Beginning
1 আমি পৌল, খ্রীষ্ট যীশুর একজন প্রেরিত। আমাদের ত্রাণকর্তা ঈশ্বর ও প্রত্যাশাস্থল খ্রীষ্ট যীশুর অনুমতিক্রমে আমি এই পদে নিযুক্ত।
2 আমি তীমথিয়ের কাছে এই চিঠি লিখছি; তুমি আমার প্রকৃত পুত্রের মতো কারণ তুমি বিশ্বাসী।
পিতা ঈশ্বর ও আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশু তোমার প্রতি অনুগ্রহ, দয়া ও শান্তি প্রদান করুন।
ভ্রান্ত শিক্ষার বিষয়ে সতর্কবাণী
3 আমি চাই তুমি ইফিষে থাকো; মাকিদনিয়া যাবার সময় আমি তোমাকে এই অনুরোধ করেছিলাম। ইফিষের কিছু লোক ভ্রান্ত শিক্ষা দিচ্ছে। তুমি ইফিষে থেকে সেই লোকদের সাবধান করে দাও, যেন তারা ভ্রান্ত শিক্ষা না দেয়। 4 তাদের বলো তারা যেন ধর্মীয় উপকথা নিয়ে, বংশের অন্তহীন তালিকা নিয়ে সময় না কাটায়। ওসবে তর্কের সৃষ্টি হয়, ঈশ্বরের কাজে ওসব সাহায্য করে না। ঈশ্বরের কাজ বিশ্বাসের মাধ্যমে হয়। 5 এই আদেশের আসল উদ্দেশ্য হল সেই ভালবাসা জাগিয়ে তোলা। সেই ভালবাসার জন্য প্রয়োজন শুচি হৃদয়, সৎ বিবেক ও অকপট বিশ্বাস। 6 কিছু লোক আছে যারা এসব থেকে দূরে সরে গেছে আর তারা এমন সব কথা বলে যা মূল্যহীন। 7 তারা বিধি-ব্যবস্থার শিক্ষক হতে চায়, অথচ তারা যে কি বলে তার অর্থ নিজেরাই জানে না। এমন কি, যে বিষয় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জোর দিয়ে বলে তারা নিজেরাই সেই বিষয় সম্বন্ধে বোঝে না।
8 কিন্তু আমরা জানি যে, বিধি-ব্যবস্থা উত্তম, যদি কেউ তা ঠিক মতো ব্যবহার করে। 9 আমরা আরো জানি যে বিধি-ব্যবস্থা ধার্মিক লোকদের জন্য নয়; কিন্তু যারা ঈশ্বর বিরোধী, বিধি-ব্যবস্থা ভঙ্গকারী, পাপী, অপবিত্র, অধার্মিক, যারা মা-বাবাকে হত্যা করে, যারা খুন করে, 10 যারা যৌন পাপে পাপী, সমকামী, যারা দাস বিক্রির ব্যবসা করে, যারা মিথ্যা বলে, যারা মিথ্যা শপথ করে, দোষারোপ করে ও যারা কোন না কোনভাবে ঈশ্বরের সত্য শিক্ষার বিরোধিতা করে, বিধি-ব্যবস্থা তাদের জন্য দেওয়া হয়েছে। 11 সেই শিক্ষা পরম ধন্য ঈশ্বরের মহিমাময় সুসমাচারের অংশ যা তিনি আমায় বলতে দিয়েছেন।
ঈশ্বরের দয়ার জন্য ধন্যবাদ
12 আমি আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ তিনি আমাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁর সেবা করার কাজে নিযুক্ত করেছেন। 13 অতীতে আমি খ্রীষ্টের নামে নিন্দা করতাম, তাঁকে নির্যাতন করতাম ও তাঁর প্রতি খারাপ ব্যবহার করতাম। কিন্তু ঈশ্বর আমার প্রতি দয়া করলেন, কারণ অবিশ্বাসী অবস্থায় আমি ঐসব কাজ করেছিলাম এবং কি করছিলাম তা জানতাম না। 14 কিন্তু আমাদের প্রভুর অনুগ্রহ পরিপূর্ণরূপে আমাকে দেওয়া হল। সেই অনুগ্রহের সঙ্গে এল খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাস ও ভালবাসা।
