Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
প্রেরিত 18-20

করিন্থে পৌল

18 এরপর পৌল আথীনী ছেড়ে করিন্থে এলেন। সেখানে আক্কিলা নামে এক ইহুদীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়, তিনি ছিলেন পন্ত দেশের লোক। সম্প্রতি তিনি তাঁর স্ত্রী প্রিষ্কিল্লাকে নিয়ে ইতালী থেকে এসেছিলেন, কারণ ক্লৌদিয় সমস্ত ইহুদীদের রোম ছেড়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পৌল তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তাঁরা তাঁবু নির্মাণ করতেন যেমন পৌলও করতেন। এইজন্য তিনি তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে লাগলেন।

প্রতি বিশ্রামবারে পৌল সমাজ-গৃহে ইহুদী ও গ্রীকদের সঙ্গে কথা বলতেন। পৌল চেষ্টা করতেন যেন এইসব লোকরা যীশুতে বিশ্বাসী হয়। সীল ও তীমথিয় যখন মাকিদনিয়া থেকে করিন্থে এলেন, তখন পৌল সুসমাচার প্রচারের জন্য তাঁর সমস্ত সময় দিলেন। যীশুই যে ঈশ্বরের খ্রীষ্ট এই প্রমাণ তিনি ইহুদীদের দিচ্ছিলেন। কিন্তু ইহুদীরা পৌলের শিক্ষার বিরোধিতা করে তাঁকে গালাগাল দিতে লাগল। তখন তিনি তাঁর পোশাকের ধুলো ঝেড়ে তাদের বললেন, “তোমাদের যদি উদ্ধার না হয় তার জন্য তোমরা দায়ী। আমি দায়মুক্ত! এরপর আমি অইহুদীদের কাছে যাব!”

পৌল সেখান থেকে চলে গিয়ে সমাজ-গৃহের পাশে তিতিয় যুষ্ট নামে এক ঈশ্বরভক্ত অইহুদীর বাড়িতে উঠলেন; ইনি সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। সমাজ-গৃহের পরিচালক ক্রীষ্প ও তাঁর পরিবারের সকলে প্রভু যীশুতে বিশ্বাসী হল। করিন্থের আরো অনেকে পৌলের কথা শুনল, বিশ্বাস করল ও বাপ্তিস্ম নিল।

এক রাতে এক দর্শনে প্রভু পৌলকে বললেন, “ভয় পেয়ো না! কিন্তু কথা বলে যাও, চুপ করে থেকো না! 10 আমি তোমার সঙ্গে আছি; কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না, কারণ এই শহরে আমার লোকরা আছে।” 11 তাই পৌল সেখানে থেকে দেড় বছর ধরে তাদের ঈশ্বরের বাণী শিক্ষা দিলেন।

পৌলকে গাল্লিয়োর সামনে আনা হল

12 গাল্লিযো যখন আখায়ার রাজ্যপাল ছিলেন, তখন ইহুদীদের কিছু লোক জোট পাকিয়ে পৌলের বিরুদ্ধে দাঁড়াল। তারা পৌলকে বিচারালয়ে নিয়ে হাজির করল। 13 এই ইহুদীরা গাল্লিযোকে বলল, “এই লোকটি আমাদের বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অন্য এক পদ্ধতিতে ঈশ্বরের উপাসনা করতে শিক্ষা দিচ্ছে!”

14 পৌল সেই সময় যখন কিছু বলতে যাচ্ছেন, তখন গাল্লিযো ইহুদীদের উদ্দেশ্যে বললেন, “হে ইহুদীরা শোন! এ যদি কোন অপরাধ বা মারাত্মক রকম অন্যায় কোন কাজ করত তবে তোমাদের কথা শোনা আমার পক্ষে যুক্তিযুক্ত হত। 15 কিন্তু তোমরা যখন কোন ব্যক্তির নাম, তার বাণী বা তোমাদের বিধি-ব্যবস্থার বিষয়ে বিচারের প্রশ্ন তুলছ, তখন তোমরাই এর বিচার কর, আমি ওসব বিষয়ের বিচারকর্তা হতে চাই না!” 16 এই বলে তিনি তাদের সকলকে বিচারালয় থেকে যেতে বললেন।

