Beginning
ঈশ্বর তাঁর পুত্রের মাধ্যমে কথা বলেছেন
1 অতীতে ঈশ্বর ভাববাদীদের মাধ্যমে বহুবার নানাভাবে আমাদের পিতৃপুরুষদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। 2 এখন এই শেষের দিনগুলোতে ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে আবার কথা বললেন। ঈশ্বর তাঁর পুত্রের দ্বারাই সমগ্র জগত সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পুত্রকেই সবকিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন। 3 একমাত্র ঈশ্বরের পুত্রই ঈশ্বরের মহিমার ও তাঁর প্রকৃতির মূর্ত প্রকাশ। ঈশ্বরের পুত্র তাঁর পরাক্রান্ত বাক্যের দ্বারা সবকিছু ধরে রেখেছেন। সেই পুত্র মানুষকে সমস্ত পাপ থেকে শুচিশুদ্ধ করেছেন। তারপর স্বর্গে ঈশ্বরের মহিমার ডানপাশের আসনে বসেছেন। 4 ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে এমন এক নাম দিয়েছেন যা স্বর্গদূতদের নাম থেকে শ্রেষ্ঠ; আর স্বর্গদূতদের তুলনায় তিনি হয়ে উঠেছেন আরো মহান।
5 কারণ ঈশ্বর ঐ স্বর্গদূতদের মধ্যে কাকে কখন বলেছিলেন,
“তুমি আমার পুত্র;
আজ আমি তোমার পিতা হয়েছি।”(A)
আবার ঈশ্বর কখনই বা স্বর্গদূতদের বলেছেন,
“আমি তার পিতা হব
আর সে আমার পুত্র হবে।”(B)
6 আবার তাঁর প্রথম পুত্রকে যখন তিনি জগতে নিয়ে এলেন তখন ঈশ্বর বললেন,
“ঈশ্বরের সমস্ত স্বর্গদূতরা তাঁর উপাসনা করুক।”[a]
7 স্বর্গদূতদের বিষয়ে ঈশ্বর বলেন:
“আমার স্বর্গদূতদের আমি তৈরী করি বায়ুর মতো করে
আর আমার সেবকদের আগুনের শিখার মতো করে।”(C)
8 কিন্তু তাঁর পুত্রের বিষয়ে ঈশ্বর বলেন:
“হে ঈশ্বর, তোমার সিংহাসন হবে চিরস্থায়ী;
আর ন্যায় বিচারের মাধ্যমে তুমি তোমার রাজ্য শাসন করবে।
9 তুমি ন্যায়কে ভালবাস এবং অন্যায়কে ঘৃণা কর।
এই কারণে তোমার ঈশ্বর তোমাকে পরম আনন্দ দিয়েছেন;
তোমার সঙ্গীদের থেকে তোমায় অধিক পরিমাণে দিয়েছেন।”(D)
10 ঈশ্বর একথাও বলেছেন:
“হে প্রভু, আদিতে তুমিই পৃথিবীর ভিত্তিমূল স্থাপন করেছ;
স্বর্গ তোমারই হাতের সৃষ্টি।
11 সেসব একদিন অদৃশ্য হয়ে যাবে; কিন্তু তুমিই নিত্যস্থায়ী।
সেসব পোশাকের মতো পুরানো হয়ে যাবে।
12 তুমি সেসব পোশাকের মতো গুটিয়ে রাখবে;
আর পোশাকের মতো সেগুলির পরিবর্তন হবে।
কিন্তু তোমার কোন পরিবর্তন হবে না,
তোমার অনুগ্রহ শেষ হবে না।”(E)
13 কিন্তু ঈশ্বর স্বর্গদূতদের মধ্যে কাউকে কখনও বলেন নি:
“আমি তোমার শত্রুদের যতক্ষণ না তোমার পদানত করি,
তুমি আমার ডানপাশে বস।”(F)
14 ঐ স্বর্গদূতরা কি পরিচর্যাকারী আত্মা নয়? আর যাঁরা পরিত্রাণ লাভ করেছে তাদের পরিচর্যা করার জন্যই কি এদের পাঠানো হয় নি?