15 এখন আমি যা বলছি তা সত্য, তা সম্পূর্ণভাবে তোমাদের গ্রহণ করা উচিত। খ্রীষ্ট যীশু পাপীদের উদ্ধার করার জন্য জগতে এসেছেন। তাদের মধ্যে আমিই তো সবচেয়ে বড় পাপী। 16 কিন্তু এই কারণেই আমার প্রতি দয়া করা হয়েছে। পাপীদের মধ্যে আমি অগ্রগন্য হলেও খ্রীষ্ট যীশু আমার প্রতি তাঁর পূর্ণ ধৈর্য্য দেখালেন। যারা পরে তাঁর ওপর বিশ্বাস করবে ও অনন্ত জীবন পাবে তাদের সামনে আমাকে এক দৃষ্টান্তস্বরূপ রাখলেন। 17 যিনি যুগপর্যায়ের রাজা, অক্ষয়, অদৃশ্য ও একমাত্র ঈশ্বর; যুগপর্যায়ে যুগে যুগে তাঁরই সম্মান ও মহিমা হোক্। আমেন।
18 তীমথিয়, তুমি আমার পুত্রের মত। আমি তোমাকে একটি আদেশ দিচ্ছি। অতীতে তোমার সম্পর্কে যে ভাববাণী ছিল তার সঙ্গে মিল রেখে এই আদেশ দিচ্ছি। এসব কথা আমি তোমাকে জানাচ্ছি যেন তুমি সেই ভাববাণী অনুসারে চলতে পার ও বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণ পণ রাখতে পার। 19 তুমি বিশ্বাস ও সৎ বিবেক রক্ষা করে এই সংগ্রাম চালিয়ে যাও। কিছু কিছু লোক তাদের সৎ বিবেক পরিত্যাগ করেছে; আর ফলস্বরূপ তারা তাদের বিশ্বাস ধ্বংস করেছে। 20 তাদের মধ্যে হুমিনায় ও আলেকসান্দর রয়েছে, আমি তাদের শয়তানের হাতে তুলে দিয়েছি যাতে তারা উচিত শিক্ষা পায় এবং ঈশ্বর নিন্দা আর কখনও না করে।
স্ত্রী ও পুরুষের জন্য কিছু নিয়ম
2 আমার প্রথম অনুরোধ এই যে তোমরা সকল মানুষের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কর। সকল মানুষের জন্যই ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বল। তাদের যা কিছু প্রয়োজন তা ঈশ্বরের কাছে চাও ও তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ হও। 2 বিশেষ করে রাজাদের ও আধিকারিক সকলের জন্য প্রার্থনা করা উচিত যেন আমরা নীরবে ও শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারি, যে জীবন হবে ঈশ্বরভক্তি ও ঈশ্বরের উপাসনায় পূর্ণ। 3 এরকম করা ভাল, এতে আমাদের ত্রাণকর্তা সন্তষ্ট হন।
4 তাঁর ইচ্ছা এই যেন সমস্ত মানুষ উদ্ধার পায় ও সত্য জানতে পারে। 5 কারণ একমাত্র ঈশ্বর আছেন আর ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে কেবল একমাত্র পথ আছে, যার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের কাছে পৌঁছতে পারে। সেই পথ যীশু খ্রীষ্ট, যিনি নিজেও একজন মানুষ ছিলেন। 6 সমস্ত লোকদের পাপমুক্ত করতে যীশু নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। যীশুর এই কাজ সঠিক সময়ে প্রমাণ করল যে ঈশ্বর চান যেন সব লোক উদ্ধার পায়। 7 এই জন্যই অইহুদীদের কাছে আমাকে সুসমাচার প্রচারক ও প্রেরিতরূপে এবং বিশ্বাসের ও সত্যের শিক্ষক হিসাবে মনোনীত করা হল। আমি সত্যি বলছি, মিথ্যা বলছি না।
