Book of Common Prayer
প্রথম খণ্ড
(গীতসংহিতা 1–41)
1 একজন ব্যক্তি প্রকৃত সুখী হবে যদি সে মন্দ লোকের পরামর্শে না চলে,
যদি সে পাপীদের মত জীবনযাপন না করে,
যদি সে তাদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করে—যারা ঈশ্বরকে অশ্রদ্ধা করে।
2 একজন সৎ ব্যক্তি প্রভুর শিক্ষাকে ভালোবাসে।
সে প্রভুর শিক্ষা বিষয়ে দিনরাত চিন্তা করে।
3 এই জন্য সেই ব্যক্তি নদীর ধারে পোঁতা গাছের মত শক্ত ও দৃঢ় হয়।
যে গাছ ঠিক সময় ফল দেয়, সেই লোক সেই গাছের মত হয়।
সেই লোক, সেই গাছের মতই হয়, যার পাতা কোনদিন ঝরে যায় না।
সে যা কিছু করে, সবই সফল হয়।
4 মন্দ লোকরা সে রকম নয়।
মন্দ লোকরা বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া তুষের মত।
5 সৎ লোকরা যদি একটা বিচারের সিদ্ধান্ত নেবার জন্য একত্রিত হয়, তবে মন্দ লোকরা অপরাধী হিসেবেই প্রমাণিত হবে।
সেই পাপীরা, বিচারে সরল নিষ্পাপ বলে প্রমাণিত হবে না।
6 কেন? কারণ প্রভু সৎ লোকদের রক্ষা করেন,
কিন্তু মন্দ লোকদের বিনাশ করেন।
2 অন্যান্য জাতিগুলোর লোকজন এত ক্রুদ্ধ কেন?
কেন তারা বোকার মত পরিকল্পনা করছে?
2 তাদের রাজারা এবং নেতারা,
প্রভু এবং তাঁর মনোনীত রাজার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একত্রিত হচ্ছে।
3 সেই সব নেতা বলছে, “এস আমরা ঈশ্বর এবং তাঁর মনোনীত রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি।
এস আমরা ওদের থেকে আলাদা হয়ে বেরিয়ে এসে নিজেদের মুক্ত করি!”
4 কিন্তু আমার প্রভু, স্বর্গের রাজা,
ওদের প্রতি বিদ্রূপের হাসি হেসেছিলেন।
5 ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হয়ে সেই সব লোকদের বলেছেন,
6 “এই ব্যক্তিকে আমি রাজা হিসেবে মনোনীত করেছি!
এবং সে সিয়োন পর্বতে রাজত্ব করবে।
সিয়োন আমার কাছে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পর্বত।”
এই ঘটনা সেই সব নেতাদের ভীত করলো।
7 এখন আমি তোমাকে প্রভুর চুক্তির কথা বলবো।
প্রভু আমায় বললেন, “আজ আমি তোমার পিতা হলাম!
এবং তুমি আমার পুত্র।
8 যদি তুমি আমার কাছে চাও,
আমি সমগ্র জাতিগুলি তোমার হাতে দিয়ে দেব!
9 ভেঙে যেতে পারে না এমন ক্ষমতা নিয়ে তুমি তাদের ওপর শাসন করবে।
তুমি তাদের ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া মাটির পাত্রের মত ছড়িয়ে দেবে।”
10 সুতরাং হে রাজন্যবর্গ, জ্ঞানী হও।
অতএব হে শাসকগণ, চালাক-চতুর হও।
11 ভয় ও শ্রদ্ধা সহকারে প্রভুর সেবা কর।
12 ঈশ্বরের পুত্রকে চুম্বন কর এবং প্রমাণ কর যে তুমি ঈশ্বরের পুত্রের প্রতি ভক্তিতে একনিষ্ঠ
যদি তুমি তা না কর তিনি ক্রুদ্ধ হবেন এবং তোমায় বিনাশ করবেন।
সেই সব লোক যারা প্রভুর ওপর আস্থা রাখে তারা ধন্য।
কিন্তু অন্যদের সাবধান হতে হবে, কারণ প্রভু তাঁর ক্রোধ দেখাতে প্রায় প্রস্তুত।
দায়ূদের একটি গীত যখন থেকে তিনি তাঁর পুত্র অবশালোমের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
3 প্রভু, আমার অসংখ্য শত্রু।
বহু লোক আমার বিরুদ্ধে চলে গেছে।
2 বহু লোক আমার বিরুদ্ধে মন্দ কথা বলছে।
তারা বলছে, “ঈশ্বর ওকে রক্ষা করবেন না!”