17 তখন তারা সমাজ-গৃহে পরিচালক সোস্থিনীকে ধরে বিচারালয়ের সামনে প্রচণ্ড মারল; কিন্তু গাল্লিযো সে বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ করলেন না।

পৌলের আন্তিয়খিয়ায় প্রত্যাবর্তন

18 পৌল সেই শহরে আরো কিছুদিন থাকার পর ভাইদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সমুদ্র পথে সুরিয়ার দিকে রওনা দিলেন। তাঁর সঙ্গে আক্কিলা ও প্রিষ্কিল্লাও ছিল। এক মানত পুরণ করতে পৌল কিংক্রিয়াতে এসে মাথা কামিয়ে ফেললেন। 19 সেখান থেকে তাঁরা ইফিষে পৌঁছালেন। প্রিষ্কিল্লা ও আক্কিলাকে সেখানে রেখে পৌল সমাজ-গৃহে গেলেন আর ইহুদীদের সঙ্গে শাস্ত্র আলোচনা করতে লাগলেন। 20 তারা সেখানে তাঁকে আরো কিছুদিন থাকার জন্য অনুরোধ করল বটে কিন্তু তিনি তাতে রাজী হলেন না। 21 সেখান থেকে যাবার সময় তিনি তাদের বললেন, “ঈশ্বরের ইচ্ছা হলে আমি আবার তোমাদের কাছে আসব।” এরপর তিনি ইফিষ থেকে সমুদ্র যাত্রা করলেন।

22 তিনি কৈসরিয়া শহরে পৌঁছলেন। এরপর জেরুশালেমে সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শুভেচ্ছা জানাবার পর পৌল সেখান থেকে আন্তিয়খিয়া শহরে গেলেন। 23 আন্তিয়খিয়ায় পৌল কিছু সময় থাকলেন। তারপর আন্তিয়খিয়া ছেড়ে গালাতিয়া ও ফরুগিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করে সেইসব স্থানের অনুগামীদের নতুন শক্তি জাগিয়ে তুললেন।

ইফিষে ও আখায়াতে আপল্লো

24 আপল্লো নামে একজন ইহুদী ইফিষে এলেন, ইনি আলেকসান্দ্রীয় নগরে জন্মেছিলেন। তিনি শিক্ষিত মানুষ ছিলেন এবং শাস্ত্র খুব ভাল করে জানতেন। 25 আপল্লো প্রভুর পথের বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি আত্মার আবেগে কথা বলতেন এবং যীশুর বিষয়ে নির্ভুলভাবে শিক্ষা দিতেন, কিন্তু তিনি কেবল যোহনের বাপ্তিস্মের বিষয়েই জানতেন। 26 আপল্লো যখন সমাজ-গৃহে নির্ভীকভাবে প্রচার করছিলেন, সেই সময় প্রিষ্কিল্লা ও আক্কিলা তাঁর কথা শুনে তাঁকে একান্তে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঈশ্বরের পথের বিষয়ে আরো নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে দিলেন।

27 আপল্লো আখায়াতে যেতে চাইলে খ্রীষ্ট বিশ্বাসী ভাইরা তাঁকে সে বিষয়ে উৎসাহ দিলেন। তাঁরা আখায়ার খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের চিঠি লিখে দিলেন যেন তাঁরা আপল্লোকে সাদরে গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে পৌঁছালে যারা অনুগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বাসী হয়েছিল, আপল্লো তাদের অনেককে সাহায্য করলেন। 28 তিনি প্রকাশ্য বিতর্ক সভায় দৃঢ়তার সঙ্গে ইহুদীদের হারিয়ে দিলেন এবং শাস্ত্র থেকে প্রমাণ করলেন যে, যীশুই হলেন সেই খ্রীষ্ট।

পৌল ইফিষে

19 আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন তখন পৌল সেই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে ইফিষে এসে পৌঁছলেন। সেখানে তিনি যোহন বাপ্তাইজকের কয়েকজন অনুগামীর দেখা পেলেন। তিনি তাদের বললেন, “তোমরা যখন বিশ্বাসী হও, তখন কি পবিত্র আত্মা পেয়েছিলে?”