স্ত্রী ও পুরুষদের জন্য বিশেষ নির্দেশ
8 আমার ইচ্ছা এই যে, সমস্ত জায়গায় পুরুষরা প্রার্থনা করুক। যারা প্রার্থনার জন্য ঈশ্বরের দিকে হাত তুলবে তাদের পবিত্র হওয়া চাই। তারা মনে ক্রোধ না রেখে ও তর্কাতর্কি না করে প্রার্থনা করুক।
9 অনুরূপভাবে আমি চাই নারীরা যেন ভদ্রভাবে ও যুক্তিযুক্তভাবে উপযুক্ত পোশাক পরে তাদের সজ্জিত করে। তারা নিজেদের যেন শৌখিন খোঁপা করা চুলে বা সোনা মুক্তোর গহনায় বা দামী পোশাকে না সাজায়। 10 কিন্তু সৎ কাজের অলঙ্কারে তাদের সেজে থাকা উচিত। যে নারী নিজেকে ঈশ্বরভক্ত বলে পরিচয় দেয়, তার এইভাবেই সাজা উচিত।
11 নারীরা সম্পূর্ণ বশ্যতাপূর্বক নীরবে নতনম্র হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করুক। 12 আমি কোন নারীকে শিক্ষা দিতে অথবা কোন পুরুষের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করতে দিই না; বরং নারী নীরব থাকুক। 13 কারণ প্রথমে আদমকে এবং পরে হবাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। 14 আদমকে দিয়াবল বোকা বানাতে পারে নি; কিন্তু নারীকেই দিয়াবল সম্পূর্ণভাবে বোকা বানিয়ে পাপে ফেলেছিল।[a] 15 তবু যদি আত্মসংযমের সাথে বিশ্বাসে, প্রেমে ও পবিত্রতায় তারা জীবনযাপন করতে থাকে, তবে নারী মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করে উদ্ধার পাবে।
মণ্ডলীর নেতারা
3 একথা সত্য, যদি কেউ মণ্ডলীর তত্ত্বাবধায়কের কাজে আগ্রহী হন, তবে তিনি এক উত্তম কাজ আশা করেন। 2 তত্ত্বাবধায়ককে অতি অবশ্যই সমালোচনার উর্দ্ধে থাকতে হবে। তিনি এক স্ত্রীর স্বামী হবেন। তাঁকে হতে হবে আত্মসংযমী, ভদ্র, সম্মানীয়, অতিথিসেবক এবং শিক্ষাদানে পারদর্শী মানুষ। 3 প্রচুর দ্রাক্ষারস পান করা তাঁর উচিত হবে না। তিনি উগ্রপ্রকৃতির মানুষও হবেন না। তিনি হবেন ভদ্র ও শান্তিপ্রিয়। অর্থের প্রতি তাঁর লোভ থাকবে না। 4 তাঁকে এমনই মানুষ হতে হবে যিনি নিজের ঘর সংসার সুষ্ঠভাবে চালাতে পারেন, নিজের ছেলেমেয়েদের সুশাসনে রাখতে পারেন যাতে তিনি তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা পান। 5 কেউ যদি নিজের সংসার চালনা করতে না জানে, তবে সে কেমন করে ঈশ্বরের মণ্ডলীর তত্ত্বাবধান করবে?
