমায় সেবা করবে
    এবং তোমার প্রতি নত থাকবে।
ভাই জ্ঞাতিদের ওপরে তোমার প্রভুত্ব বহাল হবে।
    তোমার মাতার পুত্রগণ তোমার অধীন হবে এবং তারা তোমার আদেশে চলবে।
তোমাকে যারা শাপ দেবে তারা হবে অভিশপ্ত,
যারা তোমাকে আশীর্বাদ করবে তারা আশীর্বাদ পাবে।”

এষৌর জন্য “আশীর্বাদ”

30 ইস‌্হাক যাকোবকে আশীর্বাদ করা শেষ করলেন। তারপর যেই যাকোব পিতার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে চলে গেল অমনি এষৌ ফিরে এল শিকার থেকে। 31 পিতা ঠিক যেমন খেতে ভালবাসে ঠিক সেভাবে এষৌ মাংস রাঁধল। তারপর খাবারটা নিয়ে এল পিতার কাছে। পিতাকে সে বলল, “পিতা, আমি তোমার পুত্র। ওঠো, তোমার জন্য শিকার করে আমি মাংস রেঁধে নিয়ে এসেছি, খাও, তারপরে আমায় আশীর্বাদ করো।”

32 কিন্তু ইস‌্হাক জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে?”

সে উত্তর দিল, “আমি তোমার পুত্র—তোমার বড় পুত্র এষৌ।”

33 তখন ইস‌্হাক মহা উদ্বিগ্ন হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “তাহলে তুমি আসার আগে কে মাংস রান্না করে এনে দিল আমায়? আমি সমস্ত মাংস খেয়ে তাকে আশীর্বাদ করলাম। এখন সেই আশীর্বাদ ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষেও ঢের দেরী হয়ে গেছে।”

34 এষৌ তার পিতার কথা শুনল। সে খুব ক্রুদ্ধ ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠল। সে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। পিতাকে বলল, “তাহলে আমাকেও আশীর্বাদ করো, পিতা!”

35 ইস‌্হাক বললেন, “তোমার ভাই আমার সঙ্গে চালাকি করেছে! সে এসে তোমার আশীর্বাদ নিয়ে গেছে!”

36 এষৌ বলল, “তার নাম যাকোব। ওর জন্যে ঐ নামই ঠিক। আমার সঙ্গে ভাই দুবার চালাকি করল। প্রথমবার কৌশলে সে প্রথম সন্তান হিসেবে আমার যা অধিকার ছিল তার থেকে বঞ্চিত করেছে এবং এবার আমার প্রাপ্য আশীর্বাদ থেকে আমাকে বঞ্চিত করল।” তারপর এষৌ জিজ্ঞেস করল, “আমার জন্য কি তোমার আর কোন আশীর্বাদ অবশিষ্ট নেই?”

37 ইস‌্হাক উত্তর দিলেন, “না, তার জন্য বড় দেরী হয়ে গেছে। আমি তোমায় শাসন করার অধিকারও যাকোবকে দিয়ে ফেলেছি। আমার আশীর্বাদে সে পাবে তার সমস্ত ভাইদের সেবা। আর আমি তাকে প্রচুর শস্য আর দ্রাক্ষারসের জন্য আশীর্বাদ দিয়েছি। তোমায় আশীর্বাদ করার জন্য আর কিছু বাকি নেই।”

38 কিন্তু এষৌ আশীর্বাদের জন্যে পিতাকে পীড়াপীড়ি করে বলল, “পিতা তোমার কাছে কি শুধুমাত্র একটিই আশীর্বাদ আছে?” এষৌ কাঁদতে শুরু করল।

39 তখন ইস‌্হাক বললেন,

“তুমি কখনও উর্বর জমি পাবে না,
    তুমি কখনও পর্যাপ্ত বর্ষা পাবে না।
40 তোমাকে লড়তে হবে জীবনের জন্য
    এবং ভ্রাতার ভৃত্য হবে তুমি।
কিন্তু লড়ে তুমি হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন।
    মুক্তি পাবে তোমার ভ্রাতার শাসন থেকে।”