তারা তাঁকে বলল, “কই? পবিত্র আত্মা বলে যে কিছু আছে এমন কথা তো আমরা কখনও শুনি নি!”

তিনি তাদের বললেন, “তবে তোমাদের কি ধরণের বাপ্তিস্ম হয়েছিল?”

তারা বলল, “যোহন যে ধরণের বাপ্তিস্ম দিতেন।”

পৌল বললেন, “যোহন মন-ফেরানোর জন্য লোকদের বাপ্তাইজ করতেন। তিনি তাদের বলতেন, তাঁর পরে যিনি আসছেন, তাঁর ওপর অর্থাত যীশুর ওপর বিশ্বাস কর।”

তারা একথা শুনে প্রভু যীশুর নামে বাপ্তাইজ হল। এরপর পৌল তাদের ওপর হাত রাখলে, তাদের ওপর পবিত্র আত্মা নেমে এলেন। তারা নানা ভাষায় কথা বলতে ও ভাববাণী বলতে শুরু করল। তারা মোট বারো জন পুরুষ ছিল।

এরপর পৌল সমাজ-গৃহে গেলেন, আর সেখানে তিন মাস ধরে নির্ভীকভাবে কথা বললেন এবং যুক্তিসহ ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন তাঁর কথা মানতে চাইল না। তারা প্রকাশ্যে খ্রীষ্টের পথের বিরুদ্ধে নিন্দা করতে লাগল। তখন পৌল তাদের ছেড়ে চলে গেলেন, যীশুর অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে গেলেন। পরে প্রতিদিন তুরানের ভাষণ কক্ষে পৌল তাদের নিয়ে শাস্ত্র আলোচনা করতে লাগলেন। 10 এইভাবে দুবছর কেটে গেল, এর ফলে এশিয়ায় যাঁরা বাস করত, কি ইহুদী, কি গ্রীক সকলেই প্রভুর বাক্য শুনলেন।

শীভার সন্তানগণ

11 ঈশ্বর পৌলের হাত দিয়ে অনেক অলৌকিক ঘটনা সম্পন্ন করালেন। 12 এমন কি তাঁর স্পর্শ করা গামছা অসুস্থ লোকদের গায়ে ছোঁয়ালে তাদের রোগ ভাল হয়ে যেত, আর অশুচি আত্মারাও তাদের মধ্য থেকে বার হয়ে যেত।

13-14 সেই সময়ে কয়েকজন ইহুদী ওঝা ঘুরে বেড়াত, যারা অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকদের ছাড়াতো। ইহুদী মহাযাজক শীভার সাত ছেলেও এই কাজ করছিল। এই ইহুদীরা লোকদের মধ্য থেকে অশুচি আত্মা তাড়াতে প্রভু যীশুর নাম ব্যবহার করত। তারা বলত, “যে যীশুর কথা পৌল প্রচার করছেন, সেই যীশুর নামে আমি আদেশ করছি এর মধ্য থেকে বার হয়ে যাও!”

15 কিন্তু একবার অশুচি আত্মা সেই ইহুদীদের বলল, “আমি যীশুকে জানি, পৌলকেও জানি, কিন্তু তোরা আবার কে?”