6 কোন নবদীক্ষিত শিষ্য যেন মণ্ডলীর তত্ত্বাবধায়ক না হয়। এতো শীঘ্রই তাকে এই কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে ভেবে সে হয়তো অহঙ্কারী হয়ে উঠবে। তখন দিয়াবলের মতো তার গর্বের জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে; 7 আর বাইরের লোকদের কাছেও তার সুনাম থাকা দরকার, যাতে সে কোনভাবে অপদস্থ না হয় এবং শয়তানের ফাঁদে না পড়ে।
মণ্ডলীর পরিচারক
8 সেইরকম পরিচারকদেরও সকলের শ্রদ্ধা পাবার যোগ্য মানুষ হতে হবে। তারা যেন এক কথার মানুষ হয়, মাত্রা ছাড়িয়ে দ্রাক্ষারস পান না করে, অপরকে ঠকিয়ে ধনী হবার চেষ্টা না করে। 9 তারা যেন নির্মল বিবেক সম্পন্ন হয় এবং খ্রীষ্টীয় ধর্ম বিশ্বাসের প্রকাশিত গভীর সত্যগুলি নিয়ে আঁকড়ে থাকে। 10 প্রথমে তাদের যাচাই করা হোক্। যদি তাদের মধ্যে নিন্দনীয় কিছু না থাকে, তাহলেই তারা পরিচারকরূপে সেবা করতে পারবে।
11 সেইভাবে মণ্ডলীতে মহিলাদেরও সকলের শ্রদ্ধেয়া হতে হবে। তাঁরা যেন অপরের নামে কুৎসা না রটান, যেন মিতাচারী ও সব ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য হন।
12 মণ্ডলীর পরিচারকদের যেন একটি মাত্র স্ত্রী থাকে, তারা যেন ভালভাবে তাদের সন্তানদের পালন করতে ও সংসার পরিচালনা করতে পারে। 13 কারণ যে পরিচারকরা ভালভাবে কাজ করে, তারা সুনাম অর্জন করে এবং খ্রীষ্ট যীশুতে তাদের বিশ্বাসে সাহসী হয়ে ওঠে।
আমাদের জীবনের নিগূঢ়তত্ত্ব
14 যদিও আমি আশা করছি শীঘ্রই তোমাদের কাছে যাব তবু তোমাদের এসব লিখলাম। 15 কারণ যদি আমার দেরী হয়, তাহলে যেন তোমরা জানতে পার যে ঈশ্বরের পরিবারের মধ্যে কেমন আচার আচরণ করতে হয়, যা জীবন্ত ঈশ্বরের মণ্ডলী—এই মণ্ডলী হল সত্যের স্তম্ভ ও দৃঢ় ভিত। 16 একথা কেউই অস্বীকার করতে পারে না যে আমাদের ধর্মের নিগূঢ় সত্য অতি মহান:
খ্রীষ্ট মনুষ্য দেহে প্রকাশিত হলেন,
পবিত্র আত্মার শক্তিতে যথার্থ প্রতিপন্ন হলেন,
স্বর্গদূতরা তাঁর দর্শন পেলেন।
সর্বজাতির মধ্যে তাঁর সুসমাচার প্রচারিত হল,
জগতের মানুষ তাঁর প্রতি বিশ্বাসী হয়ে উঠল,
পরে স্বমহিমায় তিনি স্বর্গে উন্নীত হলেন।
ভ্রান্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী
4 পবিত্র আত্মা স্পষ্টই বলছেন, শেষের দিকে কিছু লোক বিশ্বাস থেকে সরে পড়বে। যে মন্দ আত্মা মিথ্যা বলে, তারা সেই মন্দ আত্মাকে আনুগত্য দেখাবে এবং ভূতদের শিক্ষায় মন দেবে। 2 যারা মিথ্যা বলে ও লোকদের প্রতারণা করে, এসব ভ্রান্ত শিক্ষা তাদের কাছ থেকেই আসে। তারা ভাল ও মন্দের মধ্যে বিচার করতে পারে না। 3 এরাই মানুষকে বিবাহ করতে নিষেধ করে ও কোন কোন খাদ্য খেতে নিষেধ করে। কিন্তু সেই খাদ্য সামগ্রী ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন এবং যারা বিশ্বাসী ও যারা সত্যকে জানে তারা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে এই খাবার খায়। 4 বাস্তবিক ঈশ্বরের সৃষ্ট সমস্ত বস্তুই ভাল, ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করলে কিছুই অগ্রাহ্য নয়। 5 কারণ ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে ও প্রার্থনা দ্বারা তা শুচিশুদ্ধ হয়।