আমাদের পরিত্রাণ বিধি-ব্যবস্থা থেকে মহান
2 এই জন্য যে বাণী আমরা শুনেছি, তাতে আরো ভালভাবে মন দেওয়া আমাদের উচিত, যেন আমরা তার প্রকৃত পথ থেকে বিচ্যুত না হই। 2 যে শিক্ষা স্বর্গদূতদের মুখ দিয়ে ঈশ্বর জানিয়েছিলেন ও যা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল, সেই শিক্ষা যখনই ইহুদীরা অমান্য করে অবাধ্যতা দেখিয়েছে—তাদের শাস্তি হয়েছে, 3 তখন এমন মহত্ এই পরিত্রাণ যা আমাদেরই জন্য এসেছে তা অগ্রাহ্য করলে আমরা কিভাবে রক্ষা পাব? এই পরিত্রাণের কথা প্রভু স্বয়ং ঘোষণা করেছিলেন; আর যাঁরা তাঁর কাছ থেকে এই বাণী শুনেছিল, তারাই আমাদের কাছে এই পরিত্রাণের সত্যতা প্রমাণ করল। 4 ঈশ্বরও নানা সঙ্কেত, আশ্চর্যজনক কাজ, অলৌকিক ঘটনা ও মানুষকে দেওয়া পবিত্র আত্মার নানা বরদানের মাধ্যমে তাঁর ইচ্ছানুয়াযী এবিষয়ে সাক্ষ্য রেখেছেন।
খ্রীষ্ট তাদের রক্ষার্থে মানুষের মতো হয়েছিলেন
5 বাস্তবিক যে জগতের বিষয়ে আমরা বলছি, ঈশ্বর সেই ভাবী জগতকে তাঁর স্বর্গদূতদের কর্তৃত্ত্বাধীন রাখেন নি। 6 এটা শাস্ত্রের কোন এক জায়গায় লেখা আছে:
“হে ঈশ্বর, মানুষ এমন কি যে
তার বিষয়ে তুমি চিন্তা কর?
অথবা মানবসন্তানই বা কে
যে তুমি তার কথা ভাব?
7 তুমি তাকে অল্প সময়ের জন্যই স্বর্গদূতদের থেকে নীচুতে রেখেছিলে;
কিন্তু তুমি তাকেই পরালে সম্মান ও মহিমার মুকুট।
8 আর সব কিছুই তুমি রাখলে তার পদতলে।”(G)
সবকিছু তার অধীন করাতে কোন কিছুই তার কর্তৃত্বের বাইরে রইল না, যদিও এখন আমরা অবশ্য সব কিছু তার অধীনে দেখছি না। 9 কিন্তু আমরা যীশুকে দেখেছি, যাঁকে অল্পক্ষণের জন্য স্বর্গদূতদের থেকে নীচে স্থান দেওয়া হয়েছিল। সেই যীশুকেই এখন সম্মান আর মহিমার মুকুট পরানো হয়েছে। কারণ তিনি মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহে সকল মানুষের জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন।
10 কেবল ঈশ্বরই সেই জন যাঁর দ্বারা সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে এবং সবকিছুই তাঁর মহিমার জন্য, তাই অনেক সন্তানকে তাঁর মহিমার ভাগীদার করতে ঈশ্বর প্রয়োজনীয় কাজটিই করলেন। তিনি তাদের পরিত্রাণের প্রবর্তক যীশুকে নির্যাতন ভোগের মাধ্যমে সিদ্ধ ত্রাণকর্তা করেছেন।
11 যিনি পবিত্র করেন আর যারা পবিত্র হয়, তারা সকলে এক পরিবারভুক্ত। সেই কারণেই তিনি তাদের ভাই বলে ডাকতে লজ্জিত নন। 12 যীশু বলেন,
“হে ঈশ্বর, আমি আমার ভাই-বোনেদের কাছে তোমার নাম প্রচার করব,
মণ্ডলীর মধ্যে তোমার প্রশংসা গান করব।”(H)
13 তিনি আবার বলেছেন,
“আমি ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করব।”(I)
তিনি আবার এও বলেছেন,
“দেখ, এই আমি ও আমার সঙ্গে সেই সন্তানদের, ঈশ্বর আমাকে যাদের দিয়েছেন।”(J)