16 এরপর যার মধ্যে দিয়াবলের অশুচি আত্মা বাস করছিল, সে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই শীভার ছেলেদের সবাইকে ধরাশায়ী করল। এর ফলে সেই ইহুদীরা আহত ও উলঙ্গ অবস্থায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেল। 17 ইহুদী ও গ্রীক যারা ইফিষে থাকত, তারা সবাই এই ঘটনার কথা জানতে পারল। এর ফলে তাদের সকলের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার হল আর প্রভুর নাম সমাদৃত হল। লোকেরা যীশুর নামকে আরও উচ্চ সম্মান দিতে লাগল। 18 অনেকে যারা বিশ্বাসী হল তারা নিজের নিজের অপকর্মের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করল। 19 আবার অনেকে যারা যাদুক্রিয়া করত, তারা তাদের বইপত্র ও সাজসরঞ্জাম এনে প্রকাশ্যে আগুনে পুড়িয়ে দিল, গণনা করে দেখা গেল তার দাম ছিল পঞ্চাশ হাজার রৌপ্য মুদ্রা। 20 এইভাবে প্রবলভাবে প্রভুর বাক্য প্রসার লাভ করল এবং শক্তিশালী হতে লাগল আর বহুলোক বিশ্বাস করল।

পৌলের যাত্রা পরিকল্পনা

21 এই ঘটনার পর পৌল ঠিক করলেন যে তিনি মাকিদনিয়া ও আখায়া হয়ে জেরুশালেমে যাবেন। তিনি বললেন, “সেখানে গিয়ে পরে আমি রোমেও যাব।” 22 তিনি তাঁর দুজন সহকারীকে অর্থাৎ তীমথিয় ও ইরাস্তকে মাকিদনিয়ায় পাঠালেন আর নিজে কিছু দিন এশিয়ায় রয়ে গেলেন।

ইফিষে গোলমাল

23 সেই সময় ইফিষে মহা গণ্ডগোলের সৃষ্টি হল। ঈশ্বরের পথের বিষয়ই ছিল এই গণ্ডগোলের কারণ। ঘটনাটা এইভাবে হল; 24 দীমীত্রিয় নামে একজন স্বর্ণকার দেবী দীয়ানার রূপোর মন্দির তৈরী করত আর কারিগরদের অনেক কাজ জুগিয়ে দিত।

25 সে তার ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত অন্য সব কারিগরদের একত্র করে সভায় বলল, “ভাইসব তোমরা জান এই কাজের দ্বারা আমরা সকলে ভালই রোজগার করি। 26 এও তো দেখতে ও শুনতে পাচ্ছ কেবল এই ইফিষে নয়, প্রায় সমস্ত এশিয়ায় এই পৌল বহু লোককে প্রভাবিত করেছে ও এই বলে বেড়িয়েছে যে, মানুষের হাতে গড়া দেবতারা নাকি দেবতাই নয়। 27 এতে আমাদের এই বৃত্তির যে কেবল দুর্নাম হবে তাই নয়, মহাদেবী দীয়ানার মন্দিরও লোকসমক্ষে তুচ্ছ হবে। আবার যাকে সমস্ত এশিয়া, এমন কি সারা জগত সংসার উপাসনা করে, তিনিও তাঁর বিপুল গরিমা হারাবেন।”

28 এই কথা শুনে লোকেরা প্রচণ্ড রেগে গেল। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, “ইফিষের দীয়ানাই মহান!” 29 এতে সমস্ত শহরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। সকলে একসঙ্গে রঙ্গভূমির দিকে ছুটল। তারা তাদের সঙ্গে টানতে টানতে নিয়ে চলল গায় ও আরিষ্টার্খ নামে দুজন মাকিদনিয়ান লোককে, যাঁরা পৌলের সঙ্গী ছিলেন। 30 তখন পৌল লোকদের কাছে যেতে চাইলে অনুগামীরা তাঁকে বাধা দিল, যেতে দিল না। 31 সেই প্রদেশের কয়েকজন নেতা যাঁরা তাঁর বন্ধু ছিলেন, তাঁরা পৌলের কাছে লোক পাঠিয়ে অনুরোধ করলেন যেন তিনি রঙ্গভূমিতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে না আনেন।

32 এদিকে নানা লোকে নানা কথা বলে চিৎকার করছিল, কারণ সভার মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গিয়েছিল, অধিকাংশ লোক জানতই না কেন তারা সেখানে এসেছে। 33 কয়েকজন ইহুদী আলেকসান্দারকে সামনে ঠেলে দিল, একেই জনতার কয়েকজন পরামর্শ দিচ্ছিল। তিনি সকলকে ইশারায় চুপ করতে বললেন, ও তাদের কাছে কিছু বলতে চাইলেন। 34 কিন্তু তারা যখন বুঝতে পারল যে তিনি একজন ইহুদী তখন জোরে চিৎকার করতে লাগল। দুঘন্টা ধরে তারা শুধু এই বলে চেঁচিয়েই চলল, “ইফিষের দীয়ানাই মহান!”