খ্রীষ্ট যীশুর উত্তম সেবক হও
6 এইসব কথা ওখানকার ভাই ও বোনেদের মনে করিয়ে দিলে তুমি খ্রীষ্ট যীশুর উত্তম সেবকরূপে গন্য হবে। বিশ্বাসের বাক্য ও উত্তম শিক্ষা অনুসরণ করে তুমি যে শক্তিশালী হয়েছ তার প্রমাণ দেখাতে পারবে। 7 ঈশ্বরবিহীন অর্থহীন গল্পের সাথে তোমাদের কোন সম্পর্ক রেখো না। ঈশ্বরের এক ভক্তিমান সেবক হয়ে নিজেকে শিক্ষিত কর। 8 শরীর চর্চায় কিছু উপকার হয় বটে, কিন্তু ঈশ্বরের সেবা সব দিক দিয়েই কল্যাণ করে, কারণ তা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনে লাভের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। 9 যা আমি বলি তা সত্য ও সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য। 10 এই জন্য আমরা প্রাণপন পরিশ্রম ও সংগ্রাম করছি, কারণ আমরা সেই জীবন্ত ঈশ্বরের ওপর প্রত্যাশা রেখেছি, যিনি সমস্ত মানুষের ত্রাণকর্তা, বিশেষ করে তাদের যারা তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখে।
11 তুমি এইসব বিষয় পালনের জন্য আদেশ কর ও শিক্ষা দাও। 12 তুমি যুবক বলে কেউ যেন তোমায় তুচ্ছ না করে। কিন্তু তোমার কথা, স্বভাব, ভালোবাসা, বিশ্বাস ও পবিত্রতার দ্বারা বিশ্বাসীদের সামনে দৃষ্টান্ত রাখ।
13 লোকদের কাছে শাস্ত্র পাঠ করে যাও, তাদের শক্তিশালী কর ও শিক্ষা দাও। আমি যতদিন না আসি তুমি এইসব কাজ করবে। 14 তোমার মধ্যে যে আত্মিক বরদান রয়েছে তা ব্যবহার করতে ভুলো না। এক সময় মণ্ডলীর প্রাচীনরা তোমার ওপর হস্তার্পণ করেছিলেন, সেই সময় ভাববাদীর দ্বারা সেই দান তোমাতে অর্পিত হয়েছিল। 15 ঐসব কাজ করে যাও। ঐ কাজের উদ্দেশ্যে তোমার জীবন উৎসর্গ কর। তাতে সব লোক দেখতে পাবে তোমার কাজ কেমন এগোচ্ছে। 16 নিজের জীবন ও তুমি যা শিক্ষা দাও সে সম্বন্ধে সাবধান থেকো। তোমার ঐ সব দায়িত্ব তুমি পালন করেই চল; কারণ তা করলে তুমি নিজেকে ও যারা তোমার কথা শোনে, তাদেরও উদ্ধার করতে পারবে।
5 তোমার চেয়ে বয়োবৃদ্ধ কাউকে কখনও কঠোরভাবে তিরস্কার করবে না; তাকে পিতার মত মনে করে তার কাছে আবেদন কর। তোমার চেয়ে যারা কমবয়সী তাদের সাথে তোমার ভাইয়ের মত ব্যবহার করো। 2 বয়স্কা মহিলাদের মায়ের মতো দেখো। যুবতীদের সঙ্গে পূর্ণ বিশুদ্ধতার সাথে বোনের মত ব্যবহার করো।
বিধবাদের তত্ত্বাবধান সম্পর্কে
