Beginning
লূকের লেখা অন্য পুস্তক
1 প্রিয় থিয়ফিল,
আমার প্রথম বইটিতে যীশু যে সব কাজ করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন তার বিবরণ ছিল। 2 আমি যা লিখেছি, তাতে শুরু থেকে তাঁর স্বর্গারোহণের দিন পর্যন্ত তিনি যা করেছিলেন এবং শিখিয়েছিলেন তার সব বিবরণ আছে। স্বর্গারোহণের পূর্বে যীশু তাঁর মনোনীত প্রেরিতদের, পবিত্র আত্মার সাহায্যে তাদের কি করণীয় তা জানিয়েছিলেন। 3 মৃত্যুর পর যীশু, তাঁর প্রেরিতদের কাছে দেখালেন যে তিনি জীবিত এবং অনেক পরাক্রমী কার্য সাধন করে তিনি এর প্রমাণ দিলেন। মৃতদের মধ্য থেকে যীশুর পুনরুত্থানের পর 40 দিনের মধ্যে প্রেরিতরা যীশুকে বহুবার দেখেছিলেন। এই সময়ে যীশু তাঁদের ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে নানা কথা বলেছিলেন। 4 আর এক সময় যখন তিনি তাঁদের সঙ্গে আহার করছিলেন, তখন আদেশ দিয়েছিলেন, যেন তাঁরা জেরুশালেম ছেড়ে না যান। যীশু বলেছিলেন, “পিতা তোমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যে বিষয়ে এর আগেও আমি তোমাদের জানিয়েছিলাম, তোমরা সেই প্রতিশ্রুত বিষয় পাবার অপেক্ষায় জেরুশালেমে থেকো। 5 কারণ যোহন জলে বাপ্তাইজ করতেন, কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তোমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হবে।”
যীশুকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়া হল
6 এরপর প্রেরিতরা একত্র হয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “প্রভু, এই সময় আপনি কি ইস্রায়েলকে তাঁদের রাজ্য ফিরিয়ে দেবেন?”
7 তিনি তাঁদের বললেন, “পিতা নিজেই কেবল সময় ও তারিখগুলি নির্ধারণ করেন, এসব বিষয় তোমরা জানতে পারবে না; 8 কিন্তু যখন পবিত্র আত্মা তোমাদের কাছে আসবেন, তখন তোমরা শক্তি পাবে আর তোমরা আমার সাক্ষী হবে। লোকদের কাছে তোমরা আমার কথা বলবে। প্রথমে তোমরা জেরুশালেমের লোকদের কাছে সাক্ষ্য দেবে, তারপর সমগ্র যিহূদিয়া ও শমরিয়ায়, এমনকি জগতের শেষ সীমানা পর্যন্ত তোমরা আমার কথা বলবে।”
9 এই কথা বলার পর প্রেরিতদের চোখের সামনে তাঁকে আকাশে তুলে নেওয়া হল। আর এক খানা মেঘ তাঁকে তাঁদের দৃষ্টির আড়াল করে দিল। 10 যীশু যখন যাচ্ছেন, আর প্রেরিতরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন, ঠিক সেই সময় সাদা ধবধবে পোশাক পরা দুই ব্যক্তি তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। 11 সেই দুই ব্যক্তি প্রেরিতদের বললেন, “হে গালীলের লোকেরা, তোমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছ কেন? এই যে যীশু, যাকে তোমাদের সামনে থেকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হল, তাঁকে যে ভাবে তোমরা স্বর্গে যেতে দেখলে, ঠিক সেই ভাবেই তিনি ফিরে আসবেন।”
এক নতুন প্রেরিতের মনোনয়ন