3 কিন্তু হে প্রভু, আপনিই আমার ঢালস্বরূপ।
আপনি আমার গৌরব।
প্রভু আপনি আমাকে গুরুত্বপূর্ণ করেছেন![a]
4 আমি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করবো।
পবিত্র পর্বত থেকে তিনি আমার ডাকে সাড়া দেবেন!
5 আমি শুয়ে পড়ি এবং বিশ্রাম নিই এবং আমি জানি, আবার আমি জেগে উঠবো।
কেন? কারণ প্রভু আমায় আবৃত করে থাকেন। প্রভু আমায় রক্ষা করেন!
6 যদি হাজার সৈন্যও আমায় ঘিরে ফেলে,
আমি ঐ শত্রুদের ভয়ে ভীত হব না!
7 প্রভু, উঠে দাঁড়ান।[b]
হে আমার ঈশ্বর, আপনি এসে আমায় উদ্ধার করুন!
আপনি অসীম শক্তির অধিকারী!
আমার শত্রুদের চোয়ালে আপনি যদি আঘাত করেন
আপনি তাদের সবকটা দাঁতই ভেঙে দেবেন।
8 হে প্রভু, আপনার জয়!
এবং আপনার আশীর্বাদ রয়েছে আপনার লোকদের ওপর।
পরিচালকের প্রতি: তন্ত্রবাদ্যসহ গাইবার জন্য দায়ূদের একটি গীত।
4 হে আমার ধার্ম্মিকতার ঈশ্বর, যখন আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি,
আমার ডাকে সাড়া দেবেন!
আমার প্রার্থনা শুনুন, আমার প্রতি সদয় হোন!
সঙ্কট থেকে আমায় পরিত্রাণ দিন!
2 হে মানব সন্তানগণ, আর কতদিন তোমরা আমার বিরুদ্ধে মন্দ কথা বলতে থাকবে?
আমার সম্পর্কে বলার জন্য তোমরা নতুন নতুন মিথ্যার সন্ধান করছো। তোমরা মিথ্যা কথা বলতে ভালোবাসো।
3 তোমরা জানো যে, ঈশ্বর তাঁর অনুগামী ভালো লোকদের কথাই শোনেন।
সুতরাং যখন আমি তাঁর কাছে প্রার্থনা করি তখন তিনি আমার কথা শোনেন।
4 যদি কোন কিছু তোমায় বিব্রত করে, তুমি রেগে যেতে পারো, কিন্তু পাপ করো না।
যখন তুমি বিছানায় ঘুমোতে যাও, তখন তুমি অবশ্যই ঐ সব বিষয়ে চিন্তা করবে না এবং শান্ত থাকবে।
5 ঈশ্বরকে ধার্ম্মিকতার বলি উৎসর্গ কর
এবং প্রভুর ওপর আস্থা রাখ।
6 অনেকে বলে, “কে আমাদের ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতা দেখাবে?
প্রভু, আপনার দীপ্তিময় মুখখানি আমাদের দেখতে দিন!”
7 প্রভু, আপনি আমায় প্রচণ্ড সুখী করেছেন!
ফসলের সময়, যখন আমাদের কাছে প্রচুর শস্য এবং দ্রাক্ষারস ছিল তখনকার চেয়েও আমি এখন বেশী খুশী।
8 আমি বিছানায় গিয়ে নির্বিঘ্নে ঘুমিয়ে পড়ি। কেন?
কারণ, হে প্রভু, নিরাপদে ঘুমোবার জন্য আপনি আমাকে শুইয়ে দেন।
প্রভুর উদ্দেশ্যে দায়ূদের একটি গীত। এই গানটি বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর কূশের পুত্র শৌল সম্পর্কিত।
7 প্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি আপনার ওপর নির্ভর করি। যারা আমায় তাড়া করছে তাদের হাত থেকে আপনি আমায় রক্ষা করুন। আমায় উদ্ধার করুন!