যাকোব দেশ ত্যাগ করল

41 তারপর এই আশীর্বাদের জন্য এষৌ যাকোবকে ঘৃণা করতে শুরু করল। মনে মনে এষৌ ভাবল, “আমার পিতা শীঘ্রই মারা যাবেন। তার জন্য শোক করার সময় শেষ হবার পরে আমি যাকোবকে হত্যা করব।”

42 রিবিকা জানলেন যে এষৌ যাকোবকে হত্যা করার কথা ভাবছে। তিনি যাকোবকে ডেকে পাঠালেন। যাকোবকে তিনি বললেন, “শোন, তোমার ভাই এষৌ তোমায় হত্যা করার কথা ভাবছে। 43 তাই আমি যা বলি তা-ই করো। আমার ভাই লাবন বাস করে হারণে। তার কাছে গিয়ে তুমি লুকিয়ে থাকো। 44 তার কাছে তুমি কিছুদিন থাকো যতদিন না তোমার ভাইয়ের রাগ পড়ে। 45 কিছুদিন পরে তোমার ভাই, তুমি তার প্রতি কি করেছ না করেছ সব ভুলে যাবে। তখন আমি তোমায় ফিরিয়ে আনার জন্যে একটি ভৃত্য পাঠাব। আমি একই দিনে আমার দু পুত্রকে হারাতে চাই না।”

46 তারপর রিবিকা ইস‌্হাককে বললেন, “তোমার পুত্র এষৌ হিত্তীয়দের কন্যাকে বিয়ে করেছে। এ আমার মোটে ভাল লাগে নি। কেননা তারা আমাদের আপনজন নয়। যাকোবও যদি ঐ মেয়েদের কাউকে বিয়ে করে তাহলে আমি নির্ঘাত মারা যাব।”

28 ইস‌্হাক যাকোবকে ডেকে পাঠালেন এবং তাকে আশীর্বাদ করলেন। তারপর ইস‌্হাক যাকোবকে একটি আজ্ঞা করলেন। তিনি বললেন, “তুমি কখনও কনানের মেয়ে বিয়ে করবে না। তাই এই জায়গা ছেড়ে পদ্দন্-অরামে চলে যাও। তোমার দাদামশায় বথূয়েলের কাছে যাও। তোমার মামা লাবনের কন্যাদের কোন একজনকে বিয়ে করো। প্রার্থনা করি যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করবেন এবং তোমায় বহু সন্তান-সন্ততি দেবেন। তুমি যাতে এক মহান জাতির জনক হও তার জন্য আমি প্রার্থনা করি। যেভাবে ঈশ্বর অব্রাহামকে আশীর্বাদ করেছিলেন সেভাবে তিনি যেন তোমায় ও তোমার সন্তান-সন্ততিকে আশীর্বাদ করেন-এই প্রার্থনা করি এবং আমি প্রার্থনা করি যে যে দেশে তুমি বাস করবে সেই দেশ তোমার হবে। ঈশ্বর এই দেশ অব্রাহামকে দিয়েছিলেন।”

তখন ইস‌্হাক যাকোবকে পদ্দন্-অরাম নামক স্থানে পাঠালেন। যাকোব গেল রিবিকার ভাই লাবনের কাছে। বথুয়েল লাবন ও রিবিকার জনক এবং যাকোব ও এষৌর মা হলেন রিবিকা।

এষৌ জানতে পারল যে তার পিতা ইস‌্হাক যাকোবকে আশীর্বাদ করেছেন। এষৌ জানল যে ইস‌্হাক যাকোবকে পদ্দন-অরামে পাঠিয়েছেন সেখানে বিয়ে করার জন্যে। ইস‌্হাক যে যাকোবকে কনানের মেয়ে বিয়ে না করার আদেশ দিয়েছেন সে কথাও এষৌ জানল। এষৌ জানল যে যাকোব পিতামাতাকে মেনে চলেছে এবং পদ্দন্-অরামে গেছে। এসবের থেকে এষৌ বুঝল যে তাদের পিতা ইস‌্হাক চাইতেন না যে পুত্ররা কেউ কনানের মেয়েদের বিয়ে করে। এষৌর তখনই দুজন স্ত্রী ছিল। কিন্তু সে ইশ্মায়েলের কাছে গিয়ে আরও একটি বিয়ে করল। এবার সে ইশ্মায়েলের কন্যা মহলত্‌কে বিয়ে করল। অব্রাহামের আর এক পুত্র ইশ্মায়েল। মহলত্‌ নবায়োতের বোন।