12 এরপর তাঁরা জৈতুন পর্বতমালা থেকে নেমে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। জেরুশালেম থেকে পাহাড়টির দূরত্ব ছিল এক বিশ্রামবারের পথ অর্থাৎ প্রায় আধ মাইল। 13 এরপর প্রেরিতরা শহরে প্রবেশ করে তাঁরা যে বাড়িতে থাকতেন, তার উপরের তলার কামরায় গেলেন। এই প্রেরিতদের নাম ছিল; পিতর, যোহন, যাকোব, আন্দ্রিয়, ফিলিপ, থোমা, বর্থলময়, মথি, (আলফেয়ের ছেলে) যাকোব, শিমোন, যাকে দেশভক্ত বলা হত এবং (যাকোবের ছেলে) যিহূদা।
14 প্রেরিতরা সকলেই একসঙ্গে সেখানে একই উদ্দেশ্যে সর্বদা প্রার্থনা করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন স্ত্রীলোক, যীশুর মা মরিয়ম ও তাঁর ভাইরা।
15 ঐ দিনগুলিতে যখন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা একত্রিত হয়ে প্রার্থনা করছিলেন, সেখানে প্রায় 120 জন উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় পিতর উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, 16-17 “ভাইরা যিহূদা সম্পর্কে পবিত্র আত্মা দায়ূদের মুখ দিয়ে যে কথা বহুপূর্বেই বলেছিলেন, শাস্ত্রের সেই কথা পূর্ণ হওয়ার প্রয়োজন ছিল। যিহূদাই সেই ব্যক্তি যে যীশুর গ্রেপ্তারকারীদের পরিচালনা দিয়েছিল। যিহূদা ছিল আমাদেরই একজন, যে আমাদের পরিচর্য্যা কাজের সহভাগীও ছিল।”
18 (এই লোক তার এই অন্যায় কাজের দ্বারা অর্থ রোজগার করে তাই দিয়ে এক টুকরো জমি কিনেছিল; কিন্তু সে মাথাটা নীচু করে মাটিতে পড়ল, আর তার পেট ফেটে ভেতরের নাড়ী-ভুঁড়ি সব বেরিয়ে পড়ল। 19 যারা জেরুশালেমে বাস করে, তারা সকলেই একথা জানে। তাই সেই জমিটিকে তাদের ভাষায় বলে হকলদামা, যার অর্থ, “রক্তের ভূমি।”)
20 বাস্তবিক, “গীতসংহিতায় লেখা আছে:
‘তার গৃহ যেন পরিত্যক্ত হয়;
কেউ যেন তার মধ্যে বাস না করে।’(A)
আরও লেখা আছে:
‘আর অন্য কেউ তার স্থান দখল করুক।’(B)
21-22 “তাই যোহন যখন বাপ্তাইজ করতে শুরু করেন, সেই সময় থেকে প্রভু যীশুর স্বর্গারোহণের সময় পর্যন্ত যতদিন প্রভু যীশু আমাদের সঙ্গে ছিলেন, সেই দিনগুলিতে যাঁরা সব সময় আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তাঁদের মধ্যে একজনকে আমাদের মনোনীত করা প্রয়োজন। যিনি আমাদের দলে যোগদান করবেন, তাঁকে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে যীশুর পুনরুত্থানের সাক্ষী হতে হবে।”
23 তখন প্রেরিতরা দুজন লোককে উপস্থিত করলেন, যোষেফ, যাকে বার্শব্বা বলে ডাকে, যার অপর নাম যুষ্ট, আর মত্তথিয়কে। 24-25 এরপর তাঁরা প্রার্থনা সহকারে বললেন, “প্রভু, তুমি সকলের অন্তঃকরণ জান। এই দুজনের মধ্যে কাকে তুমি মনোনীত করেছ তা আমাদের দেখিয়ে দাও। যিহূদা তার নিজের জায়গায় যাবার জন্য প্রেরিতরূপে এই সেবার কাজ ত্যাগ করে গেছে। তার জায়গায় কাকে তুমি মনোনীত করেছ তা আমাদের দেখাও।” 26 এরপর তাঁরা ঐ দুজনের জন্য ঘুঁটি চাললেন আর মত্তথিয়ের নাম উঠল। এইভাবে তিনি এগারো জন প্রেরিতের সঙ্গে প্রেরিত বলে গন্য হলেন।
পবিত্র আত্মার আগমন