35 শেষ পর্যন্ত শহরের করণিক জনতাকে শান্ত করে বললেন, “হে ইফিষীয়রা, বল দেখি, ইফিষীয়দের শহর যে মহাদেবী দীয়ানার মন্দিরের তত্ত্বাবধান করে এবং সেই মন্দিরের পবিত্র পাথর যে আকাশ থেকে পড়েছিল তা কে না জানে? 36 তাই এই কথা যখন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, তখন তোমাদের শান্ত হওয়া উচিত এবং অসংযত কোন কাজ করা উচিত নয়।

37 “কারণ এই যে লোকদের তোমরা এখানে এনেছ, এরা তো মন্দির লুঠও করে নি বা আমাদের দেবীর অপমানও করে নি। 38 তাই যদি কারো বিরুদ্ধে দীমীত্রিয় ও তার সম-ব্যবসায়ীদের কোন অভিযোগ থাকে, তবে আদালত খোলা আছে, বিচারকরাও আছেন, তারা সেখানে গিয়ে তাদেব বিরুদ্ধে মামলা করুক!

39 “আর যদি অন্য কোন বিষয় অনুসন্ধানের থাকে তবে তার বিচার আইনানুগ বিচার সভায় করা যেতে পারে। 40 কারণ এই ভয় আছে যে, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে পারে যে এই গণ্ডগোলের কারণ আমরাই, এই সভা ডাকার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ আমরা দেখাতে পারব না।” 41 এই বলে তিনি সভা ভঙ্গ করলেন।

পৌলের মাকিদনিয়া ও গ্রীসে যাত্রা

20 সেই হাঙ্গামা থেমে যাবার পর পৌল যীশুর অনুগামীদের ডেকে পাঠালেন, আর তাদের সকলকে উৎসাহ দান করে ও শুভেচ্ছা জানিয়ে মাকিদনিয়ার অঞ্চলগুলিতে যাবার জন্য রওনা দিলেন। তিনি সেই অঞ্চল দিয়ে মাকিদনিয়ায় যেতে যেতে বিভিন্ন জায়গায় খ্রীষ্টানুসারীদের অনেক কথা বলে উৎসাহ দিলেন, শেষে গ্রীসে এসে পৌঁছলেন। সেখানে তিনি তিন মাস থাকলেন।

তিনি যখন সমুদ্রপথে সুরিয়া যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন তখন ইহুদীরা তাঁর বিরুদ্ধে এক চক্রান্ত করছে এই কথা জানতে পেরে তিনি মাকিদনিয়া হয়ে সুরিয়া যাবেন বলে ঠিক করলেন। কিছু কিছু লোক তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিল। এরা হল বিরয়ার পুর্হের ছেলে সোপাত্র, থিষলনীকিয় থেকে আগত আরিষ্টার্খ ও সিকুন্দ, দর্বীর গায় ও তীমথিয় আর এশিয়ার তুখিক ও ত্রফিম। এরা পৌলের আগেই রওনা হয়ে ত্রোয়াতে গিয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। খামিরবিহীন রুটির পর্বের পর আমরা ফিলিপী থেকে সমুদ্রপথে রওনা হয়ে পাঁচ দিন পর ত্রোয়াতে তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম। সেখানে আমরা সাত দিন থাকলাম।