14 ভাল, সেই সন্তানরা যখন রক্তমাংসের মানুষ, তখন যীশু নিজেও তাদের স্বরূপের অংশীদার হলেন। যীশু এইরকম করলেন যেন মৃত্যুর মাধ্যমে মৃত্যুর অধিপতি দিয়াবলকে ধ্বংস করতে পারেন; 15 আর যারা মৃত্যুর ভয়ে যাবজ্জীবন দাসত্বে কাটাচ্ছে তাদের মুক্ত করেন। 16 কারণ এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে তিনি স্বর্গদূতদের সাহায্য করেন না, কেবল অব্রাহামের বংশধরদেরই সাহায্য করেন। 17 সেই জন্য সবদিক থেকে যীশুকে নিজের ভাইয়ের মতো হতে হয়েছে যাতে তিনি মানুষের পাপের ক্ষমার জন্য একজন দয়ালু ও বিশ্বস্ত মহাযাজকরূপে ঈশ্বরের সাক্ষাতে দাঁড়াতে পারেন। 18 যীশু নিজে পরীক্ষা ও দুঃখভোগের মধ্য দিয়ে গেছেন বলে যারা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাদের যীশু সাহায্য করতে পারেন।
যীশু মোশির থেকে মহান
3 তাই তোমরা সকলে যীশুর বিষয়ে চিন্তা কর। ঈশ্বর যীশুকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি আমাদের ধর্ম বিশ্বাসের মহাযাজক। আমার পবিত্র ভাই ও বোনেরা, আমি তোমাদের বলছি তোমরা এক স্বর্গীয় আহ্বান পেয়েছ। 2 ঈশ্বর যীশুকে আমাদের কাছে পাঠালেন আর তাঁকে তিনি আমাদের মহাযাজক করলেন। মোশির মতন যীশুও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। যীশুর কাছে ঈশ্বর যা কিছু চেয়েছিলেন, ঈশ্বরের সেই গৃহরূপ মণ্ডলীতে তিনি সে সবই করলেন। 3 কেউ যখন কোন গৃহ নির্মাণ করে তখন গৃহ থেকে গৃহনির্মাতার মর্যাদা অধিক হয়, যীশুর বেলায়ও ঠিক তাই হয়েছে, সুতরাং মোশির থেকে অধিক সম্মান যীশুরই প্রাপ্য। 4 প্রত্যেক গৃহ কেউ না কেউ নির্মাণ করে, কিন্তু ঈশ্বর সবকিছু নির্মাণ করেছেন। 5 মোশি ঈশ্বরের গৃহে সেবকরূপে বিশ্বস্তভাবে কাজ করেছিলেন আর ঈশ্বর ভবিষ্যতে যা বলবেন তা লোকদের কাছে মোশিই বললেন। 6 কিন্তু খ্রীষ্ট পুত্র হিসাবে ঈশ্বরের গৃহের কর্তা; আমরা বিশ্বাসীরাই তাঁর গৃহ, আর তাই থাকব যদি আমরা আমাদের সেই মহান প্রত্যাশা সম্পর্কে সাহস ও গর্ব নিয়ে চলি।
আমরা অবশ্যই নিয়ত ঈশ্বরকে অনুসরণ করব
7 তাই পবিত্র আত্মা যেমন বলছেন:
“আজ, তোমরা যদি ঈশ্বরের রব শোন,
8 অতীত দিনের মতো হৃদয় কঠিন করো না, যে দিন তোমরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলে;
সেদিন তোমরা প্রান্তরে ঈশ্বরের পরীক্ষা করেছিলে।
9 সেই প্রান্তরে তোমাদের পিতৃপুরুষরা চল্লিশ বছর ধরে আমার সমস্ত কীর্তি দেখতে পেয়েছিল,
তবু তারা আমার ধৈর্য্য পরীক্ষা করল।
10 তাই আমি এই জাতির ওপর ক্রুদ্ধ হলাম ও বললাম,
‘এরা সব সময় ভুল চিন্তা করে,
এই লোকেরা কখনও আমার পথ বুঝল না।’
11 তখন আমি ক্রুদ্ধ হয়ে এই শপথ করলাম:
‘তারা কখনই আমার বিশ্রাম স্থানে প্রবেশ করতে পারবে না।’”(K)
12 আমার ভাই ও বোনেরা, দেখো, তোমরা সতর্ক থেকো, তোমাদের মধ্যে কারো যেন দুষ্ট ও অবিশ্বাসী হৃদয় না থাকে যা জীবন্ত ঈশ্বর থেকে তোমাদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। 13 তোমরা দিনের পর দিন একে অপরকে উৎসাহিত কর যতক্ষণ সময় “আজ” আছে। পাপের ছলনা যেন তোমাদের হৃদয়কে নির্মম না করে। 14 শুরুতে আমাদের যে বিশ্বাস ছিল যদি শেষ পর্যন্ত আমরা সেই বিশ্বাসে স্থির থাকি তাহলে আমরা সকলেই খ্রীষ্টের সহভাগী। 15 শাস্ত্র তো এই কথা বলে:
“আজ যদি তোমরা ঈশ্বরের রব শোন,
তাহলে তোমাদের অন্তর কঠোর করো না, যেমন সেই বিদ্রোহের দিনে করেছিলে।”(L)
16 যারা ঈশ্বরের রব শোনার পরও তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, প্রশ্ন হল তারা কারা? মোশি যাদের মিশর থেকে বার করে নিয়ে এসেছিলেন তারাই কি নয়? 17 আর কাদের ওপরই বা ঈশ্বর চল্লিশ বছর ধরে ক্রুদ্ধ ছিলেন? সেই লোকদের ওপরে নয় কি যারা পাপ করেছিল ও তার ফলে প্রান্তরে মারা পড়েছিল? 18 তিনি কাদের বিরুদ্ধেই বা শপথ করে বলেছিলেন, “এরা আমার বিশ্রামের স্থানে প্রবেশ করতে পারবে না?” যারা অবাধ্য হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কি নয়? 19 তাহলে এখন আমরা দেখলাম যে, অবিশ্বাসের দরুনই তারা ঈশ্বরের বিশ্রামের স্থানে প্রবেশ করতে পারল না।
4 ঈশ্বর সেই লোকদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা এখনও আমাদের জন্য রয়েছে। এই সেই প্রতিশ্রুতি যে, আমরা ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারব। তাই আমাদের খুব সতর্ক থাকা দরকার, যেন তোমাদের মধ্যে কেউ ব্যর্থ না হও। 2 পরিত্রাণ লাভের জন্য সুসমাচার যেমন ওদের কাছে প্রচার করা হয়েছিল তেমনি আমাদের কাছেও প্রচার করা হয়েছে, তবু সেই সুসমাচার শিক্ষা শুনেও তাদের কোন শুভ ফল দেখা গেল না, কারণ তারা তা শুনে বিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে নি। 3 আমরা যারা বিশ্বাস করেছি, তারাই সেই বিশ্রামের স্থানে প্রবেশ করতে সক্ষম। ঈশ্বর যেমন বলেছিলেন,
“আমি ক্রুদ্ধ হয়ে শপথ করেছি:
‘এরা কখনও আমার বিশ্রামস্থলে প্রবেশ করতে পারবে না।’”(M)
একথা ঈশ্বর বলেছেন যদিও ঈশ্বরের সমস্ত কাজ জগৎ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই সমাপ্ত হয়েছিল। 4 শাস্ত্রের কোন কোন জায়গায় ঈশ্বর সপ্তাহের সপ্তম দিনের বিষয়ে বলেছিলেন: “সৃষ্টির সমস্ত কাজ শেষ করে সপ্তম দিনে তিনি বিশ্রাম করলেন।”(N) 5 আবার শাস্ত্রের অন্য একস্থানে ঈশ্বর বলছেন: “আমার বিশ্রামে ঐ মানুষদের কখনই প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।”
6 তবুও একথা এখনও সত্য যে কেউ সেই বিশ্রামে প্রবেশ করবে, কিন্তু সেই লোকেরা যারা প্রথমে সুসমাচারের কথা শুনেছিল, অবাধ্য হওয়ার কারণে সেখানে প্রবেশ করে নি। 7 তখন ঈশ্বর আবার একটি দিন স্থির করলেন, আর সেই দিনের বিষয়ে তিনি বললেন, “আজ”। ঈশ্বর এর বহুদিন পর রাজা দায়ূদের মাধ্যমে এই দিনটির বিষয়ে বলেছিলেন। যেমন এ বিষয়ে আগেই শাস্ত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:
“আজ যদি তোমরা ঈশ্বরের রব শোন,
তবে অতীত দিনের মতো তোমাদের হৃদয় কঠোর করো না।”(O)