2 এরপর পঞ্চাশত্তমীর দিনটি এল, সেই দিনটিতে প্রেরিতরা সকলে একই জায়গায় সমবেত ছিলেন। 2 সেই সময় হঠাৎ আকাশ থেকে ঝোড়ো হাওযার শব্দের মত প্রচণ্ড একটা শব্দ শোনা গেল আর যে ঘরে তাঁরা বসেছিলেন, সেই ঘরের সর্বত্র তা ছড়িয়ে গেল। 3 তাঁরা তাঁদের সামনে আগুনের শিখার মতো কিছু দেখতে পেলেন। সেই শিখাগুলি তাদের উপর ছড়িয়ে পড়ল ও পৃথক পৃথক ভাবে তাঁদের প্রত্যেকের উপর বসল। 4 তাঁরা পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলেন আর ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে লাগলেন। পবিত্র আত্মাই তাঁদের এইভাবে কথা বলার শক্তি দিলেন।
5 সেই সময় প্রত্যেক জাতির থেকে ধার্মিক ইহুদীরা এসে জেরুশালেমে বাস করছিল। 6 সেই শব্দ শুনে বহুলোক সেখানে এসে জড়ো হল। তারা সকলে হতবাক হয়ে গেল, কারণ প্রত্যেকে তাদের নিজের নিজের ভাষায় প্রেরিতদের কথা বলতে শুনছিল।
7 এতে তারা আশ্চর্য হয়ে পরস্পর বলতে লাগল, “দেখ! এই যে লোকরা কথা বলছে, এরা সকলে গালীলের লোক নয় কি! 8 তবে আমরা কেমন করে ওদের প্রত্যেককে আমাদের নিজের নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে শুনছি? 9 এখানে আমরা যারা আছি, আমরা ভিন্ন ভিন্ন দেশের লোক; পার্থীয়, মাদীয়, এলমীয়, মিসপতামিয়া, যিহূদিয়া, কাপ্পাদকিয়া, পন্ত, আশিয়া, ফরুগিয়া, পাম্ফুলিয়া ও মিশর, 10 কুরীনীর লুবিয়ার কাছে কিছু অঞ্চলের লোক, রোম থেকে এসেছে এমন অনেক লোক এবং ইহুদী বা ইহুদী ধর্মে দীক্ষিত অনেকে। 11 ক্রীতীয় ও আরবীয় আমরা সকলেই আমাদের মাতৃভাষায় ঈশ্বরের মহাপরাক্রান্ত কাজের বর্ণনা এদের মুখে শুনেছি।”
12 তারা হতবুদ্ধি হয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “এর অর্থ কি?” 13 কিন্তু অন্য লোকেরা বিদ্রূপের ভঙ্গীতে বলতে লাগল, “ওরা দ্রাক্ষারস পান করে মাতাল হয়েছে।”
পিতরের বক্তব্য
14 তখন পিতর ঐ এগারো জন প্রেরিতের সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে জোর গলায় তাঁদের উদ্দেশ্যে বললেন, “হে আমার ইহুদী ভাইরা, আজ জেরুশালেমে যত লোক বাস করেন তাঁদের সকলের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনাদের এর অর্থ জানা দরকার। 15 আপনারা যা মনে করছেন তা নয়, এই লোকেরা কেউ মাতাল নয়, কারণ এখন মাত্র সকাল ন’টা। 16 কিন্তু ভাববাদী যোয়েল এবিষয়েই বলেছেন,
17 ‘ঈশ্বর বলছেন: শেষের দিনগুলিতে এরকমই হবে;
শেষকালে আমি সকল লোকের উপরে আমার আত্মা ঢেলে দেব,
তাতে তোমাদের ছেলেমেয়েরা ভাববাণী বলবে,
তোমাদের যুবকরা দর্শন পাবে,
আর তোমাদের বৃদ্ধ লোকরা স্বপ্ন দেখবে।
18 হ্যাঁ, আমি আমার সেবকদের,
স্ত্রী ও পুরুষ সকলের উপরে আমার আত্মা ঢেলে দেব,
আর তারা ভাববানী বলবে।
19 আমি উর্দ্ধে আকাশে বিস্ময়কর সব লক্ষণ দেখাবো
ও নীচে পৃথিবীতে নানা অদ্ভুত চিহ্ন,
রক্ত, আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখাবো।
20 প্রভুর সেই মহান ও মহিমাময় দিন আসার আগে,
সূর্য্য কালো ও চাঁদ রক্তের মতো লাল হয়ে যাবে।
21 আর যে কেউ প্রভুর নামে ডাকবে, সে উদ্ধার পাবে।’(C)
