Book of Common Prayer
পরিচালকের প্রতি: প্রভুর দাস দায়ূদের একটি গীত। প্রভু যখন দায়ূদকে শৌল এবং অন্যান্য শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, তখন দায়ূদ এই গীতটি লিখেছিলেন।
18 তিনি বললেন, “প্রভু আমার শক্তি,
আমি আপনাকে ভালোবাসি!”
2 প্রভুই আমার শিলা, আমার দুর্গ, আমার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
আমার ঈশ্বর, আমার শিলা। আমি তাঁর কাছে নিরাপত্তার জন্য ছুটে যাই।
ঈশ্বরই আমার ঢালস্বরূপ। তাঁর শক্তি আমায় রক্ষা করে।
দুর্গম পাহাড়ে প্রভুই আমার গোপন আশ্রয়স্থল।
3 ওরা আমায় উপহাস করেছে।
কিন্তু আমি প্রভুর কাছে সাহায্য চেয়েছি
এবং আমার শত্রুদের কাছ থেকে রক্ষা পেয়েছি!
4 আমার শত্রুরা আমায় হত্যা করতে চাইছিল!
আমার চারপাশে ছিল মৃত্যুর দড়ি।
এক তীব্র বন্যা আমাকে পাতালের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।
5 আমার চারপাশে ছিল কবরের রজ্জুগুলি।
আমার সামনে পড়েছিল মৃত্যুর ফাঁদ।
6 ফাঁদে বদ্ধ হয়ে, আমি প্রভুর কাছে সাহায্য চাইলাম।
হ্যাঁ, আমি আমার ঈশ্বরকে ডাকলাম।
ঈশ্বর তাঁর মন্দিরে ছিলেন।
তিনি আমার কন্ঠস্বর শুনতে পেলেন।
তিনি আমার সাহায্যের জন্য কান্না শুনতে পেলেন।
7 সারা পৃথিবী কেঁপে উঠলো,
পর্বতের ভিতগুলো পর্যন্ত নড়ে উঠেছিল। কেন?
কারণ প্রভু ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন!
8 ঈশ্বরের নাক দিয়ে ধোঁয়া বেরিয়ে এলো।
ঈশ্বরের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো জ্বলন্ত অগ্নিশিখা।
তাঁর দেহ থেকে জ্বলন্ত আগুন বিচ্ছুরিত হতে লাগলো।
9 আকাশমণ্ডল বিদীর্ণ করে প্রভু নীচে নেমে এলেন!
একটি ঘন কালো মেঘের ওপর তিনি দাঁড়িয়েছিলেন।
10 বাতাসের পাখায় চড়ে তিনি আকাশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে উড়ে বেড়াচ্ছিলেন।
বাতাসের ওপর ভর করে, তিনি সুদূর শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছিলেন।
11 প্রভু একটা ঘন কালো মেঘের মধ্যে লুকিয়েছিলেন, সেই মেঘ তাঁকে তাঁবুর মত ঘিরেছিল।
তিনি ঘন বজ্রময় মেঘের মধ্যে লুকিয়েছিলেন।
12 তারপর মেঘ ভেদ করে ঈশ্বরের আলোকময় ঔজ্জ্বল্য বেরিয়ে এলো।
সেখানে বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি এবং বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা দিল।
13 আকাশ থেকে প্রভু বিদ্যুতের মত ঝলসে উঠলেন!
পরাৎপরের রব শোনা গেল।
সেখানে তখন শিলাবৃষ্টি এবং বজ্রসহ অগ্নিময় বিদ্যুতের ঝলক ছিল।
14 প্রভু তাঁর তীরসমূহ[a] নিক্ষেপ করে শত্রুদের ছত্রভঙ্গ করে দিলেন।
প্রভু তীরের মত ক্ষিপ্রগতিতে অনেকগুলো অশনিপাত করলেন এবং লোকরা বিভ্রান্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়লো।
15 প্রভু আপনি উচ্চস্বরে আপনার আজ্ঞা দিলেন
এবং তীব্র বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো।
জল পেছনে সরে গেল এবং আমরা সমুদ্রের তলদেশ দেখতে সমর্থ হলাম।
আমরা পৃথিবীর ভিত দেখতে পেলাম।
16 প্রভু ওপর থেকে নীচে পৌঁছলেন এবং আমাকে রক্ষা করলেন।
প্রভু আমাকে গভীর জল থেকে টেনে তুললেন।
17 আমার শত্রুরা আমার চেয়ে শক্তিশালী ছিলো।
ওই সব লোক আমায় ঘৃণা করেছে।
আমার কাছে আমার শত্রুরা বেশ শক্তিশালীই ছিল, তাই ঈশ্বর আমায় রক্ষা করেছেন!