8 যিহোশূয় তাদের ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত বিশ্রামের মধ্যে নিয়ে যেতে পারেন নি। এবিষয়ে আমরা জানি কারণ ঈশ্বর এরপর আবার বিশ্রামের জন্য আর এক দিনের “আজ” কথাটি উল্লেখ করেছেন। 9 এতে বোঝা যায় যে ঈশ্বরের লোকদের জন্য সেই সপ্তম দিনে যে বিশ্রাম তা আসছে, 10 কারণ ঈশ্বর তাঁর কাজ শেষ করার পর বিশ্রাম করেছিলেন। তেমনি যে কেউ ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করে সেও ঈশ্বরের মত তার কাজ শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন করে। 11 তাই এস, আমরাও ঈশ্বরের সেই বিশ্রামে প্রবেশ করতে প্রাণপণ চেষ্টা করি, যাতে আমরা কেউ অবাধ্যতার পুরানো দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে পতিত না হই।
12 ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও সক্রিয়। তাঁর বাক্য দুপাশে ধারযুক্ত তলোয়ারের ধারের থেকেও তীক্ষ্ণ। এটা প্রাণ ও আত্মার গভীর সংযোগস্থল এবং সন্ধি ও অস্থির কেন্দ্র ভেদ করে মনের চিন্তা ও ভাবনার বিচার করে। 13 ঈশ্বরের সামনে কোন সৃষ্ট বস্তুই তাঁর অগোচরে থাকতে পারে না, তিনি সব কিছু পরিষ্কারভাবে দেখতে পান। তাঁর সাক্ষাতে সমস্ত কিছুই খোলা ও প্রকাশিত রয়েছে, আর তাঁরই কাছে একদিন সব কাজকর্মের হিসেব দিতে হবে।
ঈশ্বরের সামনে আসতে যীশু আমাদের সাহায্য করেন
14 আমাদের এক মহাযাজক আছেন যিনি স্বর্গে ঈশ্বরের সাথে বাস করতে গেছেন। তিনি যীশু, ঈশ্বরের পুত্র। তাই এসো আমরা বিশ্বাসে অবিচল থাকি। 15 আমাদের মহাযাজক যীশু আমাদের দুর্বলতার কথা জানেন। যীশু এই পৃথিবীতে সবরকমভাবে প্রলুব্ধ হয়েছিলেন। আমরা যেভাবে পরীক্ষিত হই যীশু সেইভাবেই পরীক্ষিত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কখনও পাপ করেন নি। 16 সেইজন্যে বিশ্বাসে ভর করে করুণা সিংহাসনের সামনে এসো, যাতে আমাদের প্রয়োজনে আমরা দয়া ও অনুগ্রহ পেতে পারি।
5 প্রত্যেক ইহুদী মহাযাজককে মানুষের ভেতর থেকে মনোনীত করা হয়। ঈশ্বর বিষয়ে লোকদের যা করণীয় সেই কাজে সাহায্য করার জন্য যাজককে নিয়োগ করা হয়। সেই যাজক লোকদের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উপহার ও বলি উৎসর্গ করেন। 2 অন্যান্য লোকদের মতো মহাযাজকও দুর্বল। তিনি অপর মানুষের অজ্ঞতা ও বিচ্যুতি থাকলেও তাদের সঙ্গে নরম ব্যবহার করতে সমর্থ যেহেতু তিনিও অন্যান্য লোকদের মতো নিজের দুর্বলতার দ্বারা বেষ্টিত। 3 মহাযাজক মানুষের পাপের জন্য যে বলি উৎসর্গ করেন তার সাথে নিজে দুর্বল বলে নিজের পাপের জন্যও তাকে বলি উৎসর্গ করতে হয়।
4 মহাযাজক হওয়া সম্মানের বিষয়, আর কেউই নিজের ইচ্ছানুসারে এই মহাযাজকের সম্মানজনক পদ নিতে পারে না। হারোণকে যেমন এই কাজের জন্য ঈশ্বর ডেকেছিলেন, তেমনি প্রত্যেক মহাযাজককে ঈশ্বরই ডাকেন। 5 কথাটা খ্রীষ্টের বেলায়ও প্রযোজ্য। খ্রীষ্ট মহাযাজক হয়ে গৌরব দেবার জন্য নিজেকে মনোনীত করেন নি। কিন্তু ঈশ্বরই খ্রীষ্টকে মনোনীত করেছেন। ঈশ্বর খ্রীষ্টকে বলেছিলেন,
“তুমি আমার পুত্র,
আজ আমি তোমার পিতা হলাম।”(P)
6 আর অন্য গীতে ঈশ্বর বললেন,