ত্রোয়াতে পৌলের শেষ যাত্রা

রবিবার আমরা যখন আবার প্রভুর ভোজ গ্রহণ করতে একত্রিত হলাম তখন পৌল পরের দিন সেখান থেকে চলে যাবেন বলে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত তাদের সাথে কথা বলতে থাকলেন। আমরা ওপরের যে ঘরে সমবেত হয়েছিলাম সেখানে অনেক প্রদীপ ছিল। উতুখ নামে এক যুবক সেই ঘরের জানালায় বসেছিল। পৌলের দীর্ঘ বক্তৃতার সময় সে গভীরভাবে ঘুমিয়ে গেল। তারপর ঘুমের ঘোরে সে তিনতলা থেকে নীচে পড়ে গেল। লোকেরা গিয়ে যখন তাকে তুলল, দেখা গেল সে মারা গেছে।

10 পৌল নিজেই নীচে নেমে গেলেন। তিনি তার দেহের ওপরে নিজেকে রেখে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “তোমরা বিচলিত হয়ো না, কারণ দেখ এর মধ্যে এখনও প্রাণ আছে।” 11 এরপর পৌল ওপরের ঘরে গিয়ে রুটি ভাঙলেন ও কিছু খাওয়া-দাওয়া করে ভোর পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেন। তারপর তিনি তাদের কাছ থেকে রওনা হলেন। 12 বিশ্বাসীরা সেই যুবককে জীবিত অবস্থায় তার বাড়ি নিয়ে যেতে পেরে খুবই আশ্বস্ত হল।

ত্রোয়া থেকে মাইলেটাস যাত্রা

13 আমরা সমুদ্রপথে আঃসে রওনা দিয়ে পৌলের আগেই সেখানে পৌঁছালাম। ঠিক ছিল যে পৌল আঃসে হাঁটা পথে যাবেন আর সেখানে আমরা তাঁকে জাহাজে তুলে দেব। 14 পরে আঃসে পৌলের সঙ্গে আমাদের দেখা হল, আর তিনি জাহাজে আমাদের কাছে এলেন। আমরা সকলে মিতুলীনী শহরে গেলাম। 15 সেখান থেকে পরের দিন জাহাজে করে খীয়ের দ্বীপের কাছে পৌঁছালাম। দ্বিতীয় দিনে আমরা সামঃ দ্বীপ পার হয়ে তার পরদিন মিলীতে গেলাম, 16 কারণ পৌল আগেই ঠিক করেছিলেন যে তিনি ইফিষে নামবেন না। তিনি এশিয়াতে বেশী সময় থাকতে চাইলেন না, কারণ পঞ্চাশত্তমীর আগেই জেরুশালেমে পৌঁছবার জন্য তিনি ব্যগ্র হয়ে উঠেছিলেন।

পৌল ইফিষে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বললেন

17 মিলীতে এসে তিনি ইফিষের মণ্ডলীর প্রাচীনদের তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য ডেকে পাঠালেন।

18 তাঁরা এলে তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা জান আমি এশিয়াতে থাকাকালীন প্রথম দিন থেকেই তোমাদের সঙ্গে কিভাবে সমস্ত সময় কাটিয়েছি। 19 ইহুদীরা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল, আমাকে বড় সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু তোমরা জান যে এসব সত্ত্বেও আমি নম্রভাবে চোখের জলে সর্বদাই প্রভুর সেবা করে গেছি। 20 তোমাদের জন্য যা মঙ্গলজনক, ইতস্তত না করে সর্বদা তোমাদের কাছে বলেছি। এমন কি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষা দিয়েছি ও সুসমাচার প্রচার করেছি। 21 ইহুদী কি অইহুদী গ্রীক সকলের কাছেই বলেছি যেন তারা মন-ফেরায়, ঈশ্বরের দিকে ফেরে ও প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করে।