2 যদি আপনি আমায় সাহায্য না করেন, আমি সিংহের হাতে ধরা পড়া পশুর মত অসহায় হয়ে পড়ব।
তারা আমাকে টেনে নিয়ে যাবে।
আমাকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না!
3 প্রভু আমার ঈশ্বর, আমি কোন অন্যায় করি নি।
আমি শপথ করে বলছি আমি কোন অন্যায় করিনি!
4-6 প্রভু আমার ঈশ্বর, যদি আমার বাক্য কোন মন্দ কাজ করে থাকে
এবং যদি আমি আমার বন্ধুর প্রতি কোন অন্যায় কাজ করে থাকি
এবং যদি কোন কারণ ছাড়াই শত্রুর কাছ থেকে কোন জিনিস নিয়ে থাকি বা আক্রমণ করে থাকি
তাহলে আমার শত্রুরা যেন আমাকে খুঁজে ধরে ফেলে
এবং আমাকে হত্যা করে আমার জীবন ধূলোয় মিশিয়ে দেয়
এবং আমার আত্মাকে পাতালে পাঠিয়ে দেয়।
7 প্রভু, লোকদের বিচার করুন।
সকল জাতিদের আপনার সঙ্গে সঙ্ঘবদ্ধ করুন।
8 এবং লোকদের বিচার করুন।
হে প্রভু, আমারও বিচার করুন।
প্রমাণ করুন আমি সত্য পথে আছি।
প্রমাণ করুন আমি নিষ্পাপ।
9 মন্দ লোকদের শাস্তি দিন,
সৎ লোকদের সাহায্য করুন।
হে ঈশ্বর, আপনিই মঙ্গলময়।
আপনি লোকের হৃদয়ের ভেতরে কি আছে তা দেখতে পান।
10 যাদের হৃদয় সৎ তাদের ঈশ্বর সাহায্য করেন।
তাই ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করবেন।
11 ঈশ্বর একজন সুবিচারক।
সব সময় তিনি মন্দের বিরুদ্ধে বলেন।
12 ঈশ্বর তাঁর আক্রমণ থামাবেন না।
তিনি তাঁর আক্রমণ থেকে পিছু হঠবেন না।[a]
তিনি তাঁর ধনুকে টান দিয়েছেন
এবং শত্রুদের প্রতি তাঁর লক্ষ্য স্থির রেখেছেন।
13 তিনি মারণাস্ত্র তৈরী করে রেখেছেন এবং তাঁর তীরগুলো ধারালো করেছেন।
14 কিছু লোক সর্বদাই মন্দ ফন্দি আঁটে।
তারা গোপনে ফন্দি করে
এবং মিথ্যা কথা বলে।
15 তারা অন্য লোকদের ফাঁদে ফেলতে চায় এবং আঘাত করতে চায়।
কিন্তু নিজেদের ফাঁদে পড়েই ওরা আহত হবে।
16 যা শাস্তি ওদের প্রাপ্য ওরা সেই শাস্তিই পাবে।
অপরের প্রতি ওরা নির্দয় ছিল।
ওদের যা প্রাপ্য ওরা তাই পাবে।
17 আমি প্রভুর প্রশংসা করি, কারণ তিনি ভালো।
আমি পরাৎপর প্রভুর নামের প্রশংসা করি।
5-6 রাজা দায়ূদ ও রাণী হগীতের পুত্রের নাম আদোনিয়। এই আদোনীয খুবই সুপুরুষ ছিলেন। রাজা দায়ূদ কখনও তাঁকে শোধরাবার চেষ্টা করেন নি। তিনি তাঁকে কখনও জিজ্ঞেস করেন নি, “কেন তুমি এসব করছ?” যদিও অবশালোম নামে তাঁর এক ভাই ছিলেন, উচ্চাকাঙ্খী ও ক্ষমতাভিলাষী। আদোনিয় মনে মনে ঠিক করলেন যে এরপর তিনিই রাজা হবেন; আর একথা স্থির করে তিনি নিজের সুবিধের জন্য তাড়াতাড়ি একটা রথ, কিছু ঘোড়া ও তাঁর রথের সামনে দৌড়োনোর জন্য প্রায় 50 জন লোক জোগাড় করে ফেললেন।