7 খ্রীষ্ট যখন এ জগতে ছিলেন তখন সাহায্যের জন্য তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। ঈশ্বরই তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে সমর্থ আর যীশু ঈশ্বরের নিকট প্রবল আর্তনাদ ও অশ্রুজলের সঙ্গে প্রার্থনা করেছিলেন। ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রতি তাঁর নম্রতা ও বাধ্যতার জন্য ঈশ্বর যীশুর প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। 8 যীশু ঈশ্বরের পুত্র হওয়া সত্ত্বেও দুঃখভোগ করেছিলেন ও দুঃখভোগের মধ্য দিয়ে বাধ্যতা শিখেছিলেন। 9 এইভাবে যীশু মহাযাজকরূপে পূর্ণতা লাভ করলেন; আর তাই তাঁর বাধ্য সকলের জন্য তিনি হলেন চিরকালের পরিত্রাণের পথ। 10 ঈশ্বর এইজন্যে তাঁকে মল্কীষেদকের মত মহাযাজক বলে ঘোষণা করলেন।
যীশুতে স্থির থাকতে অনুরোধ
11 এই বিষয়ে আমাদের অনেক কিছু বলার আছে; কিন্তু তোমাদের কাছে তার অর্থ ব্যাখ্যা করা কঠিন, কারণ তোমরা তা বুঝতে চেষ্টা করো না। 12 এতদিনে তোমাদের শিক্ষক হওয়া উচিত ছিল; কিন্তু এটা বোধ হয় প্রয়োজনীয় যে তোমাদের ঈশ্বরের বাণীর প্রাথমিক বিষয়গুলি কেউ শেখায়। কোন শক্ত খাবার নয়, তোমাদের প্রয়োজন দুধের। 13 যার দুধের প্রয়োজন সে তো শিশু। সেই ব্যক্তির ধার্মিকতার বিষয়ে যে শিক্ষা আছে সে সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতা নেই। 14 কিন্তু শক্ত খাবার তাদেরই জন্য যারা শিশুর মতো আচরণ করে না এবং আত্মায় পরিপক্ক। নিজেদের শিক্ষা দিয়ে ও তা অভ্যাস করে তারা ভাল মন্দের বিচার করতে শিখেছে।
6 এই জন্য খ্রীষ্টের বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের শেষ করে ফেলা উচিত। যা নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম পুনরায় সেই পুরানো শিক্ষামালার দিকে আর আমাদের ফিরে যাওয়া ঠিক নয়। মন্দ বিষয় থেকে সরে আসা, ঈশ্বরে বিশ্বাস করা এইসব করে আমরা খ্রীষ্টেতে জীবন শুরু করেছিলাম। 2 সেই সময় বিভিন্ন রকম বাপ্তিস্ম ও হস্তার্পণের বিষয়ে আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল। মৃতদের পুনরুত্থানের বিষয়ে শিক্ষা ও অনন্ত বিচার সম্বন্ধেও শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু এখন আমাদের আরো এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন ও উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করা দরকার। 3 ঈশ্বর যদি চান তবে আমরা এই কাজ করব।
4-6 যারা একবার অন্তরে সত্যের আলো পেয়েছে, স্বর্গীয় দানের আস্বাদ পেয়েছে ও পবিত্র আত্মার অংশীদার হয়েছে আর ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে যে মঙ্গল নিহিত আছে তার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে ও ঈশ্বরের নতুন জগতের পরাক্রমের কথা জানতে পেরেছে অথচ তারপর খ্রীষ্ট থেকে দূরে সরে গেছে, এমন লোকেদের মন পরিবর্তন করে খ্রীষ্টের পথে তাদের ফিরিয়ে আনা আর সম্ভব নয়। কারণ তারা ঈশ্বরের পুত্রকে অগ্রাহ্য করে তাঁকে আবার ক্রুশে দিচ্ছে ও সকলের সামনে তাঁকে উপহাসের পাত্র করছে।