18 আমি সমস্যার মধ্যে নিমজ্জিত ছিলাম এবং আমার শত্রুরা আমায় আক্রমণ করেছিল।
কিন্তু আমাকে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রভু সেখানে ছিলেন!
19 প্রভু আমায় ভালোবাসেন, তাই তিনি আমায় উদ্ধার করলেন।
তিনি আমায় নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গেলেন।
20 আমি নিস্পাপ, তাই প্রভু আমাকে আমার যোগ্য পুরস্কার দেবেন।
আমি কোন অন্যায় কাজ করি নি, তাই তিনি আমার জন্য হিতকর কাজই করবেন।
21 কেন? কারণ আমি প্রভুর নির্দেশ পালন করেছি!
আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কোন পাপ করি নি।
22 আমি সর্বদাই প্রভুর নির্দেশসমূহ স্মরণে রাখি।
আমি তাঁর নির্দেশিত বিধি পালন করি!
23 তাঁর সামনে আমি সর্বদাই সৎ ও বিশুদ্ধ ছিলাম।
আমি নিজেকে অন্যায় কাজ থেকে দূরে রেখেছিলাম।
24 এই কারণে প্রভু আমাকে আমার পুরস্কার দেবেন!
কেন? কারণ আমি নির্দোষ!
প্রভু দেখেছেন, আমি কোন গর্হিত কাজ করি নি।
তাই আমার প্রতি তিনি হিতকর কাজই করবেন।
25 প্রভু, যদি কোন লোক প্রকৃতই আপনাকে ভালোবাসে আপনিও তাঁর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা প্রদর্শন করুন।
আপনার প্রতি কেউ যদি সৎ ও একনিষ্ঠ হয়, আপনিও তার প্রতি সৎ হন।
26 হে প্রভু, যারা ভাল এবং শুচি তাদের কাছে আপনিও ভাল এবং শুচি।
কিন্তু, নীচতম এবং ক্রুরতম ব্যক্তিকেও আপনি পরাক্রমী করতে পারেন।
27 প্রভু, নম্র লোকদের আপনি সাহায্য করেন।
কিন্তু উদ্ধত ও অহঙ্কারী লোকদের আপনি অবদমিত করেন।
28 প্রভু, আপনিই আমার প্রদীপ জ্বালান।
আমার ঈশ্বর, আমার চারদিকের অন্ধকারকে আলোকিত করেন!
29 আপনার সাহায্যে হে প্রভু, আমি সৈন্যদের সঙ্গে ছুটতে পারি।
ঈশ্বরের সাহায্য পেয়ে, আমি শত্রুদের দেওয়ালের ওপর চড়তে পারি।
30 ঈশ্বর সর্বদাই যা সঠিক তাই করে থাকেন।
প্রভুর বাক্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
যারা তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখে, তিনি তাদের রক্ষা করেন।
31 প্রভু ছাড়া আর অন্য কোন ঈশ্বর নেই।
আমাদের প্রভু ছাড়া আর কোন শিলা নেই।
32 ঈশ্বর আমায় শক্তি দেন।
তিনি আমাকে পবিত্র জীবনযাপন করতে সাহায্য করেন।
33 ঈশ্বর আমাকে হরিণের মত দ্রুত দৌড়তে সাহায্য করেন।
উচ্চস্থানে তিনিই আমাকে অবিচল রাখেন।
34 ঈশ্বর আমাকে যুদ্ধের কৌশল শিক্ষা দেন,
তাই আমার বাহুগুলি একটি শক্তিশালী ধনুকে ছিলা পরাতে পারে।
35 ঈশ্বর আপনি আমায় রক্ষা করেছেন এবং জয়ী হতে সাহায্য করেছেন।
আপনার ডান হাত দিয়ে আপনি সহায়তা করেছেন।
আমার শত্রুকে পরাজিত করতে আপনি আমায় সাহায্য করেছেন।
36 আমার পা এবং গোড়ালি শক্ত করে দিন,
যেন আমি হোঁচট না খেয়ে দ্রুত দৌড়তে পারি।
37 আমি যেন আমার শত্রুদের তাড়া করতে পারি এবং তাদের ধরে ফেলতে পারি।
তাদের শেষ না করে আমি আর ফিরবো না!