7 রাজা হবার বিষয়টা নিয়ে তিনি সরূয়ার পুত্র যোয়াব ও যাজক অবিয়াথরের সঙ্গে পরামর্শও সেরে ফেললেন। তারা তাঁকে নতুন রাজা হতে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিল। 8 কিন্তু রাজা দায়ূদের প্রতি অনুগত কিছু ব্যক্তির আদোনিয়র এই উচ্চাভিলাষ পছন্দ হয় নি। এরা হল যাজক সাদোক, যিহোয়াদার পুত্র বনায়, ভাববাদী নাথন, শিমিয়ি, রেয়ি ও রাজা দায়ূদের বিশেষ রক্ষীদল। এরা কেউই আদোনিয়র সঙ্গে যোগ দেয় নি।
9 এক দিন আদোনিয় ঐন্-রোগেলের কাছে সোহেলত্ পাথরে বেশ কিছু মেষ, ষাঁড় ও বাছুর মঙ্গল নৈবেদ্য হিসেবে বলি দিয়ে তাঁর ভাইদের (রাজা দায়ূদের অন্যান্য পুত্রদের) ও যিহূদার সমস্ত আধিকারিকদের নিমন্ত্রণ করলেন। 10 কিন্তু আদোনিয় তাঁর পিতার বিশেষ রক্ষীদের, তাঁর ভাই শলোমন, বনায় ও যাজক নাথনকে এদিন নিমন্ত্রণ করেন নি।
শলোমনের হয়ে নাথন ও বৎশেবা কথা বলল
11 নাথন একথা জানতে পেরে শলোমনের মা বৎশেবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হগীতের পুত্র আদোনিয় কি করছে আপনি কি কিছু জানেন? তিনি রাজা হবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে রাজা দায়ূদ এসবের বিন্দু-বিসর্গ জানেন না। 12 এক্ষেত্রে আপনার ও আপনার পুত্র শলোমনের প্রাণের আশঙ্কা থাকতে পারে বলেই আমার ধারণা। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি আপনাকে আত্মরক্ষার একটা উপায় বলে দিচ্ছি। 13 রাজা দায়ূদের কাছে যান এবং তাঁকে বলুন, ‘হে রাজাধিরাজ, আপনি আমার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে আপনার পরে আমার পুত্র শলোমনই পরবর্তী রাজা হবে। তাহলে আদোনিয় কেন পরবর্তী রাজা হচ্ছে?’ 14 আপনি যখন রাজার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে থাকবেন, আমি তখন সেখানে গিয়ে উপস্থিত হব এবং তখন আমি রাজাকে সমস্ত কিছু জানাব, তাতে আপনার কথার সত্যতাও প্রমাণ হবে।”
15 বৎশেবা তখন রাজার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর শয়ন কক্ষে যেখানে শূনেমীয়া অবীশগ বৃদ্ধ রাজার পরিচর্যা করছিল, সেখানে গিয়ে উপস্থিত হল। 16 বৎশেবা রাজার সামনে আনত হবার পর রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “আমি তোমার জন্য কি করতে পারি বল?”