22 “কিন্তু এখন আমাকে পবিত্র আত্মার নির্দেশ মানতে হবে, তাই আমি জেরুশালেমে যাচ্ছি। সেখানে আমার কি হবে তা আমি জানি না। 23 তবে পবিত্র আত্মার সতর্কবাণীর মধ্য দিয়ে একথা জানি যে জেরুশালেমের প্রত্যেকটি শহরে আমার জন্য দুঃখ-কষ্ট ও কারাবরণ অপেক্ষা করছে। 24 আমি মনে করি আমার কাছে আমার জীবনের কোন মূল্য নেই। আমি মনে করি আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্রভু যীশুর কাছ থেকে যে কাজের ভার পেয়েছি তাতে লক্ষ্য স্থির রেখে যেন শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে পারি; সেই কাজ হল সকলের কাছে ঈশ্বরের অনুগ্রহের বার্তা ও সুসমাচার নিয়ে যাওয়া।

25 “এখন আমি যা বলছি মন দিয়ে শোন; তোমাদের মধ্যে যাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার জানিয়েছি তাদের কেউই আমার মুখ আর দেখতে পাবে না। 26 তাই আজ আমি তোমাদের কাছে একথা জোর দিয়ে বলছি যে এসত্ত্বেও তোমাদের মধ্যে যারা উদ্ধার পাবে না, ঈশ্বর তাদের বিষয়ে আমাকে দোষী করবেন না। 27 আমি এসব কথা বলতে পারি যে ঈশ্বর তোমাদের যা কিছু জানাতে চেয়েছিলেন, সে সবই আমি তোমাদের জানিয়েছি। 28 নিজেদের ব্যাপারে সাবধান থেকো আর পবিত্র আত্মা তোমাদেরকে যে পালের দেখাশোনার ভার দিয়েছেন, ঈশ্বরের সেই মণ্ডলীর তত্ত্বাবধান কর, কারণ এই মণ্ডলী তিনি তাঁর রক্ত দিয়ে কিনেছেন। 29 আমি জানি, আমি চলে গেলে ভয়ঙ্কর নেকড়েরা তোমাদের মধ্যে আসবে, তারা ঈশ্বরের এই পালকে ধ্বংস করতে চাইবে। 30 এমনকি তোমাদের মধ্য থেকে এমন সব লোক বেরিয়ে আসবে যারা খ্রীষ্টানুসারীদের নিজেদের অনুসারী করার জন্য উল্টোপাল্টা কথা বলবে। কিছু কিছু খ্রীষ্টানুসারীদের তারা সত্য থেকে সরিয়ে দেবে। 31 সাবধান ও সতর্ক থেকো! মনে রেখো, তোমাদের সঙ্গে আমি যে তিন বছর ছিলাম, সেই সময় তোমাদের জন্য চোখের জল ফেলে রাত দিন সতর্ক করে অনেক চেতনা দিয়েছি।

32 “এখন আমি তোমাদের ঈশ্বরের হাতে ও তাঁর অনুগ্রহের বার্তাতে তোমাদের সঁপে দিলাম, তা তোমাদের গড়ে তুলতে সমর্থ। ঈশ্বর তাঁর সমস্ত পবিত্র লোকদের যে আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন, এই বার্তা তোমাদের সেই আশীর্বাদ দেবেন। 33 আমি যখন তোমাদের মধ্যে ছিলাম, তখন আমি কারোর কাছে অর্থ বা জামা কাপড় চাই নি। 34 তোমরা ভালভাবেই জান যে আমার নিজের ও সঙ্গীদের অভাব দূর করতে আমি এই দুহাতে কাজ করেছি। 35 আমি তোমাদের দেখিয়েছি কিভাবে কঠোর পরিশ্রম করে অভাবীদের সাহায্য করতে হয়। প্রভু যীশুর কথা স্মরণ করাও উচিত, কারণ তিনি বলেছেন, ‘গ্রহণ করার থেকে দান করা বেশী পুণ্যের।’”

36 এই কথা বলার পর তিনি তাদের সকলের সঙ্গে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করলেন। 37-38 এরপর সকলে খুব কান্নাকাটি করলেন ও পৌলের গলা জড়িয়ে ধরে তাঁকে চুমু দিলেন। তাঁরা তাঁকে আর দেখতে পাবেন না, একথা শুনে বিশেষ দুঃখ করলেন। পরে জাহাজ পর্যন্ত তাঁকে পৌঁছে দিতে গেলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International