22 “হে ইহুদী ভাইরা, একথা শুনুন: নাসরতীয় যীশুর দ্বারা ঈশ্বর বহু অলৌকিক ও আশ্চর্য কাজ করে আপনাদের কাছে প্রমাণ দিয়েছেন যে তিনি সেই ব্যক্তি যাঁকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন; আর আপনারা এই ঘটনাগুলি জানেন। 23 যীশুকে আপনাদের হাতে সঁপে দেওয়া হল, আর আপনারা তাঁকে হত্যা করলেন। মন্দ লোকদের দিয়ে আপনারা তাঁকে ক্রুশের উপর পেরেক বিদ্ধ করলেন। ঈশ্বর জানতেন যে এসব ঘটবে; আর তাই ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পনা, যা তিনি বহুপূর্বেই নিরূপণ করেছিলেন। 24 যীশু মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করলেন, কিন্তু ঈশ্বর সেই বিভীষিকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করলেন। ঈশ্বর যীশুকে মৃতদের মধ্য থেকে তুলে আনলেন। মৃত্যু যীশুকে তার কবলে রাখতে সক্ষম হল না। 25 কারণ দায়ূদ যীশুর বিষয়ে বলেছিলেন:
‘আমি প্রভুকে সবসময়ই আমার সামনে দেখেছি;
আমাকে স্থির রাখতে তিনি আমার ডানদিকে অবস্থান করছেন।
26 এইজন্য আমার অন্তর আনন্দিত,
আর আমার জিভ উল্লাস করে।
আমার এই দেহও প্রত্যাশায় জীবিত থাকবে।
27 কারণ তুমি তোমার প্রাণ মৃত্যুলোকে পরিত্যাগ করবে না।
তুমি তোমার পবিত্র ব্যক্তিকে ভয় পেতে দেবে না।
28 তোমার সান্নিধ্যে আমার জীবন
তুমি আনন্দে ভরিয়ে দেবে।’(D)
29 “আমার ভাইরা, আমাদের সেই শ্রদ্ধেয় পূর্বপুরুষ দায়ূদের বিষয়ে আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে, তিনি মারা গেছেন ও তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে, আর আজও তাঁর কবর আমাদের মাঝে আছে। 30 কিন্তু তিনি একজন ভাববাদী ছিলেন এবং জানতেন ঈশ্বর শপথ করে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তাঁর বংশের একজনকে তাঁরই মতো রাজা করে সিংহাসনে বসাবেন।[a] 31 পরে কি হবে তা আগেই জানতে পেরে দায়ূদ যীশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে বলেছিলেন:
‘তাঁকে মৃত্যুলোকে পরিত্যাগ করা হয় নি
বা তাঁর দেহ কবরের মধ্যে ক্ষয় প্রাপ্ত হয় নি।’
32 কিন্তু ঈশ্বর মৃত্যুর পর যীশুকেই পুনরুত্থিত করেছেন; আর আমরা সকলে এই ঘটনার সাক্ষী আছি। আমরা সকলে তাঁকে দেখেছি। 33 যীশুকে স্বর্গে তুলে নেওয়া হল; এখন যীশু ঈশ্বরের কাছে তাঁর ডানদিকে অবস্থান করছেন। পিতা যীশুকে পবিত্র আত্মা দিয়েছেন, পিতা তাঁকে সেই পবিত্র আত্মা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন যীশু সেই পবিত্র আত্মাকে ঢেলে দিলেন, তোমরা এখন তাই দেখছ ও শুনছ। 34 কারণ দায়ূদ স্বর্গারোহন করেন নি, আর তিনি নিজে একথা বলছেন,
‘প্রভু ঈশ্বর আমার প্রভুকে বলছেন;
35 যে পর্যন্ত না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পা রাখার জায়গায় পরিণত করি,
তুমি আমার ডানদিকে বস।’(E)
36 “তাই ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবার নিশ্চিতভাবে জানুক যে যাকে আপনারা ক্রুশবিদ্ধ করেছিলেন, সেই যীশুকেই ঈশ্বর প্রভু ও খ্রীষ্ট উভয়ই করেছেন।”
37 লোকেরা এই কথা শুনে খুবই দুঃখিত হল। তারা পিতর ও অন্যান্য প্রেরিতদের বলল, “ভাইরা, আমরা কি করব?”