3 প্রকৃত বিধবারা যারা সত্যি একাকী ও বঞ্চিত তাদের সম্মান করো; 4 কিন্তু কোন বিধবার যদি ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনী থাকে তাহলে তারা আগে ঘরের মানুষেরই প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করতে শিখুক। তা করলে তারা তাদের পিতামাতা ও পিতামহ, মাতামহের স্নেহের ঋণ শোধ করতে পারবে। এই কাজ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে। 5 প্রকৃত বিধবা যে পৃথিবীতে সহায়-সম্বলহীনা সে তো ঈশ্বরের ওপর ভরসা রেখে চলে। সে তো দিনরাত ঈশ্বরের কাছে সাহায্য লাভের জন্য প্রার্থনা জানায়। 6 যে বিধবা বিলাস ব্যসনেই দিন কাটায় তার কথা আলাদা, বলতে গেলে সে জীবিত থেকেও মৃত। 7 এইসব নির্দেশ তুমি বিশ্বাসীদের মনে করিয়ে দাও, যাতে কারো কোন বদনাম না হয়। 8 কোন লোক যদি তার আত্মীয় স্বজন আর বিশেষ করে তার পরিবারের লোকদের ভরণপোষন না করে, তার মানে সে বিশ্বাসীদের পথ থেকে সরে গেছে, সে তো অবিশ্বাসীর চেয়েও অধম।
9 বিধবাদের তালিকায় এমন বিধবাদের নাম লেখা চলে যাঁর বয়স কমপক্ষে ষাট বছর এবং যাঁর একটিমাত্র স্বামী ছিল এবং 10 যাঁর নানা সৎ কাজের জন্য সুনাম আছে অর্থাৎ যদি তিনি ছেলেমেয়েদের মানুষ করে থাকেন, যদি বিদেশীদের সেবা করে থাকেন, যদি ঈশ্বরের লোকদের পা ধুইয়ে থাকেন, যদি কষ্টে লোকদের সাহায্য করে থাকেন, যদি সমস্ত সৎ কাজের অনুসরণ করে থাকেন।
11 কোন তরুণী বিধবার নাম তুমি কিন্তু সেই তালিকায় তুলতে অস্বীকার করো। কারণ তাদের দৈহিক বাসনা খ্রীষ্ট ভক্তির চেয়ে প্রবল হয়ে উঠলে তারা আবার বিয়ে করতে চাইবে। 12 তা করলে তাদের প্রথম শপথ ভঙ্গের দায়ে তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর শাস্তির কারণ হয়। 13 এ ছাড়া তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়িয়ে অলস হতে শেখে, কেবল অলসই নয়, বরং বাচাল এবং অনধিকার চর্চা করতে ও যে কথা বলা উচিত নয় সেই কথা বলতে শেখে। 14 অতএব আমার ইচ্ছা আমাদের শত্রুদের তাদের নিন্দা করবার কোন সুযোগ না দিয়ে বরং যুবতী বিধবা আবার বিয়ে করুক, সন্তানের মা হোক্, ঘর সংসার করুক। 15 কারণ কয়েকজন বিধবা তো ইতিমধ্যেই ধর্মের পথ ছেড়ে শয়তানের পথে চলেছে।
16 যদি কোন বিশ্বাসী মহিলার পরিবারে বিধবারা থাকে, তবে মণ্ডলীকে বোঝাগ্রস্ত না করে তিনিই তাদের উপকার করুন, তাদের সাহায্য করুন, তার ফলে মণ্ডলী সেই সব বিধবাদের সাহায্য করতে পারবে যারা সত্যি নিরুপায়।
বয়স্ক এবং অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্কে
17 যে সমস্ত প্রাচীনরা মণ্ডলী পরিচালনা করেন তাঁরা দ্বিগুণ সম্মানের যোগ্য, বিশেষ করে যাঁরা বাক্য প্রচার ও শিক্ষাদান করেন। 18 কারণ শাস্ত্র বলছে, “যে বলদ শস্য মাড়ে তার মুখ বন্ধ করো না।”(A) আর “যে কাজ করে সে তো তার পারিশ্রমিক লাভের যোগ্য।”(B)