17 বৎশেবা বললেন, “মহাশয়, আপনি আপনার প্রভু, ঈশ্বরের নামে শপথ করে আমার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আপনার পর আমার পুত্র শলোমনই রাজা হবে। সে আপনার সিংহাসনে বসবে। 18 কিন্তু আপনি বোধ হয় জানেন না আদোনিয় ইতিমধ্যেই রাজা হবার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। 19 সে মঙ্গল নৈবেদ্য হিসেবে বহু গরু ও মেষ বলি দিয়ে বড়সড় একটা ভোজসভার আয়োজন করে সেখানে আপনার অন্যান্য সমস্ত পুত্রদের নিমন্ত্রণ করেছে। সে যাজক অবিয়াথর, যোয়াব, আপনার সেনাবাহিনীর প্রধানকে এই ভোজসভায় নিমন্ত্রণ করলেও আপনার অনুগত পুত্র শলোমনকে নিমন্ত্রণ করে নি। 20 রাজা, এখন ইস্রায়েলের সমস্ত লোকরা আপনার গতিবিধি লক্ষ্য করছে। আপনার পর কে রাজা হবে, সে বিষয়ে তারা আপনার সিদ্ধান্ত জানতে চায়। 21 আপনার মৃত্যুর আগেই এবিষয়ে আপনাকে অতি অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। তা না হলে, আপনার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে আপনাকে সমাধিস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত লোকরা শলোমন ও আমাকে অপরাধী বলবে।”
22 বৎশেবা যখন রাজার সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তা বলছেন, তখন ভাববাদী নাথন রাজার সঙ্গে দেখা করতে এলো। 23 রাজার ভৃত্যরা তাঁকে বলল, “ভাববাদী নাথন আপনার কাছে এসেছেন।” নাথন রাজার সামনে আনত হয়ে রাজাকে সম্মান দেখিয়ে বলল, 24 “মহারাজ আপনি কি আদোনিয়কে আপনার পরবর্তী রাজা হিসেবে ঘোষণা করেছেন? আপনি কি ঠিক করেছেন এখন থেকে সে-ই রাজ্য শাসন করবে? 25 আমি একথা বলছি কারণ আদোনিয় আজ উপত্যকায় গিয়ে মঙ্গল নৈবেদ্য হিসেবে বহু গরু ও মেষ বলি দিয়েছে। তারপর যাজক অবিয়াথর, আপনার অন্যান্য পুত্রদের ও সেনাপতিদের সবাইকে ভোজসভায় নিমন্ত্রণ করেছে। ওরা সবাই মিলে এখন আদোনিয়র জয়ধ্বনি দিয়ে বলছে, ‘মহারাজ আদোনিয় দীর্ঘ জীবন লাভ করুন।’ 26 কিন্তু আদোনিয় ভোজসভায় আপনার পুত্র শলোমন, যাজক সাদোক, যিহোয়াদার পুত্র বনায় বা আমাকে নিমন্ত্রণ করে নি। 27 মহারাজ আপনি কি আমাদের কিছু না জানিয়েই সব ঠিক করে ফেললেন? দয়া করে বলুন, আপনার পর কে রাজা হবে।”
28 তখন রাজা দায়ূদ বললেন, “বৎশেবাকে ভেতরে আসতে বলো।” বৎশেবা এসে রাজার সামনে দাঁড়ালেন।
29 এরপর রাজা দায়ূদ ঈশ্বরকে সাক্ষী করে বললেন, “প্রভু আমাকে জীবনের সমস্ত বিপদ-আপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। আমি সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নামে যে কথা আগে শপথ করেছিলাম সে কথাই আবার বলছি। 30 আমি প্রতিশ্রুতি করেছিলাম যে আমার পর তোমার পুত্র শলোমন রাজা হবে। আমি সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করব না। তাই আজও বলছি, আমার পরে শলোমনই আমার সিংহাসনে বসবে।”
31 তখন বৎশেবা রাজার সামনে ভূমিষ্ঠ হয়ে বললেন, “রাজা দায়ূদ দীর্ঘজীবী হোন।”
রাজা আগ্রিপ্পর সামনে পৌল
26 আগ্রিপ্প পৌলকে বললেন, “এখন আত্ম সমর্থন করতে তোমার যা বলার আছে তা তোমাকে বলতে অনুমতি দেওয়া হল।” তখন পৌল হাত প্রসারিত করে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে থাকলেন। 2 তিনি বললেন, “হে রাজা আগ্রিপ্প, ইহুদীরা আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ এনেছে, সে বিষয়ে আজ আপনার সামনে আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। 3 বিশেষ করে ইহুদীদের রীতি-নীতি ও নানা প্রশ্নের বিষয়ে আপনি অভিজ্ঞ, এইজন্য আপনার কাছে কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি বড়ই আনন্দিত। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি আপনি ধৈর্য্য ধরে আমার কথা শুনুন।
4 “তারা জানে যে শুরু থেকেই আমি এই জেরুশালেমে আমার স্বজাতির মধ্যেই জীবন কাটিয়েছি এবং আরো জানে আমি কিভাবে জীবন-যাপন করেছি। 5 এই ইহুদীরা দীর্ঘদিন ধরে আমায় চেনে; আর তারা যদি ইচ্ছা করে তবে এই সাক্ষ্য দিতে পারে যে আমি একজন ফরীশীর মতোই জীবন-যাপন করেছি। ফরীশীরাই ইহুদী ধর্মের বিধি-ব্যবস্থা অন্যান্য দলের চাইতে সূক্ষ্মভাবে পালন করে। 6 আমাদের পিতৃপুরুষদের কাছে ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে সব পূর্ণ হবার প্রত্যাশায় আছি বলেই আজ আমার বিচার হচ্ছে। 7 আমাদের বারো বংশ দিনরাত একাগ্রভাবে উপাসনা করতে করতে সেই প্রতিশ্রুতির ফল পাবার প্রত্যাশা করছে। আর হে রাজা আগ্রিপ্প, ঈশ্বর আমাদের পূর্বপুরুষদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাতে প্রত্যাশা করার জন্যই ইহুদীরা আমার ওপর দোষারোপ করছে। 8 ঈশ্বর মৃতদের পুনরুত্থিত করেন একথা কেন আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে?