38 আমি আমার শত্রুদের পরাজিত করবো। তারা আর উঠে দাঁড়াবে না।
আমার সব শত্রু আমার পায়ের নীচে পড়ে থাকবে।
39 ঈশ্বর, যুদ্ধে আপনিই আমাকে শক্তিশালী করেছেন।
আপনিই আমার শত্রুকে আমার সামনে ভূপতিত করেছেন।
40 আমার শত্রুদের পরাজিত করতে আপনি আমায় সাহায্য করেছেন
এবং আমি আমার বিরোধীদের বিনষ্ট করেছি!
41 আমার শত্রুরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছিল।
কিন্তু তাদের সাহায্য করার কেউ ছিল না।
তারা এমনকি প্রভুকেও ডেকেছিল,
কিন্তু প্রভু তাদের উত্তর দেন নি।
42 আমি আমার শত্রুদের মেরে টুকরো টুকরো করে দিয়েছি।
তারা ধূলোর মত বাতাসে উড়ে গিয়েছিল।
আমি তাদের একেবারে খণ্ড বিখণ্ড করে ছেড়েছি।
43 যারা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে আমাকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করুন।
আমাকে সেই সব জাতির নেতা বানিয়ে দিন।
যে সব লোকদের আমি জানি না, তারা আমার সেবা করবে।
44 সেই সব লোক আমার সম্পর্কে শোনামাত্রই আমার আজ্ঞাকারী হবে।
ঐ বিদেশীরা আমায় ভয় করবে।
45 ঐসব বিদেশীরা ভয়ে শুকিয়ে যাবে।
ভয়ে কম্পমান হয়ে ওরা ওদের গোপন ডেরা থেকে বেরিয়ে আসবে।
46 প্রভু জীবন্ত!
আমি আমার শিলার প্রশংসা করি। ঈশ্বর আমায় রক্ষা করেন।
তিনি মহান!
47 ঈশ্বর আমার জন্য আমার শত্রুদের শাস্তি দিয়েছেন।
তিনি লোকদের আমার অধীনে এনে দিয়েছেন।
48 প্রভু, আপনি শত্রুর হাত থেকে আমায় বাঁচিয়েছেন।
যারা আমার বিরুদ্ধে গিয়েছিল, তাদের পরাস্ত করতে আপনি আমায় সাহায্য করেছেন।
নিষ্ঠুর মানুষের হাত থেকে আপনি আমায় রক্ষা করেছেন।
49 হে প্রভু, এই কারণে আমি সকল জাতির কাছে আপনার প্রশংসা করি।
এই জন্যই আপনার নামে আমি স্তোত্র গান করি।
50 প্রভু তাঁর মনোনীত রাজাকে বহু যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করেন!
তাঁর মনোনীত রাজার প্রতি তিনি প্রকৃত ভালোবাসা দেখান।
তিনি দায়ূদ এবং তাঁর উত্তরপুরুষদের প্রতি চিরদিন বিশ্বস্ত থাকবেন!