19 কোন প্রাচীনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গ্রাহ্য করো না, যদি না দুই বা তিনজন সাক্ষী সেই অভিযোগ সমর্থন করে। 20 যে প্রাচীনরা পাপ করেই চলে তাদের মণ্ডলীতে সকলের সামনে তিরস্কার কর যাতে অন্যরা চেতনা লাভ করে।
21 আমি ঈশ্বরের, খ্রীষ্ট যীশুর মনোনীত স্বর্গদূতদের সামনে তোমাকে এই কাজ করতে দৃঢ় আদেশ দিচ্ছি। কিন্তু সত্য না জেনে তুমি কারো বিচার করো না এবং এটা সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য।
22 মণ্ডলীর সেবার জন্য কাউকে নিযুক্ত করতে ও তার ওপর হস্তার্পন করতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিও না। অপরের পাপের ভাগী হয়ো না। নিজেকে শুদ্ধভাবে রক্ষা কর।
23 তীমথিয়, তুমি শুধু জল খেও না, তার বদলে তুমি একটু দ্রাক্ষারস পান করো, কারণ তা তোমার পেটের জন্য ভাল হবে ও তোমার বার বার অসুখ হবে না।
24 কোন কোন লোকের পাপ সহজেই দেখা যায়, আর তাদের পাপ এই প্রমাণ করে যে তাদের বিচার হবে, আবার কোন কোন লোকের পাপ পরে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। 25 অনুরূপভাবে মানুষের সৎ কাজও সহজে প্রকাশ পায়। এমনকি তাদের স্পষ্টভাবে দেখা না গেলেও তাদের চিরদিন ঢেকে রাখা যায় না।
দাসদের জন্য বিশেষ নির্দেশ
6 যারা দাস, তারা নিজের নিজের মনিবদের যথাযোগ্য সম্মান করুক। তা করলে ঈশ্বরের দান এবং আমাদের শিক্ষার নিন্দা হবে না। 2 যে সব দাসের মনিব বিশ্বাসী, তারা পরস্পর ভাই। তাই বলে দাসরা সম্মানের দিক দিয়ে মনিব ভাইদের কোনভাবে তুচ্ছ না করুক, এবং সেইসব দাসরা তাদের মনিবদের আরো ভাল করে সেবা করুক, কারণ যারা উপকার পাচ্ছে তারাও বিশ্বাসী।
তুমি লোকদের এইসব অবশ্য শেখাবে ও সেই অনুসারে কাজ করতে উৎসাহ দেবে।
ভ্রান্ত শিক্ষা ও সত্যিকারের ধন
3 কিছু লোক আছে যারা অন্যরকম শিক্ষা দেয়; তারা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সত্য শিক্ষার সঙ্গে একমত নয়, এবং যে শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের সেবার জন্য পথ দেখায় তা তারা গ্রহণ করে না। 4 যে ব্যক্তির শিক্ষা ভ্রান্ত, সে গর্বে পরিপূর্ণ ও অজ্ঞ। সে নিছক কথা নিয়ে রাগ ও তর্কাতর্কি করতে ভালবাসে। এটাই তার অসুস্থতা, যার ফলশ্রুতি হল ঈর্ষা, ঝগড়া, পরনিন্দা ও কুসন্দেহ। 5 এইসব লোকদের কাছ থেকে শুধু ঝগড়া শোনা যায়, এরা দুর্নীতিগ্রস্ত মনের মানুষ এবং সত্যকে হারিয়েছে। তারা মনে করে যে ঈশ্বরের সেবা করা ধনী হবার এক উপায়।