9 “আমিও তো মনে করতাম যে নাসরতীয় যীশুর নামের বিরুদ্ধে যা কিছু করা সম্ভব তা করাই আমার অবশ্য কর্তব্য; 10 আর জেরুশালেমে আমি তাই করতাম। আমি প্রধান যাজকদের কাছ থেকে কর্তৃত্ত্বের অধিকার নিয়ে বহু বিশ্বাসীকে কারাগারে পুরেছি আর তাদের মৃত্যুদণ্ডের সময় আমি আমার পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছি। 11 সমস্ত সমাজ-গৃহে আমি প্রায়ই তাদের শাস্তি দিয়ে জোর করে যীশুর নিন্দা করাবার চেষ্টা করতাম। তাদের বিরুদ্ধে আমার ক্ষোভ এতই প্রচণ্ড হয়ে উঠেছিল যে বিদেশের শহরগুলিতে গিযেও আমি তাদেরনির্যাতন করতাম।
পৌল যীশুর দর্শন বিষয়ে বললেন
12 “এই কারণেই একবার আমি প্রধান যাজকদের কাছ থেকে ক্ষমতা ও হুকুমনামা নিয়ে দম্মেশকে যাচ্ছিলাম। 13 পথে একদিন দুপুরবেলায়, হে মহারাজ আমি দেখলাম সূর্যের চেয়েও এক উজ্জ্বল আলো আকাশ থেকে আমার ও আমার সহযাত্রীদের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। 14 আমরা মাটিতে পড়ে গেলাম, আর এক রব শুনতে পেলাম যা ইব্রীয় ভাষায় আমায় বলছে, ‘শৌল, শৌল, আমায় নির্যাতন করছ কেন? আমার বিরোধিতা করে তুমি নিজেরই ক্ষতি করছ।’
15 “তখন আমি বললাম, ‘প্রভু, আপনি কে?’