ঈশ্বরের গৃহ বৈথেল

10 যাকোব বের্-শেবা ছেড়ে হারণে গেল। 11 হারণে যাওয়ার পথে সূর্যাস্ত হল। তখন যাকোব রাত কাটাবার জন্য একটা জায়গায় গেল। সেখানে একটা পাথর দেখতে পেয়ে সে তার ওপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। 12 ঘুমের মধ্যে যাকোব একটা স্বপ্ন দেখল। সে দেখল, মাটি থেকে একটা সিঁড়ি গেছে স্বর্গে। যাকোব দেখল যে ঈশ্বরের দূতরা ঐ সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করছে। আর যাকোব দেখল যে প্রভু সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছেন। 13 প্রভু বললেন, “আমিই প্রভু, তোমার পিতামহ অব্রাহামের ঈশ্বর। আমি ইস‌্হাকের ঈশ্বর। যে জমিতে তুমি এখন শুয়ে আছ তা আমি তোমাকে দেব। এই জমি আমি তোমাকে এবং তোমার বংশকে দেব। 14 তোমার বহু সংখ্যক উত্তরপুরুষ হবে। তারা পৃথিবীর ধূলোর মতো অসংখ্য হবে। তারা পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়বে। পৃথিবীর সব জাতিরা তোমার এবং তোমার উত্তরপুরুষদের মাধ্যমে আশীর্বাদ পাবে।

15 “আমি তোমার সঙ্গে আছি। তুমি যে কোন জায়গায় যাও না কেন আমি তোমাকে রক্ষা করব এবং এই দেশে আবার ফিরিয়ে আনব। আমি তোমার কাছে যা প্রতিজ্ঞা করেছি তা পূর্ণ না করা পর্যন্ত আমি তোমায় ত্যাগ করব না।”

16 যাকোব ঘুম থেকে উঠে বলল, “আমি জানি প্রভু এই জায়গায় রয়েছেন। কিন্তু আমি না ঘুমানো পর্যন্ত জানতাম না যে তিনি এখানে রয়েছেন।”

17 যাকোব ভয় পেল। সে বলল, “এ এক মহান জায়গা। এই হল ঈশ্বরের গৃহ। এই হল স্বর্গের দ্বার।”

18 যাকোব খুব ভোরে উঠে পড়ল। যে পাথরে মাথা রেখে শুয়েছিল তা দাঁড় করিয়ে স্থাপন করল। তারপর সে সেই পাথরের উপর তেল ঢালল। এইভাবে সে সেই পাথরকে ঈশ্বরের স্মরনার্থে স্মৃতি চিহ্নস্বরূপ করল। 19 সেই জায়গার নাম ছিল লুস কিন্তু যাকোব তার নাম বৈথেল রাখল।

20 এরপর যাকোব এক প্রতিজ্ঞা করে বলল, “যদি ঈশ্বর আমার সহায় থাকেন, যদি তিনি আমাকে এ যাত্রায় রক্ষা করেন, যদি তিনি আমার খাদ্য ও পরণের কাপড় যোগান, 21 আর যদি আমি শান্তিতে আমার পিতার গৃহে ফিরতে পারি, যদি ঈশ্বর এই সমস্ত কিছুই সাধন করেন তাহলে প্রভুই আমার ঈশ্বর হবেন। 22 এই পাথর আমি স্মৃতিস্তম্ভ রূপে স্থাপন করছি। এটা প্রমাণ করবে যে এ জায়গা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে এক পবিত্র জায়গা এবং ঈশ্বর আমাকে যা কিছু দেবেন তার দশ ভাগের এক ভাগ অংশ আমি ঈশ্বরকে দেব।”

যাকোবের সঙ্গে রাহেলের সাক্ষাৎ

29 তারপর যাকোব আবার তার যাত্রা পথে চলল। সে পূর্বদিকের দেশে গেল। যাকোব তাকিয়ে দেখল মাঠে একটা কূপ রয়েছে। কূপের ধারে ছিল তিন পাল মেষ। মেষরা এই কূপের জলই পান করত। একটা বড় পাথর দিয়ে কূপের মুখটা ঢাকা ছিল। পালের সব মেষ জড়ো হলে মেষপালকরা কূপের মুখ থেকে পাথরটা গড়িয়ে দিতো। তখন সব মেষরা জল পান করত। মেষদের জল পান শেষ হলে মেষপালকরা সেই পাথরটা আবার যথাস্থানে গড়িয়ে দিত।

সেখানকার মেষপালকদের যাকোব বলল, “ভাইরা, তোমরা কোথা থেকে এসেছ?”