একটি দুষ্ট আত্মা শৌলকে বিরক্ত করল
14 প্রভুর আত্মা শৌলকে ছেড়ে চলে গেলেন। তখন শৌলের কাছে প্রভু এক দুষ্ট আত্মা পাঠালেন। এর ফলে তিনি বেশ মুশকিলে পড়লেন। 15 শৌলের ভৃত্যরা তাঁকে বলল, “ঈশ্বরের কাছ থেকে এক দুষ্ট আত্মা এসে আপনাকে উদ্বিগ্ন করছে। 16 যদি আপনি আদেশ করেন তাহলে একজন বীণা বাজিয়েকে খুঁজে আনি। প্রভুর কাছ থেকে দুষ্ট আত্মা এলে সে বীণা বাজাবে। তখন আপনি বেশ ভালো বোধ করবেন।”
17 শৌল বললেন, “তাহলে একজন ভালো বাজিয়েকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
18 একজন ভৃত্য বলল, “যিশয় নামে এক ব্যক্তি আছেন যিনি বৈৎলেহমে বাস করেন। আমি যিশয়ের পুত্রকে দেখেছি সে বীণা বাজাতে জানে। সে সাহসী এবং যুদ্ধ করতেও জানে। সে চতুর, দেখতেও সুন্দর। স্বয়ং প্রভু তার সহায়।”
19 তাই শৌল যিশয়ের কাছে কয়েকজন দূত পাঠাল। তারা যিশয়কে বলল, “তোমার দায়ূদ নামে একজন পুত্র আছে, সে তোমার মেষদের দেখাশোনা করে। ওকে আমাদের কাছে ডেকে আনো।”
20 যিশয় শৌলের জন্য কিছু উপহার জোগাড় করলো। যিশয় একটা গাধা, কিছু রুটি, এক বোতল দ্রাক্ষারস আর একটা কচি ছাগল দায়ূদের হাতে করে শৌলের কাছে পাঠালো। 21 দায়ূদ শৌলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে শৌল দায়ূদকে খুব ভালবেসে ফেললেন। দায়ূদ শৌলের সহকারী হয়ে শৌলের অস্ত্র বইতে লাগল। 22 শৌল যিশয়ের কাছে খবর পাঠিয়ে জানিয়ে দিলেন, “দায়ূদ এখানেই থাকুক, আমার কাজকর্ম করুক। আমার ওকে খুব ভাল লেগেছে।”
23 যখনই ঈশ্বর হতে শৌলের ওপর দুষ্ট আত্মা আসত, তখন দায়ূদ বীণা তুলে নিয়ে বাজাতেন। সঙ্গে সঙ্গে দুষ্ট আত্মা শৌলকে ছেড়ে যেত, আর তিনি আরাম বোধ করতেন।
গলিয়াৎ ইস্রায়েলকে যুদ্ধে আহ্বান করল
17 পলেষ্টীয়রা যুদ্ধের জন্যে সৈন্য জড়ো করতে লাগল। যিহূদার সোখোতে তারা জড়ো হল। সোখোর আর অসেকার মাঝখানে তাদের তাঁবু পড়লো। জায়গাটা ছিল এফস্দম্মীম নামে একটা শহরে।
2 শৌল এবং ইস্রায়েলের সৈন্যরা একত্র হল। এলা উপত্যকায় তাদের তাঁবু পড়ল। শৌলের সৈন্যরা পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধের জন্যে তৈরী হল। 3 পলেষ্টীয়রা একটা পাহাড়ে, ইস্রায়েলীয়রা আর একটাতে। উপত্যকাটা এই দুটো পাহাড়ের মাঝখানে।
4 পলেষ্টীয়দের মধ্যে একজন বিজয়ী যোদ্ধা ছিল। তার নাম গলিয়াৎ। সে গাৎ থেকে এসেছিল। তার দেহ বিশাল লম্বা ছিল। 9 ফুটেরও বেশী। পলেষ্টীয় শিবির থেকে সে বেরিয়ে এলো। 5 তার মাথায় পিতলের শিরস্ত্রাণ। গায়ে মাছের আঁশের মতো দেখতে একটা বর্ম, সেটা ছিল পিতলের তৈরী, ওজন প্রায় 125 পাউণ্ড। 6 গলিয়াতের পায়েও ছিল পিতলের বর্ম। তার পিঠে ছিল পিতলের বর্শা। 7 তার বর্শার কাঠের দণ্ডটা ছিল তাঁতির লাঠির মতো লম্বা। বর্শার ফলকের ওজন 15 পাউণ্ড। গলিয়াতের ঢাল নিয়ে তার সহকারী আগে আগে হাঁটত।
8 প্রত্যেকদিন গলিয়াৎ বেরিয়ে এসে ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের দিকে যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়ে বলত, “কেন তোমরা যুদ্ধের জন্য সারবন্দি দাঁড়িয়ে? তোমরা শৌলের ভৃত্য। আমি একজন পলেষ্টীয়। একজনকে তোমরা বেছে নাও, তাকে আমার সঙ্গে লড়বার জন্য পাঠিয়ে দাও। 9 যদি সে আমাকে হত্যা করে তাহলে আমরা পলেষ্টীয়রা সকলেই তোমাদের ক্রীতদাস হব। কিন্তু আমি যদি তাকে হত্যা করি, তাহলে তোমাদের সবাইকে আমাদের ক্রীতদাস হতে হবে এবং আমাদের সেবা করতে হবে।”
10 পলেষ্টীয়রা আরো বলল, “এই আমি এখানে দাঁড়িয়ে ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করছি। সাহস থাকে তো একজনকে পাঠিয়ে দাও। আমার সঙ্গে হয়ে যাক এক হাত লড়াই।”
11 শৌল এবং ইস্রায়েলীয় সৈন্যরা গলিয়াতের এইসব আস্ফালন শুনে বেশ ভয় পেয়ে গেল।
17 পিতর যে দর্শন পেয়েছিলেন তার অর্থ কি হতে পারে তা যখন তিনি মনে মনে চিন্তা করছেন,
সেই সময় কর্ণীলিয়াসের পাঠানো ঐ লোকেরা শিমোনের বাড়ির খোঁজ করতে করতে বাড়ির ফটকে এসে হাজির হল। 18 তারা জিজ্ঞেস করল, “শিমোন, যাঁর অপর নাম পিতর, তিনি কি এ বাড়িতে রয়েছেন?”