7 যে জমি বারবার বৃষ্টি শুষে নেয় ও যারা তা চাষ করে তাদের জন্য ভাল ফসল উৎপন্ন করে, সে জমি যে ঈশ্বরের আশীর্বাদে ধন্য তা বোঝা যায়। 8 কিন্তু যদি সেই জমি শেয়ালকাঁটা ও কাঁটাঝোপে ভরে যায় তবে তা অর্কম্মন্য জমি, তার ঈশ্বরের অভিশাপে অভিশপ্ত হবার ভয় আছে এবং তা আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।
9 আমার প্রিয় বন্ধুরা, যদিও আমরা এরূপ বলছি, তবু তোমাদের সম্বন্ধে আমরা এখন দৃঢ় নিশ্চয় যে, তোমাদের অবস্থা এর থেকে ভালো হবে আর তোমরা যা কিছু করবে তা তোমাদের পরিত্রাণ লাভেরই পদক্ষেপ বিশেষ। 10 ঈশ্বর ন্যায় বিচারক, তোমাদের সব সৎ কর্মের কথা ঈশ্বর মনে রাখেন। তাঁর লোকদের তোমরা যে সাহায্য করেছ ও এখনও করে থাক, এর দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের ভালবাসাই প্রকাশ করেছ, এও কি তিনি ভুলতে পারেন? 11 কিন্তু আমরা চাই যেন তোমাদের প্রত্যেকে তাদের সমস্ত জীবনে একই রকম তৎপরতা দেখাতে পারো, যাতে তোমরা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে পার যে তোমাদের প্রত্যাশা পূর্ণ হবে। 12 আমরা চাই না যে তোমরা অলস হও; কিন্তু আমরা চাই যারা বিশ্বাস ও ধৈর্য্য্যের দ্বারা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি লাভ করে, তোমরাও তাদের মতো হও।
13 ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে একটি প্রতিশ্রুতি করেছিলেন আর ঈশ্বর থেকে মহান কেউ নেই। তাই তাঁর থেকে মহান কোন ব্যক্তির নামে শপথ করতে না পারাতে তিনি নিজের নামে শপথ করলেন। 14 তিনি বললেন, “আমি অবশ্যই তোমাকে আশীর্বাদ করব ও তোমার বংশ অগনিত করব।”(R) 15 এই প্রতিশ্রুতির বিষয়ে অব্রাহাম ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করলেন, পরে ঈশ্বর যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা তিনি লাভ করলেন।
16 সাধারণ মানুষ যখন তার থেকে মহান কোন ব্যক্তির নাম নিয়ে শপথ করে, সে তার প্রতিশ্রুতি পালন করবে কিনা সে বিষয়ে এই শপথের দ্বারা সব সংশয়ের অবসান হয়, সব তর্কের নিষ্পত্তি হয়ে যায়। 17 ঈশ্বর যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সেই প্রতিজ্ঞার উত্তরাধিকারীদের তিনি শপথের মাধ্যমে আরও নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে চাইলেন যে তাঁর সেই প্রতিজ্ঞা অপরিবর্ত্তনীয়। 18 ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি ও শপথ কখনও বদলায় না। ঈশ্বর মিথ্যা কথা বলেন না ও শপথ করার সময়ে ছল করেন না।
অতএব আমরা যারা নিরাপত্তার জন্যে ঈশ্বরের কাছে ছুটে যাই, তাদের পক্ষে এই বিষয়গুলি বড় সান্ত্বনার। ঐ বিষয় দুটি ঈশ্বরের প্রদত্ত আশাতে জীবন অতিবাহিত করার জন্য আমাদের সান্ত্বনা ও শক্তি যোগাবে। 19 আমাদের জীবন সম্পর্কে আমাদের যে প্রত্যাশা আছে তা নোঙরের মত দৃঢ় ও অটল। তা পর্দার আড়ালে স্বর্গীয় মন্দিরের পবিত্র স্থানে আমাদের প্রবেশ করায়। 20 যীশু, যিনি মল্কীষেদকের রীতি অনুযায়ী চিরকালের জন্য মহাযাজক হলেন, তিনি আমাদের হয়ে সেখানে প্রবেশ করেছেন এবং আমাদের জন্য পথ খুলে দিয়েছেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International