তারা উত্তরে বলল, “আমরা হারোণ থেকে এসেছি।”

তখন যাকোব বলল, “তোমরা কি নাহোরের পুত্র লাবনকে চেন?”

মেষপালকরা উত্তরে বলল, “আমরা তাঁকে চিনি।”

তখন যাকোব বলল, “তিনি কেমন আছেন?”

তারা বলল, “তিনি ভাল আছেন। সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে। দেখুন, তাঁর কন্যা রাহেল এখন মেষপাল নিয়ে আসছেন।”

যাকোব বলল, “দেখ, এখনও দিনের আলো রয়েছে এবং সূর্য ডুবতে এখনও দেরী। মেষ জড়ো করার সময় তো এখন নয়। তাই তাদের জল পান করিয়ে মাঠে আবার চরতে দাও।”

কিন্তু মেষপালকরা বলল, “সব মেষপাল এক জায়গায় জড়ো না হওয়া পর্যন্ত আমরা তা করতে পারি না। তারপর আমরা কূপের মুখ থেকে পাথর সরিয়ে দেব আর সব মেষ জল পান করতে পারবে।”

যে সময় যাকোব মেষপালকদের সঙ্গে কথা বলছিল, সে সময় রাহেল তার পিতার মেষপাল নিয়ে এল। (রাহেলের কাজ ছিল মেষদের যত্ন নেওয়া।)

10 রাহেল ছিল লাবনের কন্যা। লাবন ছিলেন যাকোবের মাতার অর্থাৎ‌ রিবিকার ভাই। যাকোব রাহেলকে দেখে এগিয়ে গিয়ে পাথর সরিয়ে তার মামার মেষদের জল দিল। 11 পরে যাকোব রাহেলকে চুমু খেয়ে উঁচু গলায় কাঁদতে লাগল। 12 যাকোব রাহেলকে বলল যে সে তার পিতার পরিবারের দিক দিয়ে আত্মীয়—রিবিকার পুত্র। তাই রাহেল দৌড়ে বাড়ী গিয়ে তার পিতাকে তা জানাল।

13 লাবন তাঁর বোনের পুত্র যাকোবের কথা শুনলেন। এবার তাই লাবন দৌড়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। লাবন তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন এবং নিজের বাড়ীতে নিয়ে এলেন। যা ঘটেছিল তার সব কিছু যাকোব লাবনকে বলল।

14 তখন লাবন বললেন, “তুমি যে আমার পরিবারের একজন এ বড়ই আনন্দের!” তাই লাবন যাকোবের সঙ্গে এক মাস কাটালেন।

যাকোবের সঙ্গে লাবনের চালাকি

15 একদিন লাবন যাকোবকে বললেন, “পারিশ্রমিক বিনা আমার জন্য তোমার এই পরিশ্রম করাটা ঠিক হচ্ছে না। তুমি আমার আত্মীয়, দাস নও। আমি তোমায় কি পারিশ্রমিক দেব?”

16 লাবনের দুটি কন্যা ছিল। বড়টির নাম লেয়া এবং ছোটটির নাম রাহেল।

17 রাহেল সুন্দরী ছিল। লেয়ার চোখ দুটি শান্ত ছিল।[a] 18 যাকোব রাহেলকে ভালোবাসল। যাকোব লাবনকে বলল, “আমি সাত বছর কাজ করব যদি আপনি আমাকে আপনার কনিষ্ঠা কন্যা রাহেলকে বিয়ে করতে দেন।”

19 লাবন বললেন, “অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে হওয়ার থেকে তোমার সঙ্গে বিয়ে হওয়াটা ওর পক্ষে মঙ্গল হবে। তাই আমাদের সঙ্গে থেকে যাও।”