6 একথা সত্যি যে ঈশ্বরের সেবার ফলে মানুষ মহাধনী হতে পারে, যদি তার কাছে যা আছে তাতেই সে সন্তষ্ট থাকে। 7 কারণ আমরা জগতে কিছুই সঙ্গে করে নিয়ে আসিনি আর কোন কিছুই সঙ্গে করে নিয়ে যেতেও পারি না। 8 তাই অন্ন বস্ত্রের সংস্থান পেলে আমরা তাতেই সন্তষ্ট থাকব। 9 কিন্তু যাদের ধনী হবার ইচ্ছা, তারা প্রলোভনে এবং ফাঁদে পড়ে নানারকম মূর্খামির কাজ করে ও ক্ষতিকর বাসনায় আসক্ত হয় যা তাদের ধ্বংস ও বিনাশের পথে ঠেলে দেয়। 10 কারণ সকল মন্দের মূলে আছে অর্থের প্রতি আসক্তি। সেই অর্থের লালসায় কত লোক বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে; আর তার ফলে তারা নিজেদের জীবনে অনেক অনেক দুঃখ ব্যথা নিয়ে এসেছে।
কিছু জিনিস মনে রাখা উচিত
11 কিন্তু তুমি ঈশ্বরের লোক, তাই এইসব থেকে তুমি দূরে থেকো। সত্য পথে চলতে চেষ্টা কর, ঈশ্বরের সেবা কর। বিশ্বাস, ভালবাসা, ধৈর্য্য ও নম্রতা এইসব গুনের অধিকারী হবার জন্য চেষ্টা কর। 12 বিশ্বাস রক্ষা করার দৌড়ে জয়লাভ করতে প্রাণপন চেষ্টা কর। যে জীবন চিরায়ত তা পাবার বিষয়ে সুনিশ্চিত হও। তুমি সেই জীবন গ্রহণ করার জন্য আহুত। 13 অনেক সাক্ষীর সামনে এবং সেই যীশু খ্রীষ্টের সামনে আমি তোমাকে এই আদেশ করছি, পন্তীয় পীলাতের সামনে যীশুও সেই মহান সত্যের পক্ষে নির্ভীক স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন। 14 যা তোমাকে আদেশ করা হয়েছে, তা পালন কর। এখন থেকে প্রভু যীশু পুনরায় না আসা পর্যন্ত অনিন্দনীয় আচরণে তোমার দায়িত্ব পালন করে চল। 15 নিরুপিত সময়ে ঈশ্বর এসমস্ত সম্পন্ন করবেন; তিনি সেই পরম ধন্য ঈশ্বর, বিশ্বের একমাত্র শাসনকর্তা যিনি রাজার রাজা ও প্রভুর প্রভু। 16 যিনি অমরতার একমাত্র অধিকারী এবং অগম্য জ্যোতির মধ্যে বাস করেন, যাঁকে কেউ কোন দিন দেখতে পায় নি, পাবেও না। সম্মান ও অনন্ত পরাক্রম ও কর্তৃত্ত্ব যুগে যুগে তাঁরই হোক্। আমেন।
17 যারা এই যুগে ধনী, তাদের এই আদেশ দাও যেন তারা গর্ব না করে। সেই ধনীদের বলো তারা যেন অনিশ্চিত সম্পদের ওপর আস্থা না রাখে, কিন্তু ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করুক, যিনি আমাদের উদার হাতে সব কিছু ভোগ করতে দিয়েছেন। ধনীদের বল তারা যেন সৎ কর্ম করে। 18 তারা যেন সৎ কাজ রূপ ধনে ধনী হয়ে ওঠে। তাদের উদার হতে ও সম্পদ ভাগ করে নিতে প্রস্তুত হতে বল। 19 এই কাজের দ্বারা তারা স্বর্গে সম্পদ গড়ে তুলবে, সম্পদের ভিতে গড়ে উঠবে তাদের ভবিষ্যত, তখন তারা প্রকৃত জীবনের অধিকারী হতে পারবে।
20 শোন তীমথিয়, তোমার ওপর ঈশ্বর যে ভার দিয়েছেন তা সযত্নে রক্ষা কর। যা তথাকথিত পাণ্ডিত্য নামে পরিচিত, সেই মূর্খ অসার কথা—বার্তার মধ্যে ও তর্কের মধ্যে যেও না। 21 কেউ কেউ জীবনে ঐ জ্ঞানের দাবি করে। ঐসব লোক বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে।
ঈশ্বরের অনুগ্রহ তোমাদের ওপর বিরাজ করুক।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International