38 পিতর তাঁদের বললেন, “আপনারা মন-ফিরান, আর প্রত্যেকে পাপের ক্ষমার জন্য যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজ হোন, তাহলে আপনারা দানরূপে এই পবিত্র আত্মা পাবেন। 39 কারণ এই প্রতিশ্রুতি আপনাদের জন্য, আপনাদের সন্তানদের জন্য আর যারা দূরে আছে তাদেরও জন্য। আমাদের ঈশ্বর প্রভু তাঁর নিজের কাছে যাদের ডেকেছেন, এই দান তাদের সকলের জন্য।”
40 পিতর তাঁদের আরো অনেক কথা বলে সাবধান করে দিলেন; তিনি তাঁদের অনুনয়ের সুরে বললেন, “বর্তমান কালের মন্দ লোকদের থেকে নিজেদের বাঁচান!” 41 যাঁরা পিতরের কথা গ্রহণ করলেন, তাঁরা বাপ্তিস্ম নিলেন। এর ফলে সেদিন কম বেশী তিন হাজার লোক খ্রীষ্টবিশ্বাসীবর্গের সঙ্গে যুক্ত হলেন।
বিশ্বাসীবর্গের সহভাগীতা
42 বিশ্বাসীরা প্রায়ই একত্র হয়ে মনোযোগের সঙ্গে প্রেরিতদের শিক্ষা গ্রহণ করতেন। বিশ্বাসীবর্গ নিজেদের মধ্যে সব কিছু ভাগ করে নিতেন এবং একই সঙ্গে আহার ও প্রার্থনা করতেন। 43 প্রেরিতেরা অনেক অলৌকিক ও আশ্চর্য কাজ করতে লাগলেন; প্রত্যেকের অন্তরে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে গভীর ভক্তি ছিল। 44 বিশ্বাসীরা সকলে একসঙ্গে থাকতেন এবং সবকিছু নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতেন। 45 তাঁরা তাঁদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে, যাঁর যেমন প্রয়োজন সেই অনুসারে ভাগ করে নিতেন। 46 তাঁরা প্রতিদিন মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে একত্রিত হতেন, একই উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তাঁরা সেখানে যেতেন। তাঁরা তাঁদের বাড়িতে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেন আর ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে আনন্দের সঙ্গে খাদ্য গ্রহণ করতেন। 47 বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের প্রশংসা করতেন, আর সকলেই তাঁদের ভালোবাসতেন। প্রতিদিন অনেকে উদ্ধার লাভ করছিলেন আর যাঁরা উদ্ধার লাভ করছিলেন তাদেরকে প্রভু বিশ্বাসীবর্গের সঙ্গে যুক্ত করতে থাকলেন।
খোঁড়া লোককে পিতর আরোগ্য করলেন
3 একদিন পিতর ও যোহন মন্দিরে গেলেন, তখন বেলা প্রায় তিনটে। এই সময়েই মন্দিরে রোজ প্রার্থনা হত। 2 যখন তাঁরা মন্দির প্রাঙ্গনে যাচ্ছিলেন, সেখানে একটা লোককে দেখা গেল। সে জন্ম থেকেই খোঁড়া, চলতে পারত না। তার বন্ধুরা প্রতিদিন তাকে মন্দির চত্বরে বয়ে নিয়ে আসত আর মন্দিরের “সুন্দর” নামে যে ফটক আছে সেখানে নিয়ে গিয়ে তাকে বসিয়ে রাখত। যারা মন্দিরে ঢুকত, সে তাদের কাছে কিছু অর্থ ভিক্ষা চাইত। 3 সেদিন এই লোকটা পিতর ও যোহনকে মন্দিরে ঢুকতে দেখে তাদের কাছ থেকে ভিক্ষা চাইতে লাগল।
4 পিতর ও যোহন সেই খোঁড়া লোকটির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে বললেন, “আমাদের দিকে তাকাও!” 5 সেই লোকটা তখন কিছু অর্থ পাবার আশায় তাঁদের দিকে তাকালো। 6 কিন্তু পিতর তাকে বললেন, “আমার কাছে সোনা বা রূপো নেই, আমার কাছে যা আছে আমি তোমাকে তাই দিচ্ছি। নাসরতীয় যীশুর নামে তুমি উঠে দাঁড়াও ও হেঁটে বেড়াও।”
7 এই বলে পিতর তার ডান হাত ধরে তাকে তুললেন, সঙ্গে সঙ্গে সে তার পায়ে ও গোড়ালিতে বল পেল, 8 আর লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ও চলতে লাগল। তারপর সে তাঁদের সঙ্গে মন্দিরের মধ্যে ঢুকে সেখানে হেঁটে লাফিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল। 9-10 লোকরা দেখল সেই লোকটি হাঁটছে ও ঈশ্বরের প্রশংসা করছে। তারা চিনতে পারল মন্দিরের “সুন্দর” নামে ফটকের সামনে বসে ভিক্ষা করত যে লোক, সেই লোকই হেঁটে বেড়াচ্ছে ও ঈশ্বরের প্রশংসা করছে। ঐ লোকটির জীবনে যা ঘটেছে তা দেখে তারা আশ্চর্য হয়ে গেল, তারা বুঝে উঠতে পারল না এমন বিস্ময়কর ব্যাপার কি করে ঘটল।