20 তাই যাকোব থেকে গেল এবং লাবনের জন্য সাত বছর কাজ করল। কিন্তু রাহেলকে সে ভালবাসত বলে এই সাত বছর সময় তার কাছে অল্প বলে মনে হল।

21 সাত বছর পর যাকোব লাবনকে বলল, “রাহেলকে আমায় দিন, আমি তাকে বিয়ে করব। আপনার কাছে পরিশ্রম করার মেয়াদ শেষ হয়েছে।”

22 তাই লাবন সেখানকার সমস্ত লোককে ভোজে নিমন্ত্রিত করলেন। 23 সেই রাত্রে লাবন তাঁর কন্যা লেয়াকে যাকোবের কাছে নিয়ে এলেন। যাকোব ও লেয়া যৌন সহবাস করলেন। 24 (লাবন তার দাসী সিল্পাকে তার কন্যার দাসী হবার জন্যও দিলেন।) 25 সকাল বেলা যাকোব দেখলেন তিনি লেয়ার সাথে রাত কাটিয়েছেন। যাকোব লাবনকে বলল, “আপনি আমার সঙ্গে চালাকি করেছেন। রাহেলকে বিয়ে করার জন্য আপনার জন্য কত কঠোর পরিশ্রম করেছি, তবে কেন আপনি আমার সঙ্গে এই চালাকি করলেন?”

26 লাবন বললেন, “আমাদের দেশের প্রথা অনুযায়ী বড় কন্যার আগে ছোট কন্যার বিয়ে আমরা দিই না। 27 কিন্তু বিবাহ উৎসবের পুরো সপ্তাহটা কাটাও আর আমি রাহেলের সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব। কিন্তু তুমি আরও সাতবছর আমার সেবা করবে।”

28 সুতরাং যাকোব তাই করল এবং বিবাহ অনুষ্ঠানের সপ্তাহটি শেষ করল। তখন লাবন তাঁর কন্যা রাহেলকে যাকোবের স্ত্রী হতে দিলেন। 29 (লাবন তার দাসী বিল্হাকে রাহেলের দাসী হিসেবে দিলেন।) 30 সুতরাং যাকোব রাহেলের সঙ্গেও যৌন সহবাস করল। আর যাকোব রাহেলকে লেয়ার থেকেও বেশী ভালবাসত। যাকোব লাবনের জন্য আরও সাত বছর পরিশ্রম করল।

যাকোবের পরিবার বৃদ্ধি পেল

31 প্রভু দেখলেন যে যাকোব লেয়ার থেকে রাহেলকে বেশী ভালবাসে। তাই প্রভু লেয়াকে সন্তান প্রসবের জন্য সক্ষম করলেন। কিন্তু রাহেলের সন্তান হল না।

32 লেয়া এক পুত্রের জন্ম দিলেন। তিনি তার নাম রাখলেন রূবেণ। লেয়া তার এই নাম দিলেন কারণ তিনি বললেন, “প্রভু আমার কষ্ট সকল দেখেছেন। আমার স্বামী আমায় ভালবাসেন না। তাই এবার আমার স্বামী আমায় ভালবাসতেও পারেন।”

33 লেয়া আবার গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর আর একটি পুত্র হল। তিনি তার নাম রাখলেন শিমিয়োন। লেয়া বললেন, “আমি যে ভালবাসা থেকে বঞ্চিত তা প্রভু শুনেছেন তাই তিনি আমাকে এই পুত্র দিয়েছেন।”

34 লেয়া আবার গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর আর একটি পুত্র হল। তিনি এই পুত্রের নাম লেবি রাখলেন। লেয়া বললেন, “এবার অবশ্যই আমার স্বামী আমায় ভালবাসবেন। আমি তাঁকে তিনটি পুত্র দিয়েছি।”

35 এরপর লেয়া আর একটি পুত্রের জন্ম দিলেন। তিনি এই পুত্রের নাম রাখলেন যিহূদা। লেয়া তার এই নাম রাখলেন কারণ তিনি বললেন, “এখন আমি প্রভুর প্রশংসা করব।” এবার লেয়ার আর সন্তান হল না।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International