“প্রভু বললেন, ‘আমি যীশু, যাকে তুমি নির্যাতন করছ। 16 তুমি নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াও! আমার সেবক হবার জন্যই আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। তুমি অন্যের কাছে আমার সাক্ষী হবে। তুমি যে যে বিষয় আজ দেখলে ও ভবিষ্যতে যা যা আমি তোমায় দেখাব, সে সব সকল লোকের কাছে সাক্ষী দাও। এইজন্যই তোমার কাছে আজ আমি নিজে দেখা দিয়েছি। 17 তোমার আপন লোক ইহুদীদের হাত থেকে তোমায় আমি রক্ষা করব। আর আমি তোমাকে অইহুদীদের কাছে পাঠাচ্ছি। 18 তুমি তাদের চোখ খুলে দেবে যেন তারা সত্য দেখে ও অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরে আসে; আর শয়তানের কর্ত্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে ঈশ্বরের প্রতি ফিরলে তাদের সব পাপ ক্ষমা হবে। আমার উপর বিশ্বাস করে যারা পবিত্র হয়েছে, তারা তাদের সহভাগী হবে।’”
পৌল তাঁর কাজের সম্বন্ধে বললেন
19 পৌল বলতে থাকলেন, “হে মহারাজ আগ্রিপ্প, আমি সেই স্বর্গীয় দর্শনের অবাধ্য হই নি। 20 আমি লোকদের বলতে শুরু করলাম যেন তারা মন-ফেরায় ও ঈশ্বরের দিকে ফেরে। আমি তাদের বললাম তারা যেন ভাল কাজ করে প্রমাণ দেয় যে সত্যি করে মন ফিরিয়েছে। প্রথমে আমি এসব কথা দম্মেশকের লোকদের কাছে প্রচার করলাম। পরে আমি এগুলি জেরুশালেমে ও যিহূদিয়ার সর্বত্র এবং অইহুদীদের কাছেও বললাম।
21 “এই জন্যই যখন আমি মন্দিরে ছিলাম, ইহুদীরা সেখান থেকে আমাকে ধরে এনে হত্যা করতে চেয়েছিল। 22 কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি ঈশ্বরের সাহায্য পেয়েছি। তাই এখানে ছোট ও বড় সকলের সামনে দাঁড়িয়ে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি। মোশি ও ভাববাদীরা যা ঘটবে বলে গেছেন, সেটা ছাড়া আমি আর অন্য কোন কথা বলছি না। 23 তাঁরা বলে গেছেন, খ্রীষ্টকে মৃত্যুভোগ করতে হবে ও মৃতদের মধ্য থেকে তিনিই হবেন প্রথম পুনরুত্থিত, ইহুদী কি অইহুদী সবার কাছে বিশিষ্ট জ্যোতির বার্তা নিয়ে আসবেন।”
14 “যখন তোমরা দেখবে, ‘ধ্বংসের সেই ঘৃণার বস্তু যেখানে দাঁড়াবার নয় সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।’[a] পাঠকের বোঝা উচিৎ এর অর্থ কি, তখন যারা যিহূদিয়াতে থাকে তারা পাহাড়ে পালিয়ে যাক। 15 এবং কেউ যদি ছাদে থাকে, সে যেন বাড়ি থেকে কোন কিছু নেবার জন্য নীচে না নামে বা ঘরে না ঢোকে। 16 কেউ যদি মাঠে থাকে, সে যেন জামাকাপড় নেবার জন্য ফিরে না যায়।
17 “হায়, সেই সময়ে গর্ভবতী বা যাদের কোলে শিশু থাকবে তাদের কত কষ্ট! 18 আর প্রার্থনা কর যেন এটা শীতকালে না ঘটে, 19 কারণ সেই সময় হবে বড়ই কষ্টের সময়। তেমনটি প্রথম যখন ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করলেন, তখন থেকে এখন পর্যন্ত কখনই হয় নি আর কখনও হবেও না। 20 আর প্রভু যদি সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে না দিতেন, তবে কোন প্রাণই রক্ষা পেত না। কিন্তু তিনি যাদের মনোনীত করেছেন, সেই মনোনীতদের জন্য সেই দিনের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন।
21 “কেউ যদি তখন তোমাদের বলে, ‘দেখ, খ্রীষ্ট এখানে বা ওখানে আছেন, তোমরা বিশ্বাস কোরো না। 22 কারণ ভণ্ড খ্রীষ্টেরা এবং ভাববাদীরা উঠবে এবং নানা চিহ্ন ও অলৌকিক কাজ করে দেখাবে, এমন কি সম্ভব হলে মনোনীত লোকদেরও ভোলাবে। 23 কিন্তু তোমরা সাবধান থেকো। আমি তোমাদের আগেই সমস্ত কিছু বলে দিলাম।
24 “কিন্তু সেই সময়, সেই কষ্টের শেষে,
‘সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে
এবং চাঁদ আর আলো দেবে না।
25 আকাশ থেকে তারা খসে পড়বে,
আকাশের সমস্ত শক্তি বিচলিত হবে।’[b]
26 “তখন লোকেরা দেখবে, মানবপুত্র মহামহিমায় ও পরাক্রমের সঙ্গে মেঘরথে আসছেন। 27 তখন মানবপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আকাশের অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চারি বায়ু থেকে তাঁর মনোনীত লোকদের সংগ্রহ করবেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International