পিতরের সাক্ষ্য
11 লোকটি পিতর ও যোহনকে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল; তাই সকলেই এই লোকটির সুস্থতা দেখে আশ্চর্য হয়ে শলোমনের বারান্দায় পিতর ও যোহনের কাছে দৌড়ে এল।
12 এই দেখে পিতর জনতার উদ্দেশ্যে বললেন, “হে আমার ইহুদী ভাইরা, আপনারা এতে আশ্চর্য হচ্ছেন কেন? আপনারা আমাদের দিকে এমনভাবে দেখছেন, যেন আমরা নিজেদের ক্ষমতার গুণে একে চলবার শক্তি দিয়েছি। আপনারা কি মনে করেন যে আমরা খুব ধার্মিক, তাই এই কাজ করতে পেরেছি? 13 না! ঈশ্বরই একাজ করেছেন। তিনি অব্রাহামের, ইস্হাকের ও যাকোবের ঈশ্বর, আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, তিনিই তাঁর দাস যীশুকে মহিমান্বিত করেছেন। এই যীশুকেই আপনারা মৃত্যুদণ্ডের জন্য শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেদিন পীলাত যখন তাঁকে ছেড়ে দেবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, তখন আপনারা তাঁকে অগ্রাহ্য করেছিলেন। আপনারা বলেছিলেন যে যীশুকে আপনারা চান না। 14 আপনারা সেই পবিত্র ও নির্দোষ ব্যক্তিকে অগ্রাহ্য করে তাঁর বদলে একজন খুনীকে আপনাদের জন্য ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। 15 যিনি জীবনদাতা, আপনারা তাঁকে হত্যা করেছিলেন; কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত করেছেন। আমরা এসবের সাক্ষী।
16 “এই যীশুর পরাক্রমেই এই খোঁড়াটি সুস্থতা লাভ করেছে। এসব ঘটেছে কারণ আমরা যীশুর ক্ষমতায় বিশ্বাস করেছি। আপনারা এই লোকটিকে দেখেছেন ও তাকে চেনেন। যীশুর উপর নির্ভর করায় সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে; নিজ চক্ষে আপনারা তা দেখেছেন।
17 “এখন আমার ভাইরা, আমি জানি যে অজ্ঞতা বশতঃই আপনারা এমন কাজ করেছিলেন, আর আপনাদের নেতারাও তাই করেছিলেন। 18 কিন্তু ভাববাদীদের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর খ্রীষ্টের দুঃখভোগের কথা যা জানিয়েছেন, সে সবই তিনি এইভাবে পূর্ণ করেছেন। 19 তাই আপনারা মন-ফিরান এবং ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসুন, যেন আপনাদের পাপ মুছে দেওয়া হয়। 20 এইভাবে যেন প্রভুর কাছ থেকে আত্মিক বিশ্রামের সময় আসে; আর তিনি যেন আপনাদের জন্য আগেই যে খ্রীষ্টকে মনোনীত করেছেন সেই যীশুকে পাঠান।
21 “যতক্ষণ পর্যন্ত না সব কিছু পুনঃস্থাপন হয় যা বহুপূর্বে ঈশ্বর তাঁর পবিত্র ভাববাদীদের মুখ দিয়ে বলেছেন, ততক্ষণ খ্রীষ্টকে অবশ্যই স্বর্গে থাকতে হবে। 22 কারণ মোশি বলেছেন, ‘প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের জন্য তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে আমার মত এক ভাববাদীকে উৎপন্ন করবেন। তিনি তোমাদের যা যা বলবেন, তোমরা তাঁর সকল কথা শুনবে। 23 যে কেউ তাঁর কথা না শুনবে, সে লোকদের কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হবে।’(F)
24 “হ্যাঁ, সমস্ত ভাববাদী, এমনকি শমূয়েল ও তাঁর পরে যে সকল ভাববাদী এসেছেন তাঁরা সকলে এই দিনের কথা বলে গেছেন। 25 আপনারা তো ভাববাদীদের বংশধর, আপনারা ঈশ্বরের সেই চুক্তির উত্তরাধিকারী, যে চুক্তি ঈশ্বর আপনাদের পিতৃপুরুষের সাথে করেছিলেন। তিনি তো অব্রাহামকে বলেছিলেন, ‘তোমার বংশ দ্বারা পৃথিবীর সকল জাতিই আশীর্বাদ লাভ করবে।’(G) 26 ঈশ্বর তাঁর দাসকে পুনরুত্থিত করে প্রথমে তাঁকে আপনাদের কাছেই পাঠাবেন, যেন আপনাদের প্রত্যেককে মন্দ থেকে ফিরিয়ে এনে আশীর্বাদ করতে পারেন।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International