19 পিতর তখনও সেই দর্শনের বিষয়ে চিন্তা করছেন, তখন আত্মা তাঁকে বললেন, “দেখ! তিন জন লোক তোমার খোঁজ করছে। 20 তুমি উঠে নীচে যাও, বিনা দ্বিধায় তাদের সঙ্গে যাও, কারণ আমিই তাদের পাঠিয়েছি।” 21 তখন পিতর নীচে গিয়ে সেই লোকদের বললেন, “দেখুন, আপনারা যাকে খুঁজছেন, আমিই সেই লোক। আপনারা এখানে কেন এসেছেন?”
22 তারা বলল, “আমরা সেনাপতি কর্ণীলিয়াসের কাছ থেকে এসেছি। তিনি একজন ধার্মিক লোক, তিনি ঈশ্বরের উপাসনা করেন। ইহুদীদের কাছেও তিনি শ্রদ্ধার পাত্র। স্বর্গদূত কর্ণীলিয়াসকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আপনাকে তাঁর বাড়ীতে আসতে আমন্ত্রণ দেওয়া হয়। আপনি কি বলবেন তা যেন তিনি শুনতে পান।” 23 তখন পিতর তাদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে রাতটা তাঁর ওখানে থাকার ব্যবস্থা করলেন।
পর দিন পিতর প্রস্তুত হয়ে সেই লোকদের সঙ্গে রওনা হয়ে গেলেন। যাফো থেকে কয়েকজন বিশ্বাসী ভাইও পিতরের সঙ্গে গেলেন। 24 পরের দিন তাঁরা কৈসরিয়া শহরে এলেন। কর্ণীলিয়াস তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তিনি তাঁর আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের তাঁর বাড়িতে ডেকেছিলেন।
25 পিতর যখন ভেতরে গেলেন তখন কর্ণীলিয়াস এসে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন; আর উপুড় হয়ে পড়ে পিতরকে প্রণাম জানালেন। 26 কিন্তু পিতর তাঁকে বললেন, “আহা, কি করছেন, উঠুন! আমি তো একজন সামান্য মানুষ মাত্র।” 27 পিতর তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলতে ভেতরে গিয়ে দেখলেন, সেখানে বহুলোক এসে জড়ো হয়েছে।
28 পিতর তাঁদের বললেন, “আপনারা জানেন, অন্য জাতের লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা বা তাদের বাড়ি যাওয়া ইহুদীদের পক্ষে বিধি-সম্মত কাজ নয়; কিন্তু ঈশ্বর আমাকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, কোন মানুষকে ‘অশুচি’ বা ‘অপবিত্র’ বলা ঠিক নয়। 29 তাই আমাকে ডেকে পাঠান হল, আর আমি বিনা আপত্তিতে চলে এলাম। এখন আমি জানতে চাই আপনারা কি কারণে আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন।”
30 কর্ণীলিয়াস বললেন, “চারদিন আগে এই সময় আমি আমার ঘরে বসে প্রার্থনা করছিলাম বেলা তখন প্রায় তিনটে, সেই সময় হঠাৎ এক ব্যক্তি আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন, তাঁর গায়ে ছিল উজ্জ্বল পোশাক। 31 তিনি বললেন, ‘কর্ণীলিয়াস তোমার প্রার্থনা গ্রাহ্য হয়েছে, আর তুমি গরীব দুঃখীদের যে সাহায্য কর তা-ও ঈশ্বর দেখেছেন। ঈশ্বর তোমাকে স্মরণ করেছেন; 32 তাই তুমি যাফোয় কিছু লোক পাঠাও এবং শিমোন যাকে পিতর বলে তাকে এখানে নিয়ে এস। সমুদ্রের ধারে শিমোন নামে যে চামড়ার ব্যবসায়ী আছে, সে তার বাড়িতে আছে।’ 33 তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে আপনার কাছে লোক পাঠালাম; আর আপনি বড় অনুগ্রহ করে এখানে এসেছেন। এখন আমরা সকলে এখানে ঈশ্বরের সামনে আছি; প্রভু আপনাকে যে সব কথা বলতে আদেশ করেছেন আমরা সকলে তা শুনব।”
অনুগামীদের সামনে যীশুর আবির্ভাব
(মথি 28:16-20; মার্ক 16:14-18; যোহন 20:19-23; প্রেরিত 1:6-8)
36 তাঁরা যখন এসব কথা তাদের বলছেন, এমন সময় যীশু তাঁদের মাঝে এসে দাঁড়ালেন আর বললেন, “তোমাদের শান্তি হোক্!”
37 কিন্তু তাঁরা ভয়ে চমকে উঠলেন। তাঁরা মনে করলেন বোধ হয় কোন ভূত দেখছেন। 38 কিন্তু যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা এত অস্থির হচ্ছ কেন? আর তোমাদের মনে সন্দেহই বা জাগছে কেন? 39 আমার হাত ও পা দেখ, আমায় স্পর্শ করে দেখ, আত্মার এইরূপ হাড় মাংস থাকে না, কিন্তু তোমরা দেখতে পাচ্ছ আমার আছে।”
40 এই কথা বলে তিনি তাঁদের হাত ও পা দেখালেন। 41 তাঁদের এতই আনন্দ হয়েছিল যে তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তাঁরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কিছু খাবার আছে কি?” 42 তাঁরা তাঁকে এক টুকরো ভাজা মাছ দিলেন। 43 তিনি সেটি নিয়ে তাঁদের সামনে গেলেন।
44 তিনি তাঁদের বললেন, “আমি যখন তোমাদের সঙ্গে ছিলাম, তখনই তোমাদের এসব কথা বলেছিলাম, আমার সম্বন্ধে মোশির বিধি-ব্যবস্থায়, ভাববাদীদের পুস্তকে ও গীতসংহিতায় যা কিছু লেখা হয়েছে তা পূর্ণ হতেই হবে।”
45 এরপর তিনি তাঁদের বুদ্ধি খুলে দিলেন, যেন তাঁরা শাস্ত্রের কথা বুঝতে পারেন। 46 যীশু তাঁদের বললেন, “একথা লেখা আছে, খ্রীষ্টকে অবশ্যই কষ্ট ভোগ করতে হবে, আর তিনি মৃত্যুর তিন দিনের দিন মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন। 47-48 এবং পাপের জন্য অনুশোচনা ও পাপের ক্ষমার কথা অবশ্যই সমস্ত জাতির কাছে ঘোষণা করা হবে। জেরুশালেম থেকেই একাজ শুরু হবে আর তোমরাই এসবের সাক্ষী। 49 আমার পিতা যা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা আমি তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব; কিন্তু তোমরা যে পর্যন্ত না উর্দ্ধ থেকে আসা শক্তি পরিধান করছ, সেই পর্যন্ত এই শহরেই থাক।”
যীশুর স্বর্গে প্রত্যাবর্তন
(মার্ক 16:19-20; প্রেরিত 1:9-11)
50 এরপর যীশু তাঁদের বৈথনিয়া পর্যন্ত নিয়ে গেলেন এবং হাত তুলে তাদের আশীর্বাদ করলেন। 51 তিনি আশীর্বাদ করতে করতে তাঁদের ছেড়ে আকাশে উঠে যেতে লাগলেন আর স্বর্গে উন্নীত হলেন। 52 শিষ্যরা যীশুকে প্রণাম জানিয়ে মহানন্দের সঙ্গে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। 53 আর সর্বক্ষণ মন্দিরে উপস্থিত থেকে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International